নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

প্রকৃত সত্যের দিকে আমাদের ছুটতে হবে..

রাশিদুল ইসলাম লাবলু

প্রকৃত সত্যকে উপলদ্ধি করতে হবে খোলা মন নিয়ে।

রাশিদুল ইসলাম লাবলু › বিস্তারিত পোস্টঃ

পৃথিবীর বৃকে মানুষের রাজত্ব আল্লাহর অনুগ্রহ! এটি প্রমানিত!

২৭ শে জুন, ২০১৮ রাত ৯:৩৮


আর আমি আসমানকে সৃষ্টি করেছি একটি সুরক্ষিত ছাদরূপে, কিন্তু তারা তার নিদর্শনাবলী থেকে মুখ ফিরিয়ে রাখে । (সুরা আম্বিয়া- ২১ঃ ৩২) ।

পৃথিবীকে চারপাশে ঘিরে থাকা বিভিন্ন গ্যাস মিশ্রিত স্তরকে বায়ুমন্ডল বলে। যা পৃথিবী তার মধ্যাকর্ষণ শক্তি দ্বারা ধরে রাখে। এই বায়ুমন্ডল পৃথিবীতে জীবের অস্তিত্ব রক্ষা করে। শ্বাস-প্রশ্বাস ও সালোকসংশ্লেষণের জন্য ব্যবহৃত বায়ুমন্ডলীয় গ্যাসসমূহ প্রাণ তথা জীবনের কাচামাল হিসোবে ব্যবহত হয়। বাতাসে ৭৮.০৯% নাইট্রোজেন,২০.৯৫% অক্সিজেন, ০.৯৩% আর্গন,২০.৯% কার্বন ডাইঅক্সাইড এবং সামান্য পরিমাণে অন্যান্য গ্যাস থাকে। বাতাসে এছাড়াও পরিবর্তনশীল পরিমাণ জলীয় বাষ্প রয়েছে যার গড় প্রায় ১%। স্থলজ উদ্ভিদ ও স্থলজ প্রাণীর বেঁচে থাকার জন্য উপযুক্ত বাতাস কেবল এই পৃথিবীর ট্রপোমণ্ডল এবং কৃত্রিম বায়ুমণ্ডলসমূহে পাওয়া যাবে। এই বায়ুমন্ডলকে প্রকৃতির দান বলা যেতে পারে। বলা যেতে পারে আল্লাহর অনুগ্রহ।

জীবনের অবিরাম গতিধারা বজায় রাখার জন্য বায়ুমণ্ডল বেশ গুরত্বপূর্ণভাবে কাজ করে যা‪চ্ছে। যখন ছোট-বড় বহু উল্কা পৃথিবীর দিকে ধেয়ে আসে, তখন বায়ুমণ্ডল এদের বেশিরভাগকেই ভূপৃষ্ঠে পতিত হতে দেয় না। বায়ুমন্ডলেই জ্বালিয়ে দেয়। এভাবে পৃথিবীর জীবজগতকে উল্কা পতনের ক্ষতিকর দিক থেকে বাঁচিয়ে দেয় বায়ুমণ্ডল। তা ছাড়া মহাশূণ্য থেকে জীবিত বস্তু সমূহের জন্য ক্ষতিকর যে রশ্মি নির্গত হয় তাকে ফিল্টার করে বা ছেঁকে শোধন করে বায়ুমন্ডল। পৃথিবীতে জীবণ বাঁচিয়ে রাখার জন্য এই সমস্ত দ্রব্যগুলির বিকীরণের উপস্থিতি অনস্বীকার্য। যেসব রশ্মিসমূহ জীবের জন্য ক্ষতিকর নয়, বরং উপকারী। সূর্য থেকে যে অতি গাঢ় আল্ট্রভায়োলেট রশ্মি নির্গত হয়, তা বায়ুমন্ডলের ওযোন স্তর দিয়ে ফিল্টার হয়; এভাবে আল্ট্রাভায়োলেট রশ্মির অত্যন্ত সীমিত আর অতি প্রয়োজনীয় অংশ ভূপৃষ্ঠে এসে পোঁছে। বায়ুমন্ডলের সুরক্ষার কাজ এখানেই শেষ হয়না, মহাশূণ্যের প্রায় -২৭০০ সেলসিয়াসের মতো বরফ ঠাণ্ডা তাপমাত্রা থেকেও বায়ুমন্ডল পৃথিবীকে রক্ষা করে থাকে। এই বায়ূমন্ডল মহাশুন্যের হিম শীতলতাকে ভিতরে ঢ়ুকতে তো দেয় না বরং এই বায়ুমন্ডল সুর্য থেকে তাপ শোষন করে পৃথিবীকে উত্তপ্ত করে রাখে। এবং হিমশীতলতাকে দুরীভূত করে।

