নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

ইল্লু

ইল্লু › বিস্তারিত পোস্টঃ

Orhan Pamuk এর My Name is Red(অনুবাদ) ধারাবাহিক

১৭ ই মে, ২০২৩ ভোর ৪:১৪

Orhan Pamuk এর My Name is Red(অনুবাদ)
ধারাবাহিক
ফেনিত অর্হান পামুক
জন্মঃ জুন,১৯৫২
তুরস্কের খ্যাতনামা এক উপন্যাস লেখক
২০০৬ সালে সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার পান
খ্যাতনামা লেখার মধ্যে My name is red,Silent house,white castle আরও অন্যান্য অনেক লেখা

(১০)


আমি সেকুরে

সত্যি বলতে কি ফেরীওয়ালা এসথারের আসার কথা শুনলেই,আমি কল্পনার স্রোতে ভেসে যেতাম,ভাবতাম এসথারের হাতে আছে আমার প্রেমে পাগল কোন সুপুরুষ প্রেমিকের চিঠি,যার কথার প্লাবনে আমি আকুল হয়ে যাব।আমি তো সুন্দরী,বুদ্ধিমতী,যদিও বিধবা,তবু যৌবনের জ্বালা কি আমাকে অস্থির করে না?যখনই দেখতাম চিঠিগুলো আর কিছু না সেই পুরোনো মানুষদের,হতাশ হয়ে ফিরে যেতাম স্বামীর অপেক্ষায়।এসথারের কথায় কেন জানি আজকাল আরও বেশী এলোমেলো হয়ে যাই,যন্ত্রনায় আরও অস্থির হয়ে যাই।

এ কথাগুলো তো আর কাউকে তো বলা যায় না,বলা যাবে না,তাই নিজের সাথে নিজেই আওড়ে যাই।রান্নাঘর থেকে ছুটে আসছিল ফুটানো পানির শব্দ,লেবু,পেঁয়াজের গন্ধ,হাইরিয়ে হয়তো আলু সেদ্ধ করছে।আঙ্গিনার ডালিম গাছের নীচে সেভকেত আর অর্হান লাঠি দিয়ে রাজা বাদশার তলোয়ার খেলার চীৎকার ভেসে আসছিল।পাশের ঘরে বাবা একা বসে আছে,হাসানের চিঠিটা পড়লাম,ভঁয় পাওয়ার তেমন কিছুই ছিল না।তবু অজানা কিছু একটার ভয়ে বিচলিত হয়ে ছিলাম,বাহবা দিলাম নিজেকে,হাসানের সাথে একই বাড়ীতে থেকেও কোন সময়ে তার সাথে যৌনসঙ্গমে লিপ্ত হইনি,মাতাল হয়ে যাইনি হাসানের ডাকে আর শরীরের উন্মাদনায়।সিয়াহর চিঠিটাও পড়লাম,সিয়াহ যেন একটা ছোট্ট পাখী আমার হাতের মুঠোতে।মেঘ ভেঙ্গে সুর্যের হাসিতে ভঁরে গেছে ঘরটা,আর আমি যেন রাতের অন্ধকারে হাসানের ঘরে ঢুকে তার সাথে যৌনসঙ্গম করছি,আল্লাহ ছাড়া আর কি কেউ জানে?হাসান দেখতে একেবারে আমার স্বামীর মত,তার সাথে যৌনসঙ্গম করাটা তো স্বামীর সাথে যৌনসঙ্গমের করার মতই।আজকাল এ ধরণের পাগলামি প্রায়ই আমাকে অস্থির করে দেয়।সূর্যের তাপে শরীরটা বেশ গরম হয়ে গেছে তখন,বুঝতে পারছি শরীরের সব অঙ্গপ্রতঙ্গ,ঘাড়,স্তনের বোটাটা পর্যন্ত তখন যৌন অনুভুতিতে তছনছ হয়ে যাচ্ছে।
অর্হান হঠাৎ দরজা খুলে ভেতরে ঢুকলো,‘মা,কি পড়ছো’?
আমি যে বললাম,এসথার চিঠিটা দেয়ার পর আমি আর পড়িনি,মিথ্যা,আমি
চিঠিগুলো বারেবারে পড়ে যাচ্ছিলাম আবার।এবার সেগুলো পড়ে ব্লাঊজের ভেতরে ঢুকিয়ে রাখলাম।

