![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
সাধারণ মানুষ
৬ মে, ২০০৮।
ভারতের নয়াদিল্লীর অমর কলোনিতে খুন হন এক বৃদ্ধা। দিল্লী পুলিশের তদন্তে খুনির নাম বেরিয়ে আসে “বাদল সিং”। কিন্তু আসামী বাদল সিং কে ধরতে ব্যর্থ হয় ভারতীয় পুলিশ।
এ ঘটনার প্রায় দেড় মাস পর ১৩ জুলাই ২০০৮ এ বাংলাদেশের বাগের হাটের, গ্রাম্য স্কুলে, ক্লাস এইট পড়ুয়া এক স্কুল ছাত্রের মনে সাধ জাগে সে তাজমহল দেখবে। সেই সাধ নিয়ে, হিন্দি বা ইংরেজি ভাষা না জানা ছেলেটি বেনাপোল সীমান্ত দিয়ে ভারতে প্রবেশ করে। কিন্তু সাথে সাথে ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী (বিএসএফ) তাকে ধরে পুলিশে সোপর্দ করে দেয়।
কারন?
কারন তার নাম ছিল “বাদল আলী ফারাজী”। ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী তার নামের প্রথম অক্ষরটাকে আমলে নিয়ে নয়াদিল্লীর অমর কলোনিতে খুন হওয়া সেই বৃদ্ধার খুনি “বাদল সিং” এর সাথে গুলিয়ে ফেলে। ভাষা না জানার কারনে স্কুল ছাত্র বাদল ফারাজীও ব্যপারটা পরিষ্কার করতে পারে নি। গ্রেফতার করে তাকে পাঠিয়ে দেয়া হয় দিল্লীর তিহার জেলে। শুরু হয় বিচার কার্য্য। দীর্ঘ সাত বছর চলে বিচার কার্য্য। অবশেষে ২০১৫ সালের ৭ই আগস্ট দিল্লীর নিম্ন আদালত তাকে খুনের দায়ে যাবজ্জীবন কারা দন্ডে দন্ডিত করে। তার জায়গা হয় তিহার জেলের তিন নম্বর সেলে।
ঘটনা এখানেই শেষ হতে পারতো। রাষ্ট্র যন্ত্রের ভুলের মাসুল গুনতে গুনতে কত প্রানই তো শেষ হয়ে গেছে কাল কুঠুরিতে। সে না হয় আরেকটা সংখ্যাই বাড়াবে। কিন্তু না, মচকায়নি বাদল ফারাজি। ভারতীয় জেলে থেকেই, একে একে দশম ও দ্বাদশ শ্রেণী পার করে, ইন্দিরা গান্ধী ওপেন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতক পর্যন্ত পাস করে ফেলে। ঝুলিতে ভরে ৮ টি ডিপ্লোমা কোর্স। তার মধ্যে আছে ইংরেজির ওপরে ব্রিটিশ কাউন্সিলের একটি বিশেষ কোর্স। ২০১০ সালে “পড়ো পড়াও” নামে একটি শিক্ষা কার্যক্রম শুরু হয় যার সাথে যুক্ত হয়ে বাদল পরবর্তিতে শিক্ষাকতার কাজও শুরু করে জেলের ভেতরে।
গ্রামের স্কুলে ৮ম শ্রেণী পড়ুয়া একজন কিশোরকে, যার নিজের দেশের জেল খানা সম্পর্কেই কোন ধারনা নেই, যখন অন্য এক দেশের জেল খানায় বন্দী হিসাবে, বিনা দোষে কয়েদী জীবন যাপন করতে হয়, তখন তার মনের অবস্থাটা অনুভব করা তো দূরে থাক কল্পনা করার মত কল্পনা শক্তি বা মনের জোরও আমাদের অধিকাংশের নেই। বিনা দোষে দোষী হলে যে বিপুল পরিমান আত্ব বিদ্ধংশী আভিমানের জন্ম হয় তার চাপ সহ্য করার মত মনের জোর গ্রামের স্কুলে ৮ম শ্রেণীতে পড়া এক কিশোরের মনে কিভাবে জন্ম নিলো সেটাও একটা চরম বিস্ময়।
