নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

উৎসের খোঁজে।

Jaliskhan

মানুষ হইবার চাই

Jaliskhan › বিস্তারিত পোস্টঃ

বাসনা

২৩ শে আগস্ট, ২০১৬ দুপুর ১২:১৪

মনসুর হিজ্জাজ পেশাব করে কুলুপ নিতে গিয়ে পায়ের রগে টান খায়, খিস্তি করে উঠে ঘটনার আকস্মিকতায়। কেন এমন হলো না ভেবে, খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে সে বাকি কাজ সারে। তারপর দীর্ঘদিনের সঙ্গী ছাতাটা খুলে মাথার উপর দিয়ে "পাবলিক টয়লেট" থেকে বের হয়। সূর্যর কিরণ স্পষ্ট হানা দিচ্ছে চামড়ায়। চোখ কুঁচকে তিন টাকা সার্ভিস চার্জ পরিশোধ করে, বাজারের পূর্ব দিকে তাকায়। শালার এটুকু পেশাবের জন্য "তিন টাকা" দিতে হলো ভেবে মনসুর হিজ্জাজ বিরক্ত হয়। তাও আবার অপয়া জায়গায় এসে পায়ের রগ টান খাওয়াতে, এখন খুঁড়িয়ে হাটতে হবে অনেক পথ। দিনকাল ভালো না, তাছাড়া বয়সের কিছুটা প্রভাব আছে বৈকি। তা না হলে এমন কত পথ সে মাড়িয়েছে দিনের পর দিন, রাতে কত হাজারো তারার আলোয় পাড়ি দিয়েছে প্রান্তরের পর প্রান্তর, নদীর পাড় ঘেষে জোছনাভরা আলোয় চষে বেড়িয়েছে "ভাগ্য"র খোঁজে।

পাথুরিয়া গ্রামের দক্ষিণ পূবে খালের শেষ মাথায়, তারপর যেখানে নদীটার শুরু, তার ঠিক অপরদিকে গাছগাছালি ঘেরা নতুন একটা দালানের ছাতে খাড়া হয়ে থাকা রডের মাথায় তিনকোনা কালো পতাকা চোখে পড়া মানে, বাজার আর বেশি দূরে নয়। তেকোনা কালো পতাকা উড়া ঘরটিই আসলে মনসুর হিজ্জাজের বাড়ি। গ্রাম থেকে দূরে নদীর সন্নিকটে এ বাড়িটি বাজারের আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু, এমনকি ইউনিয়ন অফিসেও এ নিয়ে আলোচনা হয়েছে। মনসুর হিজ্জাজের উত্তরোত্তর উন্নতি গ্রামে ঈর্ষার প্রধানতম কারণ। আর তার বউ, গ্রামের মেয়েদের ঈর্ষার পাত্রী। বাড়ির পুরুষেরা বিকেলে দাওয়ায় বসে আড্ডা দিতে দিতে যখন মনসুর হিজ্জাজের বউকে নিয়ে আলোচনা করে, বাড়ির মেয়েরা কান পেতে শুনে সেসব কথা। টুকরো টাকরো কথা ভেসে আসে এলোমেলোভাবে। মনসুর হিজ্জাজের বউ নীল ফুটি দেয়া একটা হিজাব পরে এসেছিলো বাজারে, তাহেরের দোকান থেকে সওদা করে সে ফিরতি রিক্সায় চলে যায়। কিন্তু সে যখন রিক্সা থেকে নেমেছিলো তখন না বলে কয়েই একটা দমকা হাওয়া তার হিজাব এক ঝটকায় উড়িয়ে নিয়ে যায়। দমকা হাওয়া প্রথমে একটা দোল দিয়ে কাপড়ের টুকরোটিকে দলা পাকায়, কিন্তু হিজাবের একটা কোনা তখনও এই দলা পাকানোর ফাঁক গলে তিরতির করে কাঁপতে থাকে আর মনসুর হিজ্জাজের বাড়ির কালো অসম পতাকার কথা মনে করিয়ে দেয়।

