বাংলাদেশের রং

০৮ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৩ রাত ৮:২৮

বাংলাদেশের রং

জাহেদ মোতালেব

চেরাগী পাহাড় মোড় থেকে জামালখানের দিকে হাঁটতেই প্রথমে চোখে পড়ে অশ্বত্থগাছটির দিকে। অনেক পাতা হলুদ হয়ে আছে। রাস্তায় ঝরে পড়ে আছে আরো পাতা। মানুষজন যাচ্ছে প্রেস ক্লাবের সামনে ছাতিমতলার দিকে। হঠাৎ আমার পহেলা বৈশাখের কথা মনে পড়ল। বৈশাখেও মানুষ এ রকম দলে দলে যায়। গিয়ে এক জায়গায় মিলিত হয়। আজ আবার মিলিত হওয়ার দিন এসেছে।

পুরনো পাতা মাড়িয়ে সামনে এগোলে দেখি লম্বা লাল-সাদা শাড়ি বিছানো। ঝুঁকে অনেকে স্বাক্ষর করছে। কেউ লিখেছে, ফাঁসি চাই। কেউ বলেছে, নতুন প্রজন্মের আর কেউ যেন জামায়াত-শিবির না করে। সবার লেখা লাইনগুলো একত্র করলে একটা কাহিনী হবে। সেই কাহিনীর নায়ক খুঁজে পেতে চাইলে একটু চোখ বুজতে হবে। ভাবতে হবে। অথবা শেষ মাঘের আকাশের দিকে তাকাতে হবে। বাতাসের গন্ধ শুঁকতে হবে। বাতাসে যেই সুর, তাতে ফাল্গুনের আগমনী ধ্বনিত হচ্ছে। পুরনোকে সরিয়ে দিতে সে আসছে। নায়ক নতুন। একেবারে অচেনা। এ রকম নায়ককে কেউ কল্পনা করতে পারেনি। সে হঠাৎ এসে গেছে। লোকে তাই তাকে নানাভাবে বর্ণনা করতে চেষ্টা করছে। লোকেরা তার মধ্যে একাত্তরের সুর খুঁজে পাচ্ছে।

লোকেরা মুষ্টিবদ্ধ হাত তুলে শপথ করে। মুষ্টিবদ্ধ হাতগুলো একত্র হয়ে লাল লাল অক্ষর হয়ে যায়। অক্ষরগুলো আরো গাঢ় হয়। গাঢ় অক্ষরে লেখা : বীরাঙ্গনার শাড়ি হোক রাজাকারের ফাঁসির দড়ি।

সামনে গিয়ে মিছিলে মিলিত হই, স্লোগানে মিশে যাই।

রাস্তার উল্টো দিকে একটু ফাঁকা। সেই ফাঁকাতে বাবা বা চাচার সাথে দাঁড়িয়ে আছে ছোট্টমণি। বুকে একটা বোর্ড লটকানো। তাতে লেখা : কাদের মোল্লার ফাঁসির দাবিতে রাজপথে এসেছি। বাবা-মামা কেউ হয়ত তা লিখে দিয়েছে। সে তাকিয়ে আছে স্লোগানে উত্তাল মানুষগুলোর দিকে। তার ছোট্ট প্রাণে কোন সুর বাজছে?

আমরা দেখি, গোলাপি রঙের একটা জামা পরে এসেছে সে। দুই হাতে উপরে তোলা। হাতে আরেকটা বোর্ড। তাতে লেখা : একাত্তরের হাতিয়ার গর্জে উঠুক আরেকবার। ছোট্ট ছোট্ট আঙুলগুলো মেহেদি রাঙানো। তার রং মিছিলে, স্লোগানে, তরুণ-যুবার মনে ছড়িয়ে পড়ে। এ যে বাংলাদেশের রং! এ যে আমাদের স্বপ্নগুলোর রং!

সেই রঙে মুছে যেতে থাকে ‘পুরনো’।

১ টি +০/-০