নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

প্রকৃত সত্যের দিকে আমাদের ছুটতে হবে..

রাশিদুল ইসলাম লাবলু

প্রকৃত সত্যকে উপলদ্ধি করতে হবে খোলা মন নিয়ে।

রাশিদুল ইসলাম লাবলু › বিস্তারিত পোস্টঃ

একটি ইচ্ছা শক্তি! একটি কমান্ডিং প্রক্রিয়া! মহাবিশ্ব সৃষ্টির কারন।

৩১ শে মে, ২০১৬ রাত ৮:৫৫

আধুনিক বিজ্ঞানের পরিভাষায় বিগব্যং এর ধারণাটা অনেকটা পাল্টে গেছে। সিংগুলারিটির বিষয়টি বাদ দিয়ে শুন্য পরিমান শক্তি হতে ফ্লাকচুয়েশনের মাধ্যমে মহাবিশ্ব সৃষ্টির বিষয় উত্থাপিত হয়েছে। আইনষ্টাইন এর E=mc2 সমীকরণ অনুসারে শক্তি থেকে ভর উৎপন্ন হওয়া সম্ভব। তাহলে আমাদের মহাবিশ্বের দিকে তাকালে যে বিশাল পর্দাথের পরিমান সন্ধান পাই তাহলে বিশাল পরিমান শক্তি এল কোথা থেকে? এটা ছিলো এক বিস্ময়কর প্রশ্ন? অথবা বিগব্যাংগের পূর্বে কি ছিলো? এ সকল প্রশ্ন বিজ্ঞানের গতিপথ পাল্টে দেয়। অসংখ্য প্রশ্ন বিজ্ঞানকে দেয় নতুন চিন্তা।

একটা সময় ভাবা হতো মহাবিশ্ব সৃষ্টিতে যদি শক্তি থেকে পর্দাথ উৎপন্নের প্রশ্ন এসে থাকে তবে এত পরিমান পদার্থ নির্মানের জন্য অনুরুপ ভরের শক্তি এলো কোথা থেকে? তবে কি বাইরে থেকে শক্তি যোগান দেওয়া হচ্ছে? কিন্তু বোঝা গেলো না! সমস্যা টি নিয়ে প্রথম বুঝতে পারলেন বিগ ব্যাং এর জনক গ্যামোও। তিনি তার মাই ওয়াল্ড লাইন বইতে উল্লেখ করলেন ‘ স্রেফ শুন্য থেকে একটি নক্ষত্র সৃষ্টি হতে পারে। কারন আলবার্ট আইনষ্টাইন এর সুত্র মতে ঋনাত্বক মাধ্যকর্ষন শক্তি ধনাত্বক ভর শক্তিকে নিষ্ক্রীয় করে দেয়।’ এই বিষয়টি পরে বিজ্ঞানী ষ্টিফেন ডব্লিউ হকিং তার ‘কালের সংক্ষিপ্ত ইতিহাস’ বইতে তুলে ধরেছেন ‘যদি এমন একটি মহাবিশ্ব ধরে নেওয়া যায় যেটা মহাশুণ্যে মোটামুটি সমস্বত্ত্ব, তাহলে দেখানো সম্ভব ঋনাত্বক মহাকর্ষিয় শক্তি এবং ধনাত্বক মহাকর্ষিয় শক্তি ঠিকঠাক কাটাকাটি করা যায়। তাই মহাবিশ্বের মোট শক্তি থাকে শুণ্য।’

ফ্লাকচুয়েশনের স্থায়ি হয় খুবই সামান্য যদি তােই হয় তবে ১৩০০ কোটি বৎসরের এই মহাবিশ্ব টিকে থাকে কিভাবে? সেই সমস্যার সমাধান খুজতে গেলে দেখা যায় ফ্লাকচুয়েশন টিকে থাকে এর ভরের উপর। ভর যত বড় হবে ফ্লাকচুয়েশনের স্থায়িত্ব তত কম হবে। অথাৎ ফ্লাকচুয়েশনের মাধ্যমে মহাবিশ্ব সৃষ্টি হয়ে ১৩০০ কোটি বৎসর টিকে থাকতে হলে শুরুতে তার ভর হতে হবে ১০-৬৫ গ্রাম যা ইলেকট্রনের ভর এর প্রায় ১০৩৮ গুন ছোট। তাহলে জিরো পয়েন্ট এনার্জি থেকে যদি মহাবিশ্ব সৃষ্টি শুরু হয় হবে তা দীর্ঘস্থায়ী হতে পারে এবং মহাস্ফিতির মধ্যে বেলুনের মতো বেড়ে কেবল বর্ধিত হতে থাকবে তার নির্ধারিত জীবনীকাল অবধি। তাহলে এখন প্রশ্ন হলো শুন্যতা এলো কোথা থেকে? অথবা শুন্যতার পরিপূর্ন ব্যাক্ষা কি আমাদের জানা আছে? এই ব্যাক্ষাটি আমাদের জানা নেই। আমাদের জানা নেই পর্দাথের এই সকল নিয়ম কোথা হতে এলো। শুন্য শক্তি থেকে পদার্থের সৃষ্টির যে ফর্মূলা সেই ফর্মূলাই কি সৃষ্টির কারণ?

