![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
পকেটে কিছু খুচরো স্বপ্ন নিয়ে নিজেকে জানার চেষ্টায় আছি। মাঝে মাঝে শব্দ দিয়ে দাগাদাগি করি। অসামাজিক।
ঢাকা-চট্রগ্রাম হাইওয়ের একধার দিয়ে ছুটে চলেছে বাস। রাস্তা প্রায় খালি।
ড্রাইভার মনের আনন্দে গাড়ি টানছে। রাস্তাটা এখানে একটু সরু। উল্টোদিক
থেকে আরেকটা বাস বা ট্রাক আসলে ভালোমন্দ যেকোন কিছু হয়ে যেতে পারে।রাশেদের এসব দিকে কোন খেয়াল নেই। তার চোখে বাইরের সবুজ গাছগুলোর কালচে ছায়া। একটা ছেলে গরু নিয়ে যাচ্ছে দূরের গাঁয়ের মাঠ দিয়ে। ছেলেটার গায়ে এই শীতেও একটা গামছামাত্র জড়ানো। ছেলেটা, তার গামছা আর গরুগুলোর ক্ষুদে ছায়াও রাশেদের চোখে চকচক।
গতরাতে মাকে নিয়ে বাজে একটা স্বপ্ন দেখেছে রাশেদ। স্বপ্নে তার পরনে
হাফপ্যান্ট। মায়েরও চুলে পাক ধরে নি। কাঁচাচুল মা আর ছোট রাশেদ দৌড়াচ্ছে। চোখ-মুখ বুজে। ন্যাড়া একটা মাঠে। সে মায়ের হাত ধরে যেন উড়ে চলে। পেছনে কেউ বা কারা তাড়া করে ফিরে। তাদের দেখা যায় না। অথবা হয়ত দেখা হয় না ভীরুতার প্রশ্রয়ে। তবে পায়ের আওয়াজগুলো বিরতিহীন। আর দ্রুত। রাশেদের শুকনো ছোট বুকটা কাঁপছিল খুব। ভাবে এই বুঝি পড়ে যাবে হোঁচট খেয়ে। আর ভাবতে ভাবতেই পায়ে পা জড়িয়ে হোঁচট খায় সে। মায়ের হাত থেকে ছিটকে পড়ে। মার সেদিকে ভ্রুক্ষেপও নেই। মা দৌড়ায়। দৌড়াতেই থাকে। রাশেদ ওঠার চেষ্টা না করে মায়ের দিকে দুঃখ দুঃখ অভিমানে চেয়ে থাকে। পেছনের পাগুলো এগিয়ে আসে
ক্রমশ।
প্রচন্ড ভয় আর তৃষ্ণা জড়িয়ে বিছানায় উঠে বসে রাশেদ। বুকটা তখনো ধুকপুক আর পুকধুক। সাথে খানিক ছেলেমানুষি অভিমান- কেন মা তাকে ন্যাড়া মাঠটায় ফেলে রেখে চলে গেল। রাশেদের ভয়ের চেয়ে অভিমান বেশি হয়। সেকেন্ডের কাঁটাটার টিকটিকের সাথে সাথে অভিমানটার কোলে একটা দুঃখবোধ জন্মে। অনেকক'টা দিন মাকে দেখে না সে।
ছোট একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে ঠিক করে পরদিনই বাড়ি যাবে।
রাশেদ আনমনে জানালার ফাঁক দিয়ে তাকিয়ে থাকে। দৃষ্টির জেগে থাকা অনেকদূর পর্যন্ত। দূরের গ্রাম, দুপুররোদে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে ঘুমানো গেরস্তবাড়িগুলো তার দিকে তাকিয়ে হাসে। দূরের চক্রাকারে উড়তে থাকা চিলের ডানার আদ্রতা, মাথায় রোদজমা গাছগুলোর পায়ের কাছের কম্পিত ভীত ছায়া- কোনকিছুই রাশেদের চেতনজগতে ঢুকতে পারে না। হয়ত মনের কোন একটা বদ্ধ কুঠুরিতে বন্দী হয়ে রাশেদ ভেবে যায়। ভাবে অতীত। আর আশ্রয়হীন বর্তমান।
