![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
সাধারণ মানুষ
আসুন দেখা যাক প্রচলিত শারিয়া আইন অনুসারে ধর্ষন বা ব্যভিচার প্রমান হবে কি ভাবে?
শারিয়া, ধর্ষনকে, বেভিচারের ভেতরেই গন্য করে। বিস্তারিত পুর্বের লিখায় উল্লেখ করেছিলাম
view this link
ধর্ষন বা ব্যভিচার প্রমান করার পদ্ধতি তিনটি,
১। মৌখিক স্বীকৃতি
২। সাক্ষ্য প্রমান
৩। লক্ষন প্রমান
“মৌখিক স্বীকৃতি” এখন কার যুগে কার্যকরি পদ্ধতি হতে পারে না। কোন পাগলে স্বীকার করবে ধর্ষনের কথা??! রাসুল (সাঃ) এর যুগে অনেক ব্যভিচারী পুরুষ বা মহিলা আত্ব তাড়নায় নিজে থেকে ব্যভিচারের কথা স্বীকার করত। এখন সেটা কল্পনা করা যায় না।
“সাক্ষ্য প্রমান” ধর্ষন প্রমানে এখনো কার্যকর। বিধিবদ্ধ ইসলামী আইনের (বি ই আ) ১ম খণ্ড, ২৯৭ ন ম্ব র পৃষ্ঠায়, ১৩৩ নম্বর ধারা(ক)- এ উল্লেখ আছে,
“চারিজন বালেগ ও বুদ্ধিমান মুসলিম পুরুষ স্বচক্ষে অপরাধীদ্বয়কে তাহাদের একজনের যৌনাঙ্গ অপর জনের যৌনাঙ্গে প্রবিষ্ট করাইয়া যৌন কার্য্য করিতে দেখিয়াছে বলিয়া সাক্ষ্য প্রদান করিলে”, যিনা প্রমান হইবে।
মানে ধর্ষন হওয়ার সময় অবশ্যই চার জন বালেগ, বুদ্ধিমান পুরুষ মুসলমান সাক্ষী থাকতে হবে।
(শাফি আইন 0.13.1, 0.24.9; মুহিউদ্দীন খানের অনুদিত বাংলা কোরান – পৃষ্ঠা ২৩৯ আর ৯২৮; ‘দ্য পেনাল ল অব ইসলাম’, পৃষ্ঠা ৪৪; হানাফি আইন হেদায়া, পৃষ্ঠা ৩৫৩; শাফি আইন o.24.9; ‘ক্রিমিন্যাল ল ইন ইসলাম অ্যান্ড দ্য মুসলিম ওয়ার্লড’, পৃষ্ঠা ২৫১।পাকিস্তানের হুদুদ আইন, নং ৭-১৯৭৯, সংশোধনী ২০, ৮ এর খ – ১৯৮০।)
ধর্ষন হওয়ার সময় চারজন বালেগ, বুদ্ধিমান পুরুষ মুসলমান শুধু থাকলেই হবে না সরা সরি ধর্ষকের যৌনাঙ্গ ধর্ষিতার যৌনাঙ্গে প্রবিষ্ট হচ্ছে কিনা তা দেখতে হবে। কারন একজনের যৌনাঙ্গ অপর জনের যৌনাঙ্গে প্রবিষ্ট না হইলে সেটা যেনার তথা ধর্ষনের সংজ্ঞার মধ্যেই পড়বে না। সাক্ষীদের এ কথা সুস্পস্ট ভাবে বলতে হবে যে, সুরমাদানির মধ্যে সুরমা লাগানোর কাঠি যেমন ঢোকা অবস্থায় থাকে, তেমনি তারা পুরুষাঙ্গকে নারীর যোনীর মধ্যে ঢোকানো অবস্থায় দেখেছে।
আমার বানানো কথা না।
ইসলামের শাস্তি আইন, পৃষ্ঠা ১৪৭, আল-কাসানী, বদা’ই, খঃ৭, পৃষ্ঠা- ২৬৭, বাবরতি, আল-ইনায়াহ, খঃ৫, পৃষ্ঠা- ২১৫-৭, শাফি’ঈ, আল-উম্ম, খঃ৭, পৃষ্ঠা- ৪৬, ইবনু কুদামাহ, আল-মুগনী, খঃ৯, পৃষ্ঠা- ৬৫।
এখন এই যৌনাঙ্গ প্রবিষ্টের সাক্ষী ধর্ষীতা নিজে ছাড়া আর কে ভালো বলতে পারবে?
