নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
একবার কোলকাতা যাবার সময় পেট্রাপোল ইমিগ্রেশন পার হয়ে বাসে উঠে বেশ কিছুক্ষন অপেক্ষার পর শুনলাম বাস ছাড়তে দেরী হচ্ছে কারন দুইজন যাত্রীকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। দুই যাত্রীর একজন আমার পাশের সারির সিটে আরেকজন সম্ভবত পেছনের কোন সিটে বসেছেন। সুপারভাইজার এদিক সেদিক কোথাও তাদের খুঁজে না পেয়ে বিরক্ত মুখে বাসের সামনে দাঁড়িয়ে আছে আর ড্রাইভার সাহেব পান মুখে দিতে দিতে খাঁটি পশ্চিমবঙ্গীয় 'খিস্তি' করছে। যদিও পশ্চিমবঙ্গের 'খিস্তি' শুনলে আমার একটু হাসি পায় কিন্তু এই সকল 'খিস্তির' গভীরতা নিঃসন্দেহে বাংলাদেশী 'গালি'র চাইতে অনেক গভীর।
মোটামুটি যখন বাস ছেড়ে দেয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে তখনই সেই দুইজন প্যাসেঞ্জার ফেরত এলেন, হাতে খয়রী রঙের খামের ভেতর বোতল সদৃশ্য কিছু। যা বুঝার তা বুঝে গেলাম। প্রচন্ড মেজাজ খারাপ হলো। এতক্ষন অপেক্ষা করলাম, এই জিনিস তো ইমিগ্রেশনের ভেতরেই পাওয়ার কথা। আমি নিজেকে প্রায় কন্ট্রোল রেখেছি, কিছু বলছি না। মনে মনে ভাবলাম, এই এলাকায় তারা লিকার শপ কোথায় পেলেন?
ড্রাইভার আর সুপারভাইজার সাহেব মোটামুটি 'অগ্নিশর্মা'। আন্তরিকভাবে কানে কানে কথা আর হাতের মুঠোতে 'কিছু' গুজে দিয়েও আগুন পুরোপুরি নেভানো গেলো না। ভদ্রলোক আমার পাশে সারির সিটে বসতেই আমার বিরক্ত চোখের দিকে তাকিয়ে তিনি একটা অপ্রস্তুত হাসি দিলেন। আমি দৃষ্টি ফিরিয়ে সামনে তাকালাম।
বাস তখনও বারাসাত পেরোয়নি। দত্তপুকুর নামক একটা স্থানে লাঞ্চের জন্য বাস থামল। বারাসাতের কথা মনে হতেই আমাদের পদাতিক ভাইয়ের কথা মনে পড়ল। অসম্ভব সজ্জন এবং অমায়িক একজন ব্যক্তি। একবার শুধু আমার সাথে দেখা করার জন্য তিনি এই বারাসাত থেকে প্রায় ঘন্টা খানেকের বেশি সময় জার্নি করে নানা রকম ঝামেলা করে আমার সাথে দেখা করতে কলকাতায় গিয়েছিলেন অথচ সেদিন আমি তাঁকে ঠিকভাবে সময়ই দিতে পারি নি। সেই অপরাধবোধ এখনও কাজ করে। আশা করি আগামীবার সেটা পুষিয়ে নিবো।
আমরা সবাই খেতে নামলাম, সেই দুই ভদ্রলোকও নামলেন। হোটেলের ভেতরে তাদেরকে লক্ষ্য করার খুব একটা সুযোগ পাই নি, বেশ ভীড় ছিলো। খাওয়া দাওয়া শেষ করে দেখি, উনারা বাসের পাশে দাঁড়িয়ে আছেন এবং বেশ হাসিমাখা মুখ। যাত্রীরা বাসে উঠতে দেরি করায় সুপারভাইজার সবাইকে তাড়া দিচ্ছেন, ডাকাডাকি করছেন। একজকে দেখলাম সুপারভাইজারের সাথে সবাইকে ডাকছে আরেকজনকে দেখলাম বাসের হেল্পারকে সাহায্য করার জন্য বাসের গায়ে শব্দ করছে। বুঝলাম, ভাইয়েরা আমার ''দুই ঢোঁক' দিয়ে গলা ভিজিয়ে ফেলেছেন। সুপারভাইজার উনাদের দুইজনকে ধরে কানে কানে কি যেন বললেন, তারা সুন্দর শান্ত হয়ে বাসে উঠে গেলেন এবং পুরো পথে তেমন আর কোন ঝামেলা দেখি নি।
