নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

প্রকৃত সত্যের দিকে আমাদের ছুটতে হবে..

রাশিদুল ইসলাম লাবলু

প্রকৃত সত্যকে উপলদ্ধি করতে হবে খোলা মন নিয়ে।

রাশিদুল ইসলাম লাবলু › বিস্তারিত পোস্টঃ

মহাবিশ্ব এবং তার পূনারাবির্ভাব - “কালের সংক্ষিপ্ত ইতিহাস অকালে হারায়”

২৪ শে নভেম্বর, ২০১৬ রাত ৮:২১


বিজ্ঞানী ষ্টিফেন ডব্লিউ হকিং তার “কালের সংক্ষিপ্ত ইতিহাস” বইতে প্রশ্ন তুলেছিলেন সৃষ্টি শুরুর পূর্বে ইশ্বর কি করছিলেন? শুধুমাত্র তিনিই নন; অনেক বিজ্ঞানীই এ প্রশ্ন ছুড়ে দিয়ে উপহাস করতেন যদি মহাবিশ্বটা সৃষ্টি হয়ে থাকে তাহলে সৃষ্টির পূর্বে তো ঈশ্বর অকর্মা হয়ে বসে থাকা ছাড়া আর কোন উপায় ছিলো না! খুবই দু:খজনক উপহাস! যা সত্যিই হৃদয়কে ব্যাথিত করে। যেখানে মহাবিশ্ব সৃষ্টি ও ধ্বংশের চক্রে আবদ্ধ সেখানে মহাবিশ্বকে সৃষ্টির পূর্বে আল্লাহ কি করছিলেন ? এ জাতীয় প্রশ্ন করা বাতুলতা মাত্র? এ জাতীয় প্রশ্ন যারা করে তাদের সম্পর্কে আাল কোরানে বলে “যে বিষয়ে উহাদের জ্ঞান নেই সেই বিষয়ে উহারা অস্বীকার করে” তাহলে তাদের এই প্রশ্নের পূর্বে আমাদের একটি প্রশ্ন থেকে যায় এই মহাবিশ্বটি কি একমাত্র মহাবিশ্ব নাকি এই পূর্বে অথবা পরে অসংখ্য মহাবিশ্ব সৃষ্টি হয়েছে? যদি প্রমানিত হয় এটিই একমাত্র মহাবিশ্ব তাহলে এই প্রশ্নের উত্তর হলো মহাবিশ্ব সৃষ্টির পূর্বে ¯্রষ্টার কোন কর্ম ছিলো না। কিন্ত সেটি এখন আর সম্ভব নয়। কারন সেই প্রমান তো এখন মিথ্যা আস্্ফালন বলেই পরিগনিত। বিগব্যাংগ এর পূর্বে কি ছিলো ? অথবা বিগব্যাংগ কেনো ঘটে? এ সকল প্রশ্নই ইদানিং ইনফ্লেশন থিওরির জন্ম দিয়েছে। ইনফ্লেশন থিওরিতে গানিতিক ভাবেই তো প্রমানিত হচ্ছে এই মহাবিশ্বটিই একমাত্র মহাবিশ্ব নয় এর পূর্বে অসংখ্য মহাবিশ্ব সৃষ্টি হয়েছে, এর পরেও অসংখ্য মহাবিশ্ব সৃষ্টি হবে কিংবা এটিই একমাত্র মহাবিশ্ব নয় আরো অসংখ্য মহাবিশ্ব রয়েছে। তাহলে এই প্রশ্নের উত্তরটি হলো তিনি এই মহাবিশ্ব সৃষ্টির পূর্বেও এই কর্মটি করছিলেন এবং আবারও করবেন। কারন সৃষ্টিশীলতাই তার লীলা। আল কোরআনে উল্লেখ আছে “ আল্লাহই সৃষ্টি করিয়াছেন সপ্ত আকাশ এবং অনুরুপ সংখ্যক পৃথিবী। উহাদের মধ্যে নামিয়া আসে তাহার নির্দেশ: যাহাতে তোমরা বুঝিতে পারো যে আল্লাহ সর্ববিষয়ে সর্বশক্তিমান এবং জ্ঞানে আল্লাহ সবকিছুকে পরিবেষ্টন করিয়া আছেন” (৬৫:১২) সপ্ত আসমান ও অনুরুপ সংখ্যক পৃথিবী বলতে অসংখ্য মহাবিশ্ব বোঝানো হচ্ছে এবং সেখানে তার নির্দেশ দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হয়। “সেইদিন আকাশকে গুটাইয়া ফেলিব যেভাবে গুটানো হয় লিখিত দফতর, যেভাবে আমি প্রথম সৃষ্টির সূচনা করিয়াছিলাম, সেইভাবে পূনরায় সৃষ্টি করিবো।” (২১:১০৪) লক্ষ্য করুন এই আয়াতে আল কোরআনে বলছে যখন মহাবিশ্ব এর চুড়ান্ত সময়সীমা অতিক্রম করবে যখন মহাবিশ্নের আয়ু শেষ হবে তখন তিনি মহাবিশ্বকে গুটাইয়া ফেলিব এবং আবার যেভাবে সৃষ্টি হয়েছিলো সেভাবে সৃষ্টি করিব। আল কোরআনের দৃষ্টিভঙ্গিতে মহাবিশ্ব সৃষ্টি ধ্বয়ংশের পর নব সৃষ্টির উল্লেখ থাকলেও এখন দেখি আধুনিক বিজ্ঞান এ সংক্রান্ত বিষয়ে কি বলে?

