নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

বিশবছরের একজন ক্ষুধার্ত মানুষ তবে সুখি ও বিস্ময়কর! যার অতীত ঘোলাটে, বর্তমান ধূসর আর ভবিষ্যৎ অন্ধকার.....

মো:দেলোয়ার হোসেন

বিশ বছরের একজন ক্ষুধার্ত মানুষ তবে সুখি ও বিস্ময়কর! যার অতীত ঘোলাটে, বর্তমান ধূসর আর ভবিষ্যৎ অন্ধকার.....

মো:দেলোয়ার হোসেন › বিস্তারিত পোস্টঃ

জীননানন্দের কবিতা

০২ রা অক্টোবর, ২০১৬ সকাল ৯:৫১

আট বছর আগের একদিন



শোনা গেল লাশকাটা ঘরে

নিয়ে গেছে তারে;

কাল রাতে - ফাল্গুনের রাতের আঁধারে

যখন গিয়েছে ডুবে পঞ্চমীর চাঁদ

মরিবার হল তার সাধ ।



বধু শূয়েছিল পাশে, শিশুটিও ছিল;

প্রেম ছিল, আশা ছিল - জোছনায় - তবু সে দেখিল

কোন ভূত? ঘুম কেন ভেংগে গেল তার?

অথবা হয়নি ঘুম বহুকাল - লাশ কাটা ঘরে শুয়ে ঘুমায় এবার ।



এই ঘুম চেয়েছিলে বুঝি !

রক্তফেনামাখা মুখে মড়কের ইদুরের মত ঘাড় গুজি

আঁধার ঘুজির বুকে ঘুমায় এবার ;

কোনদিন জাগিবে না আর ।



‘কোনদিন জাগিবে না আর

জানিবার গাঢ় বেদনার

অবিরাম অবিরাম ভার

সহিবে না আর -’

এই কথা বলেছিল তারে,

চাঁদ ডুবে গেলে - অদ্ভুত আঁধারে

যেন তার জানালার ধারে

উটের গ্রীবার মত কোন এক নিস্তব্ধতা এসে ।



তবুও তো পেঁচা জাগে;

গলিত স্থবির ব্যাংগ আরো দুই মুহূর্তের ভিক্ষা মাগে

কয়েক্টি প্রভাতের ইশারায় -অনুমেয় উষ্ণ অনুরাগে ।



টের পাই যূথচারী আঁধারের গাঢ় নিরুদ্দেশে

চারি দিকে মশারির ক্ষমাহীন বিরুদ্ধতা;

মশা তার অন্ধকার সঙ্ঘারামে জেগে থাকে জীবনের স্রোত ভালবেসে ।

রক্ত ক্লেদ বসা থেকে রৌদ্রে ফের উড়ে যায় মাছি ;

সোনালী রোদের ঢেইয়ে উড়ন্ত কীটের খেলা কত দেখিয়াছি ।



ঘনিষ্ট আকাশ যেন, কোন বিকীর্ণ জীবন

অধিকার করে আছ ইহাদের মন ।

দুরন্ত শিশুর হাতে ফড়িংয়ের ঘন শিহরণ

মরনের সাথে লড়িয়াছে;

চাঁদ ডুবে গেলে পর প্রধান আঁধারে তুমি অশ্বত্থের কাছে

একগাছা দড়ি হাতে নিয়ে গিয়েছিলে তবু একা একা,

যে জীবন ফড়িংয়ের দোয়েলের - মানুষের সাথে তার হয় নাকো দেখা,

এই জেনে ।



অশ্বথের শাখা

করেনি কি প্রতিবাদ? জোনাকীর ভিড় এসে সোনালী ফুলের স্নিগ্ধ ঝাকে

করে নি কি মাখা মাখি ?

থুর থুরে অন্ধ পেঁচা এসে

বলে নি কিঃ ‘ বুড়ি চাঁদ গেছে বুঝি বেনো জলে ভেসে?

চমৎকার! —

ধরা যাক দুই একটা ইদুর এবার !

জানায় নি কি পেঁচা এসে এ তুমুল গাঢ় সমাচার ?



জীবনের এই স্বাদ - সুপক্ক যবের ঘ্রাণ হেমন্তের বিকালের -

তোমার অসহ্য বোধ হ'ল;

মর্গে কি হৃদয় জুড়ালো

মর্গে - গুমোটে

থ্যাঁতা ইদুরের মত রক্তমাখা ঠোঁটে !

শোনো

তবুও এ মৃতের গল্প; - কোন

নারীর প্রণয়ে ব্যর্থ হয় নাই ;

বিবাহিত জীবনের সাধ

কোথাও রাখেনি কোন খাদ ।

সময়ের উদবর্তনে উঠে আসে বধু

মধু - আর মননের মধু

দিয়েছে জানিতে;

হাড়হাভাতের গ্লানি বেদনার শীতে

এ জীবন কোনদিন কেঁপে ওঠে নাই;

তাই

লাশকাটা ঘরে

চিৎ হ'য়ে শূয়ে আছে টেবিলের ‘পরে ।



জানি - তবু জানি

নারীর হৃদয় - প্রেম -শিশূ - গৃহ- নয় সবখানি;

অর্থ নয়, কীর্তি নয়, স্বচ্ছলতা নয় -

আরো এক বিপন্ন বিষ্ময়

আমাদের অন্তর্গত রক্তের ভিতরে

খেলা করে;

আমাদের ক্লান্ত করে;

ক্লান্ত ক্লান্ত করে ;

লাশ কাটা ঘরে

সেই ক্লান্তি নাই,

তাই

লাশকাটা ঘরে

চিৎ হয়ে শূয়ে আছে টেবিলের ‘পরে ।



তবু রোজ রাতে আমি চেয়ে দেখি, আহা,

থুরথুরে অন্ধ প্যাঁচা অশ্বত্থের ডালে বসে এসে,

চোখ পাল্টায়ে কয়ঃ ‘ বুড়ি চাঁদ গেছে বুঝি বেনো জলে ভেসে?

চমৎকার!

ধরা যাক দুই একটা ইদুর এবার –



হে প্রগাঢ় পিতামহী, আজো চমৎকার?

আমিও তোমার মত বুড়ো হবো - বুড়ি চাঁদটারে আমি

ক'রে দেব কালীদহে বেনোজলে পার;

আমরা দু'জনে মিলে শূন্য ক'রে চ'লে যাব জীবনের প্রচুর ভাঁড়ার ।

মন্তব্য ১ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (১) মন্তব্য লিখুন

১| ০২ রা অক্টোবর, ২০১৬ সকাল ১০:০৬

ব্লগ সার্চম্যান বলেছেন: সুন্দর কাব্য ।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.