দুপুর প্রায় দুইটার দিকে মির্জা গালিব স্টিটে বাস নামিয়ে দিলো। আমার যদিও জনবহুল এই দিকে থাকার ইচ্ছে ছিলো না কিন্তু সেবার কাজ থাকার আমি মার্কুইস স্ট্রিটের চৌরাস্তার পাশে একটা হোটেলে উঠেছিলাম। হোটেলে ফিরে ১০ মিনিট বিশ্রাম বা পাওয়ার ন্যাপ নিয়ে ফেরার টিকিট করতে ফেয়ারলি প্লেসে গেলাম। টিকিট কেটে কাজ সেরে হোটেলে ফিরতে ফিরতে প্রায় রাতের আটটা।
এইখানে প্রচুর রেস্টুরেন্ট সবই বাংলাদেশী ভ্রমনকারীদের দিয়ে ভরা। আমি দুই একটা বিখ্যাত হোটেলে ঢু মারলাম, এদের খাবার আগে অনেক ভালো ছিলো কিন্তু বর্তমানে অত্যাধিক হাইপের কারনে আমার মনে হয় মান কিছুটা হারিয়েছে। সবচেয়ে বড় কথা রেস্টুরেন্টগুলোর বাইরে বিশাল লম্বা লাইন দেখে আমার খাবার ইচ্ছে মিটে গেলো। সবার প্লেটের দিকে তাকিয়ে দেখলাম গরুর ভুনা বা রেজালাই সবচেয়ে বেশি চলছে।
আমি ভীড় দেখে মার্কুইস স্ট্রীটের অন্য একটা ভারতীয় রেস্টুরেন্টে ঢুকে রুটি আর কাবাব খেয়ে রিলাক্স হয়ে মোড়ে দাঁড়িয়ে ইন্ডিয়ান বিখ্যাত মাটির ভাড়ে চা খাচ্ছি। হঠাৎ সকালের দুই ভদ্রলোকের আগমন। আমাকে চিনতে পেরে বলল, আরে ভাই! কেমন আছেন?
আমাকে জবাব না দেয়ার সুযোগ দিয়ে বলল, আচ্ছা কই খাইলেন? কি খাইলেন?
আমি জবাবে হাত তুলে আমার রেস্টুরেন্টটা দেখালাম। তাঁরা বিস্মিত হয়ে বললেন, ভাই এটা কি হালাল হোটেল ? ঠিকমত জবাই করছে?
আমার মাথার রগটা হঠাৎ করে টং করে উঠল। আমি চা শেষ করে মাটির ভাড়টা রাস্তায় ছুড়ে ফেলে বললাম, -সকালে যে হালাল জিনিস খাইলেন, সেটার যতটা হালাল, এইটাও ততটাই হালাল।
তারা কিছুক্ষন আমার দিকে চেয়ে রইলেন। তারপর বললেন, আরে ঐ টা তো নেশা করে খাইলে হারাম। এমনি তে সমস্যা নাই। আমার কি নেশা হইছে বলেন?
আমি বললাম, না হয় নাই। সেই কারনে মদ খাইয়া ভাত খাবার জন্য হালাল হোটেল খুজতেছেন।
উনারা কিছুটা হতাশ হয়ে চলে গেলেন। যাইহোক - এই এত বড় গল্প বললাম আমাদের জাতিগত চরিত্র সম্পর্কে কিছুটা ধারনা দেয়ার জন্য। আমি এমনও পাবলিক দেখেছি যারা ট্যুরে জীবন্ত মুরগী নিয়া পাহাড়ে যায়। পাহাড়ীদের জবাই করা মুরগী খায় না, কিন্তু ঠিকই রাতে পাহাড়িদের চুয়ানী খাবার জন্য 'বেচ্যাইন' হয়ে উঠে। আপনি সিকিম, দার্জিলি এ গিয়ে দেখেন আমাদের বাংলাদেশীদের একটা বড় অংশ খাবারের জন্য এক দেড় কিলোমিটার হেঁটে ম্যালের নিচ থেকে পাহাড় বেয়ে আবার নিচে নেমে মুসলিম হোটেল বের করে খাবার খায় এবং যাবার সময় আবার ম্যাল রোডের ট্যাক্সি স্ট্যান্ড থেকে সুন্দর গরম থাকার পানীয় কিনে নিয়ে যায়। কেউ যদি শুধু হালাল খাবারের জন্য দুই মাইলও হাটত তাহলে আমার আপত্তি ছিলো না।