বন্দীশালায় কৈশর বিসর্জন দিয়ে যৌবনে প্রদার্পনের প্রারম্ভে সেই বিস্ময়ের সাথে পরিচয় হয় ভারতীয় সমাজকর্মী রাহুল কাপুরের। রাহুল কাপুর তিহার জেলে বন্দীদের পুনর্বাসনে কাউন্সিলিঙ্গের কাজ করার জন্য এসেছিলেন ২০১৬ সালে। বাদলের মনের জোর দেখে রাহুল তাকে সাহায্য করার জন্য আগ্রহী হন। যোগাযোগ করেন দিল্লিতে অবস্থিত বাংলাদেশ দূতাবাসের ডেপুটি হাই কমিশনার সালাউদ্দিন নোমান চৌধুরী এবং হাই কমিশনের মিনিস্টার (কন্স্যুলার) মোশাররফ হোসেনের সাথে। যা জানতে পারলেন তাও এক নতুন বিস্ময়। বাংলাদেশ হাই কমিশন ২০১২ সাল থেকেই বাদলের মুক্তির বিষয়ে ভারত সরকারের কাছে একাধিক চিঠি পাঠিয়েছে কিন্তু তাদের পক্ষ থেকে কোন সদুত্তর আসে নি। রাহুল কাপুর আইনজীবী নিয়োগ করে হাইকোর্টে পিটিশন রিভিউর আবেদন করেন। সাথে বাংলাদেশ দুতাবাসের মাধ্যমে এটাও জানানো হয় যে খুনের সময় বাদল বাংলাদেশে তার স্কুলেই অবস্থান করছিলেন এবং সেই দিনের স্কুলের হাজিরা খাতায় তার নামও আছে। কিন্তু অনাকাঙ্ক্ষিতভাবে ভারতীয় হাই কোর্ট পিটিশন খারিজ করে দেন।
শুরু হয় কোর্টের বাইরে রাহুল কাপুরের এক অন্য রকম যুদ্ধ। Justice for Badol Farazi নামে তিনি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে শুরু করেন ক্যম্পেন।
ধরনা দিতে থাকেন বিভিন্ন টিভি চ্যানেল গুলোর কাছে। যাতে তারা খবর টাকে লাইম লাইটে আনেন।
চিঠি লিখেন ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রী সুষমা স্বরাজ, রাষ্ট্রপতি রাম নাথ কবিন্দ এমনকি প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর অফিসে।
একের পর এক ভিডিও আপলোড করেন সোশ্যাল মাধ্যম গুলোতে।
ইউটিউব চ্যনেল
রাহুল কাপুরের ভিডিও-১
রাহুল কাপুরের ভিডিও-২
কিন্তু ইন্ডিয়ার মেইন স্ট্রিম মিডিয়া চ্যানেল গুলো এক প্রকার মুখ ফিরিয়েই নেয় তার দিক থেকে। কারন হিসাবে রাহুলের মতে সেই হিন্দু মুসলিম ইস্যু। স্বীকার করতে তিনি কুণ্ঠিত বোধ করেননি যে এখন যদি এমন হোত কোন মুসলিম দেশে কোন হিন্দু আটক আছে তবে ভারতীয় সংবাদ মাধ্যমগুলোর লাইন লেগে যেত। যেহেতু কট্টরবাদী হিন্দু মনস্ক বিজেপি সরকার ক্ষমতায়। কার এত ঠ্যাকা পড়েছে পার্শ্ববর্তি দেশের কোন মুসলমান যুবকের উপকার করার!!