আমাদের দেশের প্রচলিত ধর্ষনের আইনে ফাক ফোকর থাকলেও, ধর্ষণের মামলায় বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই চাক্ষুষ সাক্ষী থাকে মাত্র একজন এবং সে ধর্ষণের শিকার নারী নিজেই। শুধু এই সাক্ষীর ওপর ভিত্তি করেই অভিযুক্তকে আদালত অপরাধী হিসেবে শাস্তি দিতে পারো। কিন্তু শারিয়া আইনে তা হবে না।
এখন ধরলাম ধর্ষন হওয়ার সময় চার জন বালেগ, বুদ্ধিমান পুরুষ মুসলমান উপস্থিত ছিলেন। সাক্ষী দেয়ার সময় যদি কোন কারনে তাদের একজন অনুপস্থিত থাকেন তাহলে বিধি বদ্ধ ইসলামী আইনের ধারা ১৪৬(খ) (১ম খণ্ড, পৃষ্ঠাঃ ৩০৬) অনুসারে অভিযোগকারিনী যেনার মিথ্যা অপবাদ আরোপের অপরাধে ৮০ টি বেত্রাঘাতের দণ্ডে দণ্ডিত হবেন। এবং সাক্ষ আইনের ধারা ৬০৪(ক),(খ),(গ) ও (ঘ) অনুসারে যিনার ক্ষেত্রে একজন সাক্ষী যদি দণ্ড কার্য্যকর করার পুর্বে বা পরে তার সাক্ষ প্রত্যাহার করে তবে সে বা সকল সাক্ষী একই দণ্ডে দণ্ডিত হবেন।
কে যাবে অহেতুক বেত খাওয়ার আসংকা নিয়ে সাক্ষী দিতে!!!! একজন সাক্ষী যদি কোন কারনে না আসে!!!!
এবার আসুন দেখি কাদের সামনে ধর্ষন করলেও তারা সাক্ষী দিতে পারবে না,
১।যে কোন মহিলা। ধারাঃ ৫৭৬(ক) হুদুদ ও কিসাসের ক্ষেত্রে স্ত্রী লোকের সাক্ষ্য গ্রহণযোগ্য নয়। (উল্লেখ্য যে ধর্ষন বা যিনা শারিয়া আইনে হুদুদ মামলা হিসাবে মর্যাদা পেয়েছে) বি ই আ- খণ্ড ২য়, পৃষ্ঠাঃ ১৮।
২। অমুসলিম পুরুষ। সাক্ষ আইনের ধারা ৫৭২(ঘ) সাক্ষের সাধারন শর্তাবলিতে উল্লেখ আছে, “সাক্ষীকে মুসলমান হইতে হইবে”। তবে শর্ত থাকে যে অমুসলমানের ক্ষেত্রে অমুসলিম সাক্ষী গ্রহণযোগ্য। বি ই আ- খন্ড ২য়, পৃষ্ঠা ১৫।
তাহলে মুসলিম পুরুষ যদি অমুসলিম নারিকে, অমুসলিম নারি বা পুরুষের সামনে ধর্ষন করে অথবা অমুসলিম পুরুষ যদি মুসলিম নারিকে, অমুসলিম নারি বা পুরুষের সামনে ধর্ষন করে তাহলে ধর্ষিতা কোন সাক্ষী ই আনতে পারবে না।