Many different universes described by quantum cosmology! ----Everett 1957, DeWitt 1967, Vilenkin 1982, Hartle and Hawking 1983!

বিংব্যাং তত্ত্ব প্রতিষ্ঠিত হয়ে যাবার পর আধুনিক কোয়ান্টাম পর্দাথবিদ ও জ্যোর্তিপর্দাথ বিদগন উপলদ্ধি করতে শুরু করছেন আমাদের এই মহাবিশ্বটিই একমাত্র মহাবিশ্ব নয় আরো অসংখ্য হাজারো হাজারো মহাবিশ্ব আশেপাশে থাকতে পারে! তাদের এই সন্দেহ আরো অনেক বেশি ঘনিভূত হয় আশির দশকে ইনফ্লেশন বা মহাস্ফিতি নিয়ে প্রান্তিক গনিতগুলোর সমাধান করতে গিয়ে। আলেকজেন্ডার ভিলেঙ্কিন ও আন্দ্রে লিন্ডে মহাজাগতিক স্ফিতিতত্ত্ব নিয়ে গবেষনা করতে গিয়ে বুঝতে পারলেন মহাজাগতিক স্ফিতি একবার শুরু হলে আর থামে না। এমনটি বিবেচনা করলে বোঝা যায় কোয়ান্টাম ফ্লাকচুয়েশনের মধ্য দিয়ে মহাবিশ্বের আর্বির্ভাব ঘটলেও এমন স্থান কাল সমৃদ্ধ মহাবিশ্ব অসংখ্য থাকতে পারে। সম্প্রতি ষ্ট্রিং তাত্ত্বিকরা তাদের এম তত্ত দ্বারা গননা করে বুঝতে পারছেন কোয়ান্টাম দ্যোদুল্যময়তার কারনে ১০৫০০ এর মতো ভ্যাকুয়াম স্তরের আর্বির্ভাব ঘটতে পারে। এবং সেই সকল স্তর থেকে অসংখ্য মহাবিশ্বের উদ্ভব ঘটতে পারে যারা একে অন্য থেকে ভিন্ন ভিন্ন নিয়ম সমৃদ্ধ।

