নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

মানবতাকে সব পরিচয়ের উপরে স্থান দিতে পারলেই পৃথিবী আরও সুন্দর হবে।

চলো স্বপ্ন ছুঁই

একটু পড়ি, একটু লিখি

চলো স্বপ্ন ছুঁই › বিস্তারিত পোস্টঃ

"সীমাবদ্ধ জীবন ভিন্ন অনুভূতি "

০৬ ই ডিসেম্বর, ২০১৯ বিকাল ৫:৫৬

কথার মাঝে হঠাৎ ড্রাইভার বলছে, ভাইজান চশমাটা বেশ মানিয়েছে আপনাকে,এই ব্যাটা ভালো মন্দের তুই কি বুঝিস???

রিকশায় চড়ার সময় রিকশা মামা বলছে,আপা রিকশায় চড়ার সময় এত ফেইসবুক চালাতে হয় না,পড়ে যেতে পারেন বা এক্সিডেন্ট হতে পারে।।এই বাস্টার্ড, তুই আমাকে জ্ঞান দেস!!!!তাহলে রিকশা চালাস কেন??? এত পারিস ভালো কোনো কিছু করতে পারিস না????

তখন মামা চুপ করে থাকি। এমন আক্ষেপের কথাই বলছিল ৩৮-৪০বছরের এক রিকশা চালক সেদিন রাত ১১টার দিকে কারওয়ান বাজার থেকে বাসায় আসার সময়।খুব সকালে বা বেশ রাতে যখন একা রিকশায় উঠি বা গাড়িতে চড়ি চেষ্টা করি এই মানুষগুলোর সাথে কিছু কথা বলতে,কিছু বাস্তব অভিজ্ঞতার গল্প শুনতে,চেষ্টা থাকে জীবন ব্যাপী নির্মম,নিষ্ঠুর বাস্তব অভিজ্ঞতায় জীবন পার করতে থাকা মানুষগুলোর সাথে কিছুক্ষণ কথা বলতে।

রিকশাওয়ালা প্রশ্ন ছুড়ে দিল," মামা,আপা রিকশায় উঠেই মোবাইলে বেহুশ তা বলতে গেলেও দোষ,এক্সিডেন্ট করলেও দোষ, এই সমাজে আমাদের কি ভালো-মন্দ বলার অধিকার নাই?????জীবনের একটা দিক দেখার জন্যই কি আমাদের জন্ম,সবাই শুধু গালি দিবে???" আমি বললাম,তা থাকবে না কেন,আপনিও এই সমাজেরই অংশ, দেশ গড়ায় আপনারো অবদান আছে, ভালো-মন্দ আপনি বলতেই পারেন।

না, মামা,গরীব বলে,রিকশাওয়ালা বলে কিচ্ছু বলতে পারবো না। আমি বললাম,আসলে এমন ভাবার কারণ নাই।প্রতিদিন আপনার রিকশায় ৬০-৮০জন উঠে,হাজারো মানুষের সাথে আপনার সাক্ষাৎ হয় সবাই এক নয়,হবে এটা আশা করাও ভুল।তবে,কোন মানুষকে কি বলতে হবে তা আপনাকেই ঠিক করতে হবে।৭০০কোটি মানুষের মধ্যে কোন কোন মানুষের কথায় কোন কথায় আপনি কষ্ট পাবেন এটা আপনাকেই ঠিক করতে হবে।সবার কথায় কষ্ট নিলে জীবন চলে না।

ব্যাপার কি মামা জানেন,আধুনিক সভ্যতার মানুষগুলো সব জায়গা থেকে সব কিছু নিতে চায় না,আর জ্ঞান সেটা কে কোন জায়গা থেকে নিবে এটা তার একান্তই ব্যক্তিগত,তবে বেশির ভাগ মানুষই Establishment কে আদর্শ মেনেই কাজ করে যা অনেক সময় সমাজকে ভুল মেসেজ দেয়।