হিজাবখানা আরো কিছুদূর ভেসে, দেলু ব্যাপারির আতরের দোকানে এসে পড়ে। হাওয়ার গর্জনে আর দোকানের ঝাপ লাগানোয় প্রথমদিকে কেউ লক্ষ্য না করলেও দেলু ব্যাপারীরর মেঝো ছেলে ক্যাশবাক্সের উপর থতমত খাওয়া হিজাবখান পড়ে থাকতে দেখে। নীল ফুটি দেয়া এই হিজাবের দোকানে উড়ে আসার পিছনে সে অলৌকিক কোন ইশারার ইঙ্গিত পায় এবং পরক্ষণে তার স্বপ্নভঙ্গ হয় যখন রিক্সাওয়ালা হিজাবের জন্যে দেলু ব্যাপারীর ক্যাশবাক্সের সামনে এসে দাঁড়ায়। ততক্ষণে দেলু ব্যাপারীর মেঝো ছেলে উড়ে আসা হিজাব থেকে অদ্ভূত ধরণের মিষ্টি কোন ফুলের ঘ্রাণ অনুভব করে এবং আরো একবার অলৌকিক শক্তির ইশারা বিশ্বাস করতে শুরু করে। মনসুর হিজ্জাজের বউ যখন রিক্সা থেকে নেমেছিলো আর যখন দমকা হাওয়া তার হিজাব উড়িয়ে নিয়ে চলে গেলো, এতটুকু বিলম্ব না করে সে তার মাথা ও মুখ ওড়না দিয়ে ঢেকে দিয়েছিলো। যদিও খুব অল্প সময়ের মধ্যে ব্যাপারটা ঘটেছিলো, তবুও তাহের, তার দোকানের দুই কর্মচারি আর তাহেরের দোকানের পাশের চায়ের দোকানের দোকানদার ও খরিদ্দারদের মাঝে দুইজন মাঝবয়সী পুরুষ ও ঔষধ কোম্পানির একজন অল্প বয়সী সেলসম্যান মনসুর হিজ্জাজের বউয়ের অবগুণ্ঠিত কেশরাজি ও বড় এক গোছা খোঁপা দেখতে পেয়েছিলো। যদিওবা একেকজন একেক ভাবে, একেক ভাষায় ব্যক্ত করেছিলো সে ঘটনা, তবুও বোঝা গিয়েছিলো, মনসুর হিজ্জাজের বউয়ের চুল রেশমি সূতার মতো, আর খোঁপা খুললে এই কৃষ্ণ কালো চুল হাঁটু ছুঁতে পারতো।

রিক্সাওয়ালাকে হিজাব নিয়ে আসার তাড়া দিয়ে মনসুর হিজ্জাজের বউ তাহেরের দোকানে যখন প্রবেশ করে তখন সে একবার পেছনে ফিরে তাকিয়েছিলো এবং এক লহমায় সে সবকিছু দেখে নিয়েছিলো বলে চায়ের দোকানের খরিদ্দাররা মতামত দিলেও, তাহের পরবর্তীতে এ ঘটনার সত্যতা অস্বীকার করে। তাহের পরিষ্কার দেখেছে মনসুর হিজ্জাজের বউ রিক্সা থেকে নেমেছিলো, ডান পা রাস্তা ছুঁয়েও ছিলো এবং আরেক পা মাটিতে পড়ে কি পড়ে নি, এমন সময় দমকা হাওয়ায় হিজাবখানা উড়িয়ে নিয়ে গিয়েছিলো এবং রিক্সাওয়ালাকে না তাকিয়েই হিজাবখানা খুঁজে আনার অনুরোধ জানিয়ে দোকানে এসেছিলো। ঔষধ কোম্পানির সেলসম্যান তার চোখের দৃষ্টি শক্তি সংক্রান্ত নানান প্রশংসাসূচক বর্ণনা দিলেও সেসব কিছুই ধোপে টেকে না, আদতে তাহেরের কথা সবাই মেনে নেয়। তাছাড়া তাহের রিক্সাচালকের অপরদিকে ছিলো এবং তারই একমাত্র সবকিছু পুঙ্খানুপুঙ্খ বর্ণনা করা সমীচীন বোধ হয়।

রিক্সাওয়ালা যখন হিজাবের দাবী করে তখন দেলু ব্যাপারীর মেঝো ছেলে এমন সুগন্ধী হিজাব, উপহার হিসেবে তার কাছে এসেছে বলে দাবী করে। এককথা দুকথায় রিক্সাওয়ালা ক্ষেপে গেলে, দেলু ব্যাপারীর মেঝো ছেলে হিজাবখানা ক্যাশবাক্সে তালা মেরে রিক্সাওয়ালাকে দোকান থেকে বেরিয়ে যেতে বলে। আর যেহেতু রিক্সাওয়ালা মনসুর হিজ্জাজের বউকে নিয়মিত আনা নেয়া করে, সেহেতু তার পক্ষেই সবচেয়ে বেশি করে জানা সম্ভব বলে, রিক্সাওয়ালা যখন তাহেরের দোকানে এসে দেলু ব্যাপারীর ছেলের সাথে হয়ে যাওয়া ঘটনা বিবৃত করে তখন তাহের অত্যন্ত চিন্তিত বোধ করে এবং এর একটা বিহিত করবে বলে তার দোকানের ছেলেটাকে মনসুর হিজ্জাজের বউকে পাশের দোকান থেকে চা বিস্কিট এনে দিতে বলে। কর্ডুরয় প্যান্টটা গুটিয়ে নিয়ে সে চায়ের দোকানের সামনে এসে দাঁড়িয়ে খানিক আগের দমকা হাওয়া ও বৃষ্টির ছিটেফোঁটা দেখতে না পেলেও দেলু ব্যাপারীর ছেলেকে সেখানেই পেয়ে যাওয়াতে হিজাব ফিরিয়ে দেয়ার অনুরোধ করে।