পৃথিবীকে ক্ষতির হাত থেকে বাঁচানোর জন্য শুধুমাত্র এই বায়ুমন্ডলই কাজ করে না । বরং এই বায়ুমন্ডলের সাথে ভ্যান এ্যালেন বেল্ট নামে একটি চুম্বকীয় ক্ষেত্র রয়েছে । যেটা একই ভাবে সমস্ত ক্ষতিকারক বিকীরণের বিপরীতে রক্ষাকবচ বা ঢাল হিসাবে কাজ করে । বায়ুমন্ডল এবং ভ্যান এলেন বেল্ট না থাকলে আজ হয়তো আমরা মানুষেরা এই পৃথিবী রাজত্ব করতে পারতাম না। স্যার Van Allen পৃথিবীবাসীর কাছে গবেষনালব্ধ ফলাফল প্রকাশ করে বলেন যে, আমাদের পৃথিবী পৃষ্ঠের নীচে একটি অত্যন্ত শক্তিশালী Magnetic field আছে যা আমাদের বায়ুমণ্ডলের চারপাশে একটি বেল্টের মতো বলয় সৃষ্টি করেছে, পরবর্তীতে আরো অনেক গবেষণার মাধ্যমে বিজ্ঞানীগণ এ বিষয়ে নিশ্চিত হন। ‘ভ্যান এলেন বেল্ট’ নামক এই প্রানীকূল রক্ষাকারী বুহ্যটি পৃথিবী হতে ১০০০ কি:মি: পযর্ন্ত বিস্তৃত যা পৃথিবীর অভ্যন্তরস্থ চুম্বক ক্ষেত্র দ্বারা প্রভাবিত। পৃথিবীর অভ্যন্তরস্থ ভাগ বা এর কেন্দ্রের Iron Core (আইরন কোর) চুম্বক ক্ষেত্র তৈরীতে গুরুর্ত্বর্পূণ ভূমীকা রাখে। এই চুম্বক ক্ষেত্রটি পৃথিবীর কেন্দ্রের চুম্বকীয় ধাতু লোহা নিকেল দ্বারা সৃষ্টি হয়। এই Iron Core টির দুটি অংশ আছে Outer Core এবং Inner Core। Inner Core কঠিন পর্দাথ দ্বারা তৈরী এবং Outer Core তরল পদার্থ। এ দুটি লেয়ার পরস্পর বিপরীত দিকে ঘুরতে থাকে এবং তাদের এই ঘুর্ননের কারনে ভূচুম্বকীয় ক্ষেত্র তৈরী হয়। এই চুম্বকীয় ক্ষেত্র বায়ুমন্ডলের স্তরকে ধরে রাখে।