The multiverse theory (or one of them, anyway) suggests that just outside of our universe, other universes are appearing and disappearing, each in their own bubble of space-time. Generally, these universes don't get close enough to interact, but sometimes a universe will appear right next to ours, and when that happens, we get smacked. Getting smacked by an entire universe would definitely leave a mark. Specifically, it would leave a disk-like pattern in our univers’s cosmic microwave background radiation, and this is what a group of cosmologists from University College London have been looking for. Somewhat incredibly, they managed to find some of these bruises. Four of them. And it's ten times more likely that the four marks are universe collision signatures than that they are anything else that we know of. --- “The Fabric of the Cosmos” – Dr. Brain Green



মাল্টির্ভাস তত্ত্ব এখন আধুনিক বিজ্ঞানের একটি অন্যতম জনপ্রিয় তত্ত্ব হিসেবে প্রতিষ্ঠিত। অনেক বিজ্ঞানীই এই বহুমহাবিশ্ব নিয়ে আলোচনা সমালোচনা করছেন। অসংখ্য পেপার জমা পড়েছে মাল্টির্ভাস হাইপোথিসিস এর পক্ষে। শুধু তাই নয় সেই বুদবুদসম অসংখ্য মহাবিশ্বের মধ্যে সাংর্ঘষিক ঘটনা ঘটতে পারে ! এই বিষয়টি নিয়ে লন্ডনের ইউনির্ভাসিটি কলেজের অধ্যাপক ফিনি অনুসন্ধানী গবেষনা শুরু করেন। তিনি WMAP এ ডেটা পরীক্ষা করে দেখলেন মহাজাগতিক পশ্চাদপট বিকিরনে এই বিষয়টি ধরা পড়ছে । এরকম ৪টি ক্ষতস্থান পাওয়া গেছে যাতে বোঝা যাচ্ছে সাবানের ফেনার বুদবুদসম এই মহাবিশ্ব গুলোর মধ্যে বিগত সময়ে ৪ বার এরকম সাংর্ঘষিক ঘটনা ঘটেছে। আধুনিক পর্দাথবিজ্ঞানীগণ বিশেষ করে স্ফিতিতত্ত্ব নিয়ে যারা গবেষনা কবছেন তারা ইদানিং বুঝতে পারছেন বিগব্যাংগ মহাবিশ্বের মূল কারন নয়। বিগব্যাংগের পূর্বে কিছু ঘটেছিলো! কোয়ান্টাম দোদুল্যময়তার কারনে অসংখ্য ভ্যাকুয়াম স্তরের উদ্ভব ঘটে। সেই ভ্যাকুয়াম স্তরের ফ্লাকচুয়েশনের কারনে অসংখ্য মহাবিশ্বের উদ্ভব। পদার্থবিজ্ঞানী আনেদ্র লিন্ডে তার গবেষনায় দেখিয়েছেন কিভাবে ক্লেওটিক ইনফ্লেশনের মাধ্যমে সম্প্রসারিত অসংখ্য বুদবুদের উদ্ভব ঘটে, সেই সম্প্রসারিত বুদবুদ থেকে সৃষ্টি হয়েছে অসংখ্য বিগব্যাংগ আর সেই অসংখ্য বিগব্যাাংগ জন্ম দিয়েছে অসংখ্য মহাবিশ্বের। তিনি কম্পিউটার থ্রিডি’ও মাধ্যামে দেখিয়েছেন কিভাবে বুদবুদসম মহাবিশ্বগুলো একের সাথে অন্যে সর্র্র্র্র্ম্পৃক্ত থাকে। এখন আর বিগব্যাংগ প্রধান বিষয় নয়।
‘Inflation is not a part of big-bang theory as we thought 15 years ago. On the contrary, the big-bang is the part of inflationary model’ ------ Andre Linde

বিগব্যাং শুধুমাত্র স্থান এবং সময় এর সৃষ্টি করে। সৃষ্টি করে একটি বাউন্ডারি। একটি মহাবিশ্ব। কিন্তÍ ইনফ্লেশন উদ্ভব ঘটায় অসংখ্য ভ্যাকুয়াম স্তরের আর সেই ভ্যাকুয়াম স্তরের কারনে ঘটে অসংখ্য বিগব্যা্গং ও অসংখ্য মহাবিশ্ব।
I’m going to suggest the following way out: The Big Bang was not the beginning of the universe. Cosmologists sometimes say that the Big Bang represents a true boundary to space and time, before which nothing existed —indeed, time itself did not exist, so the concept of “before” isn’t strictly applicable. But we don’t know enough about the ultimate laws of physics to make a statement like that with confidence. Increasingly, scientists are taking seriously the possibility that the Big Bang is not really a beginning—it’s just a phase through which the universe goes, or at least our part of the universe.---- (“From Etertnity to here”)– Seon Callor.


