নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

প্রাগঐতিহাসিক ধারাভাষ্যকার শ্রদ্ধেয় \"চৌঃ জাফর উল্লাহ শরাফতের\" সাথে আমার নামের মিল ছাড়া, কাছে বা দুরের কোণ সম্পর্ক নেই।

চৌধুরী জাফর উল্লাহ শরাফত

সাধারণ মানুষ

চৌধুরী জাফর উল্লাহ শরাফত › বিস্তারিত পোস্টঃ

হতাশা---নিরাশার মাঝেও বাংলা, তুমি আমার অহংকার।

২১ শে জুলাই, ২০১৮ রাত ৩:৫৮

দেশ নিয়ে নিরাশায় ভোগাটা বাঙ্গালীর প্রিয় আচরণ গুলোর একটি। কিচ্ছু হবে না এই দেশের, সবাই চোর, কোণ আইন কানুনের বালাই নাই ইত্যাদি ইত্যাদি। এগুলো স্বাধারন মানুষজনের নিরাশা। কিছু আছেন বুদ্ধিজীবী লেভেলের নিরাশ। দেশের শিক্ষাব্যবস্থা, অর্থনীতি বা বাজেট সব কিছুর মধ্যেই এক পক্ষ খুজে পান পুজিবাদি দেশ গুলোর আগ্রাসন, আরেক পক্ষ পান পার্শ্ববর্তি দেশ ভারতের আগ্রাসন।দেশকে খোঁড়া বানিয়ে ফেলছে!!
কিছু আছেন ধর্মিয় লাইনের নিরাশ। আল্লাহর বিধান অনুযায়ী দেশ না চল্লে এমনই হবে।
কিছু আছেন বিদেশ ফেরত নিরাশ। ইউরোপ মিডিল ইস্ট এসব দেশের অবস্থা আর আমাদের দেশের অবস্থার তুলনা নিয়ে সরব।তারা এবড়ো থেবড়ো ভাঙ্গা রাস্তায় টেম্পুতে দুই তিনটা ঝাকি খাওয়ার পরেই শুরু করেন অমুক দেশের রাস্তা কত টেকসই ও মজবুত। ওরা কত উন্নত জাতি। ইত্যাদি ইত্যদি।
কেন জানি এগুলো তেমন একটা হজম করতে পারি না।বলতে শুরু করি, ভাই আমরা দেশ হিসাবে যাত্রা শুরু করি ১৯৭১ সালে। এর আগে ব্রিটিশ তার পর পাকিস্থান আমাদের চিবিয়ে ছোবড়া বানিয়েছে। ভারত আর পাকিস্থান, ব্রিটিশের হাত থেকে মুক্তি পেয়ে দুটি “ইন্টেক” দেশ বা রাষ্ট্র ব্যবস্থা পেয়েছে। যার যোগাযোগ ব্যবস্থা ছিল অক্ষত সাথে ব্রিটিশের তৈরি রেল ব্যবস্থার পরি পুর্ন আশির্বাদ পুষ্ট। আর ১৯৭১ সালের পর আমরা পেয়েছি রাস্তা ঘাট, যোগাযোগ ব্যবস্থার ধ ংশ স্তূপ, ত্রিশ লাখ শহীদের গন কবর, অস ংখ্য মৃত বুদ্ধিজীবী আর এক পাল শকুন। আমাদেরকে এর মাঝে থেকেই মাথা তুলে দাড়াতে হয়েছে বা হচ্ছে।
একটা যুদ্ধ বিদ্ধস্ত দেশের চলার শুরু। সমস্যা?
আইন শৃঙ্খলা বজায় রাখা।
সরকারী কর্মচারীদের শুন্য কোটায় লোক বল বাড়ানো।
শিক্ষা ব্যবস্থা,যোগাযোগ ব্যবস্থা, চিকিৎসা সেবা চালু করা।
হোয়াট নট????
কিন্তু সবার প্রথমে মিত্র বাহিনী, তথা ভারতিয় বাহিনীর দেশ ত্যগ। মুক্তি যোদ্ধারা অস্ত্র জমা দিল। একে একে চলে গেল যার যার অবস্থানে। স্বাভাবিক ভাবেই কিছু সংখ্যক জমা দেয় নি। তাদের মধ্যেই কিছু ব্যবহৃত হোল অবৈধ কাজে কিছু গেল সমাজ তান্ত্রিক দল গুলোর অধিনে তাদের তথাকথিত বিপ্লবের ব্যবহারে।