দেলু ব্যাপারীর মেঝো ছেলে কথা বলার কোন এক সময়ে রাগের মাথায় তাহেরকে ধাক্কা দিলে তাহের সামনের বেঞ্চে বসে থাকা দুইজন মাঝবয়সী লোকের গায়ে গিয়ে পড়ে আর ভারসাম্য না রাখতে পেরে তারা তিনজনই মাটিতে পড়ে যায়। দুইজন মাঝবয়সীর মাঝে যিনি শক্তিশালী তিনি কোনমতে উঠে দাঁড়ান এবং সজোরে এক থাপ্পড় দেন দেলু ব্যাপারীর মেঝো ছেলেকে। ততক্ষণে তাহের হাঁচড়ে পাঁচড়ে উঠে সামনে রাখা চায়ের কেটলি ছুড়ে মারে দেলু ব্যাপারীর মেঝো ছেলের গায়ে। পরিবেশ ভারসাম্যহীন হয়ে পড়ে, আর পরিবেশের প্রভাবক হিসেবে অঝোর ধারায় বৃষ্টি নামে। আশেপাশের প্রায় সবাই ছোট ওই চায়ের দোকানে গা বাঁচাতে আশ্রয় নেয়। একটা নেড়িকুত্তা দেলু ব্যাপারীর মেঝো ছেলের পাশ ঘেঁষে দাঁড়ায় আর দেলু ব্যাপারীর মেঝো ছেলে শাপ শাপান্ত করে তাহেরকে।

মনসুর হিজ্জাজ হাতের কাজ সেরে পাথুরিয়া গ্রামের সাপ্তাহিক বাজারের দিন তার গাছের ঝুনা নারকেল নিয়ে আসে বিক্রির জন্য। সে আসন গেড়ে বসে তাহেরের দোকানের সামনে। চা খেতে খেতে সে তাহেরের কাছ থেকে সে হিজাব সংক্রান্ত পুঙ্খানুপুঙ্খ ঘটনা একবার শুনে এবং আরেক কাপ চা তাহেরকে খাওয়াবে বললে তাহের দ্বিগুন সোৎসাহে একই ঘটনা সে বর্ণনা করে। স্পষ্টতই দ্বিতীয় বার কিছু নতুন নতুন বাক্য, শব্দ এবং শারীরিক ভঙ্গী কথার মাঝে এসে পড়ে। মনসুর হিজ্জাজ, ঢ্যাঙ্গা মনসুর হিজ্জাজ, যাকে সবাই সমীহ করে কোন এক অজানা কারনে - হয়ত সে অনেকটা লম্বা বলে কিংবা তার ফর্সা চেহারায় আফগান ভাব আছে বলে; ক্রোধে ফেটে পড়ে এবং তাহের পরিষ্কার শুনতে পায় মনসুর হিজ্জাজ, "ছালে, হারামজাদ" বলে দেলু ব্যাপারীর ছেলেকে গালমন্দ করে। সে তৎক্ষণাৎ নারকেলের জিম্মা তাহেরের উপর ছেড়ে দিয়ে দেলু ব্যাপারীর দোকানের দিকে খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে এগোয়।

