![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
ভীষণ সুন্দর একটি শিক্ষামূলক
সত্য
ঘটনা সবার সাথে শেয়ার
করছি।
এই ঘটনা যদি আগে শুনে না
থাকেন
তাহলে এই ঘটনা আপনার মনকে
এত
বেশি স্পর্শ করবে যে আপনার
গায়ের
পশম খাড়া হয়ে যাবে ...
আশা করি আমরা জীবনে
সবকিছু একটু
অন্যভাবে দেখার চেষ্টা করব।
আল্লাহ রাসূল সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লামের
একজন
সাহাবী,
নাম ছা’লাবা ( ﺛﻌﻠﺒﻪ ) । মাত্র
ষোল বছর
বয়স।
রাসূল (সা) এর জন্য
বার্তাবাহক
হিসেবে এখানে সেখানে
ছুটোছুটি করে বেড়াতেন
তিনি। একদিন উনি মদীনার
পথ
ধরে চলছেন, এমন সময় একটা
বাড়ির
পাশ
দিয়ে হেঁটে যাওয়ার সময়
তাঁর চোখ
পড়ল
দরজা খুলে থাকা এক ঘরের
মধ্যে।
ভিতরে গোসলখানায়একজন
মহিলা গোসলরত ছিলেন,
এবং বাতাসে সেখানের
পর্দা উড়ছিল,
তাই ছা’লাবার চোখ ঐ
মহিলার উপর
যেয়ে পড়ল।
সঙ্গে সঙ্গে উনি দৃষ্টি
নামিয়ে নিলেন।
কিন্তু ছা’লাবার মন এক গভীর
অপরাধবোধে ভরে গেল। প্রচন্ড
দুঃখ
তাকে আচ্ছাদন করল। তার
নিজেকে মুনাফিক্বের মত
লাগছিল।
তিনি ভাবলেন,
‘কিভাবে আমি রাসূল
(সা) এর
সাহাবী হয়ে এতোটা
অপ্রীতিকর
কাজ
করতে পারি?! মানুষের
গোপনীয়তাকে নষ্ট করতে
পারি?
যেই
আমি কিনা রাসূল (সা) এর
বার্তা বাহক
হিসেবে কাজ করি, কেমন
করে এই
ভীষণ আপত্তিজনক আচরণ তার
পক্ষে সম্ভব?’ তাঁর মন আল্লাহর
ভয়ে কাতর
হয়ে গেল। তিনি ভাবলেন,
‘না জানি আল্লাহ আমার এমন
আচরণের
কথা রাসূল সা এর কাছে
প্রকাশ
করে দেয়!’ ভয়ে, রাসূল (সা) এর
মুখোমুখি হওয়ার লজ্জায়,
তিনি তৎক্ষণাৎ
ঐ স্থান থেকে পালিয়ে
গেলেন।
এভাবে অনেকদিন চলে গেল।
রাসূল
সাল্লাল্লাহু
ওয়ালাইহি ওয়াসাল্লাম
অন্যান্য সাহাবাদের কে
ছা’লাবার
কথা জিজ্ঞেস করতেই
থাকতেন।
কিন্তু
সবাইজানাল কেউ-ই
ছা’লাবাকে দেখেনি।
এদিকে রাসূল
(সা) এর দুশ্চিন্তা ক্রমেই
বাড়ছিল।
তিনি উমর (রা), সালমান আল
ফারিসি সহ
আরো কিছু সাহাবাদের
পাঠালেন
ছা’লাবার খোঁজ আনার জন্য।
মদীনা তন্ন
তন্ন করে খুঁজেও ছা’লাবার
দেখা মিলল
না। পরে মদীনার
একেবারে সীমানাবর্তী
একটা স্থানে,
মক্কা ও মদীনার মধ্যখানে
অবস্থিত
পর্বতময় একটা জায়গায় পৌঁছে
কিছু
বেদুঈনের সাথে দেখা হল
তাদের।
দেখানে এসে তারা
ছা’লাবার
সম্পর্কে খোঁজ খবর নিতে শুরু
করলেন।
‘তোমরা কি লম্বা, তরুণ, কম
বয়সী একটা ছেলেকে
এদিকে আসতে দেখেছ?’