এত কমপ্লেক্স ও দ্বিমুখী মানসিকতার লোকজন যখন প্রচন্ড ধার্মিক হবার দাবি করে তখন পুরো ব্যাপারটা আমার কাছে অতি বিপদজনক বলে মনে হয়। আমরা বাংলাদেশীরা সম্ভবত দুটো প্যারারাল ওয়ার্ল্ডে বিশ্বাস করি। এক পৃথিবীতে সে বাঙালি ধার্মিক, সে অসৎ কর্মে মন খারাপ করে, ফেসবুকে বা ব্লগে ধর্ম নিয়ে সমালোচনা দেখলে কষ্ট পায়, আহত হয় আর আরেকটা পৃথিবীতে সে অনিয়ন্ত্রিত, বাঁধাহীন - যাকে সে স্বাধীনতা হিসাবে বুঝে নিয়েছে। অথচ নিয়ন্ত্রন করার সক্ষমতার নামই স্বাধীনতা। একটু আড়াল পেলেই তার ভেতরের স্বাধীনতা শব্দ করে বের হয়ে আসতে চায়।
ফলে স্বাধীনতা নিয়ে এই দেশের মানুষ নানা রকম তত্ব আবিষ্কার করে, সন্দেহ করে, নতুন করে স্বাধীনতা খোঁজে নিজ নিজ প্রেক্ষাপট ও স্বার্থ থেকে। আপনি যখন স্বাধীনতার মর্ম বুঝবেন না, দেশের প্রতি আপনার ভালোবাসা আসবে না, দেশের প্রতি ভালোবাসা না আসলে আপনি আপনার প্রতিবেশি, আপনার পরিবার সবার প্রতি হস্টাইল বা আক্রমনাত্বক থাকবেন। এই মনোভাব শুধু ধর্মের দোহাই দিয়ে পরিবর্তন করা সম্ভব নয়। যতদিন না আমরা বুঝতে পারব যে, আমাদের এই দ্বিমুখী মনোভাব একটা সমস্যার অংশ, ততদিন সত্যিকারের স্বাধীনতা খুঁজে পাওয়া কঠিন হবে।
২| ১৬ ই নভেম্বর, ২০২৪ বিকাল ৪:৫০
রানার ব্লগ বলেছেন: বাদ দেন । বাংগালীই তো ।
৩| ১৬ ই নভেম্বর, ২০২৪ বিকাল ৫:০৩
মিরোরডডল বলেছেন:
এ আর নতুন কি জাদিদ।
বাংলাদেশেতো আছেই, পৃথিবীর যেখানেই আমরা সেখানেই এই দ্বিমুখী চর্চা চলছে।
এটা আমাদের কমন সমস্যা, সামুও তার বাইরে না।
আর যদি এই নিয়ে কাউকে সমালোচনা করা হয় বা ধরিয়ে দেয়া হয়, তাহলে বাজে আচরণ ফেইস করতে হয়।
তাই এখন নীরব দর্শক হয়ে থাকাটাই শ্রেয়।
আমাদের সহনশীলতার অভাব, প্রতিকূল মানসিকতা, প্রতিহিংসাপরায়ণতা, এগ্রেসিভনেস সব মিলিয়ে কেমন একটা অস্থির সময়ের মধ্যে দিয়ে যাচ্ছি আমরা।
৪| ১৬ ই নভেম্বর, ২০২৪ বিকাল ৫:৩৭
আজব লিংকন বলেছেন: ভাল বলেছেন।
এদের বলে জাতে মাতাল তালে ঠিক। হারামের কামাইয়ে হালাল খাওয়া বাঙালি।
মদের কথায় মনে পড়লো কলেজ লাইফে বাংলা মদ খেয়েছিলাম কিন্তু চুয়ানি খাওয়া হয়নি। অতি জঘণ্য স্বাদ কিন্তু ভয়ানক পিনিক। অনেক রকমের মদ খাওয়া হয়েছে। কম বয়সের পিনিকবাজ ফ্যান্টাসি ছিল। এখন সে সব ভাবতেই হাসি পায়।
৫| ১৬ ই নভেম্বর, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:৫৫
সোনাগাজী বলেছেন:
আজকের এই যুগে, মুসলমানেরা ইসলাম ( হালাল-হারাম, বেহেশত-দোযখ, ইত্যাদি ) সম্পর্কে সবচেয়ে বেশী জানার সুযোগ পাচ্ছে; এখন ইসলাম ( ধর্ম হিসেবে ) সবচেয়ে বিকশিত। এর থেকে কি উহা আরো গুরুত্বপুর্ণ হওয়ার সুযোগ আছে?