আন্দ্রে লিন্ডের তত্ত্ব অনুসারে কেওট্রিক ইনফ্লেশনের মাধ্যমে সৃষ্টি হয়েছে অসংখ্য সম্প্রসারিত বুদবুদ আবার প্রতিটি সম্প্রসারিত বুদবুদ উতপত্তি ঘটাই অসংখ্য বিগব্যাং এবং প্রতিটি বিগব্যা্গং থেকে উতপত্তি হয়েছে অসংখ্য মহাবিশ্ব। এবং এমনই একটি পকেট মহাবিশ্বে আমরা বসবাস করছি। অথচ আমরা বুঝতে পারছি না আমাদের মতো অসংখ্য মহাবিশ্বের অস্তিত্বের। আমাদের কাছে অজ্ঞাত থাকার কারন আমরা তাদের সীমারেখার বাইরে অবস্থান করছে। বিশাল এক অমনির্ভাস (Omniverse) এর একটি অঙ্গ হিসেবে আমরা শুধুমাত্র আমাদের মহাবিশ্বের অস্তিত্বটিই কেবল বুঝতে পারছি। ইদানিং ষ্ট্রিং তাত্ত্বিকেরা এম তত্ত্বেও মেলবন্ধনে গানিতিক ভাবে দেখিয়েছেন ইনফ্লেশন যখন শুরু হয় তখন অসংখ্য ভ্যাকুয়া ষ্টেট এর উদ্ভব ঘটতে পারে এবং সেই অসংখ্য ভ্যাকুয়া ষ্টেট অসংখ্য বিগব্যাংগ এর জন্ম দিতে পারে।


(উপরের চিত্রে আন্দ্রে লিন্ডের কেওটিক ইনফ্লেশনের কারনে অসংখ্য সম্প্রসারিত বুদবুদের মাধ্যমে অসংখ্য মহাবিশ্ব কিভাবে একটির সাথে আরেকটি সংযুক্ত রয়েছে। কেওটিক ্ইনফ্লেশনের মাধম্যে এভাবেই অসংখ্য বুদবুদের মাধ্যমে অসংখ্য পকেট মহাবিশ্ব উতপত্তি ঘটতে পারে।)

