![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
নিজের সম্পর্কে নিজের আসলে তেমন একটা কিছু বলার থাকেনা, সহজ সরল অনেক, মানুষ কে বিশ্বাস করতে ভালো লাগে। ল' পরতেসি, গীটার আর গান খুব ভালবাসি, কবিতা ভালবাসি , আর ভালবাসি বন্ধুদের সাথে জমিয়ে আড্ডা । আর হাল্কা লিখালিখির বদভ্যাস আছে। https://www.facebook.com/iqusan
বুদ্ধি টা ছিল তানভীরের তবে আমরা কেউ ঘুণাক্ষরেও কল্পনা করিনি কি হতে চলছে। ফয়সাল সৈকত, জাকির আর আমি এই চার জন ই একসাথে তানভীর এর বুদ্ধিতে যাচ্ছি শাহবাগ। উদ্দেশ্য টা বলতে হলে তার দুই ঘণ্টা আগের কথা বলতেই হয় _
তানভীর এর মামা সপরিবারে একদিনের জন্য কুমিল্লা যাচ্ছেন, তানভীরের উপর দায়িত্ব পড়েছে বাসা পাহারা দেওয়ার। সেদিন বিকেলেই ষ্টেশন এর আড্ডার মাঝে তানভীর লাফাতে লাফাতে উপস্থিত। ঠিক তখনই ট্রেন যাচ্ছিলো, হযবরল করে তানভীর ঠিক কি বলে গেলো তা ট্রেনের আওয়াজের জন্য আমাদের কারো কানেই ঢুকল না।
আরে এত বেহুদা কাজ করস না তুই বেটা, দেখছিস ট্রেন যাচ্ছে তো একটু অপেক্ষা করলে কি হয়? জাকির তানভীর কে থামিয়ে দেয়।
অতপর তানভীর হরবর করে যা বলল তার সারমর্ম হচ্ছে যে তানভীর এর মামার বাসায় ওর সাথে আমাদের ও থাকতে হবে। সারা রাত তাস খেলব আর আড্ডা দিব এমন টাই প্ল্যান। তানভীর এর মামাত ভাই এর আবার প্লে ষ্টেশন আছে, সারারাত সবাই মিলে খুব মজা করে ফিফা খেলা যাবে। এ ছাড়া ফ্রিজ ভর্তি খাবার তো আছেই ।
হুম... ফয়সাল মাথা ঝাকায় ব্যাপক একটা মজা হতে পারে , কিরে তোরা কি বলিস?
তা যাওয়া তো যায় সৈকত বলে ওঠে। ঠিক তার সাথে সাথেই সবাই একসাথে আমরা হেসে উঠি। সৈকতের যাওয়া যায় এর মানে হচ্ছে সৈকত যাবেনা। আমার নিজের তেমন কোন আপত্তি নাই, শুধু বাসায় একটু ম্যানেজ করতে হবে বইকি। সেটা তেমন একটা কঠিন হবেনা আশা করি। ইদানিং আমার ব্যাপারে বাসায় কেমন জানি একটু উদাসিন ভাব দেখা যায়। আগে যেখানে সন্ধ্যা হতে না হতেই ফোনের পর ফোন আসত, সেখানে এখন রাত ১০ টা বেজে গেলেও কেউ ফোন দেয়না।
তোরা যা করস না! কেউ যাবে কেউ যাবেনা, মাথার চুল পইড়া যাচ্ছে আমার এসব কাজ কাম দেইখা। আমি কিছুটা হতাশ হয়েই বললাম।
এর মধ্যেই তানভীর বলে উঠে_ হ তুমি তো খুব ভালো না? এর জন্যই কি আঙ্কেল এর মাথায় চুল সব পড়ে গেসে? সবাই সাথে সাথে আবার হেসে উঠে। যাই হোক অনেক তর্ক বিতর্ক এর পর ঠিক হল সবাই মিলে যাব তানভীর এর মামার বাসায় সারা রাত মজা করব আড্ডা দিব। ভালো সময় কাটবে বলে মনে হচ্ছে ।
আজিজ সুপার মার্কেট এর একটু আগে হাতের ডানে যে মোড় টা নিয়েছে ঠিক তার একটু সামনেই তানভীরের মামার বাসা। বাসায় আমরা সবাই মিলে ঢুকলাম রাত ৮ টার দিকে। অনেক সুন্দর একটা বাসা, বিশাল বিশাল একেক টা রুম একদম সাজানো গুছানো দেখলেই ভালো লাগে এমন। বাসায় ঢুকেই সবাই ড্রইং রুম এ হাত পা ছড়ায়ে শুয়ে পড়লাম। কেউ কার্পেট এ কেউ সোফায়। তানভীর পুরা বাসা টা একবার ঘুরে এসে বলল_