আমাদের জানতে হবে এই শুন্যতাটা কি? আক্ষরিক অর্থেই কি এটা শুন্য নাকি আমাদের কাছে অজ্ঞাত থাকার কারণে আমরা শুন্য বলে ধারনা করছি। কিন্তু এই শুন্য পরিমান শক্তি এলো কোথা থেকে? স্রেফ শুন্যতা থেকে তো শক্তি উৎপাদিত হতে পারে না। তাহলে সেটা গুপ্ত অবস্থায় ছিলো। অনস্তিত্ব কোন বিষয় হতে এই শক্তির আর্বিভাব? পদার্থবিজ্ঞানের নিয়ম অনুসারে ধনাত্বক শক্তি ও ঋনাত্বক শক্তির কাটাকাটিতে যেমন শুন্য পরিমানে পরিনত হতে পারে ঠিক তেমনি এদেরই যোগফলে শক্তির পরিমান বর্ধিত হতে পারে। ফলে মহাস্ফিতি ঘটিয়ে শক্তি ও পদার্থ বর্ধিত হয়ে আজকের মহাবিশ্বের রুপ ধারণ করতে পারে।

বর্তমানে আমাদের সবচেয়ে বড় বেশি প্রয়োজন শুন্যতাকে বোঝা। শুন্য আসলে পরম শুন্য নয় একে বলা উচিত কোয়ান্টাম শুন্যতা। কারন এই শুন্যতার মধ্যে চলছে এক অদ্ভুতুরে ঘটনা। এর মধ্যে জিরো পয়েন্ট এনার্জি থেকে পদার্থের উৎপত্তি এবং বিনাশ। শুন্যতার এটাই নিয়ম। অজ্ঞতার কারনে আমরা ‘কিছুই নেই’ বলে থাকতে পারি। প্রকৃত বিষয়টি আমাদের এখন উপলদ্ধি করার বিষয়। অনস্তিত্ব থেকে অস্তিত্ব হওয়ার মতো বিষয় নয় কি? মহাবিশ্ব যে এক কোয়ান্টাম ফ্লাকচুয়েশনের মধ্য দিয়ে শুন্য থেকে সৃষ্টি হতে পারে এই ধারনাটি প্রথম করেন বিজ্ঞানী এডওয়ার্ড ট্রিয়ন। আসলে শুন্যতা মানে আক্ষরিক অর্থে শুন্য নয়। পরম শুন্যতা বলে আসলে কিছু সেই আমরা যে শুন্যতার কথা ভাবছি সেটা হলো কোয়ান্টাম শুন্যতা। জিরো পয়েন্ট এনার্জি থেকে পদার্থের এই উৎপত্তি এখনও রহস্যময় হয়ে রয়েছে। আমরা শুধুমাত্র বলতে পারি এটা ঘটে।


এখন আমরা মহাবিশ্ব সৃষ্টির এই বিষযটিকে ধর্মীয় দৃষ্টিকোনে বিচার করতে চাই। (যেহেতু আমি মুসলিম পরিবারে জন্ম নিয়েছি তাই আমি আমাদের আলকোরআন কে ব্যবহার করতে চাই সৃষ্টিতত্ত্বের এই আলোচনায়) পাঠক সত্যিই অবাক হওয়ার মতো একটি বিষয় যে আজ থেকে ১৪০০ বৎসর পূর্বে একজন নিরক্ষর উম্মে রাসুল হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) এর উপর নাযিলকৃত আল কোরআনের ৫১ নং সুরার ৪৭ নং আয়াতে বলা হচ্ছে “আমি আকাশমন্ডল সৃষ্টি করেছি শক্তি বলে এবং আমিই মহা সম্প্রসারণকারী” (৫১.৪৭)। অথাৎ আধুনিক বিজ্ঞানীদের দীর্ঘদিনের গবেষনার ফসল “বিগব্যাং তত্ত্ব” ক্ষুদ্র একটি আয়াতের দ্বারা উল্লেখ করা হয়ে গেছে। অথাৎ আল্লাহ রাব্বুল আলামিন এই আয়াতের দ্বারা বোঝাচ্ছেন তিনি শুন্যতা নামক শান্ত সমাহিত শক্তির আধার হতে এক ক্ষুদ্র পরিমান পদার্থের সম্প্রসারণ ঘটিয়ে মহাবিশ্বকে এত বিশাল করে তুলেছেন। সত্যিই আমাদের অবাক হওয়ার বিষয় একজন নিরক্ষর মানুষ কি করে আজ থেকে ১৪০০ বৎসর পূর্বেই বিগব্যাং নামক এক মহাবিস্ফোরনে মহাবিশ্ব সৃষ্টি হওয়ার কথা জেনে গেলেন। আল কোরআন আর একটি আয়াতে বলছে “অবিশ্বাসিরা কি জানে না যে আসমান ও জমিন একদা একত্রিত অবস্থায় ছিলো আমি তাদের শক্তি প্রয়োগে বিচ্ছিন্ করেছি।” আমাদের সবচেয়ে সমস্যা আমরা মানুষ বড় অহংকারি। আমরা নিজেদের অহংকারের কারনে সবসময় সত্য অস্বীকার করার মতো প্রবনতা দেখাতে থাকি। প্রকৃত সত্য যাই হোক’ আমাদের অহংকার আমাদের ঋনাত্বক মানসিকতা সৃষ্টি করে দেয়।