৩। বোবা ব্যক্তি। সাক্ষ আইনের ধারা ৫৭২ সাক্ষের সাধারন শর্তাবলিতে উল্লেখ আছে, “সাক্ষীকে বাক শক্তি সম্পন্ন হইতে হইবে”।যিনা প্রমানের জন্য বোবার সাক্ষি গ্রহণ যোগ্য নয়। বি ই আ- খন্ড ২য়, পৃষ্ঠা ১৫। ইসলামের শাস্তি আইন, পৃষ্ঠা ঃ ১৪৭, আস-সারাখসী, আল-মাবসুত, খণ্ড ১৬, পৃষ্ঠাঃ ১৩০, আল-কাসানী, বদা’ ই খন্দ-৬, পৃষ্ঠা- ২৬৭, ইবনু কুদামাহ, আল-মুগনী, খণ্ডঃ ১০, পৃষ্ঠা- ১৮৫-৬।
বর্তমানে বোবাদের লিখা পড়া বা মনের ভাব বোঝানোর আধুনিক অনেক পদ্ধতি বের হয়েছে। কিন্তু শারিয়া আইনের কট্টর মল্লাহর দল সেই সুবিধা নিতে রাজি নয়।
৪। “দাস-দাসী, গায়িকা এবং সমাজের নিচু ব্যক্তির (রাস্তা পরিষ্কারকারী বা শৌচাগারের প্রহরী ইত্যাদি) সাক্ষ্য গ্রহণযোগ্য নয়।”
‘বিধিবদ্ধ ইসলামি আইন’, ২য় খণ্ড, পৃষ্ঠা ২৬৩; হানাফি আইন পৃষ্ঠা ৩৬১; শফি আইন o.24.3; ‘পেনাল ল অব ইসলাম’, পৃষ্ঠা ৪৬।
তাছাড়া আরও আছে, সাক্ষীকে বালেগ হতে হবে, ন্যয়পরায়ণ হতে হবে, কবিরা গুনাহে লিপ্ত ব্যক্তির সাক্ষ্য হবে না, সুদখোরের সাক্ষ্য হবে না, মিথ্যুক হিসাবে প্রমানিত ব্যক্তির সাক্ষ্য হবে না, ফরজ বিধান ত্যগ কারী, সাহাবী, তাবেঈ ও সালাফে সালেহিন কে গাল মন্দ কারী ব্যক্তি, ইত্যাদি ইত্যাদি…
জাঁদরেল উকিলের পক্ষে যে কোন একজন সাক্ষীকে যে কোন একটি দোষে দোষী দেখাতে পারলেই কেস খতম।
ধারা গুলো কেবল কিতাবে থাকলেও হত, কিন্তু দুর্ভাগ্য বশত এগুলোর হুবহু চর্চা শারিয়া আইন হিসাবে ইসলামের নামে বিভিন্ন দেশে বাস্তবে প্রয়োগ করা হয়েছে বা হচ্ছে।
২০০৭ সালে সৌদি বাদশাহ দয়া করে এক নারি অপরাধীর সাজা ২০০ চাবুক এবং ছয় মাসের জেল মাফ করে দেন। বাদশাহর দয়ার শরীর।
মেয়েটির অপরাধ ছিল সে তার হাঁই স্কুলের এক বন্ধুর সাথে একই গাড়িতে অবস্থান করে যে ছিল পর পুরুষ। ঘটনাটা প্রকাশ পেত না যদি না গাড়িতে থাকা অবস্থায় তাদেরকে সাত জন লোক আক্রমণ করতো এবং মেয়েটি দলগত ধর্ষনের স্বীকার হত। সাত জন প্রাপ্ত বয়স্ক সৌদি পুরুষ মেয়েটিকে ধর্ষন করে। ধর্ষনের অভিযোগ করার পর বীজ্ঞ ইসলামী শারিয়ার মুল্লাহরা আবিষ্কার করেন মেয়েটি প্রথমেই যিনা করেছে। সুতরাং আগে যিনার শাস্তি পেতে হবে। প্রাথমিকভাবে মেয়েটিকে ৯০ চাবুক আর কিছু সময়ের জেল দেয়া হয়েছিল। পর পুরুষের সাথে সে এমন জায়গায় কেন গেলো?