স্মৃতিগুলো নিয়ে নাড়াচাড়া করে রাশেদ। আপনমনে; আপনলয়ে।
চাকরির অজুহাতে বাবা ছোটবেলা থেকেই দূরে দূরে। রাশেদের রঙিন শৈশবটা কেটেছে নানুবাড়ি। মায়ের ছায়ায়। সেই ছায়াটা এতই বিশাল ছিল যে বাবাশূন্যতা কখনো আঁচড় কাটতে পেরেছে বলে মনে করতে পারে না রাশেদ। বা কখনো ছুঁয়ে দিলেও দাগ কাটতে পারে নি ভুলেও। রঙিন দিনগুলো ছিল একইরকম উজ্জ্বলতায় মোড়ানো। ছায়াটার দৈর্ঘ্য, প্রস্থ আর গভীরতা এতই বেশি ছিল। একটা দীর্ঘশ্বাস বেরিয়ে আসে বুকের গভীর থেকে। শামুকের খোলে জমে থাকা দীর্ঘশ্বাস জানালা গলে গলে যাত্রা করে অনন্তের দিকে।
রাশেদ পানিতে নেমেছে অনেকক্ষন। উঠি উঠি করেও ওঠা হয় না। পানিতে মায়াময় শীতলতাদের বসবাস। অলস-স্নিগ্ধ দুপুর ঝিমায় গাছের ডালে। মা পেয়ারা গাছের শুকনা আর জীর্ন ডাল হাতে পুকুরপারে দাঁড়ানো। 'উঠে আয়। দেখ তোরে কি করি।'
মায়ের ঝাঝালো কন্ঠ। রাশেদ দুর্বার-ভয়হীন। ভ্রুক্ষেপ না করে পানিতে আরো একফালি দাপিয়ে তবেই উঠে আসে। যতটা না মারের ভয়ে তারচেয়ে বেশি- ক্লান্ত হয়ে। চোখের সাদা অংশে লাল জমেছে আগেই। মা এগিয়ে আসে কাছে। হাতে পেয়ারা ডালের বদলে তোয়ালে। খস খস করে মাথা মোছা হয় রাশেদের। মা সব রাগ ঝাড়ে মাথার উপর। সেইসাথে বকাঝকা চলতে থাকে। শুধু রাশেদ নির্বিকার। রাশেদের বুক থেকে আরেকচিমটি হাহাকার বেরোয় নিঃশব্দে অথবা মৃদুশব্দে।
লম্বা আধো-আঁধার করিডোরটার গা বেয়ে রাশেদ টুকিনের পেছন পেছন হাঁটে। যেতে যেতে চারিদিকে দৃষ্টি মাখে। দেয়ালটা দাঁড়িয়ে আছে ঘুনেধরা পুরনো আসবাবের মত। চুন ঝরঝর। এবার ঢাকায় গিয়েই বাড়িটা রঙ করানোর একটা ব্যবস্থা করতে হবে। রাশেদ ভাবে। এটাসেটা। টুকিনের দীর্ঘ ছিপছিপে অবয়বের দিকে চেয়ে আবিষ্কার করে যে টুকিনটা বেশ বড় হয়ে গেছে। সময় কত দ্রুত যায়।
টুকিন একটা দরজার সামনে এসে থামে। ইশারায় তাকে দাঁড়াতে বলে ভারী পর্দাটা সরিয়ে ঘরে ঢুকে পড়ে। রাশেদ দাঁড়িয়ে থাকে স্থানুর মত। বুকের মধ্যে একটা নড়াচড়া টের পায়। কিছু একটা আড়মোড়া ভাঙ্গছে। বুকের ভেতর আলোড়ন তোলার পূর্বলক্ষন এটা। অনেকদিন ধরেই হচ্ছে এমনটা।
'ভাইয়া, আসো।' টুকিনের নিচুস্বরের ডাক শুনে বাস্তবে ফেরে রাশেদ। তার গলা শুকায়; তৃষ্ণা জাগে। কাঠ হতে চায়। বুকভরা তৃষ্ণা নিয়েই ঘরের ভেতর পা বাড়ায়।