অর্হানকে ডেকে বললাম,‘এদিকে আয়,আমার কোলে বস’।‘ও বাবা তুই এত ভারী হয়ে গেছিস।আল্লাহ তোকে ভাল রাখুক’,একটা চুমু দিয়ে বললাম, ‘তোর হাত পা তো বরফের মত ঠান্ডা হয়ে গেছে...’।

‘তোমার শরীরটা বেশ গরম,মা’,বলে অর্হান আমার বুকে মুখ গুজে দিল।
একে অন্যকে জড়িয়ে ধরে চুপচাপ বসে ছিলাম,আমরা।আদর করে একটা চুমু দিয়ে, অর্হানকে আরও কাছে টেনে নিলাম,কোন কথা ছিল না,কারও মুখে।

‘কাতুকুতু লাগছে,মা’,অর্হান বললো।
‘আচ্ছা জিনদের সুলতান এসে যদি তোকে ইচ্ছা পূরন করার ক্ষমতা দেয়,তোর ইচ্ছাটা কি হবে’,আমি প্রশ্ন করলাম।
‘আমি বলবো সেভকেতকে যেন এখান থেকে নিয়ে চলে যায়’।
‘এ ছাড়া আর কি কিছু?একজন বাবা দরকার না,তোর’?
‘কোনদিনই না,বড় হয়ে আমিই তোমাকে বিয়ে করবো’।

সময়ের সময়ে অনেক কিছুই হারায় মানুষ,হারায় সৌন্দর্য,হারায় স্বামী,টাকাপয়সা,
তবে যা বেদনাদায়ক তা হলো যখন তোমাকে দেখে অন্য কোন মহিলার আর কোন ঈর্ষা জাগে না।অর্হানকে কোল থেকে নামিয়ে দিলাম,আমার মত শয়তান মহিলার একজন ভাল মানুষকে বিয়ে করা উচিত,এটা ভাবতে ভাবতে বাবার ঘরে হেঁটে গেলাম।

‘আমাদের মহামান্য সুলতানের বিরাট একটা পুরস্কার দেবে,তার বইটা তো নিশ্চয় শেষ হয়ে গেছে।তুমি কি আবার ভেনিসে যাবে’?আমি বললাম।

‘জানি না,খুনের ব্যাপারটা সত্যি সত্যিই মানসিক ভাবে আমকে তছনছ করে দিচ্ছে।
আমাদের শত্রু,বেশ শক্তিশালী’,বাবা বললো।