মেয়েটি তার কারনে বলে, ঐ সাত জনের এক জনের কাছে তার একটা ছবি ছিল, সেই ছবিটা ফেরত নেয়ার জন্য সে গিয়েছিল। যেহেতু তার বিয়ে হয়ে গিয়েছিল এবং তার স্বামিও সৌদি পুরুষ তাই সে তার স্বামীকে ব্যপারটা জানাতে পারে নি। একই কারনে সে পরিবারকেও ব্যপারটা জানাতে পারে নি। তাছাড়া জানা জানি হলেই সে ব্যভিচারের শাস্তি পাবে। তাই তার এক স্কুলের ছেলে বন্ধুকে সাথে নিয়ে গোপনে গিয়েছিল।
তার ওপর মেয়েটি ছিল শিয়া। সুতরাং সাথের বন্ধুটি তার প্রেমিক হয়ে গেলো আর রেপিস্টের মধ্যের সে মানুষটির সাথে তার পুর্ব অবৈধ সম্পর্ক প্রমান হয়ে গেলো। শাস্তি? ২০০ চাবুক, ছয় মাস জেল।
মেয়েটি সৌদি আরবের, “কাতিফ” নামক স্থানে বসবাস করতো। সারা বিশ্বের মিডিয়ায় ঘটনাটি “কাতিফ রেপ কেস” নামে গুরুত্ব পায়।
view this link
আয়শা ইব্রাহীম দুহুলো, সোমালিয়া।
১৩ বছর বয়সী বালিকা টি, ২০০৮ সালের ২৭ অক্টোবর দলগত ধর্ষনের স্বীকার হয়ে, শারিয়া আদালতে বিচার নিয়ে গেলে, বিচারকগন বেভিচারের অপরাধে তাকে পাথর নিক্ষেপে (রজম) মৃত্যু দণ্ডের শাস্তি দেন। জন সম্মুখে, স্টেডিয়ামে “রজম” কায়েম করা হয়।
view this link
শারিয়া আইনের অধিনে এমন অনেক ঘটনা আছে যেখানে অভিযোগকারিণী দণ্ড ভোগ করতে বাধ্য হন। শুধু মাত্র, “চারিজন বালেগ ও বুদ্ধিমান মুসলিম পুরুষ স্বচক্ষে অপরাধীদ্বয়কে তাহাদের একজনের যৌনাঙ্গ অপর জনের যৌনাঙ্গে প্রবিষ্ট করাইয়া যৌন কার্য্য করিতে দেখিয়াছে বলিয়া সাক্ষ্য প্রদান” করেন নি বলে।
এবার আসুন লক্ষন প্রমান,
তখনকার যুগে ধর্ষনের লক্ষন প্রমান একটাই ছিল, গর্ভধারন করা। শারিয়া আইনও সেটাই অনুসরন করে। তবে আমাদের দেশের অনেক আলেম, সৌদি ফেরত শায়েখ, মোল্লাহ বা ইদানিং কালের মাম্মি ডেডী টাইপ শারিয়া ভক্ত জ্বিহাদীরা অবলীলায় বলে ফেলেন সাক্ষী না থাকলে আধুনিক ডিএনএ টেস্ট এর মাধ্যমেও আসামী সনাক্ত করা যাবে। সাধারন মানুষও তাই চিন্তা করবে। কিন্তু কাজটা ফট করে বলা আর শারিয়া আইন মতে অনুসরণ করার মধ্যে আকাশ পাতাল তফাৎ আছে।
২০১৩ সালের ২৯ মে পাকিস্তান সরকার ও আইন পরিষদকে ইসলাম সংক্রান্ত বিষয়ে আইনি পরামর্শ দানকারী সাংবিধানিক সংস্থা কাউন্সিল অফ ইসলামিক আইডিয়োলজি ঘোষণা করে যে, ডিএনএ পরীক্ষা ধর্ষণ মামলাগুলোতে মূল প্রমাণ হিসেবে গৃহীত হতে পারে না। কাউন্সিলটির একজন মুখপাত্রের মতে, ডিএনএ প্রমাণ বড়জোর অতিরিক্ত প্রমাণ হিসেবে গৃহীত হতে পারে কিন্তু ধর্ষণ নির্ধারণের জন্য ইসলামি আইনগুলোকে প্রতিস্থাপিত করবে না। মানে যত যাই হোক চার জন সাক্ষী লাগবেই, তার পর অতিরিক্ত প্রমান স্বরুপ ডি এন এ টেস্ট।
view this link
জাকির নায়েক অবশ্য উনার এক লেকচারে বলেন “রেইপ এর ক্ষেত্রে শুধু মাত্র ডি এন এ টেস্ট আমলে নেয়া যাবে”।
view this link
কিন্তু উনার লেকচার এত টা শক্তিশালী এখনো হয়ে উঠেনি যে শারিয়া আইনের লিখিত ধারা গুলোকে পরিবর্তন করতে পারবে। যেখানে শারিয়ার ধারক বাহক সাউদিদের অর্থেই উনার প্রচারনা চলে।
