![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
সাধারণ মানুষ
খিলাফত--২য় পর্ব
এর পর,
এখন কথা হচ্ছে কেন এভাবে ইয়াজিদকে খানিকটা নিরীহ বানানোর চেষ্টা করা হচ্ছে?আমাদের দেশে যারা এ চেষ্টাটা করছে তাদের লিখার একটা সুন্দর প্যটার্ন আছে। প্রথমেই তারা “আহ্লে বাইয়াতের উপর মহব্বত রাখা আমাদের ইমানী দ্বায়িত্ব” সাথে আরও কিছু যোগ করে হাসান ও হসায়েন (রাঃ) কে তাদের কলিজার টুকরা বানিয়ে ফেলবে। সাথে থাকবে ইয়াজিদের হালকা পাতলা গুষ্টি উদ্ধার। তার পর আসবে, “আমি ইয়াজিদের পক্ষে বলছি না কিন্তু সত্য জানাটা সবার উচিৎ” এর পর শুরু হবে ইয়াজিদ কি হুসায়েন (রাঃ) হত্যার জন্য দায়ী!!!! সাথে আধা ছিড়া রেফারেন্স। যেমন, তাদের রেফারেন্স এ থাকে, “ইমাম ইবনে কাছীর (র বলেন, “এটি প্রায় নিশ্চিত যে ইয়াজিদ যদি হুসাইনকে জীবিত পেতেন, তাহলে তাঁকে হত্যা করতেন না। তার পিতা মুয়াবীয়া (রা
তাকে এ মর্মে অসীয়তও করেছিলেন। ইয়াজিদ এই কথাটি সুস্পষ্টভাবেই ঘোষণা করেছিল।”
অথচ ইবনে কাথির কি, কিভাবে এবং কোথায় বলেছেন সেটা প্রথমেই উল্লেখ করেছি। সেখানে উল্লেখিত “সম্ভবত” শব্দটির স্থানে “এটি প্রায় নিশ্চিত” বসানো হয়েছে এবং পুরা বাক্যটিও উল্লেখ করে নি। তেমনি একটা লিখার লিঙ্ক-
কারবালার ইতিহাস, আমাদের করনীয় ও বর্জনীয়
কিন্তু কেন আল বিদায়া অয়ান নিহায়ার মত উল্লেখিত সকল মতামত পাশা পাশি তুলে ধরা হচ্ছে না?!!!! যদিও আল বিদায়া অয়ান নিহায়ায়ও সুক্ষ চেষ্টাটা করা হয়েছে।
এর কারন আছে,
কারন ইয়াজিদকে ঘ্রিনা করতে থাকলে ইসলামী সাম্রাজ্য তথা খিলাফতের নিরবিচ্ছিন্নতার তারটা ছিড়ে যায়, যা আজকের দিনের রাজনৈতিক ইসলামের তথা শারিয়া আইনের ধারক বাহকদের জন্য অসুবিধাজনকভাবে অস্বস্তিকর। পর্যায়ক্রমে ব্যপারটি আরও খোলাসা হবে। তারা এর পক্ষে যে যুক্তি দেখায় সেগুলোও কম চিত্তাকর্ষক নয়।
কারবালা ও ইমাম বংশের ইতিবৃত্ত গ্রন্থে, লেখক মুহাম্মদ বরকতুল্লাহ, কারবালার বিশ্লেষনে বলেন, "শিয়াদের এরুপ অহেতুক কর্মকাণ্ড(ইমাম হুসায়েন (রাঃ) কে নিয়ে তৈরি করা কিসসা কাহিনী) উমাইয়াদের বিরুদ্ধে সাধারন মুসলমানদের ঘ্রিনাকে বাড়িয়ে তোলে এবং এই সমস্ত কল্পিত কাহিনি ইসলামের ভেতরের ঐক্য ও সংহতির বিনাশ ঘটায়। তাদের মতে ঘটনার ভাবালুতা বর্জন করে সমসাময়িক রাষ্ট্র নীতির প্রেক্ষিতে বিচার করে দেখলে বুঝতে বিলম্ব হবে না যে উমাইয়াদের নিকট তৎকালে ইসলামের রাজনৈতিক দিকটাই সর্বাধিক গুরুত্ব লাভ করেছিল। তাদের কাছে ইসলামের অর্থ ছিল “আরব জাতির” অখন্ড একতা রক্ষা ও বিশ্ব বিজয়। এই কাজে তারা একাগ্র চিত্তে আত্বনিয়গ করেছিলেন।”