বেদুঈনগুলো মেষ চড়াচ্ছিল।
তারা জবাব
দিল, সে খবর তারা জানেনা,
তবে তারা জিজ্ঞেস করল,
‘তোমরা কি ক্রন্দনরত বালকের
সন্ধানে এসেছ?’
একথা শুনে সাহাবারা
আগ্রহী হয়ে উঠলেন
এবং তার বর্ণনা জানতে
চাইলেন।
উত্তরে ওরা বলল, ‘আমরা
প্রতিদিন
দেখি মাগরিবের সময়
এখানে একটা ছেলে আসে,
সে দেখতে এতো লম্বা,
কিন্তু খুব
দুর্বল,
সে শুধুই কাঁদতে থাকে।
আমরা তাকে খাওয়ার জন্য এক
বাটি দুধ
দেই, সে দুধের বাটিতে
চুমুকদেয়ার
সময়
তার চোখের পানি টপটপ
করে পড়ে মিশে যায় দুধের
সাথে,
কিন্তু সেদিকে তার হুঁশ
থাকেনা!’
তারা জানালো চল্লিশ দিন
যাবৎ
ছেলেটা এখানে আছে।
একটা পর্বতের
গুহার মধ্যে সে থাকে,
দিনে একবারই
সে নেমে আসে, কাঁদতে
কাঁদতে;
আবার কাঁদতে কাঁদতে,
আল্লাহর
কাছে সর্বদা ক্ষমা প্রার্থনা
করতে করতে উপরে চলে যায়।
সাহাবারা বর্ণনা শুনেই
বুঝলেন, এ
ছা’লাবা না হয়ে আর যায়
না।
তবে তাঁরা উপরে যেয়ে
থা’লাবা ভড়কে দিতে
চাচ্ছিলেন
না, এজন্য নিচেই
অপেক্ষা করতে লাগলেন।
যথাসময়ে প্রতিদিনের মত
আজও
ছা’লাবা ক্রন্দনরত অবস্থায়
নেমে আসলেন, তাঁর আর
কোনদিকে খেয়াল নাই। কী
দুর্বল
শরীর
হয়ে গেছে তাঁর! বেদুঈনদের
কথামত
তাঁরা দেখতে পেলেন,
থা’লাবা দুধের
বাটিতে হাতে কাঁদছে, আর
তাঁর
অশ্রু
মিশে একাকার হয়ে যাচ্ছে।
তাঁর
চেহারায় গভীর বিষাদের
চিহ্ন
স্পষ্টভাবে প্রকাশ পাচ্ছে।
সাহাবারা তাকে বললেন,
‘আমাদের
সাথে ফিরে চল’; অথচ
থা’লাবা যেতে রাজি
হচ্ছিলেন
না।
তিনি বারবার
সাহাবাদেরকে জিজ্ঞেস
করতে লাগলেন, ‘আল্লাহ কি
আমার
মুনাফেক্বী বিষয়ক কোন সূরা
নাযিল
করেছে?’
সাহাবারা উত্তরে বললেন,
‘না আমাদের জানামতে এমন
কোন
আয়াত নাযিল হয় নাই।’ উমর
(রা)
বললেন,
রাসূল (সা)
আমাদেরকে তোমাকে
নিয়ে যাওয়ার
জন্য পাঠিয়েছেন। তুমি যদি
এখন
যেতে রাজি না হও,
তাহলে তোমাকে আমরা
জোর
করে ধরে নিয়ে যাব। রাসূল
(সা) এর
কথা অমান্য করবেন এমন কোন
সাহাবা ছিল না। কিন্তু
ছা’লাবা এতোটাই লজ্জিত
ছিলেন
যে ফিরে যেতে চাচ্ছিলেন
নাহ।
এরপর
সাহাবারা তাকে রাসূল
(সা) এর
কাছে মদীনায় নিয়ে আসেন।
মহানবী (সা) এর
কাছে এসে ছা’লাবা
আবারও একই
প্রশ্ন
করে, ‘আল্লাহ
কি আমাকে মুনাফিক্বদের
মধ্যে অন্তর্গত করেছেন অথবা
এমন
কোন
আয়াত নাযিল করেছেন
যেখানে বলা আমি
মুনাফিক্ব?’