সেনা বাহিনী গেল ব্যরাকে। সরকারী কর্মকর্তা যারা বেচে বর্তে ছিলেন, তারা চাকরীতে যোগ দিলেন। খালি পদ গুলোতে যোগ দিল অযোগ্য কিছু কর্মী। যেখানে উচ্চমাধ্যমিক দরকার সেখানে মাধ্যমিক বা তারও নিচের স্বল্প শিক্ষিত মানুষ জন। কিছুই করার নাই। যেমন তেমন রাষ্ট্র ব্যবস্থা চলা শুরু করলো। কিন্তু শিক্ষা ব্যবস্থা?জাতি গঠনের মুখ্য কারিগর দেশের নাম করা সব লোক জনেরা? ৮০ভাগই মৃত। স্বনাম ধন্য লেখক, বিজ্ঞানী, চিত্রশিল্পী, কন্ঠশিল্পী, সকল পর্যায়ের শিক্ষক, গবেষক, সাংবাদিক, রাজনীতিক, আইনজীবী, চিকিৎসক, প্রকৌশলী, স্থপতি, ভাস্কর, সরকারি ও বেসরকারি কর্মচারী, চলচ্চিত্র ও নাটকের সাথে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি, সমাজসেবী ও সংস্কৃতিসেবী।যারা নয় মাস রন্ধে রন্ধে অনুভব করেছেন মুক্তিযুদ্ধ। সব মৃত। সেনা বাহিনীর কাজ যুদ্ধ করা, তারা করেছে। জন গন যার যা কিছু ছিল নিয়ে ঝাপিয়ে পড়েছে। তাদের যা করার তারা করতে পেরেছে। দেশ স্বাধীন করেছে। এর পরের অংশ স্বাধীনতা রক্ষা করা।যাদের সুযোগ্য হাতের দক্ষ কারিগরিতে লৌহ কঠিন স্নায়ুর দেশ তৈরি হত তাদের বেশির ভাগই আর বেচে নেই। তারা বেচে থাকলে আজকে রাজাকারের কাছ থেকে প্রজন্মকে অন্তত “মুক্তি যুদ্ধের চেতনা” শিখতে হোত না।
বুদ্ধিজীবীরাই জাগিয়ে রাখেন জাতির বিবেক, জাগিয়ে রাখেন তাদের রচনাবলীর মাধ্যমে, সাংবাদিকদের কলমের মাধ্যমে, গানের সুরে, শিক্ষালয়ে পাঠদানে, চিকিৎসা, প্রকৌশল, রাজনীতি ইত্যাদির মাধ্যমে জনগণের সান্নিধ্যে এসে। একটি জাতিকে নির্বীজ করে দেবার প্রথম উপায় বুদ্ধিজীবী শূন্য করে দেয়া। ২৫ মার্চ রাতে এই প্রক্রিয়া শুরু হয়েছিল অতর্কিতে, তারপর ধীরে ধীরে, শেষে পরাজয় অনিবার্য জেনে ডিসেম্বর ১০ তারিখ হতে ১৫ ডিসেম্বরের মধ্যে দ্রুতগতিতে। একারনে জাতি হিসাবে আমরা এখনো নির্বীজ। নিরাশ এবং হতাশ।
সেই হতাশা থেকেই যানবাহনে এখানে সেখানে, দু-র্নীতিতে অবলীলায় আমরা বলে বসি,“শালা বাঙ্গালীর দেশ প্রেম নাই। থাকলে চুরি করতো না”
গালে হাত দিয়ে ভাবতে বসি, এই সেই বাঙ্গালী না! যারা ৭১ সালে বিশ্বের ৩য় নম্বর সেনা বাহিনীর বিরুদ্ধে যার যা কিছু আছে তাই নিয়ে ঝাপিয়ে পড়েছিল? ত্রিশ লাখ বাঙ্গালী প্রাণ দিয়েছিল কিসের প্রেমে?
“শালার বাঙ্গালী, অসভ্য জাতি, শৃঙ্খলা বোধ নাই।”
গালে হাত দিয়ে ভাবতে বসি এক লাখ ৮০ হাজার ৫১৩ জন মুক্তি যোদ্ধা সশস্র যুদ্ধের পর অস্ত্র জমা দিয়ে শান্ত ভাবে ফিরে গেল কোণ বোধ থেকে?
“শালার বাঙ্গালী, এক জনের পিছে একজনে লাগে। নিজে বাচলে বাপের নাম। সম্প্রীতি ই নাই।”
গালে হাত দিয়ে ভাবতে বসি এই সেই বাঙ্গালী না, যে যুদ্ধাহত সহযোদ্ধার শরীর মাইল কে মাইল কাধে করে বয়ে নিয়ে এসেছিল হাসপাতালে। কোণ প্রীতির জোরে?