‘জানি,আমার সামাজিক অবস্থাটা হয়তো ওদেরকে আরও সাহস জোগাচ্ছে,অনেক ভুল ধারণা,আমাকে নিয়ে হয়তো অনেকের মনে অনেক অস্বাভাবিক আশা আকাঙ্খাও আছে’।
‘তুমি কি বলতে চাচ্ছ’?
‘মনে হয়,আমার একটা বিয়ে করা উচিত’।
‘কি’?বাবা বললো,‘কার সাথে?তুমি তো বিবাহিতা,এ ধারণাহ হঠাৎ কোথা থেকে আসলো?কেউ কি তোমাকে প্রস্তাব দিল?যদিও ভাল একটা পাত্র খুঁজে পাওয়া হয়তো তেমন কষ্টকর হবে না’,আমার বাবার যুক্তিযুক্ত উত্তরটা।‘হয়তো সেটা সম্ভবও হবে না,এমন না যে সেটা তোমার জানা নেই।তুমি বুঝতেই পারছো,আরও প্রয়োজনীয় অনেক কিছুই আছে আগে যার সমাধান করতে হবে,তোমার বিয়ের চিন্তার আগে’,একটুঁ চুপ করে বাবা আরও বললো, ‘আসল কারণটা কি এটা,যে তুমি আমার সাথে থাকায় আর স্বস্তি
পাচ্ছ না’?
‘জান স্বপ্নে দেখলাম,আমার স্বামী মারা গেছে,একজন বৌ এর স্বামী হারানোর দুঃখটা আছে আমার মধ্যে,তবু আমি একটুঁও কাঁদিনি’,আমি বললাম।
‘যারা ছবির কথা বুঝতে পারে,তারাই হয়তো জানে স্বপ্নের ভাষা’।
‘তুমি কি ভাব,এটা ঠিক হবে,যদি আমি নিজে আমার স্বপ্নের বিশ্লেষণ করি’?
বেশ একটা নিঃস্তব্ধতায় ছেয়ে ছিল কিছুটা সময়,তারপর আমরা দুজন দুজনের দিকে তাকিয়ে হেসে ফেললাম।
‘স্বপ্ন থেকে তোমার স্বামীর মৃত্যুর কথাটা ভেবে নেয়াটাই স্বাভাবিক,তবে তোমার শ্বশুর,
দেবর,এমন কি কাজীরও দরকার প্রমান’।
‘প্রায় দু বছর হয়ে গেল আমার ছেলেদের নিয়ে এখানে আসার,কিন্ত শ্বশুর পক্ষ আজও তো আমাকে নিয়ে যায়নি,যদিও এটা আমার বাবার বাড়ী,আমি এখানেই পড়ে আছি জঞ্জালের মত ’।
‘কারণ এটাই যে ওদের নিজেদের অনেক দোষ আছে,তবে এটা ভাবলে ভুল করবে যে তোমার ছাড়াছাড়ির ব্যাপারটা ওরা খুব সহজে মেনে নিবে’।
‘আমরা যদি কট্টপন্থী ‘মালিকি’গোত্রের হতাম,আর কাজী যখন দেখতো চার বছর চলে গেছে আর আমার স্বামীর কোন খোঁজ খবর নাই,শুধু আমার ছাড়াছাড়িই মেনে নিত না,বরং ভরনপোষনের জন্য কিছু টাকারও বন্দোবস্ত করে দিত।যাই হোক আল্লাহর দোয়ায় যেহেতু আমরা,হানিফি গোত্রের সেটা আমাদের জন্য প্রযোজ্য না’।
‘আমার কাছে কাজী সেফতের মত এত যুক্তিতর্কের দরকার নাই,ওটা যুক্তিযুক্ত কোন কথা না’।
‘ইস্তাম্বুলের মেয়েরা যাদের স্বামী যুদ্ধ থেকে ফিরে আসেনি,সবাই সাক্ষী জোগাড় করে ছুটে গেছে কাজী সেফতের কাছে’,আমি বললাম, ‘কাজী শুধু জিজ্ঞাসা করে, “তোমার স্বামী মারা গেছে?কতদিন হলো নিখোঁজ?তোমার সংসার চালাতে কষ্ট হচ্ছে?এরা কি তোমার সাক্ষী”?তারপর কোন ঝামেলা না করেই বিয়ে করার অনুমতি দেয়’।
‘আমার প্রিয় সেকুরে,জানি না তোমার মাথায় এ সব কুবুদ্ধি কোথা থেকে আসলো?তোমার মত বুদ্ধিমতী মেয়ের মন থেকে যুক্তি পালালো কেমন করে’?বাবা বললো।
‘ছাড়াছাড়ি হওয়ার পরে,যদি কোন পুরুষ থাকে যে আমাকে সব যুক্তির বাইরে নিয়ে যাবে,সে যেই হউক তোমার কথামত তাকেই স্বামী হিসাবে মেনে নিব’।
আমার চালাক বাবা যখন বুঝতে পারলো,তার মেয়েও কম চালাক না,তখন একটুঁ দোনোমোনো হয়ে গেল।তিনটা কারণ হতে পারে,
১)বেশ একটুঁ ঝামেলা তার জন্যে আর কোন একভাবে বের হয়ে আসা।
২)হয়তো দুঃখে,কান্নায় তারও মনটা ভঁরে গেছে।
৩) এক আর দুই মিলিয়ে কোন ভাবে কান্নাকাটি করে সমস্যা থেকে সরে যাওয়া।