শুন্য হতে মহাবিশ্ব সৃষ্টির বিষয়টিকে বর্তমানের নাস্তিক্যবাদী বিজ্ঞানীরা বলে থাকেন “শুন্য হতে মহাবিশ্ব আপনা আপনি সৃষ্টি হয়েছে। এর পিছনে (আল্লাহ) ঈশ্বর এর কোন ভুমীকা নেই। কারন স্বতস্ফুর্তভাবেই এই মহাবিশ্ব সৃষ্টি হয়েছে। এর জন্য ঈশ্বরের কোন প্রয়োজন পড়ে না। অথচ আমাদের বিজ্ঞান আজো জানে না এই শুন্য পরিমান শক্তি কোথা থেকে এলো? শক্তি থেকে কেন পর্দাথের উৎপন্ন হয় অথবা শক্তি থেকে পদার্থের উৎপন্ন হওয়ার এই সুত্রটি কোথা হতে এলো? আমরা জানিনা জিরো পয়েন্ট এনার্জিতে কি প্রক্রিয়া ঘটে? কেনই বা স্বতর্স্ফুতভাবে পদার্থ সৃষ্টি হয়? আমরা জানিনা পদার্থের সুত্র গুলো এলো কোথা থেকে? বস্তুর ক্ষুদ্রতম কনিকা কোয়ার্ক ও ইলেকট্রনের যে সুত্র বা নিয়ম মেনে চলে সেটা তারা কোথা হতে জানতে পারলো? তিনটি কোয়ার্কের সমন্ময়ে সৃষ্টি হয় প্রোটন এবং নিউট্রন আবার একটি নিউক্লিয়াস তৈরী হয় প্রোটন ও নিউট্রনের সমন্ময়ে- কে তাদের শেখালো এই নিয়ম? কিভাবে তারা বুঝলো তিনটি কোয়ার্ককে এক হয়ে নির্মান করতে হবে প্রোটন এবং নিউট্রনকে। প্রোটন এবং নিউট্রন এর ঐক্যবদ্ধতার মাধম্যে নিউক্লিয়াস, এবং নিউক্লিয়াস এর চারিদিকে ইলেকট্রনের গতিশীলতা এবং ঐক্যবদ্ধতা সৃষ্টি করে এটম বা পরমানু। পরমানু হতে অনু। এই ঐক্যবদ্ধ্য হওয়ার নিয়মটি তারা কিভাবে বুঝলো? অনু দিয়ে বিভিন্ন বস্তুুর সৃষ্টির এই ধারাবাহিকতা কি স্বর্তস্ফতু ভাবেই ঘটেছিলো? মহাবিশ্বের প্রতিটি অনুপরমানু পর্যন্ত একটি নিয়মের মধ্য দিয়ে চলছে। প্রতিটি বস্তুরই আকার, আকৃতি, গতি, প্রকৃতি, গঠন সমস্তটাই চূড়ান্ত নিয়মের অধীনে পরিচালিত। এসকল নিয়ম সুত্র কি আপনা আপনি সৃষ্টি হলো নাকি নিয়মগুলো সৃষ্টি হয়েছে একটি গুপ্ত ইচ্ছা শক্তির কারনে? পদার্থ সৃষ্টির এই প্রক্রিয়ার মধ্যে ছিলো কি কোন গোপন ইচ্ছাশক্তি? যে ইচ্ছাশক্তি বা উইলফোর্স শক্তির মধ্য দিয়ে পদার্থের মধ্যে গ্প্তু অবস্থায় থেকে তাদের শিখিয়েছে সকল সুত্র অথবা নিয়ম? কি করে বিভিন্ন ধারাবাহিকতার মধ্য দিয়ে সৃষ্টি হবে এই মহাবিশ্ব যদি তার একটু এদিক ওদিক হতো। তবে সৃষ্টি হতো না প্রান সৃষ্টি হতো না আমাদের পৃথিবী সৃষ্টি হতো না মহাবিশ্ব। অতএব আমাদের মেনে নিতে হয় একটি গুপ্ত ইচ্ছা শক্তি এই মহাবিশ্বকে সৃষ্টি করেছে।

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.