“শালার হাভাতে বাঙ্গালী, সুবিধা পাইলে এক বিন্দু ছাড়ে না।”
গালে হাত দিয়ে ভাবতে বসি এই সেই বাঙ্গালী না, যে ভারতীয় শরনার্থি শিবিরে ভাতের থালা হাতে নিয়ে বলে উঠেছিল, “We dont need food, we need arms”, কোণ সুবিধার লোভে?
বাঙ্গালীর দেশপ্রেম বাঙ্গালীর অস্থি মজ্জায় মিশে আছে। শুধু একটু জাগিয়ে তোলা দরকার, ব্যস।
নিরাশার তো কিছু নেই। কিছুই নেই।
হতাশ হওয়ারও কিছু নেই। কিছুই নেই।
৪৭ বছর। মোটেই দীর্ঘ সময় নয়। আমি জি ডি পি বুঝি না। বাজেটের ভারি ভারি সমালোচনা বুঝি না। অর্থনিতি বুঝি না। আমি বুঝি যা আমি আমার চোখ দিয়ে আগে দেখেছি এবং এখন দেখছি।
আমি দেখেছি রোযার সময় ইফতারি সংগ্রহের আশায় বাসার গেটে আসা বস্তির মানুষদের করুন মুখ। কচি হাতের আঙ্গুল। এক মুঠ ছোলা মুড়ি সাথে পিয়াজু বা বেগুনি পেলে খুশি।
আমি এখন দেখি উচ্ছিষ্ট যাতে না জমে সেই চেষ্টা। বস্তিবাসী আর আসে না।
আমি দেখেছি বাসায় কাজ নেয়ার প্রতিযোগিতায় উন্মত্তের মত বুয়াদের পারিশ্রমিক কমানোর হিড়িক ,সাথে তৃপ্ত গৃহিণীরব্যবসাহি মুখ।
আর এখন দেখি করুন মুখে গৃহিণীর আর্তনাদ, “আজকেও তো কাউকে পেলাম না। এখন কি হবে??!!!”
আমি দেখেছি নির্মানাধীন ভবন বা ব্রিজ কালভার্টের কাজে, পাইলিং কর্মীদের দলগত গানের ছন্দে মাটি ভেদ করে ধীর গতিতে সপ্তাহ ধরে “বল্লির” প্রবেশ।
এখন দেখি বাংলা ক্যট বা ক্যটার পিলারের দনবেরা ধাতব হাতে গেথে দিচ্ছে লোহার বড় বড় বীম।
আমি দেখেছি বিদেশ থেকে বেড়াতে আসা দূর সম্পর্কের আত্বিয়সজন গর্বিত মুখে, সংকুচিত বিগলিত, আমাদের হাতে তুলে দিত সুন্দর সুন্দর গেঞ্জি, শার্ট, পেন্ট। এক্সক্লুসিভ। বিদেশের কাপড়।
আর এখন, কলার উলটিয়ে “মেইড ইন বাংলাদেশ” লেখা দেখিয়ে, তাদের হতভম্ব মুখের দিকে না তাকিয়ে গর্বিত ভাবে বলি, “এগুলান তো আমরাই বানাই।আমগোর লোকালেও পাওন যায়। লেবেল সারা।সেইম কোয়ালিটি। লাগলে আপ্নেও নিয়া যাইয়েন।”
আমি দেখেছি সরকারী স্টীল মিল বন্ধের কারনে চাকরী হারানো গোল্ডেন হেন্ডশেকে আতংকিত কর্ম চারীর আর্তনাদ।
আমি এখন দেখি বি,এস,আর,এম এবং আর,এস,আর,এম দের মত দানবের উত্থান।
কিছু দিন আগেও আমি দেখেছি চায়না থেকে আমদানি করে নিয়ে আসা বাচ্চাদের পলকা পলকা খেলনা গাড়ি।
আমি এখন দেখি প্লাস্টিক শিল্পে দেশের চাহিদা মিটিয়ে রপ্তানি বাড়ছে বাংলাদেশের।
আগে বেচতাম পাট আর চা।
এখন???