রাসূল
(সা) তাকে নিশ্চিত করলেন
যে এমন
কিছুই নাযিল হয়নি।
তিনি ছা’লাবার দুর্বল
পরিশ্রান্ত মাথাটা নিজের
কোলের
উপর রাখলেন।
থা’লাবা কাঁদতে কাঁদতে
বলে উঠলেন,
‘হে আল্লাহর রাসূল, এমন
গুনাহগারব্যক্তির
মাথা আপনার কোল
থেকে সরিয়ে দিন।’ উনার
কাছে মনে হচ্ছিল যেন সে
এসব
স্নেহের যোগ্য নাহ।
রাসূল সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম
তাকে সান্ত্বনা দিতেই
থাকলেন।
আল্লাহর রহমত আর দয়ার উপর
ভরসা করতে বললেন। আল্লাহর
কাছে ক্ষমা চাইতে বললেন।
এমন সময়
ছা’লাবা বললেন, ‘হে
আল্লাহর রাসূল
আমার এমন মনে হচ্ছে যেন
আমার হাড়
আর মাংসের
মাঝখানে পিঁপড়া হেঁটে
বেড়াচ্ছে।’
রাসূল (সা) বললেন, ‘ওটা হল
মৃত্যুর
ফেরেশতা। তোমার সময়
এসেছে ছা’লাবা, শাহাদাহ
পড়’।
ছা’লাবা শাহাদাহ বলতে
থাকলেন,
‘আল্লাহ ছাড়া ইবাদাতের
যোগ্য আর
কোন ইলাহ নেই, মুহাম্মাদ
সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম
আল্লাহর
রাসূল’
উনি শাহাদাহ বলতে
থাকলেন...
বলতেই
থাকলেন... এমনভাবে তাঁর রুহ
শরীর
থেকে বের হয়ে গেল।
মহানবী (সা) ছা’লাবাকে
গোসল
করিয়ে জানাজার পর কবর
দিতে নিয়ে যাচ্ছিলেন।
আরো অনেক
সাহাবা ছা’লাবাকে বহন
করে নিয়ে যাচ্ছিলেন।
মহানবী (সা)
পা টিপে টিপে অনেক
সাবধানে এগিয়ে
যাচ্ছিলেন। উমর
রাদিয়ালাহু আনহু অবাক
হয়ে জিজ্ঞেস
করলেন, ‘হে আল্লাহর রাসূল,
আপনিএভাবে কেন হাঁটছেন
যেন
ভিড়ের মাঝে হেঁটে
চলেছেন..
কতো রাস্তা ফাঁকা পরে
আছে,
আপনি আরাম করে কেন চলছেন
না ইয়া রাসুল?’
উত্তরে রাসূল (সা) বললেন,
‘হে উমর,
আমাকে অনেক
সাবধানে চলতে হচ্ছে।
সমস্ত রাস্তা ফেরেশতাদের
দ্বারা ভরে গেছে ।
ছা’লাবার জন্য
এতো ফেরেশতা এসেছে যে
আমি ঠিকমত
হাঁটার জায়গা পাচ্ছি না’।
সুবহানল্লাহ !
এই সেই
ছা’লাবা যে ভুলক্রমে একটা
ভুল
করার জন্য এতো প্রায়শ্চিত্য
করেছেন।
গুনাহ-র কাজ করা তো দূরের
কথা,
গুনাহ
নাকরেও আল্লাহর
কাছে ক্ষমা চেয়ে চেয়ে
ব্যাকুল
হয়েছেন। কত উঁচু ছিলেন
তিনি আল্লাহর
চোখে যে তাকে নেয়ার
জন্য
ফেরেশতাদের
আগমনে রাস্তা ভরে
গিয়েছিল! এই
সব
ফেরেশতারা নেমে এসেছে
শুধু
থা’লাবার জন্য, তাঁর জন্য দুআ
করারজন্য,
তাকে নিয়ে যাবার জন্য। আর
আমরা সারাদিন
জেনে না জেনে এতো ভুল
করেও,
এতোগুনাহ করেও অনুশোচনা
করি না!
