নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

প্রাগঐতিহাসিক ধারাভাষ্যকার শ্রদ্ধেয় \"চৌঃ জাফর উল্লাহ শরাফতের\" সাথে আমার নামের মিল ছাড়া, কাছে বা দুরের কোণ সম্পর্ক নেই।

চৌধুরী জাফর উল্লাহ শরাফত

সাধারণ মানুষ

চৌধুরী জাফর উল্লাহ শরাফত › বিস্তারিত পোস্টঃ

খিলাফত-- ২য় পর্ব

১২ ই জানুয়ারি, ২০১৯ রাত ১২:৫৪

১ম পর্বঃ খিলাফত-১ম পর্ব
এর পর,
৬১ হিজরি, খ্রিষ্টীয় ৬৮০ সন (তারিখ ও সন, স্থানভেদে একটু ভিন্ন)। কারবালার যুদ্ধ শেষ। হযরত ইমাম হুসায়েন (রাঃ) শাহদাত বরন করলেন। এরপর?
এরপরের ইতিহাস নিয়ে শিয়া ও সুন্নি ইতিহাস বিদগনের বর্ননা বিভিন্ন রকম। কিছু সুন্নি ঐতিহাসিক গনের মতে শিয়ারা এক্ষেত্রে ইমাম হুসাইন (রাঃ) এবং উনার বাহিনীর অহেতুক বীরত্বের কথা সাথে আরও কিছু আজগুবি কিস্যা কাহিনী অত্যন্ত মর্মান্তিক ভাবে বর্ননা করেছেন। হ্যা তা করেছিলেন। এর সাথে তারা আজকের তাজিয়া মিছিল বা মাতম করাটাকে ইসলামী প্রথার মতই বানিয়ে ফেলেছেন।
তাই তাদেরটা বাদ দিয়ে সুন্নি ইসলামী ঐতিহাসিকদের দলিল থেকেই দেখা যাক কে কি বলছেন।
আল বিদায়া অয়ান নিহায়া, ৮ম খন্ড, পৃষ্ঠা ৩২৩ থেকে পুরো একটি অধ্যায় নিয়ে ইবনে কাথির , “শিয়াদের মিথ্যাবর্জিত নির্ভরযোগ্য ঐতিহাসিকদের উদ্ধৃতিতে তার হত্যাকান্ডের স্বরুপ”, নামক ভুমিকায় হুসায়েন (রাঃ)’র শাহাদাতের বিশদ বর্ননা করেছেন। এখানে তিনি বিভিন্ন ঐতিহাসিকদের বরাতে একই ঘটনা কে কিভাবে বর্ননা করেছেন তার বিবরণ দিয়েছেন।
প্রথমে আছে,(পৃষ্ঠা- ৩৫৭)
“ইয়াজিদ হুসায়েন (রাঃ)’র মৃত্যু চাননি। তার সামনে যখন হোসেনের কাটা মাথা নিয়ে আসা হয় এবং হুসায়েন (রাঃ)কে হত্যার কাহিনী বর্ননা করা হয় তখন তিনি “অশ্রুসজল” হয়ে পড়েছিলেন। যে ব্যক্তি কাটা মাথা নিয়ে এসেছিলেন তাকে কোন পুরুস্কার না দিয়ে বলেছিলেন “হুসায়েনকে হত্যা করা ছাড়াই তোমাদের আনুগত্যে আমি খুশি হতাম।” এই বর্ননাটি আব্দুল্লাহ ইবন ইয়াযিদ ইবন রূহ ইবন যানবা আল জুয়ামী তার পিতা থেকে আর তার পিতা বনু হিময়ারের নায ইবন রাবী’আ আল-জুরাশী থেকে বর্ননা করেন। এরকম বর্ননা বিশেষ করে ইয়াজিদের “অশ্রু সজল” হয়ে পড়ার বর্ননা একটিই আছে।
এটি ছাড়া একাধিক বর্ননায় বিপরীত ব্যপার এসেছে।ইয়াজিদ, হুসায়েন (রাঃ) এর কাটা মাথা, ছড়ি(লাঠি) দিয়ে খুচিয়েছেন। সেখানে উপস্থিত সাহাবী আবু বারজা আল আস্লামী (রাঃ) তাকে নিষেধ করায় ইয়াজিদ ক্ষান্ত হয়।(পৃষ্ঠা- ৩৫৯)