এই ঘরটাও কালের চিহ্ন ধারন করে বয়স্ক। সেও নতুন একদফা রঙের দাবীদার। বাঁ পাশের দেয়ালটাতেতো হালকা ফাটলও উঁকি দেয় ভীতুচোখে। রাশেদ এত কিছু খেয়াল করে না। তার বুকে তৃষ্ণা। চোখভরা ছটফট। আর বুকের ভেতর নাম না জানা সরীসৃপের দ্রুত চলন।
রাশেদ টলটল পায়ে ঘরের একমাত্র খাটটার দিকে এগিয়ে যায়। পুরানো দিনের পুরনো ডিজাইনের খাট। খাটের বিশাল অবয়ব দেখলে চোখে সমীহ জাগে। বয়সের ভার যথেষ্ঠ হলেও সে যে এখনো যে বেশ শক্তপোক্ত তা সহজেই বোঝা যায়। যেন গ্রামের বুড়ো বটগাছটা।
খাটের এককোনে বৃদ্ধা বসে আছেন। মা। আকারে ছোটখাট। আর জুবুথুবু। বয়সের ভারে হয়ত আরো একটু বেশিই জড়সড়। সবকিছু খাটটার মত আপাত অবিনশ্বরতার প্রতীক হয়ে ওঠে না। 'মা দেখ তোমাকে কে দেখতে এসেছে।' টুকিনটা পাশেই ছিল। রাশেদকে এগোতে দেখে সরে দাঁড়ায়। বেরিয়ে যায় ঘর থেকে।
মা নড়েচড়ে বসেন। মাথায় ঘোমটা। গায়ের হালকা ক্রীম কালারের শাড়ির কোনা বেয়ে থেকে মিষ্টি একটা গন্ধ রাশেদের নাক ছুঁয়ে যায়। গন্ধটা অতি পুরাতন আর চেনা। মা ঘোমটার ফাঁক দিয়ে তাকায়। রাশেদের মুখ হাসি হাসি। হাসির আদ্রতা কম। শুষ্কতা বেশি। শুকনো হাসি ফুটে থাকে ঠোঁটের কার্নিশ ধরে। ইতস্তত।
রাশেদ মায়ের পাশে গিয়ে বসে। গন্ধটা আগের চেয়ে গাঢ়তর। 'মা, কেমন আছ তুমি?'
মা খানিকটা তফাতে সরে বসেন। সঙ্কোচ বা অন্যকিছু। রাশেদ মায়ের অলক্ষ্যে আচলের এককোনা ধরে বসে থাকে।
'জ্বী ভাল।' মা কিছু একটা ভাবে হয়ত। 'আপনি ভাল আছেন?' মায়ের ভাঙ্গা
ভাঙ্গা কন্ঠটা ভেসে আসে।
রাশেদ মায়ের দিকে তাকিয়ে থাকে একপলকে। ঘোমটার উপর থেকেই মাকে দেখে। তার হু হু তৃষ্ণা বাড়ে। মা নড়েচড়ে বসেন খানিক। অস্বস্তি হয়তবা।
'মা'।
মা টা অল্প একটু তাকাতে যেয়েও তাকায় না। অন্যদিকে মুখ ফিরিয়ে নেয়। তুমুল কালো বর্ষাদিনের বারবার নুয়েপড়া ডালগুলোর মত। মাটি স্পর্শ করতে যেয়েও করে না।
বিকেলবেলা মায়ের সাথে ঘুমাতে হবে। মা জড়িয়ে রাখত। পালানোর পথ থাকত না। মায়ের বুকের সাথে লেপ্টে থেকে নির্ঘুম চোখ মাথার উপরের দেয়ালে। সিলিংটা যেন তখন আকাশ হয়ে যেত। সেই আকাশটুকুতে ভাবনার নৌকাগুলো ভাসিয়ে দিত রাশেদ।
আর উশখুশ খুশউশ। উঠেও যেতে পারত না। ঘুমানোরও উপায় নেই। আসন্ধ্যা বন্দীদশা। যন্ত্রনাবোধ। অবশ্য মাঝে মাঝে একটা ভালো লাগা ছুঁয়ে যেত। মা যখন গল্প বলত। মায়ের অবশ্য বেশি গল্প জানা ছিল না। একটা অথবা দু'টো গল্পই ঘুরিয়ে ফিরিয়ে বলত। আর আকাশের দিকে চেয়ে রাশেদ সেটাই নানাভাবে কল্পনা করে নিত। নানান রঙের মিশেল দিয়ে।
'মা ঐ গল্পটা বল না।' রাশেদের কন্ঠে আবদার।
'কোনটা?'
