নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

নিকৃষ্ট পৃথিবীতে জন্ম নেয়া নগন্য ব্যক্তি,ভূখণ্ডে খুঁজে চলেছি মনুষত্ব; শুধু মানুষ হওয়ার চেষ্টায়?

জাহেদুর রহমান সোহাগ

শব্দ দেয়া নামে পরিচয়

জাহেদুর রহমান সোহাগ › বিস্তারিত পোস্টঃ

আমরা কি সামাজিকভাবে অবক্ষয়ের পথে হাঁটছি?

১২ ই জুন, ২০২৫ সকাল ১১:০৪

মানুষ সমাজবদ্ধ প্রাণী। মতের ভিন্নতা তার স্বাভাবিক গুণ, কারণ একই সমাজে বসবাস করেও প্রত্যেক ব্যক্তি আলাদা চিন্তা ও বিশ্বাস পোষণ করে। কিন্তু দুঃখজনকভাবে আজ সেই ভিন্নমতকে আমরা শত্রুতা হিসেবে গ্রহণ করছি। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে আজ এমন এক পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে, যেখানে কোনো ব্যক্তির মত, বিশ্বাস বা দলীয় অবস্থান একটু ভিন্ন হলেই তাকে অবজ্ঞা, অপমান, এমনকি মৃত্যু টার্গেটে পরিণত করা হয়।

এক সময় যুক্তি দিয়ে আমরা কথা বলতাম, সম্মান দিয়ে মতামত শুনতাম। আজ সেই জায়গায় এসেছে কটু বাক্য, ঘৃণা আর দলান্ধ মন্তব্য। ফেসবুক যেন এক ধরনের ভার্চুয়াল যুদ্ধক্ষেত্র—যেখানে যুক্তির নয়, বরং মিথ্যা, গুজব ও অপমানের বিস্তার ঘটে। এই ভার্চুয়াল সংঘাত বাস্তব সমাজেও রূপ নেয় প্রতিহিংসায়, যা সমাজকে ধীরে ধীরে অবক্ষয়ের দিকে ঠেলে দিচ্ছে।

সম্প্রতি গাজীপুরের পুবাইলে মাওলানা রইজ উদ্দিনকে গণপিটুনির মাধ্যমে হত্যা করা হয়। অভিযোগ ছিল, তিনি একজন কিশোরকে বলাৎকার করেছেন—যা প্রমাণ হওয়ার আগেই তাকে গাছে বেঁধে মারধর করা হয়, সেই দৃশ্য ভিডিও করে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে দেওয়া হয়। মাওলানার মৃত্যু হয় পুলিশের হেফাজতে। সামাজিকভাবে এই ঘটনা শুধু একটি ব্যক্তির মৃত্যু নয়, এটি ন্যায়বিচারের চরম লঙ্ঘন এবং মানবাধিকারের অবমাননা।

মাওলানা রইজ উদ্দিন আহলে সুন্নাত ওয়াল জামায়াত আকিদাহ ঘরানার অনুসারী ছিলেন। আমরা দেখেছি, ঘটনাটি প্রকাশ পাওয়ার পর ধর্মীয় মতভেদ ও গোষ্ঠীগত বিদ্বেষও সামাজিক মাধ্যমে দানা বাঁধে। প্রশ্ন হলো—একজন মানুষ কোন দলের, কোন বিশ্বাসের—সেটা বড়, না তার জীবন? তিনি একজন পিতা, একজন স্বামী, একজন মুসলমান, সর্বোপরি একজন মানুষ ছিলেন। তাহলে শুধু মতাদর্শের ভিন্নতার কারণে তার জীবন এত অমূল্য হয়ে উঠল কেন?

এটাই প্রথম ঘটনা নয়। আমরা বুয়েটের মেধাবী ছাত্র আবরার ফাহাদকেও হারিয়েছি একইভাবে—শুধু "শিবির সন্দেহে" সহপাঠীদের নির্যাতনে। যেখানে দেশের সেরা মেধাবীদের তৈরি হওয়ার কথা, সেখানে যদি ভিন্নমতের প্রতি সহিষ্ণুতা না থাকে, তবে সমাজে আমরা কীভাবে সহাবস্থান আশা করব?

এইসব ঘটনা আমাদের জানান দেয়, সমাজে আজ সহনশীলতার ঘাটতি চরমে। ভিন্নমত, ভিন্ন বিশ্বাস কিংবা ভিন্ন দলের প্রতি সম্মানবোধ বিলুপ্ত প্রায়। বিচারব্যবস্থার প্রতি মানুষের আস্থা কমে যাওয়ার কারণে অনেকেই নিজেদের হাতে "বিচার" তুলে নিচ্ছে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হওয়া যেন হয়ে উঠেছে একমাত্র বিচারক। অথচ আমরা ভুলে যাচ্ছি, সভ্যতা গড়ে উঠেছে সংলাপ, নিয়ম ও মানবিকতার ভিত্তিতে—not mobs, not hashtags.