পরের দুটি বর্ননায় আবার এ সম্পর্কে কিছু বলা হয় নি।
একাধিক বর্ননায় আবার এটাও এসেছে হুসায়েন (রাঃ)’র কন্যাকে দেখে দরবারে উপস্থিত এক ব্যক্তি ইয়াজিদের কাছে আবেদন করে তাকে দাসী হিসাবে দিয়ে দিতে। যেহেতু সে যুদ্ধবন্দী। কিন্তু তার বড় বোন যয়নাব তাকে ভর্তসনা করলে ইয়াজিদ আর অনুমতি দেয় নি। এবং পরবর্তিতে বন্দীদের যত্নের সাথে তার প্রাসাদেই রাখা হয় মদিনা পাঠানো পর্যন্ত।
এর মধ্যে কোনটা সঠিক লেখকের মতে তা, “আল্লাহই ভালো জানেন।”
এবং শেষে পরিচ্ছদ হিসাবে যোগ করেন ৩৭৯ পৃষ্ঠায়, “সম্ভবত” হত্যার পুর্বে ইয়াজিদের যদি সুযোগ হতো তাহলে সে হযরত ইমাম হুসায়েন (রাঃ) কে ক্ষমা করে দিতেন। কেননা তার পিতাও তাকে এরুপ করার জন্য ওসিয়ত করে গিয়েছিলেন। আর সে প্রকাশ্যে নিজেও এরুপমত ব্যক্ত করেছিলেন। ইমাম হুসায়নের সাহাদাতের জন্য ইয়াজিদ তার গভর্নরকে অভিসম্পাত করেছিলেন। কিন্তু তাকে সে জন্য বরখাস্ত করেন নি, কোন রূপ শাস্তি দেন নি এবং তাকে এ ব্যপারে খুব বেশি মাত্রায় দোষারোপও করেননি। আল্লাহ তা’ আলাই অধিক পরিজ্ঞাত।”
“সম্ভবত”!!! সুতরাং নিশ্চিত কিছুই নয়।
সংক্ষেপে আল বিদায়া অয়ান নিহায়ায় এতটুক উল্লেখ করার মাজেযা হচ্ছে, এই বর্ননার ভেতর থেকেই কিছু ইতিহাসবিদ কেমন করে যেন নিশ্চিত সিদ্ধান্তে পৌঁছে যান। বিশেষ করে আমাদের দেশে এই বিষয়ের উপরে বাংলা ভাষায় লিখিত বিভিন্ন গ্রন্থে।
ইসলামের ইতিহাস (মুল-মাওলানা আকবর শাহ খান নজিবাবাদী,অনুবাদ ও সংকলন ইসলামিক ফাউন্ডেশন বাংলাদেশ) ২য় খণ্ডের, ৭০ পৃষ্ঠায় শুধু মাত্র প্রথম বর্ননাটি (অশ্রু সজল ইয়াজিদ) এসেছে।একই ভাবে শুধু এই বর্ননাটি এসেছে “শহীদে কারবালা” র(লেখক- মুফতি মুহাম্মদ শফি অনুবাদ- মওলানা মুহাম্মদ রফিকুল্লাহ নেছারাবাদি) ৭৩ নম্বর পৃষ্ঠায়।
“কারবালা ও ইমাম বংশের ইতিবৃত্ত”, লেখক মুহাম্মদ বরকতুল্লাহ, প্রথম প্রকাশ ১৯৫৭,পৃষ্ঠা ১২২, সেখানেও শুধুমাত্র অশ্রু সজল ইয়াজিদ । এই বইটির ১৮৮ নম্বর পৃষ্ঠায় আছে, “নির্ভরযোগ্য সুত্রে জানা যায়, খলিফা ইয়াজিদ সমগ্র ব্যপারটির জন্য দুঃখ প্রকাশ করিয়াছিলেন। ইহাও আমরা বিশ্বস্তভাবে জানিয়াছি যে, ইয়াযিদ হুসায়েনের হত্যা ইচ্ছা করেন নাই, তার জন্য আদেশ প্রদানও করেন নাই। তাহার উদ্দেশ্য ছিল শুধু হুসায়েনকে ধৃত ও বন্দী করা, ইহাতে তাহাকে কেন্দ্র করিয়া একটা বিপজ্জনক রাস্ট্রবিরোধী আন্দোলন গড়িয়া না উঠে।”