কিন্তু এই মহাস্ফিফতি বা ইনফ্লেশন কেন ঘটে? গানিতিকভাবে হয়তো অনেকে উত্তর দেওয়ার চেষ্টা করছেন। কিন্তু এই ইনফ্লেশন কেনো শুরু হয় ? ইনফ্লেশনের পিছনে আদি কারন কি? কি হতে পারে ইনফ্লেশনের পিছনের ঘটনা ? তবে আধুনিক বিজ্ঞানীরা এ ব্যাপারে কিছু সম্ভাবনার কথা ভাবছেন। স্ফীতির প্রাথমিক বীজ আসতে পারে আনুবীক্ষনিক আকারের কোন বিকষণমূলক পদার্থ থেকে। যে বীজ মহাবিশ্ব সৃষ্টির কারন হয়ে দাড়াতে পারে। এ্যালেন গুথ তার গবেষনায় দেখিয়েছিলেন মাত্র এক আউন্স ওজনের একটি ভর থেকে ইনফ্লেশন যাত্রা শুরু করতে পারে যার ব্যাস হতে পারে একটি প্রোটনের চেয়েও একশত কোটি গুন ছোট কিছু। স্ফীতির সেই ছোট বীজ ট্রিয়ন বর্নিত ভ্যাকুয়াম ফ্লাকচুয়েশনের সমান যা কোয়ান্টাম শুণ্যতা থেকে উদ্্ভ’ত হতে পারে সময় সময়। অথচ আন্দ্রে লিন্ডের চিরন্তন স্ফিতী তত্ব এসে ইনফ্লেশন এর আদি কারন কে প্রশ্নবিদ্ধ করে তুললো। তার তত্ত্ব অনুযায়ী এ ধরনের স্ফীতির অবিরামভাবে স্ব-পুনরাবৃত্তি ঘটিয়ে প্রতি মূহুত্ত্ইে তৈরী করছে নতুন নতুন মহাবিশ্ব। এই প্রক্রিয়া অতীতে যেমন চলছে ভবিষ্যতেও চলবে। আসলে এটি অনন্ত মহাবৈশিক সিস্টেমের কোন শুরু নেই শেষ ন্ইে। ১৪০০ শত কোটি বছর পূর্বে যে মহাবিশ্ব শুরু হয়েছে। অন্য মহাবিশ্বের কাাছে তা শুরু নয় তা ক্রমাগত হয়েই চলছে। ১০০ বিলিয়ন বছর কিংবা ১০০ ট্রিলিয়ন বছর পূর্বে কিংবা পরে মাল্টির্ভাস তৈরীর প্রক্রিয়াটি যেনো চিরন্তন। লিন্ডে নিজেই বলেছেন মহাবিশ্ব যদি কখন ধ্বংশ হয়ে যাইও জীবনের মূল সত্ত্বাটি হয়তো টিকে থাকবে অন্য কোন মহাবিশ্বে অন্য কোন ভাবে।

আধুনিক পদার্থবিজ্ঞানের চূড়ান্ত কিছু সীদ্ধান্তের মধ্যে রয়েছে চক্রাকার মহাবিশ্ব নামক একটি তত্ত্ব। পল স্টেইনহার্ট ও নেইল টুরকের চক্রাকার মহাবিশ্ব নামক একটি তত্ত্বে বলেছেন এই মহাবিশ্ব বারে বার সৃষ্টি এবং ধ্বংশ হয়। ষ্ট্রিং তাত্তিকদের উদ্ভাবিত মেমব্রেন এই সৃষ্টি ও ধ্বংশের কারন। তারা তাদের “Endless Universe” বইয়ের মাধ্যমে এসকল তথ্য জানিয়েছেন। তাদের মতে এ মহাবিশ্বের কোন শুরু নেই শেষ ন্ইে। এ এক চলমান বিষয়, অনন্ত, অফুরন্ত। সৃষ্টি এবং ধ্বংশের চক্রে আবদ্ধ। এই মহাবিশ্ব যেমন একদা সৃষ্টি হয়েছিলো এবং আবারও তা হবে; শুরু করবে নতুন চক্রের। আজ থেকে ট্রিয়ন বছর পর আবারও শুরু হবে নতুন চক্রের। ঘটবে নতুন সূচনা। একেকটি চক্র একেকবার মহাবিশ্বকে সৃষ্টি এবং ধ্বংশ করে। শুধু টিকে থাকে একটি চিরন্তন সত্ত্বা।মহাবিশ্ব সৃষ্টির পর ধ্বংশ হয় কিন্তু ধ্বংশের পর জীবনের মূল সত্ত্বাটি ধ্বংশ হয় না। তা টিকে থাকে অন্য কোন মহাবিশ্ব সৃষ্টি হওয়ার মধ্য দিয়ে। তাই যদি হয়ে থাকে তাহলে এ বিষয়টি মেনে নিতে হয় মহাবিশ্ব ধ্বংশের পর একটি বিষয় টিকে থাকে যা চিরন্তন যা কখনও ধ্বংশ হয় না। টিকে থাকে চক্রের পর চক্র ধরে। যাকে আমরা অভিহিত করি সৃষ্টির মূল কারন আদি কারন। যার কোন ধ্বংশ নেই চিরন্তন এক সত্ত্বা। যে চেতনার প্রকাশ ঘটে শক্তি ও জ্ঞানের মহা সম্মিলন রুপে।

