নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আমি ঘুরতে ভালোবাসি। আমি খুব নেট পাগল। আমি নবম শ্রেণী থেকে অনার্স পযর্ন্ত নানী বাড়িতে ছিলাম।

নাহল তরকারি

আমি ধার্মিক। আমি সব কিছু ধর্মগ্রন্থ অনুযায়ী বিচার বিশ্রেশণ করি। আমি সামাজিক রীতিনীতি, সমাজিক কু সংস্কার, আবেগ দিয়ে কোন কিছু বিচার করি না।

নাহল তরকারি › বিস্তারিত পোস্টঃ

এন্টিনিয়ার ওয়ালা টিভি।

১৫ ই এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:১০



১৯৯৮ সাল বা ১৯৯৯ সালের দিকে আমার নানীর বাড়িতে প্রথম টেলিভিশন সেট আনা হয়। সে সময় আমার নানা সাতকাহনিয়া গ্রামে প্রথম টেলিভিশন আনে। তখনও আমার নানার বাড়িতে কারেন্ট আসে নি। আইপিএস এর ব্যাটারির মত দেখতে একটি বিশেষ ব্যাটারির মাধ্যমে টিভি চালানো হতো। নানা ব্যাংকে চাকরি করতেন। প্রতিদিন ব্যাংকের বাস দিয়ে গ্রামের বাড়ি থেকে সোনালী ব্যাংক হেড অফিসে যাতায়াত করতেন। ব্যাটারি এর চার্জ শেষ হয়ে গেলে, ঢাকা থেকে চার্জ দিয়ে আনতেন।

আমি তখন খুব ছোট। ১৯৯৪ সালে আমার জন্ম হলে আমার বয়স কতই বা হবে সেটা আপানারা হিসাব করে নিন। তবে আমার এটা মনে আছে যে, আমি নানার বাড়িতে কোন ঈদে বেড়াতে গিয়েছিলাম। নানা ঢাকা থেকে ব্যাটারি চার্জ দিয়ে এনেছে। নানা বাসায় আসার পর টিভি অন করা হয়েছে। আমি সিনবাদ অনুষ্ঠান চালু হবার পর খুসিতে নাচতে ছিলাম।

২০০১ সালে আমি মতিঝিল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ভর্তি হই। নানা তখন হয়তো সোনলী ব্যাংক, শিল্প ভবন শাখাতে চাকরি করতেন। আমার পড়শোনা এর সুবাদে মুগদাতে নানা বাসা ভাড়া করেন। এতে নানারও সুবিধা। আমারও পড়ালেখার সুবিধা।

সে সময় আমারা এন্টিনিয়ার দিয়ে টিভি চালাতাম। সে সময় থিফ অফ বাগদাদ, সিনবাদ, আলিফ লেয়লা ছিলো বিখ্যাত অনুষ্ঠান। ২০০১ সাল থেকে ২০০৩ সাল পযর্ন্ত নানাদের সাথে মুগদা থাকতাম। তখন প্রতি শুক্রবারে আমি আর আমার নানী বাংলা সিনেমা দেখলাম। সে সময় জুম্মার নামাযের পর সিনেমা দিতো। জসিম, সাবানা, আলমগীর, ববিতা, ইলিয়াস, দিতি এর সিনেমা দেখলে তিনি কান্না করতেন। বেশীর ভাগ দৃশ্যে জসিম, আলমগীর. সাবানা, ইলিয়াস এর মত সিনেমায় কাহিনী থাকতো দুঃখের। জসিম ও সাবানা কত সংগ্রাম করেন, কত প্রেসার গ্রহন করে। তাদের জীবন সংগ্রাম দেখে নানী কান্না করতেন। আর তখন এবং এখন সবচেয়ে জনপ্রিয় টিভির অনুষ্ঠান হচ্ছে হানিফ সংকেত উপস্থপিত “ইত্যাদি” অনুষ্ঠান।

২০০১ সাল এর কথা মনে পড়ে গেলো। সে সময় সরকারি চ্যানেল ছিলো দুইটি। একটি বিটিভি। আরেকটি ছিলো একুশে টেলিভিশন। এখন একুশে টেলিভিশ বেসরকারি চ্যানেল। ২০০১ সালে টিভির জন্য লাইসেন্স করা লাগতো। মাজে মাজে মেজিষ্ট্রেট এন্টিনিয়ার ওয়ালা বাসায় হানা দিতো। যাদের বাসায় টিভির লাইসেন্স পাওয়া যেতো না, তাদের কে জরিমানা করতেন। অনেক সময় টিভি নিয়ে চলে আসতেন।

২০০১ সালে ডিস ছিলো না। আকাশ ও ছিলো না। একটি নরমাল এন্টিনিয়ার ছিলো। সেটা বাড়ির ছাদে টাঙ্গানো থাকতো। সেইটার সাথে টিভির সংযোগ ছিলো। এন্টিনিয়ার দিয়ে শুধু বিটিভি আসতো। ২০০৩ সালের দিকে সম্ভবত নানা প্রথম ডিস আনে। তখন বিটিভি ছাড়া অনেক চ্যানেল দেখার সুযোগ হলো।

