![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
এই সমাজ পচা গলা এই সমাজ ভাঙতে হবে। ভাঙতে গেলে লড়াই হবে। সেই লড়াই এ জিততে হবে।সমাজের প্রত্যেকটি অপ্রত্যাশিত ঘটনার জন্য আমার উপর ও সে দায় পরে।
নারী!, কোন মানুষের প্রথম পরিচয় হতে পারে না, প্রথম পরিচয় সে মানুষ। হুমায়ুন আজাদ, বলেছেন কেউ নারী হয়ে জন্ম নেয় না, ক্রমশ নারী হয়ে উঠে । পুরুষের এক মহৎ প্রতিনিধি, এখানে আবার রবীন্দ্রনাথ বলেছেন, "শুধু বিধাতার সৃষ্টি নহ তুমি নারী!/পুরুষ গরেছে তোরে সৌন্দর্য সঞ্চারি।"
সভ্যতা শুধু পুরুষ কে দিয়ে হয় না, নারী আর পুরুষ উভয় মিলে হয় মানব সভ্যতা, নজরুল বলেছিলেন, "বিশ্বের যা কিছু মহান সৃষ্টি চির কল্যাণ কর; অর্ধেক তার করিয়াছে নারী, অর্ধেক তার নর। এই সমাজ সৃষ্টির পেছনে যাদের অর্ধেক অবদান তাদের কে আজ পেছনে পেলার অপচেষ্টা করছে, নারীরা সকল পেশায় যে অংশে থাকার কথা তা আজ খুব নগণ্য এখানে রোকেয়া বলেছেন, আমরা সমাজের অর্ধঅঙ্গ । আমরা পরিয়া থাকিলে সমাজ উঠিবে কি কিরূপে??? কোন ব্যাক্তির এক পা বাঁধিয়া রাখিলে, সে খোঁড়াইয়া খোঁড়াইয়া কত দূর চলিবে? পুরুষের স্বার্থ আমাদের স্বার্থ ভিন্ন নহে, তাদের লক্ষ উদ্দেশ্য যা আমাদের ও তাহা।
কিন্তু যুগে যুগে এই পুরুষতান্ত্রিক সমাজ নারীকে ভিবিন্ন ভাবে পিছিয়ে রেখেছে ভিবিন্ন অজুহাতে, পুরুষ নারীকে দেখে দাসত্বের মত, করে রেখেছে দাসী, তবে স্বার্থে ও ভয়ে কখনো কখনো স্তব করে দাবিরুপে। পুরুষ এমন এক প্রাণী, যার নিন্দায় সামান্য সত্য থাকতে পারে; তবে তার স্তব সুপরিকল্পিত প্রতারনা। পুরুষ সাধারণত প্রতারণাই করে আসছে নারীকে; তবে উনিশশতক থেকে একগোত্র পুরুষ লরাই করছেন নারীর পক্ষে। পুরুষ নারীকে সাজিয়েছে অসংখ্য কুৎসিত অভিধায়; তাকে বন্দী করার জন্য তৈরী করেছে পরিবার, সমাজ, ও রাষ্ট্র; উদ্ভাবন করেছে ঈশ্বর, নিয়ে আসেছে প্রেরিতপুরুষ; লিখেছে ধর্মগ্রন্থ, অজস্র দর্শন, কাব্য, মহাকাব্য; সৃষ্টি করেছে বিজ্ঞান, সমাজবিজ্ঞান, মনোবিজ্ঞান, ও অসংখ্য শাস্র। এতো অস্র নিয়ে প্রতিপক্ষের মুখোমুখি হয় নি কোন সেনাবাহিনী। এর কারন পুরুষের যৌথচেতনায় মহাজাগতিক ভীতের মতো বিরাজ করে নারী। তাই নারীর কোন স্বাধীনতা স্বীকার করে নি পুরুষ। পুরুষ এমন সভ্যতা গড়ে তুলেছে, যা নারীকে সম্পূর্ণ বন্দী করতে না পারলে ধ্বংস হয়ে যাবে বলে পুরুষের ভয় রয়েছে। এর নাম পিতৃতান্ত্রিক, বা পুরুষতান্ত্রিক সভ্যতা । পিতৃতান্ত্রিক সভ্যতায় প্রথম শোষকশ্রেণী পুরুষ, প্রথম শোষিতশ্রেণী নারী। এ সভ্যতার সব কেন্দ্রেই রয়েছে পুরুষ। পুরুষ একে সৃষ্টি করেছে তার স্বার্থ ও স্বপ্ন অনুসারে , এবং কেন্দ্রে প্রতিষ্ঠিত করেছে নিজেকে। পুরুষতন্ত্রের সৌরলোকের সূর্য পুরুষ; নারী অন্ধকার। পুরুষ সব কিছু তৈরী করেছে নিজের কাঠামোতে; নারী পুরুষের সংখ্যাতিরিক্ত অস্থিতে তৈরী পুতুল। পুরুষতান্ত্রিক সভ্যতায় পুরুষ মুখ্য, নারী গৌণ; পুরুষ শরীর, নারী ছায়া; পুরুষ প্রভু নারী দাসী; পুরুষ ব্রাহ্মণ, নারী শূদ্রী। পুরুষতান্ত্রিক সভ্যতা পুরুষের জয়গানে ও নারীর নিন্দায় মুখরিত। পুরুষতান্ত্রিক সভ্যতায় শয়তানের চেয়েও বেশি নিন্দিত নারী; শয়তান পুরুষ বলে তার জন্যও গোপন দরদ রয়েছে পুরুষের , কিন্তু কোন মায়া নেই নারীর জন্যে ।
