![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
তারপর একদিন বৃষ্টি শুরু হলো..
আমাদের ছুটোছুটির মাঠ
ডাবলুদের পুরনো সরিষা ক্ষেত
পুলিশ লাইনের চার পাঁচটা পুকুর
চাঁদমারির সামনের রাস্তা
বাড়ির পিছনের মজা গড়ই
পাগলপাড়ার দুর্বল ছনের ছাউনি
রেন্যুকের বাঁধের পাড়
জিকে কলোনির মাটির রাস্তা
মিল্টনদের বাড়ির পেছনের মেটেল
সব জলে টইটুম্বুর হয়ে গেলো
মঙ্গলবাড়ি যেতে
বাঁশের স্যাঁতসেঁতে সাঁকো পার হওয়া
এখন মুখের কথা নয়
নিচে সাঁই সাঁই পানির স্রোত
একবার এই পানির পাকস্থলি থেকে
জালালের লাশ উগড়ে উঠেছিল
স্মৃতির রোদজ্বলা কৈশোরে, মনে পড়ে
জালাল আমার আশেপাশে ঘুরঘুর করতো
আমরা নারিকেল-কাঠি গাছের ডাল ভেটুল দিয়ে
এক একটা কটকটে রোদের সকালকে
দুপুর বানিয়ে ছেড়ে দিতাম
সালামকেও শেষ পর্যন্ত
আমাদের স্মৃতির রাফখাতা থেকে
বদলি করে দেয়া হলো
ওর বাবা ছিলেন মনা পুলিশ
একদিন ঘুমের দুপুরে বাবার পকেট থেকে ঘড়ি চুরি করে এনে
আমাদের এক বিস্ময় দেখিয়ে ছাড়লো সালাম
ঘড়ির চাবিতে টান দিয়ে মোড়াতে থাকলে
ঘরির কাঁটাগুলো মসজিদের ফ্যানের মতো ঘোরে
আমি আর জালাল অবাক দেখলাম
আর সালামের পুলিশ বাবার ভয়ে
রাসেলদের বাড়ির পেছনের জংলা রাস্তা দিয়ে
দ্রুত পালিয়ে আসলাম
তারপর অনেকদিন
সালামের বাবাকে দেখলেই
আমরা দূরে চলে যেতাম
আরেকবার এরশাদের কালে বৃষ্টি শুরু হলে
আমাদের স্কুল বন্ধ হয়ে যায়
আমরা পানিতে গোড়ালি ডুবিয়ে ফুটবল খেলার লোভে
দল বেঁধে পুলিশ লাইনের মাঠে হাজির হই
দেখা গেলো পলিথিনে বৃষ্টির পানি চুইয়ে
সবুজের বাংলা বই ভিজে গেছে
আমরা অবশ্য হতাশ হই না
স্কুলশার্ট আর পলিথিনে বইখাতা মুড়ে রেখে
মাঠে নেমে পড়ি
কেউ গোল করলেই পাশের পুকুরের টইটই পানিতে
দাপিয়ে লাফ
যেন অবহেলায় ধুয়ে নেয়া পরাজয়ের গ্লানি
সেবারের বৃষ্টিতে গড়ই উপচে
আমাদের গাদন খেলার উঠোন ডুবে যায়
রান্নাঘরের ডোয়া বেয়ে জোঁক কেঁচো উঠতে থাকলে
পাটকাঠি দিয়ে খুঁচিয়ে
আবার তাদের পানিতে চালান করি
সারা দিন উঠোনের পানিতে পুরনো খাতা ছিড়ে নৌকা ভাসাই
খালাদের বারান্দার পাশে থাকে নৌকার ঘাট
পাটকাঠিতে নৌকাগুলো সুতা দিয়ে বাঁধা
পায়ে কাদা নিয়ে ঘরে ওঠা মানা থাকায়
সারা দিন পানিতে পা ভিজিয়ে
সাদা করে ফেলি পায়ের পাতা, আঙ্গুল
এক রাতে দেখা গেলো
ছোট্ট প্যাকেটের মতো মোড়কে
কারা নাকি মজার জিনিস দিয়ে গেছে
অ্যাত্ত বড় বড় কিসমিস
আর শনপাপড়িরর মতো দেখতে শক্ত বিস্কুট
কাড়াকাড়ি করে নিমিষেই শেষ হয়
আমাদের খাওয়া দাওয়া
আরেকটি বৃষ্টির দিন শেষে
ঠাণ্ডা বিছানায় চলে ঘুমের কসরত
ভেজা ভেজা চাদরেই গুটিশুটি
গড়িয়ে পড়ি আমরা
মা বলে, আমাদের কাপড়গুলো শুকাচ্ছে না
চুলার খড়িগুলো একদিকে ভিজে গেছে
আব্বার ফিরতে আজও দেরি হবে
বানে ভাসা মানুষের জন্য খাবার কাপড়ের যোগাড় চলছে
সেখানে অনেক কাজ
এ রকম কোন কোন দিন
দারুণ বিষণ্ণ লাগে আমাদের
অনেক রাত পর্যন্ত
ব্যাঙ আর শিয়ালের ঝগড়াঝাটির সাথে
পাল্লা দিয়ে চলে
না ঘুমানোর রিহার্সেল
রহস্যময় অন্ধকারে জোনাকি জ্বলতে দেখি
অনন্তকাল ধরে...
তারপর
আমরা নিজেরাও ঠিক বুঝতে পারি না
কখন আমাদের ঘুমিয়ে পড়ার সময় হয়...
২| ১৬ ই মে, ২০২২ বিকাল ৫:১৭
খায়রুল আহসান বলেছেন: ভালো লেগেছে স্মৃতিময় বৃষ্টিমন্থনের স্মৃতি জাগানিয়া বর্ণনা। পাঠকেরা অনেকেই এ মন্থনের মাঝে নিজেদের খুঁজে পাবেন।
৩| ১৬ ই মে, ২০২২ বিকাল ৫:৪০
রাজীব নুর বলেছেন: খুব সুন্দর কবিতা।
©somewhere in net ltd.
১|
১৬ ই মে, ২০২২ বিকাল ৪:২০
ভার্চুয়াল তাসনিম বলেছেন: সুন্দর গল্প কবিতা।