নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

ইকনোমিকস আমার প্রফেশন আর সাহিত্য আমার প্যাশন।

জহিরুল ইসলাম কক্স

:)

জহিরুল ইসলাম কক্স › বিস্তারিত পোস্টঃ

ছোট গল্প:মায়া

২০ শে মে, ২০১৫ রাত ৯:৪৯


ফ্লোরে ঘুমাতে ঘুমাতে বিরক্তি ধরে গিয়েছে। একটা খাট বা চৌকি কিনা দরকার। পুরান ঢাকায় অনেক পুরনো ফার্নিচার এর দোকান আছে।আমাদের বাসার সামনেই একটা আছে।আমি লালবাগ একটা বাসায় একটা রুম ভাড়া নিয়ে থাকি।প্রথমে মনে করেছিলাম ফ্লোরে থাকব।এখন ছারপোকার কামড়ে অতীস্ট হয়ে ভাবতেছি পুরাতন হলেও একটা খাট কিনে ফেলি।যেই ভাবা সেই কাজ।পরদিন পুরাতন ফার্নিচার বিক্রি করে এমন এক দোকানে গিয়ে হাজির।একটা খাট খুব পছন্দ হল।দামও সস্তা,কিনে নিয়ে দুই জন লোকের সহায়তায় বাসায় নিয়ে আসলাম।খাট ভাল করে পরিষ্কার করতে গিয়ে দেখি একটা লুকান বক্স,সহজে চোখে পড়েনা।আমি একটু কসরত করে বক্সটা খোলে ফেললাম। দেখি বক্সে এক কৌটা সিদূর এবং একটা খাতা।বুঝলাম কোন হিন্দু গৃহবধূর ব্যবহারকৃত খাট এটা।
খুব কৌতুহল নিয়ে খাতাটি খুললাম। খাতাই যা লেখা আছে তা হুবুহু তুলে ধরলাম।
০৯-০৫-১৯৩৮
আজ আমার বিয়ের রাত।ননদ,জা ওরা চলে গেছে অনেক্ষন।আমার পতি এসে ঘরে ঢুকলেন। আমার প্রতি কেমন যেন অবজ্ঞার দৃষ্টি নিক্ষেপ করে বললেন যাও নিচে ফ্লোরে চাদর পেতে শুয়ে পড়।আমি অবাক।আমার দিদিমা, বৌদি রা যা শিখিয়ে দিয়েছে সব উল্টাপাল্টা হয়ে গেল।
দুশ্চন্তায় রাত কাভার। পরদিন পাশের বাড়ির এক দিদিকে খুব আপন মনে হওয়ায় উনার বারংবার প্রশ্নের উত্তরে গতরাতের কাহিনী টা বললাম। উনি যা বললেন তাতে আমার মনে হল গলায় দড়ি দেয়।এক ইংরেজ ম্যাম কে ভালবাসে। তার হাত থেকে রক্ষা করার জন্য তড়িঘড়ি করে আমার সাথে বিয়ে দিয়েছে।
১১-৫-১৯৩৮
আজকেও গতরাত্রের মত একই ঘটনার পুনরাবৃত্তি ঘটলো।খুব কান্না পাচ্ছে। কাল বাবার বাড়ি যাব।কিন্ত এই ঘটনা কাউকে বলা যাবেনা।
১৮-৫-১৯৩৮
আমার কিছুই ভাল লাগেনা।ঠিকমতো খেতে পারিনা। আমার পতি পাগল প্রায়।কানাঘুষা শুনছি যে সেই ইংরেজ মেয়েটিকেই নাকি বিয়ে করে বিলেত চলে যাবে।ঘরের সবাই নাকি মত দিয়েছে। অল্প দিনের পরিচিত আমার কথা কেউ চিন্তায় করলোনা।
অনেক কষ্ট করে কিছু ধুতরা বীজ জোগাড় করেছি। এ ছাড়া আমার সম্মুখে আর কোন পথ খোলা নেই।দরিদ্র পিতার দুঃখ বাড়ানোর চেয়ে মরে যাওয়া ভাল।আজকেই আমার শেষ দিন।
।।।।।।।।।
খাতার লেখা গুলো পড়ে খুব কষ্ট পেলাম।সেই বউ টির চেহারা কল্পনায় আনার চেষ্টা করলাম। বউটি সময়ের তুলনায় অনেক স্মার্ট ছিল নিশ্চয়। হয়তো দরিদ্র পিতা বিয়ে দিতে পারেনি সময় মত।তাই একটু বয়স হয়ে গিয়েছিল। সেই সময় বাল্য বিবাহের প্রচলন ছিল।