ষ্টিফেন ডব্লিউ তার ‘ব্রিফ হিস্ট্রি অব টাইম’ বইয়ে প্রশ্ন ছুঁড়ে দিয়ে বলেন, ‘যদি মহাবিশ্বের সূচনা থাকে, তবে হয়তো ভাবতে পারি এর পেছনে ঈশ্বর বলে কেউ হয়তো থাকতে পারেন। কিন্তু মহাবিশ্ব যদি পুরোপুরি স্বয়ংসম্পূর্ণই হয়, যদি তার কোন সীমারেখা কিংবা প্রান্ত না থাকে, তবে তো এর কোন শুরু নেই, শেষ নেই, it would simply be! তাহলে এখানে ঈশ্বরের স্থান কোথায়?’ তিনি ঈশ্বরের স্থান কোথায় বলে প্রশ্ন করেছিলেন আর এখন আমাদের সেই প্রশ্নের উত্তর দেওয়ার সময় এসেছে।এখন আমরা বুঝতে পারছি সৃষ্টি ধ্বংশের মধ্য দিয়ে অবশিষ্টাংশ যা থাকে তা স্বয়ং তিনি। তার অংশ। তিনিই মহাবিশ্ব রুপে সবর্ত্র বিরাজিত। আল কোরানে তিনি বলছেন “তিনি গুপ্ত এবং তিনিই ব্যাক্ত (প্রকাশ্য)”। এই মহাবিশ্বটা স্বয়ং তিনিই। তিনি নিজেই নিজেকে সৃষ্টি করেছেন।“আল্লাহর সত্তা ব্যতীত সমস্ত কিছুই ধ্বংশশীল” (২৮:৮৮)। আল্লার সত্তা টি চিরন্তন বস্তু । স্টিফেন হকিং তার গ্রান্ড ডিজাইন বইতে বলেছেন “ এটা (মহাবিশ্ব) যদি সসীম হয়। এই সসীমতা এখনও প্রমান করা বাকী। তাহলে এটা হবে মহাবিশ্বের এমন এক রুপায়ন, যে মহাবিশ্ব নিজেই নিজেকে সৃষ্টি করে। আর আমরা বাধ্য হয়েই এই মহাবিশ্বের একটি অংশ কারন এ ছাড়া আর কোন সুসংহত রুপায়ন নেই।” ষ্টিফেন ডব্লিউ হকিং এর মতে মহাবিশ্ব নিজেই নিজেকে সৃষ্টি করেছে। পাঠক শেষ অবধি আমরা একটি বিষয় পেলাম, চিরন্তন এক সত্ত্বা যা কখনও ধ্বংশ হয় না।যা আমাদের উপলদ্ধির অগম্য। অথাৎ অতীতের ধ্বংশ হয়ে যাওয়া মহাবিশ্বের হারিয়ে যাওয়া মূল সত্ত্বাটিই মহাবিশ্ব সৃষ্টির বা ধ্বংশের কারন। এবং সেই সত্ত্বা জেগে ওঠে নতুন রুপে নতুন ভাবে নতুন দৃষ্টিভঙ্গিতে। তাই যদি হয়ে থাকে তাহলে এ বিষয়টি মেনে নিতে হয় মহাবিশ্ব ধ্বংশের পর একটি বিষয় টিকে থাকে যা চিরন্তন যা কখনও ধ্বংশ হয় না। টিকে থাকে চক্রের পর চক্র ধরে। যাকে আমরা অভিহিত করি সৃষ্টির মূল কারন আদি কারন। যে চেতনার প্রকাশ ঘটে শক্তি ও জ্ঞানের মহা সম্মিলন রুপে।