কিন্তু ঠ্যাকা নিজের ঘাড়ে তুলে নেন এই হিন্দু যুবক রাহুল কাপুর। তার মতে তিনি ধর্ম না মানুষটাকে দেখেছেন, মানুষটার মনের জোরটাকে সম্মান করেছেন।
ওদিকে কিছুতেই কিছু হচ্ছে না। প্রধান মন্ত্রির অফিস থেকে বলা হয়, দিল্লী সরকারের সাথে যোগাযোগ করতে কারন বাদল দিল্লী জেলে আছে। রাহুল ছুটে যায় দিল্লীর “এল জি” র কাছে। এল জি সাহেব সাফ জানিয়ে দেন উনার সময় হবে না দেখা করার।
এরই মাঝে বাংলাদেশে মারা যায় বাদলের বাবা। গরীব পরিবারের দুঃখিনী মা র মন হাহাকার করতে থাকে বাদলের জন্য। মায়ের আতঙ্ক তাকেও যদি ছেলের মুখ না দেখেই মরতে হয়!!! রাহুল কাপুর সেই মায়ের আহাজারির ভিডিও আপলোড করেন সোশ্যাল মিডিয়ায়।
বাংলাদেশে বাদলের মা
সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেন সামাজিক মাধ্যমগুলোর ভারতীয় এক্টিভিস্টরা।
রেহান হাশমি, নাভেদ চৌধুরী সাথে নাম না জানা আরও অনেকে।
ইন্ডিয়া গেইটে সমাবেশ (রাহুল কাপুর)
আহমেদ
উল্লেখযোগ্য একজন হচ্ছেন “মহাবীর খিলেরি”। যিনি বিজেপির আইটি সেলে একসময় কর্মরত ছিলেন। পরবর্তিতে বিজেপির আইটি সেলের মিথ্যা প্রপাগান্ডামূলক ধর্ম বিদ্বেষী প্রচারের কারনে আত্ব তাড়িত হয়ে আই টি সেল ত্যগ করেন। আইটি সেল ত্যগ করে ব্যক্তিগত প্রচেষ্টায় সেলের বিভিন্ন অনৈতিক কর্মকান্ড সাধারন মানুষের সামনে তুলে ধরে বিজেপি সরকারের বিরাগ ভাজনও হন।
রাহুল কাপুরের সাক্ষাতকার -১, মহাবিরের চ্যনেল থেকে
রাহুল কাপুরের সাক্ষাতকার -২, মহাবিরের চ্যনেল থেকে
সবাই মিলে রাহুলের সিদ্ধান্তে একমত হন, ১৮ মার্চ ২০১৮ এ ইন্ডীয়া গেইটে সমবেত হয়ে আবেদন জানাবেন সারা দেশের মানুষের প্রতি। সাথে লাগাতার টুইট করা হবে পররাষ্ট্র মন্ত্রী সুষমা স্বরাজের টুইটার একাউন্টে। লাইভে এসে রাহুল আকুল আবেদন করেন ভারতের প্রতিটি নাগরিকের প্রতি। আহবান করেন ইন্ডিয়া গেটে এসে তাদের সাথে যোগ দেয়ার জন্য। এখানে ভিডিও গুলো দেখলে বোঝা যায় কি পরিমাণ বৈরি পরিস্থিতি পার করতে হয়েছিল তাদের। শুধুমাত্র আমাদের দেশের একজন গরীব ঘরের সন্তানকে তার মায়ের কোলে ফিরিয়ে দিতে। রাহুল তার সব ভিডিওতে উল্লেখ করেন, যা ঘটে গেছে তা নিয়ে বাদলের কোন ক্ষোভ নেই। সে চায় অতীতটাকে ভুলে বর্তমান দিয়ে তার ভবিষ্যৎটাকে সাজাতে। ভারতের প্রতিও বাদলের কোন রাগ নেই।
বাদলের পুরো ঘটনা নিয়ে রিপর্ট
বাদলের সাক্ষাৎকার
কাপুরকে অনেকে জিজ্ঞেস করেছেন একজন হিন্দু হয়ে আপনি কেন একজন মুসলমানের উপকার করছেন? উত্তরে রাহুল এক অবাক করা তথ্য দেন। বাদল তার কয়েদী জীবনের উপার্জন থেকে প্রতি মাসে ২০০ টাকা দান করেন ইন্ডিয়ান আর্মি ক্যজুয়াল্টি ফান্ডে। যে সব ইন্ডিয়ান আর্মির সদস্য শহীদ হন তাদের পরিবারের জন্য এই ফান্ড থেকে সাহায্য করা হয়। রাহুল অবাক হয়ে এই তথ্য সবার কাছে প্রচার করেন, যে দেশে সে বিনা দোষে বন্দী সেই দেশের শহীদ পরিবারের জন্য সে সাহায্য দিচ্ছে। সুতরাং বাদল যেখানে চিন্তা করে নি কাকে সে সাহায্য করছে, হিন্দু না মুসলমানকে সেখানে আমরা কেন তাকে সাহায্য করতে চিন্তা করবো!!!!