তাছাড়া আছে হাজার হাজার ফতোয়া, ডি এন এ টেস্ট এর বিরুদ্ধে। আমাদের মুসলিম আলেম ওলামা মুফতিরা সহজেই কোন মাস্লাতেই আজ পর্যন্ত সম্পুর্ন এক মত হতে পারেন নি।
view this link
উপরের লিঙ্ক টি একটি ফতোয়ার। এখানে আলেম সাহেব ডি এন এ টেস্টের বিরুদ্ধে যুক্তি দিয়েছেন, “যদি মহিলাটি, পুরুষটিকে ফাঁসানোর জন্য উত্তেজিত করে তার শুক্রাণু ধারন করে ধর্ষনের মামলা করে? তাহলে বেচারা নির্দোষ পুরুষটি বিনা দোষে দণ্ড প্রাপ্ত হবে।”
আহা!!!!!!! ভাব দেখলে মনে হয় এমন নির্দোষ পুরুষে আমাদের পৃথিবীটা ঠাঁসা।
অনেকে আবার এর পক্ষে যুক্তি দেখাবেন, আমাদের দেশে ধর্ষনের পর ধর্ষিতার ডাক্তারী পরীক্ষা করতে গেলে আরেকবার, মানসিকভাবে ধর্ষিত হতে হয়। এর কারন সিস্টেম নয়। সিস্টেমের দ্বায়িত্বে থাকা কর্মকর্তার বিকৃত মানসিকতা। সিস্টেম বলেনি, পুরুষ ডাক্তার দিয়েই ধর্ষিতার ডাক্তারী পরীক্ষা করাতে। প্রতিবাদটা সেখানে করা উচিৎ যাতে সিস্টেম কার্য্যপ্রক্রিয়া প্রনয়নের ক্ষেত্রে সাবধানতা অবলম্বন করে। তা না করে গোটা সিস্টেম কেই দায়ী করে, এই কারনকে, তার চেয়ে আরও ব্যক ডেটেড সিস্টেম প্রনয়ের প্রয়োজনীয়তার পক্ষে যুক্তি হিসাবে দেখানো হচ্ছে। শারিয়া আইন চালু হলে এ ধরনের পরীক্ষাই বাতিল হয়ে যাবে। হাতে ওঠা বিষ ফোঁড়ার দাওয়াই হাত কেটে ফেলার মত ব্যপার হয়ে গেলো না!!
এখন, ইসলাম কি বলছে?
কোরানে জেনার উল্লেখ ও শাস্তি রয়েছে কিন্তু আলাদা করে ধর্ষণের উল্লেখ নেই। থাকতেই হবে সেটারও কোন কারন নেই। কারন “কুরআন আইনের কিতাব নয়”।এটাও আমার কথা না। যুগশ্রেষ্ঠ ইমাম বুখারীর কথা। এনসাইক্লোপেডিয়া ব্রিটানিকা − ১৯৮৩। এ-কথা বলার সাথে সাথে খলীফা তাঁকে জনগণ থেকে সরিয়ে সমরখন্দে নির্বাসনে পাঠান, সেখানেই তিনি মারা যান।
কিন্তু পুর্নাংগ জীবন বীধানে ধর্ষনের শাস্তি থাকবে না, তা কি হয়? তাই খুদে খুদে “ধর্ষন” কে বানিয়ে ফেলা হোল “যিনা” র প্রকারভেদ। রেফারেন্স হিসাবে নেয়া হোল নিন্মক্ত আয়াত গুলো।
নিসা-র ১৫ নম্বর আয়াত : − “ব্যাভিচারিণী নারীদের বিরুদ্ধে চারজন পুরুষকে সাক্ষী হিসাবে তলব কর।”
“এ শর্ত আরোপের কারণ, যাতে স্ত্রীর স্বামী, তার জননী অন্য স্ত্রী অথবা ভাই-বোন ব্যক্তিগত জীঘাংসার বশবর্তী হয়ে অহেতুক অপবাদ আরোপ করার সুযোগ না পায় অথবা অন্য অমঙ্গলকারী লোকেরা শত্র“তা-বশত অপবাদ আরোপ করতে সাহসী না হয়” (মওলানার মুহিউদ্দিনের বাংলা কোরাণের তফসির পৃঃ ২৩৯)।
সুরা নুর আয়াত ৪
যারা সতী-সাধ্বী নারীর প্রতি অপবাদ আরোপ করে অতঃপর স্বপক্ষে চার জন পুরুষ সাক্ষী উপস্থিত করে না, তাদেরকে আশিটি বেত্রাঘাত করবে এবং কখনও তাদের সাক্ষ্য কবুল করবে না। এরাই না'ফারমান।
এখানে না বোঝার কি কারন আছে!!!??? আয়াত গুলোতে উল্লেখিত, চার জন পুরুষ সাক্ষী ব্যভিচারের মিথ্যা অপবাদের হাত থেকে নারীদের বাঁচানোর জন্য চাওয়া হয়েছে। আর শারিয়া আইনে সেটাই ব্যবহার করছে ধর্ষিতা নারীদের ফাঁসাতে!!!!