'ঐ যে। রাজপুত্র আর রাক্ষসেরটা।'
'এক গল্প আর কতবার শুনবি?' মায়ের কন্ঠে কপট বিরক্তির প্রলেপ।
একজোড়া নাছোড়বান্দা চোখের দিকে একবার চেয়ে নিয়ে মা গল্প শুরু করত।
গল্পের রাক্ষসটা খুব দুষ্টু ছিল। অচিন দেশের রূপবতী রাজকন্যা বন্দী সেই
রাক্ষসের বিশাল প্রাসাদে। বদ্ধ একটা কামরায়। আধো অন্ধকারে। রাজকন্যাকে ঘুম পাড়িয়ে রাখা হয়েছে 'সোনার কাঠি রূপার কাঠি' দিয়ে৷ সোনার কাঠিটি ছিল ঘুমন্ত রাজকন্যার মাথার দিকে আর রূপার কাঠিটি পায়ের দিকে৷
তারপর রাজপুত্রের আগমন। সোনার আর রূপার কাঠি ছোঁয়া। রাজকন্যা জেগে ওঠে। রাজপুত্রকে দেখে অবাক। রাজপুত্রকে বলে ফিরে যেতে। যেকোন সময় রাক্ষস এসে পড়বে। তখন মহাবিপদ।
রাশেদের নিঃশ্বাস বন্ধ হয়ে আসত। বুক দুরুদুরু। এই বুঝি রাক্ষস এসে পড়ে।
রাজপুত্র নাছোড়বান্দা। সে একা ফিরবে না। ফিরলে রাজকন্যাকে নিয়েই ফিরবে; নইলে না। রাজকন্যা তখন তাকে রাক্ষসটাকে মারার উপায় বাতলে দেয়। প্রাসাদের পাশেই আছে এক পুকুর। সেই পুকুরে আছে একটা বাক্স। সেই বাক্সের ভেতর একটা ভ্রোমর। ভ্রোমরের পেটের ভেতর একটা কোটর। সেই কোটরের মাঝেই লুকানো রাক্ষসের প্রানপাখি। কোটরটাকে এক নিঃশ্বাসে মেরে ফেলতে পারলেই শুধুমাত্র দুষ্টু রাক্ষসের মৃত্যু। আর রাজকন্যার মুক্তি।
ভ্রোমর চিনলেও কোটর কি বুঝে উঠত না রাশেদ। কোটর কি বুঝে ওঠার আগেই রাজকন্যাকে উদ্ধার করে নিজদেশে ফিরে যেত সাহসী রাজপুত্র।
রাশেদ অবাক হয়ে ভাবতে থাকে আকাশ-পাতাল। রাজপুত্রটার কি সাহস! মাকে কখনো কোন রাক্ষস বন্দী করলে সেও কোটরটাকে মেরে মাকে উদ্ধার করে আনবে। ভাবতে ভাবতেই রাশেদের বুক কেঁপে উঠত। আর মাকে জড়িয়ে ধরত শক্ত করে। চেনা একটা গন্ধ নাকে ঝাপটা তুলত তখন।
রাশেদের বুক-অসহ্য দীর্ঘশ্বাস ঘরের বাতাসে উড়ে বেড়ায়। যেন রঙ্গিনডানা প্রজাপতি।
এতক্ষনের বাঁধ দেয়া আবেগে ছিদ্র জন্মে। তার হু হু বুকে মাকে জড়িয়ে ধরে রাশেদ। খুব যত্নে আর হালকাভাবে। যেন কচুপাতাটার উপর থেকে
শেষমুক্তোবিন্দুটা ঝরে পড়ে যাবে। রাশেদ মায়ের ক্রীম কালারের শাড়িটার
গন্ধ-স্পর্শে কেঁপে ওঠে খানিক। অনন্ত ঘুমে চোখ ওজনদার হতে চায়। ক্লান্ত আর তৃষ্ণার্ততার প্রতীক যেন। আর হেলায় হারানো বিকেলগুলোর প্রতি তীব্র অভিমানবোধ। মায়ের কাঁধে দুর্বল মাথাটা এলিয়ে দেয়। আর সেখানে আলতো আধখানা চুমু এঁকে দেয়। চিৎকার করে উঠতে চায় রাশেদের ভেতরে থাকা কেউ। ছুরির ফলার তীক্ষ্ণতায়।