রোকেয়া বলেছেন, যখনই কোন ভগ্নি মস্তক উত্তোলন চেষ্টা করিয়াছেন, অমনই ধর্মের বা শাস্রের বচন-রুপ অস্রাঘাতে তাঁহার মস্তক চূর্ণ হইয়াছে। অবশ্য এ কথা নিশ্চয় বলা যায় না , তবে অনুমান অইরুপ মনে হয় । আমরা প্রথমতঃ যাহা সহজে মানি নাই, তাহা পড়ে ধর্মের আদেশ ভাবিয়া শিরোধার্য করিয়াছি। এখন অবস্থা এই যে, ভূমিষ্ঠ হওয়া মাত্রই শুনতে পাই "তুই জন্মেছিস গোলাম, থাকবি গোলাম!" সুতরাং আমাদের আত্মা পর্যন্ত গোলাম হইয়া যায় ।
কিন্তু নারীদের ঘরে বাইরে এতো সীমাবদ্ধতা থাকা সত্ত্বেও সকল নারীকে ঘরে রাখতে পারে না এই পুরুষতান্ত্রিক সমাজ , যুগে যুগে বাংলাদেশের নারীরাই প্রমান দিয়েছে, কেও নেমেছে আদর্শিক,চেতনার কারনে, কেও বা নিজের পরিবারের জীবন-জীবীকার তাগিদে। আমরা লক্ষ করলে দেখতে পাবো ,ব্রিটিশ-বিরোধী আন্দোলনের উপমহাদেশের প্রথম নারী শহীদ ছিলেন চট্টগ্রামের বীরকন্যা প্রীতিলতা। লীলা নাগ, কল্পনা দত্ত, মনোরমা বসুদের মতো অনেকে এই আন্দোলনে অংশ নিয়েছেন, বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামের শুরু থেকেই নারীরা এর অবিচ্ছেদ্য অংশ ছিলেন। ৫২'র ভাষা আন্দলনে, ৬২'র শিক্ষা আন্দোলনে, ৬৬'র ৬ দফা, ৬৯'র গন-অভ্যুথান থেকে শুরু করে ৭১'র মুক্তিযুদ্ধেও নারীরা সক্রিয় ভাবে অংশগ্রহণ করেছিলেন। ৮৩'র শিক্ষা আন্দোলনের শহীদ দিপালী সাহা এক অনন্য ভুমিকা পালন করেছে, ৯০'র স্বৈরাচার বিরোধী আন্দোলনেও নারীদের ভুমিকা অনন্য, ১৯৯২ সালে একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটি যার নেতৃত্বে হয়েচিলে তিনিও একজন নারী শহীদ জননী জাহানারা ইমাম ।
বাংলাদেশে নারীদের ভুমিকাকে অস্বীকার করার সুযোগ নেই , কারন আমাদের মোট জিডিপি'র শতকারা ৪৩ ভাগ উৎপাদিত হয় নারীদের শ্রমের হাত থেকে। এই সমাজের অসংখ্য বাধা বিপত্তি এরিয়ে বাংলাদেশের নারীরা আমাদের অর্থনীতিতে রেখেছে অসামান্য অবদান । বাংলাদেশের রপ্তানি আয়ের প্রধান উৎস তৈরি পোশাক শিল্প এ খাত থেকে ২০১২-১৩ অর্থবছরে মোট রপ্তানি আয়ের প্রায় ২১ বিলিয়ন ডলার (১লক্ষ ৬৮ হাজার কোটি টাকা) এই গার্মেন্টস শ্রমিকদের মধ্যে ৮০ ভাগই নারী শ্রমিক । অর্থাৎ রপ্তানি আয়ের ১৭ বিলিয়ন ডলার উৎপাদিত হচ্ছে এই নারীদের হাত ধরে।
শুধু গার্মেন্টস শিল্পে নয় বাংলাদেশের এখন প্রত্যেকটা বিভাগে নারীদের অংশগ্রহণ রয়েছে, আইনজীবী, প্রকৌশলী, ডাক্তার, আইনশৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীতেও নারীদের অংশগ্রহণ আছে, ক্রিকেট খেলা থেকে শুরু করে এভারেস্ট পর্যন্ত জয় করেছে বাংলাদেশের নারী, এখন চাই শুধু তাদের বেশি অংশ গ্রহন।
একজন পুরুষ তার ইচ্ছা ও সামর্থ্য থাকলে সে, যে কোন কিছু করতে পারে, অন্য দিকে নারীরা ইচ্ছা ও সামর্থ্য দুটো থাকা শর্তেও অনেক ক্ষেত্রে তারা পিছিয়ে যায়। তারা পরিবারের, সমাজের, বা বিভিন্ন প্রথার স্বীকার হোন । তবে এটা নিশ্চিত যে, মানুষ প্রথার মধ্যে বেশি দিন বাঁচতে পারে না , পশু ও না , প্রথা চিরজীবী নয় । কোন প্রথা হাজার বছর ধরে চলে এসেছে বলেই তা শাশ্বত নয়; কেননা প্রথা মহাকাশ থেকে নামে নি, পুরুষরাই সৃষ্টি করেছে সমস্ত প্রথা তবে প্রথার স্বেচ্ছা মৃত্যু ঘটে না । প্রগতিশীল মানুষরাই অবসান ঘটায় প্রথার।
তাই আশা করবো নারীরা মুক্ত হবেই তাদেরকে কোন অপরাজনিতি, মৌলবাদ, পরিবার, সমাজ কেও আটকাতে পারবে না।
©somewhere in net ltd.
১|
১৬ ই মে, ২০১৩ রাত ১১:২৪
মদন বলেছেন: