নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

মানবতাকে সব পরিচয়ের উপরে স্থান দিতে পারলেই পৃথিবী আরও সুন্দর হবে।

চলো স্বপ্ন ছুঁই

একটু পড়ি, একটু লিখি

চলো স্বপ্ন ছুঁই › বিস্তারিত পোস্টঃ

"মোহচ্ছন্নতা"

০৯ ই ফেব্রুয়ারি, ২০২০ সকাল ৯:৩৯

তাবিজ বানাইয়া দে খ্যাত শিল্পী সালমা স্টেজে উঠে আমি চাইলাম যারে ভবে পাইলাম না তারে গান ধরতেই শ্রোতাদের চিতকার, উচ্চস্বরে লিপসিং। মনে প্রশ্ন জাগলো এত মানুষ কি মনের মানুষকে না পাওয়ার বিরহে কাতর?? এটা কি করে সম্ভব!!!

পরক্ষণেই মনে হলো প্রতিটি মানুষ হয়তো প্রিয় মানুষের সাথে ঘর বাধতে পারেনি এটা সত্য নয় কিন্তু প্রত্যক মানুষের জীবনেই না পাওয়ার বেদনা রয়েছে যা সৃষ্টির আদিকাল থেকেই আছে, থাকবে পৃথিবীর শেষদিন পর্যন্ত। জীবন মাত্রই অপূর্ণতায় দিনাতিপাত করে, তৃপ্তির ঢেকুর সবার ভাগ্যে জুটে না। এই ধরার বুকে খুব কম মানুষই আছে চোখ খোলার পর থেকে চোখ বুজার মাঝে নিজেকে নিয়ে সন্তুষ্ট থাকতে পারে।তাইতো আমি চাইলাম যারে ভবে পাইলাম না তারে গানের এত দরদ, এত জনপ্রিয়তা।

সালমার তিনটি গান শেষ না হতেই Dust storm এসে খবর নিয়ে গেল সালমা কেমন গায়,মাদুলি কি বানাচ্ছে না সাম্পানওয়ালাকে খুজতেছে দিনরাত। সালমাও নিজেকে ধুলোর ঝরের কাছে সপে দিয়ে বলছে -কে জানে কয়টা গান কপালে আছে। প্রতিটি মানুষ হয়তো তার উত্থানের বাদ্য-বাজনা শুনতে পারে না কিন্তু কখন অবনমন হয় তা ঠিকই উপলব্ধি করতে শিখে।

ভাগ্যের কি খেলা -যে সালমার কন্ঠ শুনতে মানুষ মরিয়া হয়ে বসে থাকত সেই সালমাই স্টেজে নিজের ইচ্ছাকৃত শেষ গানটি গাওয়ার সময় পেল না,স্টেজে জেমস উঠার ঝক্কি।ঠাই নাই ঠাই নাই ছোট সে তরী, যেখানে বড় কৃতকর্মের কাছে ছোটগুলো ম্লান হচ্ছে প্রতিনিয়ত। সালমাকে স্টজ ছেড়ে দিতে হল নির্মম পৃথিবীর নিষ্ঠুর বাস্তবতার কাছে -"জেমস যেখানে স্টেজে উঠতে ব্যস্ত, সালমার গান শোনার শ্রোতা কই????!!!!", ''এই পৃথিবী কাউকে তার প্রাপ্য সম্মানের চেয়ে এতটুকু বেশি দেয় না,এতটুকু আতিথেয়তা করার সময় এই জগতের নেই, আছে গুণের পূজা করার ঢের সময় তবু সামাজিকতা নিজের জন্য ধার্যকৃত ভাগের এতটুকু বেশিও নয়।"