সফল ভাবে সম্পন্ন হয় ইন্ডিয়া গেটের কার্যক্রম।
India Gate protest for Badol
নড়ে ওঠে সরকার। অবশেষে।
দিল্লীর এল জি বাধ্য হন একজন দায়িত্ব শীলের সাথে রাহুল কাপুরের সাক্ষাত করিয়ে দিতে। রাহুল কাপুর অনলাইন পিটিশনের ব্যবস্থা করেন যাতে ৫০০ জনের সিগনেচার সহ সংযুক্ত করা হয় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এবং প্রধান মন্ত্রীর অফিসকে। তত দিনে বাংলাদেশের মিডিয়াতেও খবর চলে আসে। বিটিভি সহ বেসরকারি অনেক চ্যানেল প্রকাশ করে সচিত্র প্রতিবেদন।
যমুনা টিভি
বাংলা ভিশন
বি টি ভি
অবশেষে ৫ই মে, ২০১৮ তে ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী সুষমা স্বরাজ জবাব দেন। (নিউজ)। ভরসা দেন বিষয়টি তিনি দেখবেন।
তারই ধারাবাহিকতায় বাংলাদেশে পাঠাবার ব্যবস্থা করা হয় বাদল ফারাজীকে।
অবশেষে শুক্রবার,৬ জুলাই ২০১৮, বিকাল ৪টা ২০ মিনিটে জেট এয়ার ওয়েজের একটি বিমানে ঢাকায় ফেরত আনা হয় তাকে। পুলিশ সদর দফতরের অতিরিক্ত দুই পুলিশ সুপার নাজেম আহমেদ ও মমিনুল করিম দিল্লির তিহার জেল থেকে বাদল ফরাজীকে বাংলাদেশে নিয়ে আসেন।
ঘটনা এখানেও শেষ হতে পারতো। কিন্তু শেষ না হয়ে শুরু হয় আরেক পর্ব।
খবর পেয়ে যমুনা টিভির সহায়তায় তাদের গাড়িতে করে বিমান বন্দরে আসেন বাদল ফারাজীর মা ও বোন। দাড়িয়ে থাকেন বাইরের গেইটে। দশ দশটা বছর মা দেখেন নি ছেলেকে, বোন দেখেনি ভাইকে। শোনেন নি ছেলের মুখের “মা” ডাক। চোখ দিয়ে অঝোরে পানি ঝরছে। কত প্রতীক্ষার পর এক পলক দেখবেন তার সোনার মানিকরে।
কিন্তু সে দেখা আর হয় না।
বিমানবন্দর থেকে আনুষ্ঠানিকতা শেষ করে তাকে, প্রিজন ভ্যানের ভেতরে ঢুকিয়ে নিয়ে আসা হয় ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে। ভারতের কারাগার থেকে বাংলাদেশের কারাগারে। কারন তাকে আনা হয়েছে বন্দী বিনিময় চুক্তির মাধ্যমে।
তাকে তো ভারতের আদালত মুক্তি দেয় নি। সুতরাং সে তো এখনো কয়েদী ।পুলিশ সদর দফতরের অতিরিক্ত ডিআইজি (ইন্টেলিজেন্স অ্যান্ড স্পেশ্যাল অ্যাফেয়ার্স) মোহাম্মদ মনিরুজ্জামান বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, ‘বন্দি বিনিময় চুক্তির আওতায় ভারতে একটি খুনের মামলায় যাবজ্জীবন কারাদণ্ডপ্রাপ্ত আসামি বাদল ফরাজীকে ফিরিয়ে আনা হয়েছে। বিমানবন্দর থেকে তাকে কেরানীগঞ্জের কেন্দ্রীয় কারাগারে পাঠানো হয়েছে। বাকি সাজাটুকু তিনি বাংলাদেশের কারাগারে ভোগ করবেন।’
এখানে আমাদের পুলিশ ভাইদের আক্কলের প্রসংশা না করে পারছিনা। উনারা আসলেই আইনের প্রতি কতই না শ্রদ্ধাশীল!!!!!!!