উলটা আমাদের পছন্দ মত কিছু
না হলেই
আল্লাহর আদেশের উপর
অসন্তোষ
প্রকাশ
করতে থাকি, জীবন নিয়ে
নালিশ
করতে থাকি।
একটা হাদীস আছে, ‘মু’মিন
বান্দার
কাছে তার গুনাহগুলো এমন
যেন এখনই
পাহাড় ভেঙ্গে তার মাথার
উপর
পড়বে;
আর একজন দুর্বৃত্তকারীর কাছে
গুনাহ
এরকম যে মাছি এসে তার
নাকের উপর
উড়াউড়ি করছে, আর সে হাত
নাড়িয়ে সেটা সরিয়ে
দিল’।
[বুখারি,
বইঃ৭৫, হাদীস নং ৩২০]
আমরা আমাদের
গুনাহগুলোকে দেখেও
না দেখার ভান করি। স্বীকার
করতে চাইনা। কতো রকম
যুক্তি দিয়ে জাস্টিফাই
করার
চেষ্টা করি। একটু ফ্যাশন, শখ,
মনের
ইচ্ছা পূরণ, মানুষের সামনে বড়
হওয়া,
যুগের সাথে তাল মিলিয়ে
চলার
জন্য
আমরা গুনাহ-র কাজে জড়িয়ে
পরি।
কিন্তু
আল্লাহর কাছে বিনয়ের
সাথে ক্ষমা চাওয়ার
কথা ভাবতে পারিনা।
আমাদের
যুক্তি,
অহংকার, শয়তানের মতই
আমাদেরকে ক্ষমা প্রার্থনা
থেকে বিরত
রাখে। কিয়ামতের দিন এক
আল্লাহর
রহমত আর দয়া ছাড়া কিছুই
আমাদেরকে আগুন
থেকে বাঁচাতে পারবে না।
জান্নাত
তাদেরজন্যই যারা আল্লাহর
কাছে মাথা নত করে।
আত্মসমর্পণ
করে পূর্ণভাবে। নিজের ইচ্ছা,
অহম
বোধের কাছে মাথা নত
করেনা।
তাই
ঈমানদার ব্যক্তিই বিনয়ী। তার
রবের
সামনে কাঁদতে সে লজ্জা
পায় না।
ভুলের জন্য ক্ষমা চাইতে
কুন্ঠাবোধ
করেনা। সততার
সাথে ক্ষমা চেয়ে দৃড়ভাবে
সেই
কাজ
থেকে বিরত থাকে।
আল্লাহ সুবহানাহু
ওয়া তা’আলা বলেন,
‘যেতওবা করে এবং ঈমান
আনে ও
পুণ্য-
পবিত্র ক্রিয়াকর্ম করে।
সুতরাং তারাই, --
আল্লাহ্ তাদের মন্দকাজকে
সৎকাজ
দিয়ে বদলে দেবেন। আর
আল্লাহ্ সতত
পরিত্রাণকারী, অফুরন্ত
ফলদাতা’।
[সূরাহ ফুরক্বানঃ ৭০]
আল্লাহ আমাদেরকে
আমাদের
জেনে না জেনে করা
গুনাহগুলো থেকে ক্ষমা করে
দিক !
আমাদেরকে সঠিকভাবে
মনের
অন্তঃস্থল থেকে অনুতাপ
করার,
ক্ষমা চাওয়ার সুযোগ দান করুক।
আমাদেরকে নিজেদের
ভুলবুঝার আর
স্বীকার করে নিয়ে খারাপ
কাজগুলো থেকে দূরে থাকার
তওফিক
দিক... আমীন।
©somewhere in net ltd.