কুরআন থেকে সরা সরি সমাধান পাওয়া না গেলে দেখতে হবে হাদিস থেকে সরা সরি পাওয়া যায় কিনা। আসুন দেখি রাসুল (সাঃ) এর হাদিস
আনাস ইবনে মালেক (রাঃ) থেকে বর্ণিত। এক ইহূদী, একটি বালিকাকে তার অলঙ্কারপত্রের লোভে হত্যা করে। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মুমূর্ষু বালিকাকে (একজনের নামোল্লেখ করে) জিজ্ঞেস করলেনঃ তোমাকে কি অমুকে আঘাত করেছে? সে তার মাথার ইশারায় বললো, না। তিনি আবার (অন্য একজনের নামোল্লেখ করে) তাকে জিজ্ঞেস করলে সে তার মাথার ইশারায় বললো, না। তিনি তাকে (ইহূদীর নামোল্লেখ করে)। আবার জিজ্ঞেস করলে সে মাথার ইশারায় বললো, হাঁ। অতঃপর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম উক্ত ইহূদীর মাথা দু’টি পাথরের মাঝখানে রেখে পিষ্ট করে হত্যা করান।
ইবনু মাজাহ ২৬৬৫, সহীহুল বুখারী ২/২৬৬৬, ২৪১৩, ২৭৪৬, ৬৮৭৬, ৬৮৭৭, ৬৮৭৯, ৬৮৮৪, ৬৮৮৫, মুসলিম ১৬৭২, তিরমিযী ১৩৯৪, নাসায়ী ৪০৪৪, ৪৭৪১, ৪৭৪২, আবূ দাউদ ৪৫২৭, ৪৫২৮, ৪৫২৯, ৪৫৩৫, ১২৩৩৭, ১২৫৯৪, ১২৬৯৪, দারেমী ২৩৫৫, ইরওয়া ৫/৯২-৯৩। তাহকীক আলবানীঃ সহীহ।
হাদিসটি “রাসুলুল্লাহ (সাঃ) এর বিচারালয়”, লেখক ইমাম কুরতুবি (রহঃ) ,অনুবাদক মুহাম্মদ খলিলুর রহমান মুমিন, বইটির ২২ পৃষ্ঠায়ও উল্লেখ আছে। ২৩ পৃষ্ঠায় লেখক হাদিসটি থেকে প্রাপ্ত ফকিহ দের মতামত হিসাবে উল্লেখ করেন, এই হাদিস থেকে জানা যায় যে জিনিস দিয়ে হত্যাকারী হত্যা করবে সেই জিনিস দিয়েই হত্যাকারীকে হত্যা করতে হবে। দ্বিতীয়ত পুরুষ কর্ত্রিক কোন স্ত্রী লোক নিহত হলে বিনিময়ে ঐ পুরুষকে হত্যা করা যাবে। তৃতীয়ত অঙ্গ প্রত্যঙ্গের উল্লেখ করা মুখে বলার সমতুল্য।
অতি অদ্ভুত কারনে উনারা এটা খেয়াল করলেন না এটা ডাকাতি ও হত্যা মামলা, অর্থাত হুদুদ মামলা।ধর্ষন যেমন। এই হুদুদ মামলায় রাসুল (সাঃ) শুধু মাত্র এক জন নারীর সাক্ষীতেই, যে কিনা ভিকটিম, বিচার করলেন!!! তাহলে শারিয়া আইনে হুদুদ মামলায় নারী সাক্ষী গ্রহণ না করার বিধান আসলো কিভাবে??