আমাদের প্রয়োজন এখনই থামা। ভিন্নমতকে দমন করে নয়, বরং শ্রদ্ধা দিয়ে, যুক্তি দিয়ে, সহনশীলতা দিয়ে আমরা একটি সভ্য ও ভারসাম্যপূর্ণ সমাজ গড়ে তুলতে পারি। দলমত যা-ই হোক, জীবনের চেয়ে কিছুই বড় নয়। সমাজে শান্তি ও নিরাপত্তা তখনই ফিরে আসবে, যখন আমরা বিশ্বাস করব—প্রতিপক্ষও মানুষ, সে-ও আমার মতোই অনুভব করে, ভালোবাসে এবং বাঁচতে চায়।

আজ সময় এসেছে ঘৃণার রাজনীতি, বিভক্তির সংস্কৃতি ও দলান্ধতার ঊর্ধ্বে ওঠার। প্রয়োজন সত্যিকার অর্থে মানবিক একটি সমাজ নির্মাণের। যেখানে বিশ্বাস থাকবে, সহানুভূতি থাকবে, আর থাকবে জীবনকে সম্মান করার শিক্ষা।

মন্তব্য ৮ টি রেটিং +২/-০

মন্তব্য (৮) মন্তব্য লিখুন

১| ১২ ই জুন, ২০২৫ দুপুর ১:০১

অনিকেত বৈরাগী তূর্য্য বলেছেন: গত ১০-১৫ বছরে এই অবক্ষয়টা অনেক বেড়েছে। এখন মানুষ বিচার-বিবেচনাও করে না। ডাইরেক্ট অ্যাকশনে চলে যায়।

২| ১২ ই জুন, ২০২৫ দুপুর ১:০৫

মারিয়া আফরিন বলেছেন: সামাজিক যোগাযোগ এর মাধ্যম মানুষ এর চিন্তা চেতনা কে গ্রাস করে ফেলেছে।

৩| ১২ ই জুন, ২০২৫ বিকাল ৪:১৭

সাড়ে চুয়াত্তর বলেছেন: সমাজের ক্ষমতাশালী এবং বিত্তশালী মানুষদের দ্বারা সৃষ্ট প্রচণ্ড সামাজিক বৈষম্য (অনেক ক্ষেত্রে রাষ্ট্র যন্ত্রকে ব্যবহার করে, বৈষম্যমুলক আইন করে), পুরো জনগোষ্ঠীর দুর্নীতির মাধ্যমে বিত্তশালী হওয়ার প্রবনতা, পশ্চিমের ভালো দিক বাদ দিয়ে খারাপ দিকগুলি অনুসরন করার প্রবণতা, ধর্মকে সুবিধা মত গ্রহণ ইত্যাদি বিভিন্ন কারণে সমাজে এই অবক্ষয় দিন দিন বাড়ছে। সমাজের অযোগ্য লোক নেতা হচ্ছে। তারা চাচ্ছে শিক্ষা ব্যবস্থা ধ্বংস হয়ে যাক, মানুষ জ্ঞানার্জন না করে মৌজ মাস্তি করে অলস সময় কাটাক। ঘোলা পানিতে মাছ ধরা সহজ। সমাজের ১০% লোককে সকল সুবিধা দিয়ে তারা বাকি ৯০% মানুষকে গিনিপিগের মত ব্যবহার করে শাসন করতে চায়।

৪| ১২ ই জুন, ২০২৫ বিকাল ৫:২১

ফেনিক্স বলেছেন:



আধুনিক সমাজ কি রকম হওয়ার দরকার, সেই রকম জ্ঞান ও ধারণা কি আপনার আছে?
আপনার পড়ালেখা ও প্রফেশান কি?

৫| ১২ ই জুন, ২০২৫ সন্ধ্যা ৭:৩৪

নাহল তরকারি বলেছেন: কষ্ট। কষ্ট।

৬| ১২ ই জুন, ২০২৫ রাত ১১:১১

আধুনিক চিন্তাবিদ বলেছেন: জাতি যত বেশি শিক্ষিত ও সভ্য হতে থাকবে, এইসব সমস্যাও তত বেশি পরিমানে দূর হতে থাকবে।

৭| ১৩ ই জুন, ২০২৫ রাত ১:০৪

জ্যাক স্মিথ বলেছেন: আমরা তুমুল বেগে অবক্ষয়ের দিকে ধ্বাবিত হচ্ছি।

৮| ১৩ ই জুন, ২০২৫ সকাল ৮:৪৫

কামাল১৮ বলেছেন: আমরা জাহান্নামের পথে হাটছি।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.