দোস্ত ওভেন দেখা যাইতাসে... গ্রিল চিকেন করবি নাকি? খাওয়া দাওয়া এর ব্যাপারে আমরা সবাই ই একটু ইন্টারেস্টেড তাই গ্রিল শব্দ টা শুনে সবার চোখ ই জ্বল জ্বল করছিলো। যেই ভাবা সেই কাজ সবাই মিলে সাথে সাথে টাকা দেওয়ার পর তানভীর আর জাকির গেলো মুরগী কিনতে। সৈকত আর ফয়সাল অলরেডি প্লে ষ্টেশন নিয়ে বসে গেছে। আমি আর কি করব গেলাম ফ্রিজ এর কি অবস্থা দেখতে। মিষ্টি আর পিঠা দেখলাম নিচের ফ্রিজ এ আবার উপরের টা তে আইস ক্রিম ও দেখলাম। বাহ গ্রিল এর পর বেশ ভালোই ডেসার্ট হবে , আমি মনে মনে বেশ উৎফুল্ল বোধ করছিলাম।
তানভীর মুরগী নিয়ে আসতেই আমি তানভীর আর জাকির মিলে মুরগী তে মশলা মেরিনেট করে ওভেন এ দিয়ে দিলাম। এদিকে ফয়সাল আর সৈকত এর উপর দায়িত্ব পড়ল মুরগির পিস গুলা কিছুক্ষন পর পর উলটায়ে দেওয়া।
মূল ঘটনা টা ঘটে ঠিক তার কিছুক্ষন পর_
হঠাৎ বিকট রকমের একটা শব্দ আসলো কিচেন থেকে। জাকির পানি খাচ্ছিল তার হাত থেকে পানির গ্লাস পরে গেলো নিচে। আমি আর তানভীর দৌড়ে দেখতে যেয়ে পানিতে পা পিছলায়ে পড়ে গেলাম। আমি পড়লাম একদম শোকেস এর উপর আর তানভীর পড়ল কাচের ডাইনিং টেবিল এর উপর । ডাইনিং টেবিল এর উপর কাঁচের যা কিছু ছিল সব নিচে পরে ভেঙ্গে চুরমার। আর আমার ধাক্কায় শোকেস এর কাঁচ ভেঙ্গে একদম দুই টুকরা।
উঠেই দৌড় দিলাম রান্না ঘরে দেখি ওভেন এর মধ্যে মনে হয় আমরা কেউ স্টিল এর চামচ রেখে এসেছিলাম, আর তাই স্পার্ক করতে করতে হঠাৎ ওভেন টা একদম সশব্দে ফেটে পড়ে। আমি জাকির আর তানভীর তাকিয়ে আছি কিচেন এর দিকে। কাঁচা মুরগী পুরা কিচেন এর দেয়াল জুড়ে লেপটে আছে, সে একটা দেখার মত দৃশ্য।
কিরে এত কিছু ঘটে গেলো সৈকত আর ফয়সাল কই? তানভীর এর এই প্রশ্নে আমাদের যেন সম্বিত ফিরে এলো। মেঝে ভর্তি কাঁচ এড়িয়ে ড্রইং রুমে যেয়ে যা দেখি তাতে আমাদের এই দুঃখের মধ্যেও হাসি পেয়ে গেলো। হাসতে হাসতে আমি তানভীর আর জাকির প্রায় গড়াগড়ি অবস্থা। ওভেন এর শব্দে সৈকত আর ফয়সাল হাতে জয়স্টিক নিয়েই দৌড় দেয় প্লে ষ্টেশন টা টেবিল থেকে পরে দুই টুকরা আর ফয়সাল আর সৈকত মেঝে তে তারের মধ্যে পা জড়িয়ে আছাড় খেয়ে পড়ে আছে। আর বেশিক্ষণ আমাদের ঐ বাসায় থাকা হয়নি, আসলে এর পর থাকলে আরো কি হয় বলা মুশকিল আমরা আর সেই রিস্ক এ গেলাম না । নিচে দারোয়ান এর কাছে চাবি দিয়ে আমরা যে যার যার বাসায় চলে যাই।
এর পর প্রায় এক মাস ধরে তানভীর কে আর আমাদের আড্ডায় দেখা যায়না। তানভীর কে ফোন করেও তার ফোন অফ পাই । না জানি বেচারার কি অবস্থা , একবার যে তার বাসায় যেয়ে দেখে আসব সেই সাহস টাও আমরা কেউ করে উঠতে পারছিনা।
(নারায়ন গঙ্গপধ্যায় এর "টেনিদা" সিরিজের একটি গল্পের ছায়া অবলম্বনে)
©somewhere in net ltd.