নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

একটি বেসরকারী টিভি চ্যানেলে ক্যামেরাপারসন হিসাবে চাকুরীরত। ত্রিকোন চলচ্চিত্র শিক্ষালয় নামে একটি ফিল্ম স্কুলের প্রতিষ্ঠাতা ও প্রশিক্ষক। গল্প, কবিতা লেখা ও অভিনয়ের অভ্যাস রয়েছে।

ইহতিশাম আহমদ

জানতে চাই, জানাতে চাই মানুষের অনুভুতির এপিঠ ওপিঠ

ইহতিশাম আহমদ › বিস্তারিত পোস্টঃ

চলচ্চিত্র র্নিমাণ টিপস-১০ লেন্স-টেলিফটো

১২ ই এপ্রিল, ২০১৫ সকাল ১১:২৬



লেন্স কি? কিভাবে তা বানায়? কেন এই লেন্সটা এই রকম? এই জাতীয় অনেক আলোচনা করা যেতেই পারে। কিন্তু যেহেতু আপনারা বিজ্ঞানী বা ইঞ্জিনিয়ার হবেন না, হবেন চলচ্চিত্র নির্মাতা, তাই কোন লেন্স দিয়ে কি কি কাজ করা যায় বা কোন লেন্সের কি বৈশিষ্ট তাই সহজ ভাষা জানানোর চেষ্টা করব।

লেন্স মূলতঃ তিন প্রকার। ওয়াইড এংগেলে লেন্স, নরমাল এংগেল লেন্স ও টেলিফটো লেন্স। এই পর্বে আমরা টেলিফটো লেন্সের বৈশিষ্ট ও ব্যবহার নিয়ে আলোচনা করব।

পরিচিতি-
ফুল ফ্রেম ক্যামেরার ক্ষেত্রে মোটামোটি ভাবে ৭০এমএম এবং ক্রপ সেন্সর ক্যামেরার ক্ষেত্রে মোটামোটি ভাবে ৫০ এমএম থেকে শুরু করে এর যত উপরে যাওয়া যায় এমন কি মহাকাশের গ্রহ নক্ষত্র দেখার জন্যে যে হাবল টেলিস্কোপ রয়েছে সেটাও একটি টেলিফটো লেন্স। কাজের সুবিধার জন্যে টেলি ফটো লেন্সকে তিন ভাগে ভাগ করা হয়। ১. মিডিয়াম টেলিফটো লেন্স- ফুল ফ্রেমের ক্ষেত্রে ৭০ এমএম থেকে ৮৫ এমএম পর্যন্ত এবং ক্রম সেন্সরের ক্ষেত্রে ৫০ এমএম। ২. টেলিফটো লেন্স- ফুলফ্রেমের ক্ষেত্রে ১৩৫ এমএম থেকে ৩০০ এমএম পর্যন্ত এবং ক্রম সেন্সরের ক্ষেত্রে ৮৫ এমএম থেকে ২০০ এমএম পর্যন্ত। ৩. সুপার টেলিফটো লেন্স- ফুল ফ্রেমের ক্ষেত্রে ৪০০ এমএম থেকে এবং ক্রম সেন্সরের ক্ষেত্রে ২০০ এমএম থেকে যত উপরে যেতে পারেন। এখানে বাজারে যে সমস্ত লেন্স কিনতে পাওয়া যায় তার উপরে ভিত্তি করে হিসাবটা দেয়া হল।