‘বুড়ো বাবাকে একলা ফেলে,তুমি কি তোমার ছেলেদের নিয়ে চলে যাবে?তুমি কি জান
‘আমাদের’ এই বই এর জন্য’,হ্যা,বাবা বললো, “আমাদের বই এর জন্যে হয়তো আমিও খুন হতে পারি,নিয়ে যাও ছেলেদের,মরণটাই ভাল আমার’।
‘বাবা,তুমিই না একসময় না বলতে তালাক ছাড়া শয়তান দেবরের হাত থেকে আমার উদ্ধারের আর কোন উপায় নাই’।

‘আমি চাই না তুমি আমাকে এ ভাবে একলা ফেলে যাও।একদিন তোমার স্বামী
হয়তো ফিরে আসবে,যদি নাও ফিরে আসে,এটাও তোমার সংসার,এখানে তোমার কোন অসুবিধা হবে না’।
‘বাবা তুমি জান,এ বাসায় তোমার সাথে জীবন কাটানোর চেয়ে আর বেশী আনন্দের কি হতে পারে,আমার জন্যে’?
‘সেকুরে,জানি এটা আমাকে খুশী করার জন্যেই বলছো,একটুঁ আগেই তুমি বলছিলে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব বিয়ে করতে চাও’?
এটা যেন একটা বন্ধ গলিতে পৌঁছানোর মত,বাবার সাথে কথা বলার,যেখানে সবকিছু আটকে থাকেঃসময়ে তুমি বুঝবে যে তোমার বোঝাটাই ভুল।
‘তাই কি বলছিলাম,আমি’,উত্তর দিলাম,তারপর কান্নাটা কোন ভাবে আটকে বললাম,
‘ঠিক আছে আর কোনদিন বিয়ে করবো না,আমি’।
‘যে তোমাকে বিয়ে করে এ বাসায় থাকবে,তার জন্যে আমার মনে একটা বিশেষ জায়গা থাকবে।জানি না কে সেই পুরুষ,যে তোমাকে নিয়ে এখানে জীবন কাটাতে রাজী হবে’?
আমরা দুই জনেই চুপ হয়ে গেলাম।আমরা দুজনেই জানি,বাবা কোন দিনই সেই পুরুষকে
সম্মান করবে না,যে ঘরজামাই হয়ে জীবন কাটাবে,সময়ে তার সাথে দূর্ববহার করবে,
অপমান করতেও নিঃসন্দেহে কোন দ্বিধা হবে না তার।এই অত্যাচার,অপমান কোন পুরুষই বা সহ্য করবে,এক সময় সংসার ছেড়ে পালাতে বাধ্যই হবে।
‘বাবার অনুমতি ছাড়া বিয়ে তোমার বিয়ে হবে না,ঠিক কি না?আমি চাই না তুমি বিয়ে কর,আর তোমাকে বিয়ের অনুমতি দিতে রাজীও না…’।
‘আমি বিয়ে করতে চাই না,চাচ্ছি ছাড়াছাড়ি,অজানার অপেক্ষার যন্ত্রনা থেকে উদ্ধার পেতে চাই’।
‘কোন অমানুষ যে শুধু নিয়েকে নিয়ে ব্যাস্ত থাকে তেমন একজনের হাতে পড়লে তোমার কি হবে?তুমি জান তোমাকে আমি কত ভালবাসি,সেকুরে।আর এ বইটা তো আমাদেরকে শেষ করতেই হবে’।
কোন উত্তর দেই নি,যদি মুখ খুলি-শয়তানের চক্রে জানিনা কি বলবো,কি করবো,
বাবাকে হয়তো বলে ফেলতে পারি, ‘হাইরিয়ের সাথে রাতের পর রাত শরীর খেলায় মত্ত হতে তোমার কোন কিছু বাধা তো হচ্ছে না’।কিন্ত একটা মেয়ের তার বুড়ো বাবাকে বলা কি ঠিক হবে,যে তার বুড়ো বাবা ক্রীতদাসী চাকরানীর সাথে রাত কাটিয়ে যাচ্ছে?
‘কে তোমাকে বিয়ে করতে চাচ্ছে’?
আমি মেঝের দিকে তাকিয়ে ছিলাম চুপচাপ,লজ্জায় না,রাগে,জানি না।কোন কিছু বলতে না পারায় আরও রেগে যাচ্ছিলাম।আমার মনের চোখে ভাসছিল বাবা আর চাকরানী হাইরিয়ের যৌনসঙ্গমের দৃশ্যটা,কান্নায় ভঁরে গেছে আমার মন,বললামঃ
‘আলু সেদ্ধ করছি,রান্নাঘরে যেতে হবে,না হলে পুড়ে যাবে’।
হেঁটে গেলাম পাশের ঘরে,যেখানে বন্ধ জানালাটা সবসময় তাকিয়ে আছে কুয়ার দিকে।অন্ধকারে বিছানায় শুয়ে পড়লাম,বাচ্চার মত কাঁদতে কাঁদতে ঘুমানোটা একটু
অন্য কিছু।এটা যে কি মানসিক যন্ত্রনা সেটা বোঝানো অসম্ভব,আমি ছাড়া এই আমাকে হয়তো আর কেউ ভালবাসে না।আমি এই যে নিজের মনে ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কাঁদছি,কার কাছে খুঁজে পাব একটু সান্তনা?