টাইট শিডিউলে,জম্পেশ পেশাদার আচরণে আসামীকে একটি বারের জন্যও তার পরিবারের নজরে আসতে দিলেন না।
অথচ এই পুলিশ ভাইদের হাত ধরে হাত কড়া বাধা অবস্থায় কোর্ট লক আপ থেকে ঘুষ দিয়ে বাইরে আত্বিয় স্বজনদের সাথে দেখা করে, ভাত খেয়ে, বিড়ি খেয়ে, ঘণ্টাখানেক কাটিয়ে, আসামী আবার লক আপে চলে যেতে পারে। একবার তো চট্টগ্রাম কোর্ট বিল্ডীং থেকে এক আসামী এভাবে বাইরে এসে পালিয়েও গিয়েছিল। আর এখানে দশ বছর পর যে মানুষটা দেশে এলো, একটিবার তার মাকে সামনে এনে কিছুটা সময় দিলে কি এমন আইন ভংগ হত!!!
দশ বছর পর ছেলেকে এক নজর দেখতে না পাওয়ার বেদনায় বিমান বন্দরের গেটেই ডুকরে কেদে উঠেছিলেন বাদলের মা।
বাংলাদেশে বিমান বন্দরে বাদল ফারাজী
চোখ বাদলেরও ভিজে উঠেছিল হয়তো। প্রিজন ভ্যানের উচু জানালাটা দিয়ে দেখার চেষ্টা ও হয়ত বার কয়েক করে ছিলো।
যা হোক ,বাদল ফরাজীর মুক্তি চেয়ে গত ৮ জুলাই, ২০১৮ তে বাংলাদেশ হাইকোর্টে রিট দায়ের করেন দুই আইনজীবী ব্যরিস্টার হুমায়ন কবির পল্লব ও ব্যারিস্টার কাউছার।
কিন্তু বিনা দোষে ভারতে কারাভোগকারী বাদল ফরাজীর মুক্তির নির্দেশনা চেয়ে করা রিট আবেদনটি খারিজ (উত্থাপিত হয়নি মর্মে) করে দেন মহামান্য উচ্চ আদালত।
কারন বাদল ফরাজীকে দেশে ফেরত পাঠানো হয়েছে মুলত নির্দোষ ব্যক্তি হিসাবে নয়, একজন দন্ডপ্রাপ্ত দোষী ব্যক্তি হিসাবে।এবং তা করা হয় ২০১৩ সালে ২৮শে জানুয়ারী বাংলাদেশ এবং ভারতের মধ্যে সম্পাদিত “TREATY BETWEEN THE THE REPUBLIC OF INDIA AND PEOPLE’S REPUBLIC OF BANGLADESH RELATING TO EXTRADITION”
“বন্দি বিনিময় চুক্তি” এর আর্টিকেল ৯ এর অধীনে, যাতে উল্লেখ আছে,
“To the extent permitted by its law, where a person serving a sentence in the Requested State has been found extraditable, the Requested State may temporarily surrender the person sought for the purpose of prosecution to the Requesting State in accordance with conditions to be determined between the Contracting States. A person who is returned to the Requested State following a temporary surrender may be finally surrendered to the Requesting State to serve any sentence imposed, in accordance with the provisions of this Treaty and existing law of the requested country”