বিকালবেলা একটা টিউশনি করায়।আসতে আসতে প্রায় সন্ধ্যা হয়ে যায়।আজকে টিউশনি শেষে আমার বন্ধু রাসেল এর সাথে দেখা।গল্প করতে করতে রাত্রি দশটা বেজে গেল।ভাবতেছি ৩টা রুটি নিয়ে বাসায় চলে যায়।এখন গিয়ে রান্না করতে ভাল লাগবেনা।
দরজার তালা খুলে দেখি লালশাড়ি পড়া একটা বউ,হাতে শাখা কপালে সিঁদুর। বসে আছে,আমাকে দেখে মাথায় কাপড় তুলে দিয়ে বলল, তুমি হাত মুখ ধুয়ে আস আমি খাবার বাড়ছি।।আমি হচকচিয়ে গেলেও বুঝতে পারলাম যে এটি সেই বউ যে সংসার করার অতৃপ্তি নিয়ে সুইসাইড করেছিল।ভয়ে আমার গা ঠান্ডা হয়ে গেল।কিন্তু আমি সত্যিই হাতমুখ ধুয়ে এসে বসলাম। দেখি যে ঘরে যা বাজার ছিল তা থেকেই রান্না করেছে। ডিম,ডাল,সাদা ভাত।আমার হৃদয় টা মোচড় দিয়ে উঠলো। ভয়ের চেয়ে মায়াটা বেশি লাগতে লাগলো। আমি আস্তে করে বললাম তুমি খাবেনা।সে অবাক হয়ে তাকিয়ে রইলো। আমি আবার বললাম তুমিও আমার সাথে বসে পড়।একসাথে খাই।সে বললো,সত্যি বলছো?।ইংরেজ মেয়েটি শুনলে রাগ করবেনা?।আমি বললাম ওই মেয়েটিকে আমি আর এখন চায়না।সে খুশি হয়ে আমার সাথেই খেতে বসলো।রাত্রে আমি খাটে উঠে শুয়ে পড়লাম। আমার জিদ চেপে গেল কি হয় দেখব।সব গুছগাছ সেরে সে তার গায়ের গয়না খুলে খাটের মাথার সাইডে আর একটা গুপ্ত বক্স খুলে গয়না রাখে।তারপর মেঝেতে গিয়ে শুয়ে পড়তে চায়।আমি বললাম এখানেই ঘুমাতে পারবে।
ফজরের পূর্বে আমার নিয়মিত ঘুম ভেঙে যায়।ঘুম থেকে জেগে দেখি নিষ্পাপ একটা মুখ।একটা হাত আমার উপর রাখা।তাকিয়ে থাকতে থাকতেই ফজরের আজান দিল।আমার চোখের সামনেই মেয়েটি বাতাসে মিলিয়ে গেল।সারাটি দিন কেমন এক উৎকন্ঠায় কাটালাম।একবার খাটের মাথার পাশের গোপন বক্সের ভিতর অনুসন্ধান করে দেখলাম সত্যিই অলঙকারে ভরপুর।। সন্ধ্যায় বাজার করতে নিচে গেলাম।বাজার করে ঘরে ফিরে দেখি কিচেনে মনযোগ দিয়ে রান্না করছে।শুনতে অবাক লাগলেও সত্যি যে ওকে দেখে আমার খুব ভাল লাগলো।কেমন যেন হাপ ছেড়ে বাচলাম।
।থাকুক, একটি মেয়ে যদি এভাবেই তার অতৃপ্তি দূর করতে চায় তবে থাক।কেমন জানি মায়া পড়ে গেল মেয়েটির প্রতি।এখন আর আমি আমার বন্ধুদের সন্ধার পরে বাসায় আনিনা।আগে আমার রুমে তাস খেলা চলত মাঝে মাঝে,আমি এখন তাদের এড়িয়ে চলি।প্রতিদিন সন্ধায় বাসায় ফিরে দেখি আমার পথচেয়ে বসে আছে একটি মুখ,যে আমাকে দেখেই মিষ্টি করে হেসে উঠে।আমিও ক্রমশ জড়িয়ে যাচ্ছি।

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.