২০০৫ সালের দিকে আমাদের উপজেলার অনেকে সরকারি চাকরি পায়। অনেকে বিদেশ যায়। সে সময় অনেকে ঘুসের টাকায়, বা বিদেশের হালাল টাকায় টিভি ক্রয় করেন। তখন আমাদের উপজেলায় ডিস আসলেও ডিসের নেটওয়ার্ক তেমন বিসৃস্ত হয় নি। ২০০৬ সালের কুরবানী ঈদের সময় গ্রামের বাড়িতে যাবার পর দেখি গ্রামের এমন কোন ঘর নাই যেখানে এন্টিনিয়ার নাই।

২০০৯ সালে আমাদের উপজেলায় ডিস ব্যাবসা একটি রমরমা ব্যাবসা। বর্তমান যুগের ব্রডব্যান্ড ও সিসি টিভি ক্যামেরার মত ডিস ব্যাবসাও একটি সম্মানজনক ব্যাবসা ছিলো। আমি তখন ক্লাস নাইনে পড়তাম। তখনও আমি কার্টুন নেটওয়ার্ক এর কার্টুন দেখতাম। এখনও ইউটুবে কার্টুন দেখি। তখন শক্তিমান নামক এক ভারতীয় সিরিয়াল দেখাতো। সেটা দেখতাম। ইউটিভি একসান, স্টার প্লাস, এইচবিও সহ আরো অনেক চ্যানেল এর সিনেমা দেখতাম। ২০১০ সালের ফুটবল বিশ্বকাপ খেলায় শাকিরার একটি গান খুব ভাইরাল হয়। সে সময় আমরা ঈদে হানিফ সংকেত ও হুমায়ন আহম্মেদ এর নাটক দেখার জন্য অপেক্ষা করতাম। ২০১৪ সালের দিকে আমাদের দেশের মা বোনেরা ইন্ডিয়ান সিরিয়াল এর প্রতি ঝুকে যায়। আমার এখনো মনে আছে “পাখি” নামক একটি ড্রেস সে সময় খুব মার্কেট পায়। একটি মেয়ে এই পাখি ড্রেস না পেয়ে আত্নহত্যা করে। “পাখি ড্রেস” ঈদে না পরিধান করলে লোকে কি বলবে, লোকে ছি ছি করবে, সেই অভিমানে হয়তো মেয়েটি আত্নহত্যা করে। ২০১৪ সালের ফুটবল বিশ্বকাপ হয়েছিলো রমজান মাসে। অনেকে সেহেরী খেয়ে ফুটবল খেলা দেখতেন। আরেকটি জিনিস ভালো লাগতো সেটা হচ্ছে “কাফেলা।”উপস্থাপনা করতেন মাওলানা শায়খ নূরুল ইসলাম ফারুকীকে। কে বা কারা তাকে হত্যা করে। তার পর থেকে কাফেলা আর দেখা হয় না। তবে কাফেলা কে খুব মিস করি।

আমি ২০১৬ সালের পর টিভি দেখা কমিয়ে দেই। ২০১৯ সালে ওফাই ফাই সংস্পর্ষ আসার পর টিভি একদমই দেখি না। লেপটপ ও স্মার্টফোনে ইউটুব দেখি।

সব কথার শেষ কথাঃ রেডিও, ঘড়ি, ক্যালেন্ডার এখন মোবাইলের ভিতরে। এখন টিকটক, ফেসবুকে ভিডিও, ও ইউটুবে ভিডিও এর যুগে টিভি কি হারিয়ে যাবে? এই প্রশ্নের জবাব সময়ই দিবে। তবে ইউটুবের একটি সুবিধা হচ্ছে কোন ভিডিও দেখছি। সেটা মন চাইলে সামনে টেনে টেনে দেখা যায়। কাজ পড়লে, পরে আবার সেই অনুষ্ঠান দেখা যায়। আমি এখনো জসিম, ইলিয়াস ও আলমগীর , রিয়াজের সিনেমা সার্চ দিয়ে দেখি। আমরা এখনো হুমায়ুন আহম্মেদ এর নাটক সার্চ দিয়ে দেখি। আমরা এখনো হানিফ সংকেত এর “ইত্যাদি” এর জন্য অপেক্ষা করি। ঈদ আসলে কৃষকের ঈদ আনন্দ দেখি। কাফেলার মত অনুষ্ঠান আর দেখা হবে না। কনটেন্ট ভালো হলে সেই কনটেন্ট মানুষ দেখবো। হউক সেটা ২০০১ সালে এন্টিনিয়ার ওয়ালা টিভি, হউক ২০০৫ সালের ডিসের লাইন ওয়ালা টিভি। হউক সেটা বর্তমান জামানার ইউটুব।

মন্তব্য ১ টি রেটিং +২/-০

মন্তব্য (১) মন্তব্য লিখুন

১| ১৫ ই এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:২০

মহাজাগতিক চিন্তা বলেছেন: এন্টিনা ঘুরানো খুব ঝামেলার ছিলো।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.