এই আর্টিকেলের ভাষ্য মতে বাদল ফরাজী তার যাবজ্জীবন সাজার মধ্যে ইতমধ্যে ১০ বছর খেটেছেন এবং এই সাজার বাকী অংশ তিনি বাংলাদেশের জেলে খাটবেন।
এখন বাংলাদেশে এই মুহূর্তে যাবজ্জীবন সাজা আসলে কত বছর খাটতে হয় সেইটা নিয়ে একটা জটিলতা আছে। কারণ আতাউর মৃধা ওরফে আতাউর বনাম রাষ্ট্র মামলায় ১৪ই ফেব্রুয়ারী, ২০১৭ সালে প্রদত্ত রায়ে সাবেক প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার নেতৃত্বে ৪ সদস্য বিশিষ্ট আপীল বিভাগের রায়ে যাবজ্জীন সাজাকে আমৃত্যু কারাবাস বলে ঘোষণা করা হয়েছে, যদিও এর আগে বিচারপতি নাজমুন আরা সুলতানার নেতৃত্বে তিন সদস্য বিশিষ্ট আপীল বিভাগের একটি বেঞ্চ যাবজ্জীবন সাজা মানে সাড়ে ২২ বছরের জেলও বলেছেন।
অপরদিকে ইন্ডিয়াতে একজন যাবজ্জীবন কারাদন্ড প্রাপ্ত আসামী ১৪ বছর জেল খেটে ফেললে তার নির্বাহী আদেশে কারামুক্ত হওয়ার একটা অধিকার জন্মায়, সেই হিসাবে আর মাত্র ৪ বছর জেল খাটলেই বাদল ফরাজী হয়তো মুক্ত হয়ে দেশে ফিরে আসতে পারতেন। এই অবস্থায় এই সময়ে দেশে ফেরত আসা বাদল ফরাজীকে উল্টো আরেক অনিশ্চিত জীবনে ঠেলে দিয়েছে।
তার কারামুক্তির সর্বশেষ প্রক্রিয়া হিসেবে বেরিস্টার হুমায়ুন কবির পল্লব বলেন, বাদল ফরাজীর মুক্তির জন্য বাংলাদেশ সংবিধানের ৪৯ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী সাজা মওকুফের আবেদন করতে হবে। অথবা ভারতীয় সংবিধানের ১৬১ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী সাজা মওকুফের জন্য ভারত সরকারের কাছে তিনি আবেদন করতে পারেন। এছাড়া আর কোনো আইনি প্রক্রিয়া নেই।
বাংলাদেশ সংবিধানের ৪৯ অনুচ্ছেদ বলছে ‘কোনো আদালত, ট্রাইব্যুনাল বা অন্য কোনো কর্তৃপক্ষ কর্তৃক প্রদত্ত যে কোনো দণ্ডের মার্জনা, বিলম্বন ও বিরাম মঞ্জুর করিবার এবং যে কোনো দণ্ড মওকুফ, স্থগিত বা হ্রাস করিবার ক্ষমতা রাষ্ট্রপতির থাকিবে।’
শীর্ষ সন্ত্রাসী তোফায়েল আহমেদ জোসেফের কথা মনে আছে?