জেমস গান ধরতেই উল্লাসে ভরপুর সমস্ত প্রাঙ্গণ, তবে তা ফিকে হতে বেশি সময় লাগেনি।যখন শ্রোতাদের ধরে রাখার জন্য পর্যাপ্ত মসলার অভাব হল বেশ এক দুই করে বাড়ির পানে চল। যেই জেমস উথাল-পাতাল করে দর্শক মাতিয়ে তুলতে পারে না তাকে সহ্য করার ধৈর্য কার আছে বলুন। জেমসকে দেখেই মন হল বেশ অসুস্থ, সাবলীলভাবে জমিয়ে তুলতে পারছিলেন না এটা সেও বুঝতেছিলেন কিন্তু সবার জীবনেই এমন অনেক সময় আসে যখন নিজের সর্বোচ্চটা বিলিয়ে দিয়েও দর্শক ধরে রাখা যায় না তা যত হাই প্রোফাইলই হোক না কেন। সময় বড় আপন,সময় বড় পর বানিয়ে দেয়।

প্রতিদিন দুই-চারটা কনসার্ট করা জেমসের অসুস্থতার সময় কই ???? গান প্রতি বাজেট হিসেব করা শিল্পী হঠাৎ অসুস্থ হলে দর্শক গালিই দেয়,বুঝতে চায় না শিল্পীর বাইরে সেও রক্ত মাংসের একজন মানুষ। জেমসের জীবন-যৌবন তো গেল গান আর গানের ছন্দ মেলাতে, জীবনে গানকে আপন করে পেতে।অর্থের পিছনে ছুটতে, নিজের খারাপ সময় ভুলে শ্রোতাদের ভালো শিল্পকর্ম উপহার দিতে। তবুও জীবনের শেষ বেলা যখন দেখি এন্ড্রু কিশোর, খালিদ হাসান মিলুরা,আহমেদ শরীফ-এটিএম শামসুজ্জামানরা চিকিৎসার জন্য হাত পাতছে ; জীবনের হিসেব তখন অটোমেটিক্যালি মিলে যায়। তখন পাশাপাশি চোখের সামনে ভেসে উঠে লেইস ফিতাওয়ালা অতি সাধারণত একজন গ্রাম্য ফেরিওয়ালা আর কোটি দর্শকের হৃদয়ের মণিকোঠায় থাকা জেমস, যাদের মধ্যকার ব্যবধান শুধু কিছু সময় ছাড়া আর কিছু নয়।সারা দুনিয়ার মানুষগুলোকে মাতিয়ে রাখা মানুষগুলো জীবন সায়াহ্নে বড্ড বেশি একা হয়ে যায়,বড় বেশি অভাবে পড়ে যায়। যেখানে মিলা,এস আই টুটুলরা সংসার চালাতে পারেনা,সেখানে গিটারে যে সুর উঠে তা দিয়ে মানসিক শান্তি বা পেট কোনটাই চলে না। যোগ্যতার ফেরিওয়ালা পৃথিবী কম নম্বরধারীদের দরজায় ভুলেও কড়া নাড়ে না। পার্থিব জীবনে শুধু মোহাচ্ছন্নতা মানুষকে ভুলিয়ে রাখে জীবনের মর্মার্থ বুঝতে,আপন কথাকে আপন করে বুঝতে দেয় না যান্ত্রিক জীবনের অনুষঙ্গগুলো। বক্স অফিসে ঝড় তুলে গলির দেয়ালে দেয়ালে উঠা আর ছবি হয়ে ঘরে ঝুলে থাকার মধ্যে ব্যবধান সামান্যই।

এই পৃথিবীকে যতদিন দিতে পারবে পৃথিবী তোমার ভার বইবে অন্যথায় সেও তোমাকে মাটিতে ফেলবে এর চেয়ে বড় সৌন্দর্য আর হয় না। সাময়িক জীবনে স্বল্প মুহুর্তকে আমরাই এত গুরুত্বপূর্ণ বানিয়ে ফেলি,সময়ের ফ্রেমে তুলে রাখতে মরিয়া হয়ে উঠছি প্রতিনিয়ত অথচ সৃষ্টির সৃষ্টি এমন তা'তপর্য বহন করে না।


মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.