ভালো-মন্দ কইতে পারুম না,আমরা কি দেশের নাগরিক না???? আমি কি ট্যাক্স, ভ্যাট দেই না????মামা শুনেন,এই পৃথিবীতে প্রতিটি জায়গা থেকে,প্রতিটি মানুষের কাছ থেকে আপনি শিখতে পারেন,কিন্তু প্রশ্ন হলো আপনি তা নিতে প্রস্তুত কিনা।বেশিরভাগ মানুষ যেমন আপনার কাছ থেকে কোন কিছু শিখতে চাইবে না,এটাও স্বাভাবিক, এ নিয়ে কষ্ট পাওয়ার কিছু নেই,একটা কথা মনে রাখবেন এই পৃথিবীতে সব মানুষ সমান কষ্ট পাওয়ার অধিকার নিয়ে জন্মায় না, সব মানুষ সমান কষ্ট দেয়ার অধিকার নিয়েও জন্মায় না।কষ্ট পাওয়া ও দেয়া আমার কাছে অনেকটা ঐশ্বরিক ব্যাপার মনে হয়।বাদ দেন মামা,সাবধানে যাইয়েন!!!

রিকশা সামনে চলছে আর আমি মনে মনে ভাবছি,পৃথিবী কত বিচিত্রময়,কেউ ফ্রিতে জ্ঞান নিতে চায় না,সবাই সবার কাছ থেকে প্রাপ্য প্রশংসাও নিতে আগ্রহী নয়,পাত্রভেদে বিচার বিশ্লেষণ করে প্রশংসা নিয়েই অভ্যস্ত আজকের সমাজ।এটাই সমাজের সৌন্দর্য, এটাই সমাজের প্রাণ,ভালো বা মন্দের বিচারে নয়, ভাবতে হবে এটাই আমাদের সমাজ।

ড্রাইভার, রিকশাওয়ালা,MLSS,বুয়াকে একটা গালি আপনি দিতেই পারেন,অথচ একবার কি ভেবে দেখেছেন যে,এই প্রান্তিক মানুষগুলোই আমাদের আলিশান সমাজ ব্যবস্থা টিকিয়ে রাখতে কতটা নিজেকে বিলিয়ে দিচ্ছে????
হতে পারে বাধ্য হয়েই দিচ্ছে,তার কিছু টাকা দরকার আর আমার প্রাপ্য সেবা।

ঢাকা শহরের বুয়া গুলো নিজের বাসায় কাজ করার সুযোগ কতটুকু পায়???? আমাদের বাসার বুয়া তো কাজে ব্যাঘাত ঘটে তাই সন্তানকেই গ্রামে রেখে এসেছে,বেচে থাকার প্রতিযোগিতায় স্বামী,সন্তান ও নিজেকে দেয়ার সময়ই শেষ,তবুও মাস শেষে কিছু টাকায় জীবনের পিপাসা মেটায়,মেটাতে বাধ্য তা যেকারণেই হোক।

এমন একটি সমাজ কল্পনা করতেও ভয় হয় যেখানে প্রান্তিক শ্রেণীর অস্তিত্ব নেই,রাগে-জিদে গালি দেয়ার লোক সামনে পাওয়া যাবে না,সামনে এমন লোক থাকবে না যাকে চাইলেই গালি দেয়া যায় পছন্দসই ভাষায়,গালি দিয়ে পিপাসা মেটানোর জন্যও সাহেব নির্ভর,স্যার নির্ভর সমাজ ব্যবস্থায় প্রান্তিক শ্রেণী জরুরি। অন্তত এ কথাটা অনুধাবন আর একটু সহানুভূতিই আমাদের সমাজ ব্যবস্থাকে আরোও সুন্দর করতে পারে বহুগুণে। আর প্রান্তিক মানূষগুলোর নীরবে,নিভৃতে ফেলা চোখের জলের সার্থকতা মিলবে।

মন্তব্য ১ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (১) মন্তব্য লিখুন

১| ২৯ শে জানুয়ারি, ২০২০ দুপুর ১:৫২

মোঃ মাইদুল সরকার বলেছেন:
এক শ্রেণীর মানুষের কাজই এমন অন্যর কথা শুনতে চায় না।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.