এখন ইসলামের অর্থ যে কেবল “আরব জাতির” অখন্ড একতা রক্ষা ও বিশ্ব বিজয়(সামরিক) এই ত্বত্ত উমাইয়ারা কিভাবে খুজে পেলো। “আরব জাতির” স্থানে যদি “মুসলিম জাতি” বসানো হত তাও না হয় মেনে নেয়া যেত। আমরা কি সমসাময়িক রাষ্ট্র নীতির প্রেক্ষিতে বিচার করবো, নাকি ইসলামী রাষ্ট্র ব্যবস্থায় যারা বিশ্বাসী তাদেরই মতানুসারে, রাসুল (সাঃ) ও খালিফায়ে রাশেদিনের শাসন পদ্ধতির প্রেক্ষিতে বিচার করবো!! কারন ইসলামের নামে যে কোন আইন প্রয়োগ করার ক্ষেত্রে তো তারাই “সমসাময়িক নীতি বা সামাজিক অথবা রাষ্ট্রীয় অবস্থার” তোয়াক্কাই করে না। ১৪০০ বছর আগে যা ছিল হুবহু তাই করতে হবে। আর সাধারন মুসলমান হিসাবে, ইয়াজিদ যেভাবে সৈন্য বাহিনী প্রেরন করে ইমাম হুসায়েন (রাঃ), যার প্রতি মহব্বত রাখাটা আমার ইমানী দ্বায়িত্ব তাকে হত্যা করালো সেই ইয়াজিদের প্রতি ঘৃণা তো আমার এমনিতেই, এই একটা কারনেই আসবে। বরঞ্চ সেই ঘৃণার পাল্লাটাকে ইয়াজিদের ঘাড় থেকে হালকা করার জন্য শিয়া, কুফাবাসীর বেঈমানি এমনকি কিছু কিছু ক্ষেত্রে ইমাম হুসায়েন (রাঃ) কেও কাঠগড়ায় দাড় করিয়ে ফেলা হচ্ছে।
হিজরি ৬৩ সাল। মদিনা বাসী ইয়াজিদের বাইয়াত প্রত্যক্ষান করলো। ইয়াজিদ মুসলিম ইবনে উকবা কে সেনাপতি করে মদিনা অভিযানে পাঠাল। অভিযানের আগে বলল, “ মদিনার অধিবাসিকে তুমি তিনবার আহবান করবে, যদি তারা বশ্যতা স্বীকার করে তাহলে তুমি তাদের থেকে বশ্যতা স্বিকার করবে এবং তাদের থেকে বিরত থাকবে। অন্যথায় তুমি আল্লাহর সাহায্য প্রার্থনা করবে এবং তাদের সাথে যুদ্ধ করবে।যদি তুমি তাদের উপর বিজয় লাভ কর মদিনায় তিন দিন হালাল ঘোষণা করবে। তারপর লোক জন থেকে বিরত থাকবে। আলি ইবন হুসাইন (রাঃ) (নবী বংসের শেষ বাতি) এর প্রতি নজর রাখবে, তার থেকে বিরত থাকবে এবং তার কল্যাণ কামনা করবে, তাকে মজলিসে ডেকে নিবে। কেন না তিনি ঐসব জিনিসে প্রবেশ করেন নি যাতে অন্যরা প্রবেশ করেছে।”