লোহার খনি নেই, তার পরেও বানিয়ে ফেলছি জাহাজ। রপ্তানি করছি জাহাজ ও এ শিল্পের সঙ্গে জড়িত পণ্য। নেই সুতা তৈরির প্রধান কাচা মাল তুলার বাগান। তার পরে ও তৈরি পোশাক শিল্পে বাংলাদেশ এক গর্বিত নাম। ইলেকট্রনিক পণ্য, ওষুধ ও এর কাঁচামাল, ফার্নিচার সামগ্রী, কৃষিজাত পণ্য, চামড়াজাত পণ্য, জুতা, সিরামিক পণ্য, অটোমোবাইল পণ্য, প্লাস্টিক পণ্য, তৈরি পোশাক, আইসিটি পণ্য, চিংড়ি, সিমেন্ট ইত্যাদি ইত্যাদি।
এগুলো তো সব প্রচলিত পণ্য।অপ্রচলিত ্পন্যের ফিরিস্তি শুনে টাস্কি খাবার যোগাড়।
প্লাষ্টিকের পরিত্যক্ত সামগ্রীর চিপস (প্লাষ্টিকের গুঁড়া) টেক্সাইল ববিন, প্লাষ্টিক ষ্ট্রীপ, পুরাতন কম্পিউটার এবং টিভির প্লাষ্টিক কভার, মাছের পোটকা,মাছের আঁশ,(মাছের পোটকা এবং মাছের আঁশ দিয়ে বিদেশে ওষুধ তৈরি করা হয়। অনেক উচ্চ দামে মাছের পোটকা এবং আঁশ রপ্তানি করা হচ্ছে।) শুঁটকি, গরুর ভুঁড়ি (জবাইকৃত গরুর ভূঁরি ফ্রোজেন করে চীনে রপ্তানি করা হচ্ছে। চীন এবং হংকং-এ গরুর ভূঁরির বেশ চাহিদা রয়েছে। সেসব দেশে গরুর ভূঁরির স্যুপ বেশ জনপ্রিয়), ফুলের ঝাড়ু, টেক্সটাইল ওয়েষ্টেজ, জুটকটন, রিরোলিং মিলের স্ক্র্যাপ, নারিকেলের ছোবড়াসহ বিভিন্ন ধরনের অপ্রচলিত পণ্য। পোশাক শিল্পের ওয়েস্ট কটনগুলোর বিদেশে বেশ চাহিদা রয়েছে। ওয়েস্ট কটন দিয়ে উন্নতমানের তুলা তৈরি করা হয়। টিভি এবং কম্পিউটারের প্লাষ্টিক কভারের চাহিদা থাকায় এগুলো রপ্তানি করা হচ্ছে, আমাদের দেশে উত্পাদিত ফুলের ঝাড়ু দিয়ে বিদেশে ফ্লাওয়ার বেজ তৈরি করা হয়। এসব অপ্রচলিত পণ্য সংগ্রহ করা বেশ কঠিক কাজ। সারা দেশে এসব সংগ্রহের জন্য নিয়োজিত আছে বিশাল সংখ্যক জনসংখ্যা। অপ্রচলিত পণ্য সংগ্রহ করতে গিয়ে সম্পৃক্ত হচ্ছে হাজার হাজার লোক। এতে করে বিশাল সংখ্যক লোকের কর্মসংস্থানও হচ্ছে। আমাদের দেশে অপ্রচলিত পণ্য রপ্তানির মাধ্যমে প্রতি বছর প্রচুর বৈদেশিক মুদ্রা আয়ের সুযোগ সৃষ্টি হচ্ছে। বর্তমানে এসব অপ্রচলিত পণ্য শিল্পের রূপধারণ করতে যাচ্ছে।
এ সবই কিন্তু কোণ দলীয় সরকার মুখে তুলে দেয় নি। শুরু হয়েছিল ব্যক্তি উদ্দগে। সাফল্যের পর সরকার এগিয়ে এসেছে। সুতরাং হা পিত্যেস করে দেশকে গালা গালি করে সব সরকারের কাধে চাপানোর কোণ মানে হয় না। উদ্যমী উদ্দক্তাদের কোণ বৈরি সরকারই দমিয়ে রাখতে পারে নি। আমরাই বলি দেশে আইন নেই আবার আমরাই ট্রাফিক সিগ্নালে ফাক পেলে রিকশা ওয়ালাকে তাড়া দেই “মামা টান দে”। সাধারণ একটা ট্রাফিক আইন ই আমরা মানি না, গালা গালিতে ষোল আনা।

মন্তব্য ২ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (২) মন্তব্য লিখুন

১| ২২ শে জুলাই, ২০১৮ রাত ১:০৫

কাইকর বলেছেন: সুন্দর লেখা

২৮ শে জুলাই, ২০১৮ সন্ধ্যা ৭:৪৫

চৌধুরী জাফর উল্লাহ শরাফত বলেছেন: ধন্যবাদ ভাই।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.