৬| ১৬ ই নভেম্বর, ২০২৪ রাত ৮:৪৪
কামাল১৮ বলেছেন: আমার পরিচিত এক হাজি সাহেব নিয়মিত কলকাতা যান। কেবল মাত্র লাল পানি খেতে।ঢাকায় তার পক্ষে সম্ভব না।অনেকের পরিচিত।
৭| ১৬ ই নভেম্বর, ২০২৪ রাত ১০:৫৮
জনারণ্যে একজন বলেছেন: এই হাস্যকর ব্যাপারটা এখানেও দেখেছি, অনেকবারই ঘটেছে।
মনে করুন, দেশ থেকে কিংবা অন্য স্টেট থেকে বাসায় গেস্ট এসেছে (ম্যাক্সিমামই সময়েই বন্ধুবান্ধব আসে)। বাসায় তরল-গরল অফার করতেই প্রবল আগ্রহে গলা পর্যন্ত পান, এরপর বেসামাল হয়ে গল্পের ঝুড়ি খুলে বসা। এই পর্যন্ত সবই ঠিক আছে।
মাগার, পরেরদিন ঘুরতে গেলেই হালাল রেস্টুরেন্টের খোঁজ-খবর শুরু, তারপর কিঞ্চিৎ লজ্জা মিশ্রিত উৎসুক মুখে ক্লাবের প্রসঙ্গ টেনে আনা।
কঠিন মুখ দেখে কিছুক্ষনের জন্য থেমেই আবারো ইনিয়ে-বিনিয়ে অনুরোধ-উপরোধ, বিশেষ করে দ্বিতীয় প্রসঙ্গে।আর সন্ধ্যা ঘনিয়ে এলে তো কোনো কথাই নেই, থামানো দায় তখন।
বাঙালি পারে বটেও!
৮| ১৭ ই নভেম্বর, ২০২৪ দুপুর ১২:০৪
নতুন বলেছেন: এই সব মানুষের বেশির ভাগই শুনেই মুসলমান। তারা ধর্ম জ্ঞান রাখেনা বরং শুনে অনুসারী। এদের অনেকেকই দেখেছি অনেক কুসংস্কারে আচ্ছন্ন।
আমার এক বন্ধু ৫ তারা হোটেলের বারের ম্যানেজার কিন্তু ছেলে দেশে হাফেজী পড়ছে। যদিও সে মদ খায় না, নামাজী কিন্তু কয়েক লক্ষ টাকার বেতন ছাড়া সহজ বিষয় না।
দেশে এমন মানুষের সংখ্যা অনেক বলেই নিজের ধান্দা কমে যাবে বলেই বর্তমানের সরকারকে সাহাজ্য করছে না। বরং দূনিতি, রাজনিতিক ক্ষমতার অপব্যাবহার বজায় থাকুক এমন সমাজই তারা চায়।
৯| ১৭ ই নভেম্বর, ২০২৪ বিকাল ৫:০৫
সোনালি কাবিন বলেছেন: হা হা, জায়গামত হাত দিয়েছেন।
১০| ১৮ ই নভেম্বর, ২০২৪ ভোর ৬:৩১
কালো যাদুকর বলেছেন: আপনার লিখাটি মন দিয়ে পড়লাম। এরকম একটি লিখা আমি অনেক দিন ধরে লিখতে চেয়েছি, কিন্তু এত ভাল ভাবে হয়ত লিখতে পারব না , তাই লেখা হয়ে উঠেনি। শুধু বাঙ্গালী না, সকল মানুষের ভেতরই এমন দ্বিচারীতা দেখা যায়। একটি বিশ্বাস করে, কাজে আরেকটি করে। ধর্ম নিয়ে এগুলো বেশি করে। মানসিক ডাক্তাররা হয়ত এর ব্যাখ্যা জানেন। তবে আমিও এমন ঘটনা অনেক দেখেছি, দেখে বিরক্ত হয়েছি।
১১| ২৩ শে নভেম্বর, ২০২৪ রাত ২:১৮
ইফতেখার ভূইয়া বলেছেন: বাঙালীর প্যারালাল লাইফ নিয়ে আমার কোন অভিযোগ নেই যদিও ভন্ডামী বরাবরই খারাপ বলে মনে করি। ভারতে কখনো যাওয়া হয়নি তাই কলকাতার অংশে কিছুটা তালগোল পাকিয়ে ফেলেছিলাম পড়তে পড়তে। অবশ্য পড়তে বেশ ভালোই লেগেছে। ধন্যবাদ।
©somewhere in net ltd.
১| ১৬ ই নভেম্বর, ২০২৪ বিকাল ৪:২০
জুল ভার্ন বলেছেন: ছোট্ট একটা ঘটনা দিয়ে এক শ্রেণির বাংগালী মনস্তাত্ত্বিক চিন্তাধারা তুলে ধরার জন্য ধন্যবাদ।