যুদ্ধের পুঙ্খানিপুংখ বিশ্লেষণে যাবো না, সেনাপতি মুসলিম, মদিনাবাসীর বিরুদ্ধে যুদ্ধে জয়ী হয়ে তার মালিক ইয়াজিদের আদেশ অনুসারে তিন দিনের জন্য মদিনাকে হালাল করে দিলেন। অর্থাৎ তিন দিনের জন্য মদিনা উন্মুক্ত, বিজিত সেনাদলের লুট রাজের জন্য। এই তিন দিনের বীভৎস সন্ত্রাস, হত্যাকাণ্ড, ব্যভিচার ও লুটপাটে মদিনার অনেক নামি দামি আলেম ওলামা এমনকি সাহাবা কেরামের একটি বিরাট দল তাদের সন্তানসহ শাহাদাত বরন করেন। এটি আমার বা শিয়াদের বানানো কাহিনী নয়। খোদ সুন্নি ইতিহাসবিদ ইবনে কাথিরের আল বিদায়া ৮ম খণ্ড পৃষ্ঠা ৪০৮ থেকে ৮০৯ এ বিশদভাবে বর্নিত আছে।মুসলিম অবশ্য, ইয়াজিদের কথা অনুসারে আলি ইবন হুসাইন (রাঃ) এর কোন ক্ষতি করেন নি যদিও যথাযত ভাবে অপমান করতেও ভুল করেন নি। (আল বিদায়া পৃষ্ঠা-৪০৭)
হিজরি ৬৪, মুহরমের প্রথম তারিখ।
সেনাপতি মুসলিম, আব্দুল্লাহ ইবনে যুবাইর (রাঃ) (যিনি মক্কায় ইয়াজিদের বায়াত অস্বীকার করে নিজেকে খলিফা হিসাবে প্রতিষ্ঠিত করতে চান) এর বিরুদ্ধে যুদ্ধ করার জন্য মক্কার উদ্দেশ্যে রওনা দেয়। যুদ্ধের এক পর্যায় মুসলিম পাহাড়ের ওপর মিনজিক (প্রস্তর নিক্ষেপণ যন্ত্র যা সেই যুগে আর্টিলারির কাজ করতো) স্থাপন করে। তুলা, গন্ধক ও আল কাতরার মিশিয়ে মিনজিকের নতুন গোলা তৈরি করা হয়। যাতে করে গোলায় আগুন লাগিয়ে নিক্ষেপ করা যায়।সেই গোলা তারা পবিত্র কাবা শরীফের দিকে নিক্ষেপ করতে থাকে। যার ফলে কাবা শরীফের সম্পুর্ন গিলাফ পুড়ে যায়, দেয়াল আগুনের তাপে কালো হয়ে যায়। গোলার আঘাতে এক পর্যায় দেয়াল ধসে পড়ে।(আল বিদায়া ৮ম খণ্ড, পৃষ্ঠা- ৪১৩),(ইসলামের ইতিহাস ২য় খণ্ড পৃষ্ঠা-৭৭)।
আল বিদায়াতে বর্নিত আছে কেউ কেউ মনে করেন কাবা শরিফ পুড়ে যাবার কারন অন্য। মসজিদে যারা ছিল তারা কাবার পাশে আগুন ধরালে সেই আগুন কাবার গিলাফে ধরে যায়। অন্য একটি কারনে উল্লেখ হয়, আব্দুল্লাহ ইবনে যুবাইর (রাঃ) মক্কার কোন এক পাহাড়ে তাকবির ধনি শুনতে পেয়ে পাহাড়ে অবস্থিত লোকদের দেখার জন্য বর্শার মাথায় আগুন জালান এবং সেই আগুন বাতাসের কারনে গিলাফে লেগে যায়। কিন্তু শত্রু পক্ষের আর্টিলারির রেঞ্জের ভেতরে থেকে রাতের অন্ধকারে আগুন জ্বালিয়ে সহজ নিশানা হতে কেউ কেন চাইবে?!!(মিনজিকে মোটামুটি নিশানা করা যায়) আর আব্দুল্লাহ ইবনে যুবাইর (রাঃ) পাহাড়ে অবস্থিত লোকদের দেখার জন্য নিজের হাতের বর্শার মাথায় আগুন কেন জালাবেন?!!! এটা কি টর্চ লাইট যে সরাসরি পাহাড়ের ওপর গিয়ে পড়বে!!????
