![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
একটু পড়ি, একটু লিখি
এই মামা যাবেন পলওয়েল সুপার মার্কেট???
না,এই আপনি যাবেন? না মামা।
দুই একজনকে জিজ্ঞেস করার পর মনে হল,সমস্যা কোথায়?? নিশ্চয় গন্তব্য নয়,হয়তো অন্যকোন জায়গায়। ভিন্ন নাম বললাম যাবেন,জোনাকি সিনেমা হল?? এবার মনে হয় প্রশ্ন কমন পড়েছে। যাব এত টাকা।
রিকশায় উঠলাম জোনাকি সিনেমা হল যাওয়ার জন্য, পলওয়েল সুপার মার্কেট নয়,যদিও যেই লাউ সেই কদু।
রিকশায় উঠেই ভাবলাম, পলওয়েল চিনে না অথচ একবারেই জোনাকি চিনলো। ব্যাপারটা বেশ মজার না!!! চেয়ার চিনে কেদারা চিনে না।৪০০ বছরের ঢাকা শহরে চলচ্চিত্র শিল্পের বয়স বড়জোর ১০০-১১০ বছর কিন্তু কেনাকাটা করার সংস্কৃতি এরও ঢেড় আগে। তবুও সিনেমাই মনে বেশি জায়গা করে নিয়েছে। কেননা চলচ্চিত্র মানেই চোখের সামনে পর্দায় ভেসে উঠে রোমান্টিকতা,বাস্তবতা ও আনন্দ ভাগাভাগির বড় উপলক্ষ। সিনেমা উচ্চারণের সাথেই জড়িয়ে আছে হাজার বছরের আবেগ,অনুভূতি, কোমল স্পর্শের অন্যরকম ভালোলাগা।
মনে প্রশ্ন জাগল মঞ্চায়ন,থিয়েটার,নির্বাক,সবাক,উত্তম- সুচিত্রা,রাজ্জাক-সাবানায় সমৃদ্ধ আমাদের অন্তর জগত???? এই শহরে রাজমণি,অভিসার,চিত্রামহল, লায়ন, পূর্ণিমা যতটা জনপ্রিয় তার সাথে পাল্লা দেওয়ার সাহস অন্যকোন কিছুর আছে ???!!!
সিনেমা হলে মানুষ যেত নিজেকে ফিরে পেতে,ক্ষণিকের জন্য নিজেকে নায়ক হিসেবে কল্পনা করতে যা প্রতিটি প্রাণীরই সহজাত প্রবৃত্তি। এই জগতের প্রত্যেকটি মানুষতো নিজের রাজ্যে রাজা,রাজ্যের রাণী হয়তো নেই কিন্তু রাণী খুঁজে না এমন রাজা কই । সারাদিনের ক্লান্তি ভুলে থাকা যায়,ক্ষণিকের জন্য কল্পনা করা যায় ববিতার পাশে নিজেকে খারাপ লাগতো না।আর আমি ঐ রাজার আসনে বসলে সমাজের নিচু তলার মানুষের সাথে হয়তো এমনটা করতাম না।
এমনটা একটা সময় ছিল যখন ঘন্টার পর ঘন্টা লাইনে দাঁড়িয়ে টিকেট কাটতো পয়সা খরচ করে মনের নায়িকার নাচ,অভিনয়, বাচনভঙ্গি আর সাবলীল শব্দচয়ন দেখে আবেগে আপ্লুত হওয়ার জন্য,ঘোড়া দেখে ভয়ে আঁতকে উঠার জন্য আর বাবার পকেট থেকে টাকা চুরি করে দল বেধে ছায়াছবি দেখার জন্য,রাত করে বাড়ি ফিরলে মায়ের বকুনি শোনার জন্য।তবুও যে পরিমাণ আনন্দ পাওয়া যেত তার তুলনায় মায়ের পিটুনি আর বকাঝকা বড় নসি' মনে হত।
এত এত জনপ্রিয়তা থাকার পরেও মাত্র ৫০-৬০ বছরে সিনেমার জগত কেন আমাদের টানতে পারছে না???? কেন এখন আর দল বেধে,খেজুরের রস বিক্রি করে টাকা জমিয়ে সিনেমা নয় ??? সভ্যতা হয়তো বিভিন্ন অনুষঙ্গ দিয়ে সময় কেড়ে নিয়েছে নানাভাবে , প্রতি মুহুর্ত মোহাচ্ছন্ন করে রাখছে যান্ত্রিক জীবনের না অনুঘটক কিন্তু এত বড় ইন্ডাস্ট্রি ধবংসের পিছনের কারিগরদের অবদান কিন্তু কম নয়।কেবল সস্তা বিনোদন আর অশ্লীলতায় ভরপুর অঙ্গভঙ্গি দেখার জন্য সময় নষ্ট করার মত এত আলগা সময় আর মানুষের নেই। যদিও অভিজাত পাড়ায় কিছু হল টিকে আছে ভিন্ন উপায়ে, ভিন্ন আঙ্গিকে তা কোনভাবেই বাঙালি ঐতিহ্যকে লালন করে না।
আজকের বাঙলাদেশে হয়তো ৪০০-৫০০ কিলোমিটার বাসে চড়ে,৫০-৬০ কিলোমিটার পায়ে হেটে মনিহার সিনেমা হলে বসে সিনেমা দেখে তৃপ্তির ঢেকুর গেলার মত কারো সময় নেই কিন্তু দর্শক টানার মত সিনেমা হলে মানুষ ঠিকই সময় করে নিত হৃদয়ের কথা আর আয়নাবাজি দেখার মত। বিগত কয়েক বছরে আয়নাবাজি, অজ্ঞাতনামা হয়তো কিছু দর্শকে টানতে পেরেছে কিন্তু জোনাকি, রাজমণিতে মুক্তি পাওয়া রহিম রূপবাণ ও লাইলী-মজনু'র মত ভালোবাসতে পারেনি আধুনিক ইয়ো ইয়ো সাউন্ড সিস্টেম আর রূপময়তা,পারেনি জনমনে ভক্তি শ্রদ্ধা আর ভালোলাগার কেন্দ্রবিন্দু হতে।এর পিছনে যতটা না ইউটিউব, এন্ড্রয়েড মোবাইল,কম্পিউটার এর অবদান আছে তার চেয়েও বড্ড বেশি অবদান আমাদের নষ্ট মনের,নষ্ট চিন্তার প্রযোজনা শিল্পের, অশ্লীলতাই নগ্নতা নয় নামধারী শ্লোগান বিক্রেতাদের আর সিনেমা শিল্পকে ব্যবসা প্রতিষ্ঠান বানানোর অশুভশক্তির।আজকে হয়তো সিনেমা হল ভেঙ্গে শপিং সেন্টার অনেক লাভজনক ব্যবসা মনে হচ্ছে কিন্তু প্রশ্ন হলো--সংস্কৃতির উপাদান হারিয়ে গেলে আমরা শুদ্ধ মানুষ পাবো কোথায়??? তখন আর জাতীয় শুদ্ধাচার কৌশল প্রণয়ন করে লাভ কি ??? পটল চাষ করে হাস্নাহেনার সুবাস পাওয়ার দিবাস্বপ্ন দেখা ছাড়া উপায় থাকবে না।
©somewhere in net ltd.
১|
২৯ শে জানুয়ারি, ২০২০ দুপুর ১:৫৯
মোঃ মাইদুল সরকার বলেছেন:
আহা! সিনেমার সেদিন আর নেই।
যুগের সাথে তাল মেলাতে পারছে। অনেক কারণেই সিনেমা আজ ধ্বংসের পথে।