কিছুক্ষন পরে,অর্হান বিছানায় আমার পাশে শুয়ে পড়লো,তার মাথাটা ছিল আমার দুই স্তনের মাঝখানে,দেখলাম সেও কাঁদছে।তাকে কাছে টেনে নিয়ে জড়িয়ে ধরলাম,‘মা,কাঁদবে না’,একটুঁ থেমে সে বললো, ‘বাবা খুব শীঘ্রীই ফিরে আসবে যুদ্ধ থেকে’।
‘তুই কি ভাবে জানিস’?
কোন উত্তর দিল না,আমার ছেলে,তাকে আদর করে আরও জোরে বুকে জড়িয়ে ধরলাম।ছেলেকে বুকে জড়িয়ে ধরার শূধু যে কথাটা আমাকে অস্থির করছিল,বাবার আর হাইরিয়ের যৌনসঙ্গমের দৃশ্য।কেন যে এই কথাটা প্রতিশোধের ভাব নিয়ে আমার মনে এলো?


আমি তোমার প্রিয় চাচা

মেয়ের বাবা হওয়া,সত্যিই বেশ কষ্টের ব্যাপার,পাশের ঘর থেকে সেকুরের
ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কান্নার শব্দ ভেসে আসছে,কিন্ত কি,হাতে ধরা বই এর পাতাগুলো অবাক হয়ে দেখছিলাম।‘ধ্বংসের ইতিহাস’,বই এর যে পাতাটা দেখছিলাম সেখানে লেখা ছিল,মৃত্যুর তিনদিন পরে একজনের আত্মা আল্লাহর কাছ থেকে অনুমতি নিয়ে,
নিজের পুরোনো শরীরটা দেখতে গেল।কবরে শোয়া পচা,রক্তাত্ত শরীরটা দেখে আত্মা কেঁদে উঠলো, ‘আমার ইহলোকের শরীর,আমার বিধ্বস্ত শরীর’।জারিফ এফেন্দীর মুখটা ভেসে আসছিল,তার আত্মা যন্ত্রনায় কি ভাবে অস্থির হয়ে ছিল হয়তো,যখন সে দেখলো,শরীরটা পড়ে আছে কবরে না একটা কূয়ায়।