বৈশিষ্ট-
বৈশিষ্টগত ভাবে টেলিফটো লেন্সকে ওয়াইড এংগেল লেন্সের বিপরীত বলা যায়। খালি চোখে কোন বস্তুটিকে যতটা কাছে এবং ছোট দেখা যায় টেলিফটো লেন্স দিয়ে সেই বস্তুকে তুলনামূলক ভাবে তার চেয়ে বেশী কাছে এবং বড় দেখা যায়। আর তাই এই লেন্স দিয়ে তোলা ছবির ‘এংগেল অফ ভিউ’ তুলনামূলক ভাবে সংকীর্ণ হয়ে থাকে। বিষয়টাকে একটা উদাহরণ দিয়ে বোঝানো যাক। মনে করেন, আপনার সামনে একটি আম গাছ, আম গাছের পিছনে একটা নদী, নদীর মাঝে একটা নৌকা, নদীর ওপারে একটা গ্রাম, গ্রামের শেষ মাথায় একটা তালগাছ আছে। কোথায় দাঁড়িয়ে আপনি ছবিটা তুলছেন এবং কত ফোকাল লেংথের লেন্স ব্যবহার করছেন তার উপর নির্ভর করে শুধু নদীর পাড় বা শুধু নৌকা বা শুধু গ্রামের শেষ মাথার তাল গাছ ফ্রেমে ধরা পড়বে।

অপনারা অনেকেই ‘শ্যালো ডেপথ অফ ফিল্ড’ কথাটির সাথে পরিচিত। এই লেন্সের ‘ডেপথ অফ ফিল্ড’ শ্যালো বা অগভীর বা কম হয়ে থাকে। অর্থাৎ এই লেন্স দিয়ে তোলা ছবির পুরোটাই ফোকাসে নাও থাকতে পারে। ধরা যাক, আপনার ক্যামেরার ‘ক’ ফিট দূর থেকে ডেপথ অফ ফিল্ড শুরু হয়ে শেষ হয়েছে ক্যামেরা থেকে ‘খ’ ফিট দূরে। মানে এই ‘ক’ ফিট থেকে ‘খ’ ফিটের মধ্যে যা কিছু থাকবে সব স্পষ্ট দেখাবে। এর চেয়ে কাছের বা দূরের বস্তুকে দেখাবে অস্পষ্ট। সুতরাং আপানার বিষয় বস্তুর পুরোটাই যদি এই ফোকাসড জোনের মঝে থাকে তবে ফ্রেমের পুরোটাই স্পষ্ট দেখাবে। অপর দিকে যদি বিষয় বস্তুর কিছুটা এই জোনের ভিতরে আর কিছুটা জোনের বাইরে থাকে তবে ফ্রেমের কিছুটা ফোকাসড বা স্পস্ট আর কিছুটা ডিফোকাস বা অস্পষ্ট দেখাবে। টেলিফটো লেন্সের এই ফোকাস জোনটির পরিমান ওয়াইড এংগেল ও নরমাল এংগেল লেন্সের তুলনায় কম হয়ে থাকে।

ফোকাস শিফটিংএর কাজ করার জন্যে টেলিফটো লেন্স একটি আদর্শ লেন্স। কারণ ডেপথ অফ ফিল্ড শ্যালো হওয়ার কারণে এক সংগে অনেক বস্তুকে এই লেন্স দিয়ে স্পষ্ট ভাবে দেখানো সম্ভব নয়। সুতরাং ফোকাস রিং ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে এক বস্তু থেকে আরেক বস্তুতে অনায়াসেই ফোকাস সরানো বা শিফট করা যায়। তবে বেশী বড় ফোকাল লেংথ-এর লেন্সগুলোতে ডেপথ অফ ফিল্ড অনেক বেশী সংকীর্ণ বা শ্যালো হওয়াতে অনেক সময় কাজ করতে অসুবিধা হয়ে থাকে।

এখানে আরেকটি বিষয় মনে রাখা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এই লেন্সের ডেপথ অফ ফিল্ড শুরুই হয় ক্যামেরার বেশ অনেকখানি দূর থেকে। আর এই কারণে এই লেন্স দিয়ে কোন ভাবেই কাছের ছবি স্পষ্ট ভাবে তোলা সম্ভব নয়। অর্থাৎ আপনার সামনের আমগাছ, নদী, নৌকা, গ্রাম, তালগাছ এসবের মধ্যে সবচেয়ে কাছের আম গাছটির ছবি আপনি কোন ভাবেই তুলতে পারছেন না। যত বেশী ফোকাল লেংথের লেন্স ব্যবহার করবেন তত বেশী কাছের বস্তুর ছবি তোলা অসম্ভব হয়ে পড়বে। সেই সাথে তত বেশী দূরের বস্তু বস্তুর ছবি তোলা সম্ভব হয়ে উঠবে। এক কথায় কম ফোকাল লেংথ মানে কাছের বস্তুর ছবি আর বড় ফোকাল লেংথ মানে দূরের বস্তুর ছবি।