“নির্ভরযোগ্য সুত্রে”, “বিশ্বস্তভাবে” মানে লেখক পুরাপুরি নিশ্চিত “ইয়াজিদের” কোন ইচ্ছাই ছিল না হুসায়েন (রাঃ) কে হত্যা করার।
এই “নির্ভরযোগ্য এবং বিশ্বস্ত সুত্রগুলোর” একটি হচ্ছে শাইখুল ইসলাম ইমাম ইবনে তাইমীয়া (র:)। তিনি বলেন, “সকল মুহাদ্দিস ও ঐতিহাসিকের ঐক্যমতে, ইয়াজিদ বিন মুয়াবিয়া, হুসাইনকে হত্যার আদেশ দেন নি। বরং তিনি উবাইদুল্লাহ বিন যিয়াদকে চিঠির মাধ্যমে আদেশ দিয়েছিলেন যে, তিনি যেন ইরাকের জমিনে হুসাইনকে কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠা করতে বাঁধা দেন। এতটুকুই ছিল তার ভূমিকা। বিশুদ্ধ মতে তার কাছে যখন হুসাইন নিহত হওয়ার খবর পৌঁছল তখন তিনি আফসোস করেছেন।”
ঐতিহাসিক ইজ্জত দাররুযা বলেন, “হুসাইন হত্যার জন্য ইয়াজিদকে সরাসরি দায়ী করার কোন দলীল নেই। তিনি তাঁকে হত্যার আদেশ দেন নি। তিনি যেই আদেশ দিয়েছেন, তার সার সংক্ষেপ হচ্ছে, তাঁকে ঘেরা করা হোক এবং তিনি যতক্ষণ যুদ্ধ না করবেন ততক্ষণ যেন তাঁর বিরুদ্ধে অস্ত্র ধারণ না করা হয়।”
ফাঁকটা আমাদের সেই জিয়াউর রহমানের স্বাধীনতার ঘোষক হওয়ার মত। হ্য ইয়াজিদ সরাসরি হুসাইনকে হত্যার আদেশ দেন নি, কিন্তু যুদ্ধ করার আদেশ দিয়েছেন তার গভর্নর ইবনে যিয়াদকে। আর যুদ্ধে নিশ্চয় তারা একে অপরকে ফুল ছুড়ে মারবেন না। সরাসরি হত্যার আদেশ দেয়ার যেমন কোন দলিল নেই তেমনি হত্যা না করতে বলারও কোন দলিল নেই। হত্যা করাতে না চাইলে যুদ্ধের আদেশ দিয়ে সাথে হুসায়েন (রাঃ) কে হত্যা না করার কথা উল্লেখ করে দেয়াটাই স্বাভাবিক ছিল।কারন ইয়াজিদ জানতেন ইবনে যিয়াদ কেমন হিংস্র ছিলেন। হুসায়েন (রাঃ) কে হত্যার আগেও অনেকের কাটা মস্তক তিনি ইয়াজিদের দরবারে পাঠিয়েছিলেন।
এ সম্পর্কে ইয়াজিদের প্রাথমিক মোনভাব মদিনার গভর্নর ওয়ালিদ বিন উতবাকে পাঠানো চিঠিতে বোঝা যায়।আল বেদায়া ওআন নেহায়া, ইবনে কাথীর খন্ড ৮, পৃষ্ঠা-২৭৮ তে উল্লেখ আছে, চিঠিতে ইয়াজিদ লিখে ছিল, “আমার বায়াতের ব্যাপারে হুসাইন, আব্দুল্লাহ ইবনে উমার ও আহদুল্লাহ ইবনে যুবাইরের প্রতি প্রচন্ড কঠোর হও এবং বায়াত না করা পর্যন্ত এদেরকে কোন প্রকার ঢীল দিও না”।