বিশিষ্ট বিজ্ঞাণী টাফটস বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ভিলেংকিন তার গবেষনায় মহাবিশ্বের সৃষ্টির পিছনে পূর্বের মহাবিশ্বের ওয়েভ ফাংশন কে কারন হিসেবে উল্লেখ করছেন। তার বক্তব্য মতে পূর্বের মহাবিশ্বের ওয়েভ ফাংশন যা সংকুচিত হয়ে শুন্যতায় মিলিয়ে গিয়ে সেই কেইওস থেকে নতুন মহাবিশ্বের স্পেস টাইম টানেল করে আবির্ভাব হতে পারে। ভিলেংকিনের দৃষ্টিভঙ্গিতে শুন্যতা বলতে শুধু এম্পটি স্পেস নয় একেবারেই পরম শুন্যতা যাকে বলে নাথিং। সেই শুন্যতা বা নাথিং থেকে কোয়ান্টাম টানেলিং প্রক্রিয়ায় মহাবিশ্বের উদ্ভব হতে পারে। কোয়ান্টাম টানেলিং প্রক্রিয়ায় মহাবিশ্ব সৃষ্টি এই কনসেপ্ট নিয়ে ভিলেংকিন সহ আরো অনেকেই গবেষনা করছেন। তাদের সকলেই প্রায় একই বেসিক কনসেপ্টের মধ্য দিয়ে ভাবছেন। তাদের প্রস্তবনাটা হলো আমাদের এই মহাবিশ্বটা কোয়ান্টাম টানেলিং নামক প্রক্রিয়ায় অপর একটি মহাবিশ্ব থেকে উদ্ভুত হয়েছে। যে মহাবিশ্বের টাইম axis আমাদের উল্টা। পূর্বের মহাবিশ্বের ওয়েভ ফাংশন যেটা শুন্যতায় মিলিয়ে গিয়ে সংকুচিত হয়ে প্লাংক লেন্থে চলে গিয়ে ম্যাক্সিমাম এ্যানট্রোপি বা ক্লেইওসে পরিনত হয়। এমনই পরম absolute শুন্যতা সৃষ্টি হয় যে অবস্থান নির্দীষ্ট ভাবে ডিফাইন করা সম্ভব। সেই অবস্থানে থেকে পূর্বের মহাবিশ্বের ওয়েভ ফাংশন নতুন মহাবিশ্বের স্পেস টাইমকে আর্বিভ’ত করে। এই বেসিক কনসেপ্টটি একটি মহাবিশ্ব থেকে আরেকটি মহাবিশ্বের transition । তাহলে পূর্বের মহাবিশ্বটি কোথা থেকে এলো? এ ক্ষেত্রে আমাদের মেনে নিতে হয় পূর্বের মহাবিশ্বটি তারও পূর্বের একটি মহাবিশ্ব হতে উদ্্ভুত। এই ধারাবাহিকতা থেকে স্পষ্ট বোঝা যায় যে একটি মহাবিশ্বের হিসাব নিকাশ উপর ভিত্তি করে পরের মহাবিশ্বের আবির্ভাব ঘটে। এব্যাপারে আলকোরআন বলে “আল্লাহর সত্তা ব্যতীত সমস্ত কিছুই ধ্বংশশীল”(২৮:৮৮) আধুনিক বিজ্ঞান যেভাবে অনুমান করছে জীবনের মূল সত্ত্বাটি টিকে থাকে।আল কোরআন ঠিক এমন কথাটিই বলছে।