তবে ঘটনা যাই হোক, মানে আগুন যে কারনেই লাগুক, কাবা শরীফের উপর যে হামলা করা হয়েছিল সে ব্যপারে কোন সন্দেহ নেই।
সেই সময় ইয়াজিদ মৃত্যু বরন করে এবং যুদ্ধ সমাপ্ত হয়।
এখানে পক্ষে বিপক্ষে বিভিন্ন আলেমদের বিভিন্ন যুক্তি আসে।
বিপক্ষে অনেক সুন্নি আলেম ইয়াজিদকে লান্ৎ প্রদান করার অনুমতি দিয়েছেন বিভিন্ন বিশুদ্ধ হাদিসের রেফারেন্সে।
পক্ষে আসে, “ইয়াজিদ ছিলেন একজন শাসক বা ইমাম, সে হিসাবে বিদ্রোহীদের তিনি তার রাষ্ট্রের ভবিষ্যৎ নিরাপত্তার কথা চিন্তা করে নির্মুল করতে পারেন। তার থেকে যা কিছু জঘন্য অপরাধ সংঘটিত হয়েছে তাকে তার ভুল বলে আখ্যায়িত করা হয় এবং ইজতিহাদে ভ্রান্তি বলে মনে করা হয় যা ক্ষমার যোগ্য। তারা আরও বলেন এতদস্ত্বেও তিনি ছিলেন একজন ফাসিক ইমাম। ইমাম যদি ফাসিক হয় তাহলে তার এ ফিসকের জন্য উলামায়ে কিরামের বিশুদ্ধমতে সে ইমাম হতেও অপসারিত হয়ে যায় না বরং তার বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করাটাও বৈধ নয়।( আল বিদায়া,৮ম খন্ড, পৃষ্ঠা- ৪১১)
কারন এর দ্বারা বিশৃঙ্খলার সৃষ্টি হয়, রক্তপাত হয় এবং সন্ত্রাস জন্ম নেয় যার ফলাফল সমাজে ইমামের ফিসক হতেও ভয়াবহ অবস্থার সৃষ্টি করে।”
এক কথায় বলা যায় মন্দের ভালো।
কিন্তু মদিনার মত পবিত্র নগরীকে তিন দিনের জন্য “হালাল” করে দেয়ার চেয়েও মন্দ কিছু আর কি হতে পারে!!!! এটা ইজতিহাদে ভ্রান্তি !!! মানে ক্ষমার যোগ্য!!
সেনাপতি মুসলিমের পবিত্র কাবা শরীফের দেয়াল গোলার আঘাতে ভেঙ্গে ফেলা ইজতিহাদে ভ্রান্তি !!! মানে ক্ষমার যোগ্য!!
তিন দিনের হালাল করা মদীনায় সাহাবাদের হত্যা করা, ইজতিহাদে ভ্রান্তি !!! মানে ক্ষমার যোগ্য!!
আল্লাহই ভালো জানেন। তবে ব্যক্তিগতভাবে ইয়াজিদের প্রতি “ঘৃণা” ছাড়া আমার আর কিছুই বের হচ্ছে না এবং তার এই ক্ষুদ্র শাসনকালকে ইসলামী বলতেও আমার ঘোর আপত্তি আছে।
(চলবে)
©somewhere in net ltd.