সেকুরের কান্না থেমে গেছে,বইটা একপাশে রেখে উলের শাল গায়ে বাইরে বেরোলাম,
দরজায় সেভকেত দাঁড়িয়ে ছিল।
‘নানা,কোথায় যাচ্ছ’?
‘বাড়ীর ভেতরে যা,জানাজায় যাচ্ছি’।
বরফে ঢাকা রাস্তা,গরীবদের ভাঙ্গাচুরা জর্জরিত বাড়ীঘর কোনরকমে দাঁড়িয়ে আছে,
কোন কোনটা ভেঙ্গে পড়ে যাচ্ছে,পাশে রেখে হেঁটে যাচ্ছিলাম,একজন বুড়োকে স্বভাব সুরে সর্তকতার সাথে হাঁটতে হয়,পড়ে গিয়ে যাতে হাড়গোড় ভেঙ্গে না যায়।গাড়ীর চাকা,খুরের নাল,বানানো কামারদের দোকান ছেড়ে শহরের দিকে এগিয়ে যাচ্ছিলাম।

জানি না কেন সবাই ঠিক করলো জানাজা শহরের এডির্নে গেটের মিহিরমাহ মসজিদে করার জন্যে।মসজিদে মৃত জারিফ এফেন্দীর,বিশাল মাথার ভাই,ছাড়াও অন্যান্য ভাইদের সাথে দেখা হলো,হতভম্ব হয়ে ছিল সবাই খুনের ব্যাপারটায়।শিল্পী,কালিগ্রাফ্রাররা এক অন্যকে মোলাকাত করে কান্নাকাটি করছিল।কুয়াশায় নামাজটা শেষ করে দেখলাম,
একপাশে রাখা লাশ,আর রাগে ছেয়ে গেল মন,কে সেই যে এই অপকর্ম করলো,আল্লাহ মোবারকের কাছে আমার দোয়াটাও কিছুটা এলোমেলো হয়ে গেল,মনে।