দেলু ব্যাপারীর মেঝো ছেলে মনসুর হিজ্জাজের উপস্থিতি টের পেয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়ে এবং বিখ্যাত "কাহাবা" আতরের এক শিশি, যার দাম হাজার টাকার উপরে, তা নিয়ে দোকানেরর কর্মচারীদের গালমন্দ করতে থাকে। মনসুর হিজ্জাজ এইসবের মাঝেও কয়েকবার ক্যাশবাক্সের সামনে দাঁড়িয়ে দৃষ্টি আকর্ষণের চেষ্টা করে যায় এবং কোন এক অসতর্ক মুহূর্তে ক্ষিপ্ত হয়ে ক্যাশবাক্স ধরে টান দেয়। যদিও ক্যাশবাক্সের মাঝে কোন "হিজাব" সে খুঁজে পায় না, কিন্তু ভাংতি পয়সাগুলো বিভিন্ন ধাতব আওয়াজ তুলে ছিটকে পড়ে। দেলু ব্যাপারীর ছেলে দোকানের পিছন থেকে ছুটে এসে মনসুর হিজ্জাজকে সজোরে ধাক্কা মারে এবং টের পায়, যে ধাক্কা সেদিন সে একই কারণে তাহেরকে দিয়েছিলো, আর আজকের ধাক্কায় তার ক্রোধ কিছুটা হলেও বেশি। মনসুর হিজ্জাজ তার পেশাব করতে গিয়ে রগে টান খাওয়া এবং পরিণতিতে খুঁড়িয়ে যাওয়া পা নিয়ে তাল সামলাতে না পেরে, আতরের শিশি রাখা একটা র‍্যাকে গিয়ে পড়ে এবং অনেকগুলো আতরের শিশি ভেঙ্গে শেষে চিৎপটাং হয়ে পড়ে। দেলু ব্যাপারীর মেঝো ছেলে, তীব্র গন্ধের মাঝে, হিজাবে পাওয়া গন্ধ যা সে মনে ধারণ করে, বিস্মৃত হয় আর আরও ক্ষিপ্ত হয়ে সে মনসুর হিজ্জাজকে এলোপাথাড়ি মারতে থাকে।
হাতাহাতি মারামারির এই অসম প্রক্রিয়া গড়াতে গড়াতে ইউনিয়ন পরিষদের চৌকাঠ পেরিয়ে মাননীয় চেয়ারম্যান এর টেবিলের সামনে এসে থামে। মনসুর হিজ্জাজকে নানাবিধ প্রশ্ন, সেই প্রশ্নের উত্তর, উত্তরের স্বপক্ষে যুক্তি এবং যুক্তির পক্ষে চাক্ষুষ প্রমাণ হাজির করার নির্দেশ দেয়া হয়। মনসুর হিজ্জাজ, যে পরিশ্রমী, ঢ্যাঙ্গামতোন
দেখতে, ফর্সা চামড়া, গ্রামের স্বাভাবিক অস্বাভাবিক মানুষের চাইতেও উঁচু এবং যে নদীর ধারে বউ নিয়ে একেলা থাকে এবং যে পেশাব করার সময় রগে টান খেয়েও বাকি কাজটুকু সূচারু রুপে সম্পন্ন করে, সে লাজবাব হয়ে রয়। কারণ সে তার খোদাকে সাক্ষী রেখে তার জীবিকা নির্বাহ করতো, সূর্যকে সাক্ষী রেখে সে হাল চাষ করতো চাঁদকে সাক্ষী রেখে সে তার বউকে আদর করতো। কিন্তু খোদা বা সূর্য কিংবা চাঁদ তো কোন প্রমাণ হতে পারে না। আবার এরা কেউ পাথুরিয়া গ্রামেরও না। এদের সাথে সৃষ্টির সেরা জীবের তুলনা বা সাদৃশ্যও হতে পারে না।

তাই ক্যাশবাক্স ছিনিয়ে নেয়ার অভিযোগে মনসুর হিজ্জাজের মতো ঢ্যাঙ্গা লোককে যখন দড়ি দিয়ে বেঁধে পুলিশে সোপর্দ করা হয়, তখন সবচেয়ে বেশি উল্লসিত হয় তাহের, তারপর চা দোকানদার, তৃতীয় ব্যক্তি তিনি যে এই বিচার কাজ পরিচালনা করেন আর একজন লোক সে দেলু ব্যাপারী। দেলু ব্যাপারীর মেঝো ছেলে কিন্তু সেই হিজাবখানা তার কাছে রেখে দেয় কারন সে এই গন্ধমাখা হিজাব অলৌকিক উপহার হিসেবে পেয়েছে বলেই মনে করে এবং সন্ধ্যার আগে আগে নদীর ধারে গিয়ে বসে থাকে। এদিকে তাহের একটু তাড়াহুড়ো করে দোকান লাগিয়ে বেরিয়ে আসে আর এদিক ওদিক তাকাতে তাকাতে ঘুরপথে মনসুর হিজ্জাজের বাড়ির পানে এগুতে শুরু করে। মনসুর হিজ্জাজের বাড়ির দশ কদম দূরে থাকতে তার কানে কথোপকথন ধরা পড়ে আর সে বেঁড়ার ফাঁক দিয়ে উঁকি দিয়ে দেখে চাঁদের আলোয় দেলু ব্যাপারী, চেয়ারম্যান সাহেব আর চা দোকানদার হাসিমুখে দাঁত খিলাল করে।

#basona_16082016_JK

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.