এক কি দুই সেকেন্ড কাটে। শরীরে বিদ্যুৎ খেলে যায় যেন। মা গা ঝাড়া দিয়ে ওঠে। সরিয়ে দেয় রাশেদকে। বা নিজেই সরে যায়। আর টুকিনের নাম ধরে ডাকতে থাকে। অধৈর্য, দ্রুত আর জোরালোস্বরে। কন্ঠের উত্তাপটুকু রাশেদ বেশ দূরে থেকেও অনুভব করে। নিজেই সরে আসে। মা তবু শান্ত হোক।
আর অনুভব করে বিকেলগুলো। আর মায়ের শীতলতাটুকু আর মাকে। আর বিছানাটাকে যা অনেকবছর আগেও একইরকম শক্তপোক্ত ছিল।
'মা আমি রাশেদ। আমি...এই যে...'। কিন্তু মায়ের মমতাহীন শুষ্ক অপরিচিত চোখের দিকে তাকিয়ে থেমে যায় রাশেদ। থেমে যেতে হয়। মায়ের উত্তপ্ত নিঃশ্বাসগুলো দীর্ঘ আর গভীর হয়। সময়ের সাথে আরো খানিক গভীরে যেতে চায়।
আর রাশেদ।
একবুক তৃষ্ণা। বুকভেজা হাহাকার। আর চিকচিক তরল কষ্ট। সবক'টা জড়িয়ে ধরে উঠে দাঁড়ায়। অন্যজগতের অচিন কোন জন্তু বুকের ভেতর ছুটে চলে অবিরত। জন্তুটা কাঁদে। কষ্টের আগুনে ফুঁ দেয়। আর কষ্টগুলো দপদপিয়ে ওঠে। রাশেদের চোখ ভিজতে চায়। কান্নার অভাবে কষ্টরা চক্রবৃদ্ধি হারে বাড়ে। বাড়তেই থাকে। বাড়ন্ত দুঃখগুলো খুব করে মিনতি জানায় ঝরে পড়ার জন্য।
রাশেদের চিৎকার করে কাঁদতে ইচ্ছা হয়। লজ্জা-সঙ্কোচ পাশ কাটিয়ে। পারে না। সাঁইত্রিশ বছর বয়সটা কাঁদার জন্য খুব একটা উপযুক্ত না।
রাশেদের মনে হয় পৃথিবীটা যদি অল্পকিছু সময়ের জন্য মানুষহীন হয়ে যেত। আর সে গলা ছেড়ে অশ্রুগুলো উগড়ে দিতে পারত। সেইসাথে চিৎকার করে দীর্ঘশ্বাসগুলো ওড়ানো যেত অনুভবসীমার বাইরের পথে।
চোখ উপচানো ফোঁটাকয়েক কষ্ট নিয়ে রাশেদ উঠে দাঁড়ায়। পড়ে থাকে পূর্বপরিচিত আর খুব কাছের একজন। আলঝেইমার নামক রোগের হাতে অসহায়। আর স্মৃতিহীন একজন। অপরিচিত আর ধূসর এক জগতের বাসিন্দা হয়ে; অচেনা আপন সব মুখ। মুখোশের আড়ালে।
রাশেদ জানে মা রোগের ছোবলে হারিয়েছেন স্মৃতি। গল্প বলা, খাইয়ে দেয়া, শাসন করা মা টা আজ স্বত্ত্বাহীন কেউ। আত্নার কাছাকাছি থেকেও বড্ড অপরিচিত একজন। শুধু শুধুই বেঁচে থাকা; বাঁচার প্রয়োজনে। তবু অকারন অভিমানটা অকারনেই বুকে চিনচিন করে, কষ্ট খোঁড়ে।
রাশেদ একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে দরজার দিকে এগোয়। আর তার চোখে পরম মমতায় লেপ্টে থাকে সাগরজলের কয়েক ফোঁটা।
২৯ শে জানুয়ারি, ২০১৩ বিকাল ৪:৫২
ইমরান নিলয় বলেছেন: ধন্যবাদ।
২| ৩০ শে জানুয়ারি, ২০১৩ দুপুর ১:৩৬
হাসান মাহবুব বলেছেন: খুব ভালো লাগলো।
৩০ শে জানুয়ারি, ২০১৩ সন্ধ্যা ৭:৩৭
ইমরান নিলয় বলেছেন: অনেক ধন্যবাদ হামা ভাই।
©somewhere in net ltd.
১|
২৯ শে জানুয়ারি, ২০১৩ দুপুর ২:১৫
ডরোথী সুমী বলেছেন: মন খারাপ করা গল্প। কিন্তু ভাল হয়েছে। শুভকামনা রইল।