দোয়া শেষ হওয়ার পর লাশ কাঁধ নিয়ে লোকজন কবরস্থানের দিকে যাওয়া আরম্ভ হলো,আমি তখনও শিল্পী আর কালিগ্রাফ্রাদের সাথে আলাপ করছিলাম।লেইলেক(বক) আর আমি আলাপ করছিলাম অনেক সন্ধ্যায়,রাতে বাতির আলোয় আমরা যখন ছবি আঁকতাম,সে জারিফ এফেন্দীর ছবির মান নিয়ে মন্তব্য করছিল-সব ছবিতেই নীল রং এর বাহার এনে রং এর ভারসামাই নষ্ট করে ফেলতো,জারিফ এফেন্দী।জেইতিন(জলপাই) এর সাথে মোলাকাত করে আবার একটুঁ কান্নাকাটি হলো।পরে একজন শিল্পী এসে বেশ সম্মানের সাথে মোলাকাত করলো,মনে হলো,সেি ছিল সব চেয়ে বেশী বিশ্বাসী আমার বইটার ব্যাপারে।
প্রাসাদের আঙ্গিনায় দেখা হলো প্রধান শিল্পী ওস্তাদ ওসমানের সাথে,আমাদের দুজনের মুখেই কোন কথা ঞ্ছিল না,অজানা একটা যন্ত্রনায় ভারী হয়ে ছিল দুজনের মন।মৃতের এক ভাই ফুঁপিয়ে কাঁদছিল,একপাশে একজন চীৎকার করে বললো, ‘আল্লাহু আকবর’।
‘কোন কবরস্থানে যেতে হবে’?শুধু জিজ্ঞাসা করার জন্যেই জিজ্ঞাসা করলো ওস্তাদ ওসমান।
উত্তর দেয়ার জন্যে নাকি অন্য কোন কারণে,জানি না আমি একটুঁ খারাপ ভাবেই,আমার দুই সিঁড়ি নীচে দাঁড়ানো একজনকে জিজ্ঞাসা করলাম, ‘কোন কবরস্থানে?ঐ ইডিরনে গেটের পাশেরটায়’?
‘হ্যা,ইডিরনেই’,বদমেজাজী কমবয়সী একটা ছেলে উত্তর দিল।
‘ইডরিনে’,আমি ঘুরে ওস্তাদ ওসমানকে বললাম,যদিও উত্তরটা নিশ্চয় ওস্তাদের কান এড়ায় নি।ওস্তাদের বিরক্তিকর চাহনি দেখে বোঝাই যাচ্ছিল,অযথা আর কোন কিছু বলাটাই বোকামী হবে।
আমাদের সুলতানের ভেনিসের নতুন ষ্টাইলে ছবি আঁকার পৃষ্ঠপোষকতার আগ্রহ ওস্তাদ ওসমানের খুব একটা মনঃপুত হয়নি,আর সুলতানের বই প্রকাশের দায়িত্ব আমাকে দেয়াটাও ওস্তাদের কাছে ছিল বেশ অপমানজনক।একবার সুলতান ওস্তাদ ওসমানকে অনেকটা জোর করেই ভেনিসের এক শিল্পীর ছবি নকল করতে অনেকটা বাধ্যই করে।জানি ওস্তাদ ওসমান এ ধরণের একটা, ‘জঘন্য’,কাজের জন্য আমাকেই দায়ী করে,যদিও তার রাগের কারণটা নিঃসন্দেহে যুক্তিযুক্ত ছিল না।

সিঁড়িতে দাঁড়িয়ে কিছুক্ষন আকাশের দিকে তাকিয়ে ছিলাম,দেখলাম পেছনে আর কেউ নাই,তখন ধীরে ধীরে নামা আরম্ভ করলাম,একসময় দুটো হাত আমাকে সাহায্য করার জন্য ছুটে আসলো,সিয়াহ।
‘বাতাসটা,একেবারেই যেন জমে যাচ্ছে’,সিয়াহ বললো, ‘আপনার নিশ্চয় ঠান্ডা লাগছে’।
আমার বিশ্বাস হচ্ছিল না,এই মানুষটা সেকুরের মনে ও ধরণের একটা ঝড় তুলতে পারে।আত্মবিশ্বাসে যে ভাবে সিয়াহ আমাকে হাতে ধরে নিয়ে গেল সেটা ছিল তার ব্যাক্তিত্বের প্রকাশ, ‘প্রায় বার বছর ধরে কাজ করছি,এখন বয়স হয়েছে,দায়িত্ব বোধ আছে আমার’।সিঁড়ির নীচে এসে বললাম, ‘সময় করে আমাকে বলো, নতুন কি শিখলে তুমি,বিস্তারিত শুনবো তোমার কাছে’।
‘যাও বাবা যাও,জানাজার জামাতের সাথে যোগ দাও’,আমি বললাম।

০০০০০


মন্তব্য ২ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (২) মন্তব্য লিখুন

১| ১৭ ই মে, ২০২৩ দুপুর ১:৩৮

রাজীব নুর বলেছেন: অনেকদিন পর পোস্ট করলেন।
আগে কি পড়েছি, সেটা ভুলে গেছি।

২২ শে মে, ২০২৩ রাত ১:৪৮

ইল্লু বলেছেন: হাঁটি হাঁটি পা পা করছি-তাই দৌড়ানোটা এখনো আয়ত্বে আসেনি।ধন্যবাদ

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.