তাছাড়া, “অঙ্গ প্রত্যঙ্গের উল্লেখ করা মুখে বলার সমতুল্য” এই ব্যপারটা ফিকাহ বিদরা বুঝতে পারলে হুদুদ মামলায় বোবার সাক্ষী কেন গ্রহণযোগ্য হবে না??!!!
আর ও দেখুন,
হাদিস নম্বর ৪৩৭৯ঃ আলকামাহ ইবনু ওয়াইল (রহঃ) থেকে তার পিতার সূত্রে বর্ণিত। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর যুগে জনৈকা মহিলা সালাত আদায়ের উদ্দেশ্যে যাচ্ছিল। পথিমধ্যে এক ব্যক্তি তাকে নাগালে পেয়ে তার উপর চেপে বসে তাকে ধর্ষণ করে। সে চিৎকার দিলে লোকটি সরে পড়ে। এ সময় অপর এক ব্যক্তি তার পাশ দিয়ে যাচ্ছিল। সে (ভুলবশত) বললো, এ লোকটি আমার সঙ্গে এরূপ এরূপ করেছে। এ সময় মুহাজিরদের একটি দল এ পথ দিয়ে যাচ্ছিলেন। স্ত্রীলোকটি বললো, এ লোকটি অমার সঙ্গে এরূপ করেছে। অতএব যার সম্পর্কে মহিলাটি অভিযোগ করেছে তারা দ্রুত এগিয়ে লোকটিকে ধরলো।
অতঃপর তারা তাকে তার নিকট নিয়ে আসলে সে বললো, হ্যাঁ, এ সেই ব্যক্তি। তারা তাকে নিয়ে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নিকট উপস্থিত হলেন। তিনি তার সম্পর্কে ফায়সালা করতেই আসল অপরাধী দাঁড়িয়ে বললো, হে আল্লাহর রাসূল! আমিই অপরাধী। তিনি ধর্ষিতা মহিলাটিকে বললেনঃ তুমি চলে যাও, আল্লাহ তোমাকে ক্ষমা করেছেন আর নির্দোষ ব্যক্তি সম্পর্কে উত্তম কথা বললেন। যে ধর্ষনের অপরাধী তার ব্যাপারে তিনি বললেনঃ তোমরা একে পাথর মারো। তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেনঃ সে এমন তাওবাহ করেছে যে, মদীনাবাসী যদি এরূপ তাওবাহ করে, তবে তাদের পক্ষ থেকে তা অবশ্যই কবূল হবে।
হাসান, এ কথাটি বাদেঃ ‘‘তোমরা একে পাথর মারো।’’ অগ্রাধিকারযোগ্য কথা হলো, তাকে পাথর মারা হয়নি।
ইমাম তিরমিযী বলেনঃ এই হাদীসটি হাসান, গরীব ও সহীহ।
হাদিসের মানঃ হাসান (Hasan)
অপরাধীর স্বীকারোক্তি বা পাথর মারা হোল কি হোল না সেটা বাদ দিয়ে চিন্তা করুন তো প্রথমে বিচার করতে যেয়ে চার জন বালেগ, বুদ্ধিমান পুরুষ মুসলমান সাক্ষীর তলব, রাসুল (সাঃ) করেছিলেন কিনা?!!!! উপরন্তু, ধর্ষিতা প্রথমে অপরাধী সনাক্ত করতে ভুল করলেও সেটাকে তিনি মোটেই আমলে নেন নি।
সহীহ বুখারী (তাওহীদ) পরিচ্ছদঃ ৮৯/৭, ৬৯৪৯. লায়স (রহ.) নাফি‘ (রহ.)-এর সূত্রে বর্ণনা করেন যে, সফীয়্যাহ বিন্ত আবূ ‘উবায়দ তাকে সংবাদ দিয়েছেন যে, সরকারী মালিকানাধীন এক গোলাম গনীমতের পঞ্চমাংশে পাওয়া এক দাসীর সঙ্গে জবরদস্তি করে যিনা করে। তাতে তার কুমারীত্ব মুছে যায়। ‘উমার (রাঃ) উক্ত গোলামকে কশাঘাত(চাবুক পেটা) করলেন ও নির্বাসন দিলেন।
হাদিসের মান সহিহ।
চার জন বালেগ, বুদ্ধিমান পুরুষ মুসলমান সাক্ষীর মত গুরুত্বপুর্ন ব্যপারের উল্লেখ এই হাদিসেও কিন্তু নেই। তাছাড়া একজন দাসীর প্রতি করা জুলুমের বিচার করা যেতে পারলে সেই দাসীর সাক্ষী গ্রহণ করতে বাধা কোথায়?!!!!