সেই মহান সত্ত্বা আকাশসমূহ ও পৃথিবী সমূহকে সৃষ্টি করিয়াছেন অতি সুক্ষ সমতায়।” (৬.৭৩) পাঠক মহাবিশ্ব সৃষ্টি ও ধংশ নিয়ে অথবা বহু মহাবিশ্ব নিয়ে আল কোরআনে অসংখ্য স্থানে উল্লেখ করা হয়েছে। “যিনি আদিতে সৃষ্টি করেন তিনি আবারও সৃষ্টি করিবেন”(২৭:৬৪) তাহারা কি লক্ষ্য করে না কিভাবে আল্লাহ যিনি আকাশমন্ডলী ও পৃথিবীকে সৃষ্টি করিয়াছেন তিনি অনুরুপ সৃষ্টি করিতে সক্ষম। তিনি উহাদের জন্য স্থির করিয়াছেন একটি কাল। ইহাতে কোন সন্দেহ নাই।”(১৭:৯৯) “সেইদিন আকাশকে গুটাইয়া ফেলিব যেভাবে গুটানো হয় লিখিত দফতর, যেভাবে আমি প্রথম সৃষ্টির সূচনা করিয়াছিলাম, সেইভাবে পূনরায় সৃষ্টি করিবো।” (২১:১০৪) এই আয়াত গুলো দিয়ে প্রমানিত হয় এই মহাবিশ্ব একটি সময়ের চক্রে সৃষ্টি করা হয়েছে। এবং তিনি এই মহাবিশ্ব আবারও সৃষ্টি করিবেন। কিন্ত এই সকল আয়াতে প্রমানিত হয় না যে আরো মহাবিশ্ব আছে কিংবা থাকতে পারে। এমন কোন আয়াত দরকার যাতে প্রমানিত হয় আরো মহাবিশ্ব আছে। হ্যা। অনুরুপ একটি আয়াতে আল কোরআনে উল্লেখ আছে “ আল্লাহই সৃষ্টি করিয়াছেন সপ্ত আকাশ এবং অনুরুপ সংখ্যক পৃথিবী। উহাদের মধ্যে নামিয়া আসে তাহার নির্দেশ: যাহাতে তোমরা বুঝিতে পারো যে আল্লাহ সর্ববিষয়ে সর্বশক্তিমান এবং জ্ঞানে আল্লাহ সবকিছুকে পরিবেষ্টন করিয়া আছেন” (৬৫:১২) আল কোরআনের (৬৫:১২) নং আয়াতের “সপ্ত আকাশ এবং অনুরুপ সংখ্যক পৃথিবী” বলতে সাতটি আকাশের জন্য অনুরূপ সংখ্যক পৃথিবী বা সাতটি পৃথিবী। (যদিও আরবী সাহিত্যে সাত বলতে বহু বোঝানো হয়) যা বহু বিশ্বের ধারনা দেয়। এ সকল আয়াত থেকে আমরা নি:সন্দেহে উপলদ্ধি করছি আলকোরআন আমাদের নিশ্চিত ভাবেই বহু মহাবিশ্বের ধারনা দিচ্ছে শুধু তাই নয় এবং সেখানেও আল্লাহর নির্দেশ নির্দেশিত হয়। অর্থাত সেই মহাবিশ্বগুলো আল্লাহর বিধান বা নিয়ম দ্বারা পরিচালিত হয়। অতএব যারা প্রশ্ন করে সৃষ্টির পূর্বে ইশ্বর কি করছিলেন? তাদের মুখের উপর আমাদের উত্তর দেওয়ার সময় চলে এসেছে যে এই মহাবিশ্ব সৃষ্টির পূর্বে ইশ্বর গত মহাবিশ্ব ধ্বংশের কাজ সমাপ্ত করছিলেন।

মন্তব্য ৪ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (৪) মন্তব্য লিখুন

১| ২৪ শে নভেম্বর, ২০১৬ রাত ১১:৫৬

ইমরান আশফাক বলেছেন: বুঝে পড়তে হবে।

২৬ শে নভেম্বর, ২০১৬ সকাল ১১:০৯

রাশিদুল ইসলাম লাবলু বলেছেন: পড়ুন এবং আমার লেখার সাথে ই থাকুন। আপনোকে ধন্যবাদ।

২| ২৫ শে নভেম্বর, ২০১৬ রাত ২:১১

মেহ্‌নাজ আলতাফ বলেছেন: চমৎকার পোস্টটি। শুভেচ্ছা রইলো।

৩| ২৫ শে নভেম্বর, ২০১৬ দুপুর ১:৫৭

এম এ কাশেম বলেছেন: দারুন আলোচনা।

ধন্যবাদ।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.