যার আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে তার সাজা মওকুফ করেছিলেন রাষ্ট্রপতি। একইসঙ্গে তাকে বিদেশে চিকিৎসার অনুমতি দেয়া হয়েছিল।
১৯৯৯ সালের একটি হত্যাকাণ্ডে জোসেফের মৃত্যুদণ্ড হয়েছিল, হাই কোর্টও এ রায় বহাল রাখেন। পরবর্তীতে আপিল বিভাগ সাজা কমিয়ে যাবজ্জীবন সাজা দেয়।
২০ বছর আগে জোসেফকে যখন গ্রেপ্তার করা হয়, তখন তার নামে ঢাকার বিভিন্ন থানায় সন্ত্রাস, চাঁদাবাজি, খুন, অবৈধ অস্ত্র বহনসহ বিভিন্ন অভিযোগে অন্তত ১১টি মামলা হয়। কেবল একটি মামলা ছাড়া সবগুলোরই নিষ্পত্তি হয়ে গেছে অনেক আগে।
জোসেফের বড় ভাই হারিস আহমেদের নামও রয়েছে পুলিশের শীর্ষ সন্ত্রাসীর তালিকায়। হারিস এখন ইউরোপে বসবাস করেন। মাঝে মধ্যে ভারতে এলেও দেশে প্রবেশ করেন না।
নব্বইয়ের দশকে সন্ত্রাসীদের গুলিতে নিহত হন তাদের আরেক ভাই সাঈদ আহমেদ টিপু। আর বিজিবির সাবেক মহাপরিচালক লেফটেন্যান্ট জেনারেল আজিজ আহমদ তাদের বড় ভাই।
আর বাদল?
বাদল এখন চোস্ত হিন্দি, ইংলিশে অনর্গল কথা বলতে পারে। রাহুলের মতে তার চেয়ে ভালো ইংলিশ বাদল বলতে পারে। বাদলের নিজ হাতে লিখা এই চিঠির ভাষা পড়লে সে সম্পর্কে ধারনা পাওয়া যায়। স্নাতক ডিগ্রীধারী বাদল মুক্তি পেলে সহজেই ভালো কোন সম্মানের চাকরী নিজ যোগ্যতায় জুটিয়ে নিতে পারবে। দূর করতে পারবে সংসারের অসচ্ছলতা। তার জীবন কাহিনী উজ্জীবিত করতে পারে লাখো কয়েদীদের, আসামীদের যারা দোষ করে বা না করে কারাগারে গিয়ে জীবনের আশাই ত্যগ করে বসে আছে।সর্বশেষ বাদল খবরে আসে ১১ জুলাই ২০১৮। এখন পর্যন্ত তার আর কোন খবর কোন মাধ্যমে আসে নি। মিডিয়া হয়ত আর ইন্টারেস্টেড না। আমরা তো আগেও ছিলাম না, এখনো নই। আমাদের প্রচুর কাজ। সেখানে বাদলের স্থান কোথায়? নিরীহ নিম্নবিত্ত পরিবারের একমাত্র সহায়টি কেন্দ্রীয় কারাগারে পচে গলে এক সময় মরে পড়ে থাকবে।
আমি জানি না এই লিখা কারও চোখে পড়বে কিনা। চোখে পড়াবার মত জনপ্রিয় উচু মাপের কোন মানুষও আমি নই। আমি জানি না এখন আমাদের কি করা উচিৎ। তবু যখন রাহুল কাপুরের ভিডিও গুলো দেখি, তার কথা গুলো শুনি, তার আকুতি গুলো অনুভব করি, তখন কেমন যেন লজ্জায় কুকড়ে যাই। এতটা কষ্ট স্বীকার করে ভিন দেশী কিছু যুবক, আমার দেশের এক সন্তানকে ফেরত পাঠালো আমাদের কাছে আর আমরা নির্লিপ্ত বসে আছি!!!!! রাহুল কাপুর নিজের মায়ের মুখে বাদলের মায়ের মুখটা বসাতে পেরেছিল, আমরা পারছিনা।
তাই খুব সহজ একটা প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছে মনের ভেতর,
প্রশ্নটা নিজের কাছেই নিজেকে করা।
“কুখ্যাত শীর্ষ সন্ত্রাসী জোসেফ যদি রাষ্ট্রপতির ক্ষমা পেতে পারে তবে নির্দোষ বাদল ফারাজী কেন পাবে না!!!”
আছে কোন জবাব???!!!!
©somewhere in net ltd.
১|
১০ ই এপ্রিল, ২০২৫ সকাল ১১:৩৬
মুহাম্মদ কায়সার আহমেদ জামিল বলেছেন: ভাই, বাদল ফরাজী এখনো মুক্তি পায়নি....