যেহেতু খালি চোখের চেয়ে এই লেন্স দিয়ে একটি বস্তুকে বাস্তবের চেয়ে কাছে এবং আকারে বড় দেখা যায় তাই এই লেন্স ব্যবহার করে বিষয় বস্তুর সাথে খুব সহজেই দর্শকের মানষিক যোগাযোগ সৃষ্টি করা যায়। এর ফ্রেম ছোট হওয়াতে দর্শকের মনোযোগ র্নিদিষ্ট একটি বিষয়ে কেন্দ্রিভূত করা যায়। অর্থাৎ নায়ক যখন কথা বলছে তখন দর্শক শুধু নায়কের কথা শুনতেই বাধ্য হবে। কারণ নায়কের আশে পাশে বা পিছনে কি হচ্ছে তা দেখার সুযোগ থাকছে না। সেই সাথে নায়কের অভিব্যক্তির পুরোটাই সেখানে স্পষ্ট ভাবে ফুটে উঠছে। যে কোন দৃশ্যের খুঁটিনাটি বা ডিটেল দেখানোর ক্ষেত্রে টেলিফটো লেন্সের জুড়ি নেই। তাছাড়া এই লেন্স (সুপার টেলিফটো লেন্স ছাড়া) ব্যবহারে সাধারণত বস্তুর আকার বা আকৃতির কোন বিকৃতি ঘটে না।

এই লেন্স ব্যবহার করে সঠিক এক্সপোজার পাওয়ার জন্যে প্রচুর আলোর প্রয়োজন। অর্থাৎ একই সার্টার স্পিড, এ্যাপারচার ও সেন্সর সেনসিটিভিটিতে ঝকঝকে ছবি তুলতে ওয়াইড এংগেল এবং টেলিফটো লেন্সের চেয়ে বেশি আলোর প্রয়োজন যায়।

ব্যবহার-
টেলিফটো লেন্স ব্যবহার করা ওয়াইড এংগেল লেন্সের এবং টেলিফটো লেন্সের চেয়ে কঠিন। এর ডেপথ অফ ফিল্ড সংকীর্ণ বা কম হওয়াতে শুটিংএর সময় ফোকাস ঠিক আছে কিনা এই ব্যাপারে সদা সচেতন থাকতে হয়। তাছাড়া অতি সামান্য ঝাঁকুনির ফলে ছবি ঝাপসা হয়ে যাওয়ার ভয় রয়েছে। তাই সুটিংএর সময় ট্রাইপড ব্যবহার করা অতি জরুরী। টেলিফটো লেন্স দিয়ে হাতে ক্যামেরা নিয়ে শুট করা প্রায় অসম্ভব। যেহেতু এই লেন্সের ডেপথ অফ ফিল্ড শুরুই হয় ক্যামেরার বেশ অনেকখানি দূর থেকে তাই যে বস্তু বা বাক্তির ছবি তুলতে চান সেই বস্তু বা বাক্তি থেকে বেশ খানিকটা দূরে দাঁড়াতে হয় শুটিঙের সময়। অর্থাৎ ছোটো পরিসরের সেটে এই লেন্স ব্যবহার করা কিছুটা কঠিন।

ক্লোজ, বিগ ক্লোজ বা এক্সট্রিম ক্লোজ শট নেয়ার সময় টেলিফটো লেন্স ব্যবহার হয়ে থাকে।

মন্তব্য ২ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (২) মন্তব্য লিখুন

১| ১২ ই এপ্রিল, ২০১৫ সকাল ১১:৪৮

কাল্পনিক_ভালোবাসা বলেছেন: খুব চমৎকার একটি সিরিজ চলছে! ভালো লাগছে।

১২ ই এপ্রিল, ২০১৫ রাত ১১:০৭

ইহতিশাম আহমদ বলেছেন: অনেক ধন্যবাদ....

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.