এই চিঠি পাওয়ার পরে বনি উমাইয়ার অভিজ্ঞ প্রাক্তন গভর্নর মারোয়ান বিন হাকামকে, ওয়ালিদ বিন উতবা ডেকে পাঠায় মতামত দেওয়ার জন্য। মারোয়ান এই চিঠির ভাবসম্প্রাসন করে বলে,
“আমার মত হল তারা মুয়াবিয়ার মৃত্যুর সংবাদ পাওয়ার আগেই তুমি তাদের বায়াতের জন্য ডেকে পাঠাও, যদি অস্বীকার করে তাদের গর্দান উড়িয়ে দাও”।(আল বেদায়া খন্ড ৮ পৃষ্ঠা-২৭৮)
উক্ত চিঠির কথা ইবনে আসিরের, আত তারিখ ফিল কামিলেও উল্লেখ হয়েছে। অন্যান্য বর্ণনায়ও এসেছে যে যদি বায়াত করতে অস্বীকার করে তবে গর্দান উড়িয়ে দেবে।
মারোয়ান কিসের ভিত্তিতে এমন সিদ্ধান্ত নিতে পেরেছিল? কারন সে হুসায়েন (রাঃ)’র প্রতি ইয়াজিদের মনের ভাব নিশ্চয় জানতো।
গভর্নর ইবনে যিয়াদ হুসায়েন (রাঃ)’র দেহ থেকে ছিন্ন করা মস্তক সারা শহরে ঘুরিয়ে তা ইয়াজিদের দরবারে পাঠাবার দুঃসাহসিক সিদ্ধান্ত নেয়ার মত আত্ববিস্বাস কিভাবে পেয়েছিল??!! কারন সে হুসায়েন (রাঃ)’র প্রতি ইয়াজিদের মনের ভাব নিশ্চয় জানতো।
হুসায়েন (রাঃ) এর কাটা মস্তক বহনকারী সৈনিকটি ইয়াজিদের দরবারে আশায় ছিলো তাকে পুরস্কৃত করা হবে। কেন? কারন সেও হোসেনের প্রতি ইয়াজিদের মনের ভাব জানতো।
ইয়াজিদের দরবারের এক তুচ্ছ মানুষ হুসায়েন (রাঃ) এর মেয়েকে দাসী হিসাবে চাওয়ার সাহস করতে পেরেছিল। কিভাবে?
কারন সেও হোসেন (রাঃ) এর প্রতি ইয়াজিদের মনের ভাব জানতো।
এখানে অন্য কারো ব্যপার হলে বিশ্বাস করা যেত যে এসব নিষ্ঠুরতায় ইয়াজিদের মত ছিল না।সৈন্যরা নিজে থেকে বাড়াবাড়ি করে ফেলেছিল। কিন্তু বিস্বজাহানের প্রতি প্রেরিত, আল্লাহর রাসুলের বংশধরের মাথা কেটে উল্লাস করার মত মনের জোর তৎকালীন আরবের কোন মুসলমান সৈনিকের মনে এমনি এমনি পয়দা হবে, এটা ঠিক বিশ্বাস করতে মন সায় দিচ্ছে না।
আর হুসায়েন (রাঃ) কাটা মাথা ছড়ি দিয়ে গুঁতানোর ঘটনা যদি সত্য হয় তাহলে দুইয়ে দুইয়ে চার ঠিকই মিলে যায়। কতটা বিদ্বেষ থাকলে একটা মানুষ এমন করতে পারে।
তবে সে যে পরে হুসায়েন (রাঃ)’র বাকি পরিবারকে সম্মানের সাথে মদিনার পথে পাঠিয়ে দিয়েছিল সেটাও সত্য। কিন্তু এটা থেকে নিশ্চিতভাবে সিদ্ধান্তে আসা যায় না যে তার হুসায়েন (রাঃ) কে হত্যা করার কোন ইচ্ছা ছিল না। এটা তার চতুর রাজনৈতিক সিদ্ধান্তও হতে পারে, যাতে সাম্রাজ্যে প্রভাব বিস্তারে সুবিধা হয়।
(চলবে)

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.