‘ভ্যান এলেন বেল্ট’ পর্যবেক্ষণকালে একটি নতুন ধারণা তাত্ক্ষণিকভাবে উদয় হয়। বিজ্ঞানীরা তখন মহাকাশযানের যাত্রাপথেই পর্যবেক্ষণ যন্ত্রগুলো চালু করার ত্বরিত সিদ্ধান্ত নেন। তারা দেখতে পান সূর্যের আবহাওয়ামণ্ডলীয় ঘটনায় বিপুল পরিমাণ শক্তি বিকিরিত হয়ে পৃথিবীর দিকে ধেয়ে আসছে এবং ‘ভ্যান এলেন বেল্ট’টি ফুলে গেছে। ফলে, নতুন পর্যবেক্ষণের সূচনাতেই বিজ্ঞানীরা দেখতে পেলেন কীভাবে বিপুলশক্তি শোষণ করে এই বেল্টের গাঠনিক কাঠামো পরিবর্তিত হয়ে একটি তৃতীয় স্তর তৈরি করছে, যা প্রায় মাসখানেক সময় বজায় থেকে আবার ধীরে ধীরে পূর্বাবস্থায় ফিরে গেল। ইতোপূর্বে বিজ্ঞানীরা ভাবতেন সৌরঝড়ের কারণে নিক্ষিপ্ত উচ্চগতির ইলেকট্রন কণাসমূহ পৃথিবীর ঊর্ধ্ব-বায়ুমণ্ডলে আছড়ে পড়ে এবং তা বিক্ষিপ্তভাবে ছড়িয়ে পড়ে। কিন্তু নতুন পর্যবেক্ষণে এটা পরিষ্কার হয় যে, এই তীব্রশক্তির কণিকাসমূহ তার বহু পূর্বেই ভ্যান এলেন বেল্টে শোষিত হয়ে একটি তৃতীয় স্তরে সঞ্চিত হয়, যার ফলে পৃথিবীর চারপাশের এক বিস্তীর্ণ মহাশূন্য এলাকা সূর্য থেকে বিচ্ছুরিত ওই তীব্রশক্তির কণাগুচ্ছের বিপদ থেকে মুক্ত থাকে। বিজ্ঞানীরা তাই এটাকে অভিহিত করেছেন শক্তির সংরক্ষণাগার হিসেবে, যা না থাকলে ওই উচ্চশক্তির ইলেকট্রন কণাসমূহ ভয়ঙ্কর বিপজ্জনক করে তুলত পৃথিবীর চারদিকে আবর্তনকারী কৃত্রিম উপগ্রহসমূহের পরিচালনা ব্যবস্থা এবং মহাকাশ-বিচরণকে। এমন কী মহাকাশযানকে ভস্মীভূত পর্যন্ত করে ফেলত। তাই বিজ্ঞানীরা এই তৃতীয় স্তরটিকে তুলনা করছেন এক ‘অদৃশ্য প্রতিরক্ষাব্যূহ’ হিসেবে।



আমাদের সূর্যে প্রতি মিনিটে বিস্ফোরণের ফলে নির্গত শক্তি ব্যাপক পরিমান ধ্বংশের ক্ষমতা রাখে। এর একটিমাত্র বিস্ফোরণ হিরোশিমায় পতিত ১০০ বিলিয়ন এটম বোমার সমতুল্য। সূর্য থেকে এবং মহাবিশ্ব থেকে আসা মাত্র ০.১ % রেডিয়েশন পৃথিবীতে প্রবেশ করে এবং বাকী অংশ রেডিয়েশন তা মহাশুল্যে ফেরত পাঠায়। ডঃ হাগরস্ ভ্যান এ্যালেন বেল্ট সম্পর্কে মন্তব্য করতে গিয়ে বলেছেন যে : ‘প্রকৃতপক্ষে আমাদের পৃথিবীর ঘনত্ব পৃথিবীর সৌরমন্ডলে যে কোন গ্রহ উপগ্রহগুলোর চেয়ে সব থেকে বেশী। পৃথিবীর কেন্দ্রস্থলের বৃহৎ নিকেল ও লৌহ স্তর এই চুম্বকীয় ক্ষেত্রের জন্যই সৃষ্টি হয় বা হচ্ছে । এই চুম্বকীয় ক্ষেত্রই ভ্যান এ্যালেন বিকীরণ ঢাল বা রক্ষাকবচ তৈরী করে । যা পৃথিবীকে সমস্ত ধরনের বিস্ফোরনের ক্ষতিকারক বিকীরণের হাত থেকে রক্ষা করে বা করছে । যদি এই ঢাল না থাকত তবে পৃথিবীতে জীবন বেঁচে থাকা অসম্ভব হতো । পৃথিবীর অভ্যন্তর ভাগ সুষম তাপীয় ইঞ্জিন ব্যবস্থা Radioactivity দ্বারা পরিচালিত। যদি এই তাপীয় ব্যবস্থা কিছুটা ধীর গতিতে চলতো তবে কোনভাব্ইে Iron Core সৃষ্টি হতো না। আর যদি এই তাপীয় ব্যবস্থা কিছুটা দ্রুতগতিতে হতো তবে এই পৃথিবীতে প্রতিদিন ভূমীকম্প ও অগ্নুৎপাত হতো। এবং প্রতিদিনের ভূমীকম্পের ফলে পৃথিবীতে প্রাণীকুলের টিকে থাকা অসম্ভব হয়ে উঠতো। প্রাণীকূলের বিনাশ ঘটতো।