ধর্ষনের ক্ষেত্রে চার জন সাক্ষী বা অহেতুক ধর্ষনকে যিনার সাথে মিলিয়ে এমন উদ্ভট আইনের কথা কোরআন বলেনি, রাসুল (সাঃ) করেন নি, খলিফায়ে রাশেদুনের কেউ করেন নি, তাহলে এই পদ্ধতি ইসলামী হয় কিভাবে!!!!
ইসলামে ধর্ষনের বিচার বা যে কোন অপরাধের "বিচার করার" বিধান আছে এবং সেই বিচার প্রক্রিয়া অপরাধী বা জনগনের প্রকাশ্য, বর্তমান অবস্থানের ভিত্তিতেই হতে পারে। সেখানে মনের শুপ্ত ইচ্ছা অহেতুক অনুসন্ধান করার কোন বিধান নেই।
খেলাফতের দ্বায়িত্ব গ্রহণের পর পরি হযরত ওমর (রাঃ) শাসন পদ্ধতি সম্পর্কে জন সমাবেশে দেয়া প্রথম ভাষণে বলেন, “হে লোকসকল! ওহীর ধারাতো বন্ধ হয়ে গেছে। এখন আমি যে কাজই করবো সেটা তোমাদের প্রকাশ্য অবস্থা এবং আমল অনুযায়ী করবো। ন্যয় ও সত্যের অনুসারীদের জন্য আমি শাস্তি ও নিরাপত্তা দিচ্ছি। গোপনীয় বিষয় এবং অন্তরে সুপ্ত বিষয়ের দায়িত্ব আমি নেবো না। সেটা আল্লাহ তাআলা এবং বান্দার ব্যপার। আল্লাহ তাআলা অন্তরের অবস্থা অনুযায়ী, নিয়ত অনুযায়ী বান্দার হিসাব নেবেন। যে ব্যক্তি অন্যায় ও দুষ্কৃতি করবে আইন অনুযায়ী তার বিরুদ্ধে আমি ব্যবস্থা নেবো। অন্যায় এবং অপকর্ম করার পর যদি কেউ বলে যে, আমার মনে ওরকম করার কোন ইচ্ছা ছিলো না, আমি তার এ ওজর গ্রহণ করবো না।” (শহিদে মেহরাব হযরত ওমর ইবনুল খাত্তাব (রাঃ), লেখকঃ সাইয়েদ ওমর তেলমেসানী, অনুবাদঃ মওলানা কামাল উদ্দিন শামীম,পৃষ্ঠা ১০৯)
সুতরাং, “ধর্ষন, নাকি সুপ্ত মনের ব্যভিচার” , সেটা অনুসন্ধান করার দিকেই অহেতুক সকল চেষ্টা রেখে, “ধর্ষন”কে, সময়ের চাহিদা না থাকা স্বত্যেও, “যিনা” র ভেতরে সুপ্ত রাখাটা আর যাই হোক অন্তত ইসলামী বিধান হতে পারে না।
বিঃ দ্রঃ এখন অনেকে যুদ্ধ বন্দীদের সাথে "আজল করা" সম্পর্কিত হাদিস গুলোর রেফারেন্স দিয়ে বলবেন এখানে ধর্ষনের বিচারই তো করা হয় নি। তাদের প্রতি পুর্ন সম্মান পুর্বক বলছি, প্রত্যেকটা হাদিস নিয়ে চুল চেরা বিশ্লেষণ করা একটা লিখায় তো সম্ভব না। আপাতত দেখালাম ইসলামের নামে অ-ইসলামিক কাজ করার মত একটা পক্ষ আছে "শারিয়া আইন" নামে। আর রাসুল (সাঃ) এর মৃত্যুর বহু বছর পর সঙ্কলিত হাদিস গুলো যে তাদের প্রভাব মুক্ত হবে না, তার নিশ্চয়তা নেই। সুতরাং বিষয় বিশদ, জায়গা ছোট। তাই সে বিষয়ে আরেকদিন হবে।
©somewhere in net ltd.