বায়ুমন্ডল আর ভ্যান এলেন বেল্টের জন্য এই শক্তির ক্ষতিকর দিক থেকে মহাবিশ্ব নিরাপদ রয়েছে। পৃথিবীর ম্যাগনেটিক ফিল্ড দ্বারা তৈরী ম্যাগনেটোস্ফিয়ার স্তর পৃথিবীকে মহাশূণ্যজাত বস্তুর ক্ষতিকর কসমিক রশ্মি এবং কণাসমূহ থেকে নিরাপদে রাখার জন্য বর্ম হিসেবে কাজ করে। থেকে সহস্র সহস্র কিলোমিটার উপরে অবস্থিত এই বেল্টটি মারাত্মক ক্ষতিকর শক্তি থেকে পৃথিবীর জীব জগৎকে রক্ষা করে যা‪চ্ছে, নচেৎ মহাশূণ্য থেকে ভয়ানক এই শক্তি পৃথিবীতে এসে পৌঁছুত।‬ ভ্যান এলেন বেল্ট যদি না থাকতো তবে সূর্যের ভেতরে ঘন ঘন সংগঠিত বিশাল বিস্ফোরনের শক্তি পৃথিবীর সমগ্র প্রাণী জগতকে ধ্বংস করে দিতো। ভ্যান- এলেন রেডিয়েশনের এই ঢালটি এক মাত্র পৃথিবীর জন্যই সৃষ্টি করা হয়েছে অনন্যরূপে। বিস্ফোরণের (Solar Flare) ৫৮ মিনিট পর পর্যবেক্ষণ করে দেখা গেছে যে,কম্পাসের ম্যাগনেটিক সূচকটি অস্বাভাবিক নড়াচড়া প্রদর্শন করছে। আর পৃথিবীর বায়ুমন্ডলের ২৫০ কিলোমিটার উপরে তাপমাত্রা সহসা বেড়ে গিয়ে ২৫০০ ডিগ্রী সেন্টিগ্রেডে পৌছেঁছে। সংক্ষেপে ভূ-পৃষ্ঠের উপরে উঁচু স্তরে একটি নিখুঁত সিস্টেম কর্মরত রয়েছে। এটি আমাদের বিশ্বেরচারিদিক জুড়ে কর্মরত এবং বিশ্বকে বাইরের আসন্ন বিপদ বা আশংকা থেকে রক্ষা করছে।

আমাদের জীবনের জন্য ভ্যান এলেন বেল্টের গুরত্বের কথা বলতে গিয়ে ড. হিউগ রস বলেন, ‘প্রকৃতপক্ষে সৌরজগতের অন্য যে কোন গ্রহের চাইতে আমাদের পৃথিবীর ঘনত্ব অনেক বেশী। বিশাল নিকেল-লৌহ স্তর আমাদের বিশাল ম্যাগনেটিক ফিল্ড-এর জন্য দায়ী। এই ম্যাগনেটিক ফিল্ডটিই ভ্যান এলেন রেডিয়েশন বর্মটি তৈরী করেছে যা রেডিয়েশনজনিত গোলাবর্ষণ থেকে ভূপৃষ্ঠকে রক্ষা করছে। এই বর্ম বা ঢালটি না থাকলে পৃথিবীতে প্রাণের অস্তিত্ব অসম্ভব হয়ে দাঁড়াতো।’ আধুনিক বিজ্ঞানের চরম উৎকর্ষের এই যুগে এসব নতুন আবিষ্কার প্রকৃতপক্ষে মহান আল্লাহ-তা’য়ালার অনুগ্রহ ও রহমতস্বরূপ। নিশ্চয়ই এটি মানুষকে রক্ষা করার জন্য আল্লাহরই একটি সিস্টেম। একটি ব্যবস্থাপনা। এ থেকেই প্রমানিত হয় এই প্রকৃতি এতটাই সুক্ষ পরিকল্পনা দ্বারা সৃষ্টি যার মূল লক্ষ্য ছিলো প্রাণ সৃষ্টি এক কথায় বলা যায় মানুষ সৃষ্টি। এই মানুষকে পৃথিবীর বুকে রাজত্ব করাবার জন্য যা কিছু দরকার স্রষ্টা তাই সৃষ্টি করেছেন একটি নিয়মের অধীনে। মানুষের জন্য মহাবিশ্ব সৃষ্টি এটি প্রমানিত হতে আর বেশি সময় লাগবে না।

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.