নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

উৎসের খোঁজে।

Jaliskhan

মানুষ হইবার চাই

Jaliskhan › বিস্তারিত পোস্টঃ

গল্পের জীবন

২৩ শে আগস্ট, ২০১৬ বিকাল ৩:৪৭

হারিছ দেখে শুনে নেয় আবার ভালো করে চারদিক। অন্ধকারে ওকে আবছা দেখা যায়, ভালো করে চোখ না দিলে সে দিব্যি অদেখা হয়ে থাকবে। আজ কিছু না নিয়ে গেলেই না। সুখী আর ছেলে মেয়েগুলো দু’দিন হলো না খেয়ে আছে। ছেলেমেয়েগুলো না হয়, এদিকে সেদিকে চুরি চামারি করে খেয়ে নেবে, নয়ত আমেনা বুবু প্রতিদিন ময়লা ফেলার সরকারি জায়গাটা থেকে পঁচা বাসি ফল কিংবা খাওয়া নিয়ে আসে। কাল হারিছও খেয়েছে, সেই বাসি খাবার। ধুয়ে টুয়ে নিলে খুব একটা গন্ধ করে না। সুখী মুখে দিয়ে বমি করে দিয়েছে, আমেনা বুবু তাতে অনেক রাগ করেছে। হারিছ কিছু বলে নি, কি বলবে! দেশের যা অবস্থা, এখন বড়লোকেরা রাস্তায় কম বের হয়, অনেক রেস্তোরাঁ হোটেল বন্ধ, খাওয়া দাওয়া জোগাড়যন্ত্র করা দুঃসাধ্য হচ্ছে। একবার ভাবে, বাড়ি চলে যাবে না কি? এখন তো সবাই ঢাকা ছেড়ে চলে যাচ্ছে। সুখী, তার বউ আগে যে বাসায় ‘গতর খাটাত’ এরা নাকি “আম্রিকা” চলে গেছে। বড়লোকদের গ্রামের বাড়ি মনে হয় দূরে দূরে। যাবার আগে হাজার পাঁচেক টাকা দিয়েছিল, সুখীকে। হারিছ সেখান থেকে হাজারখানেক খসিয়েছে। ক’দিন বাড়িতে আসেই নি। একটু আধটু নেশা করার অভ্যেস আছে, হারিছের। নেশা করলে হারিছ খুব সুন্দর করে, কারো পেটে চাকু সেঁধিয়ে দিতে পারে, একেবারে ক্লিনিকের মতো।

আমেনা কাজ শেষে করে বাসায় ফিরছিল, না না আমরা যেমন থাকি তেমন বাসা না। ড্রয়িং রুমের জায়গায় খানিকটা খোলা জায়গা, আর ভেতরে দুটি ঘর, সর্বসাকুল্যে আমাদের এক দুটো সার্ভেন্ট রুমের মতো, তিন চারশ স্কয়ার ফিট অনায়াসে হয়ে যাবে। সেখানে আমেনা, বলা উচিৎ বিধবা আমেনা, তার ভাই হারিছ, হারিছের বউ সুখী, আর সুখীর পেট থেকে জন্ম নেয়া একটা ছেলে, পরে তার দেখাদেখি আসা আরেকটি মেয়ে। পাঁচজন মানুষের জন্যে চারশ বর্গফুট খারাপ না একেবারে। বাচ্চাগুলো সারাদিন রাস্তায় থাকে, টুকটাক চুরি টুরি করে। সেদিনও তো এক দোকানদার ধরে মার দিয়েছিল, মেয়েটাকে। পরে আমেনার খিস্তি খেউড়ে আর গলা ফাটানো চিৎকারে পোষ মেনেছিল দোকানি। মেয়েটা এখনও আধবোজা চোখ নিয়ে থাকে। এ কদিন আর চুরি করে নি, ময়লা আবর্জনা ঘেঁটে ঘঁটে কাটিয়ে দিয়েছে। মাঝে মাঝে দামি দামি খেলনা পাওয়া যায়। তখন হারিছের ছেলে মেয়েরা সেসব নিয়ে খেলে। আমেনা তার ভাইয়ের ছেলে মেয়েকে যারপরনাই ভালোবাসে। তার স্বামী নিখোঁজ হবার পর, বিয়ে থা করে নি। ছোট ভাই আর ভাইয়ের বউ বাচ্চা নিয়েই আছে। মাঝে মাঝে বাচ্চু কমিশনার চাইলে, ওর অফিস ঘরের পেছন দিয়ে ঢুকে। সেদিনই আমেনা গায়ে সাবান দেয়, বাচ্চু কমিশনার ময়লার গন্ধ সহ্য করতে পারে না।

সন্ধ্যায় আবার বমি করে সুখী, তিন মাস চলছে তার। তারপরেও শান্তি পায় না রাতে, হারিছ হায়েনার মতো ঝাঁপিয়ে পড়ে। কোনমতে চট দিয়ে আলাদা করা ঘর। এক পাশে আমেনা বুবু আর তার ছেলে মেয়েরা থাকে, আর চটের অন্যপাশে হারিছ আর সুখী মাটিতে ঘুমায়। সেদিন স্তনের বোঁটা প্রায় ছিড়েই ফিরেছিল, হারিছ। কতবার কুত্তা আর হারামজাদা বলেছে, মনে পড়ে না। জোর করেই এই পোয়াতি শরীরে উঠে পড়ে, হারিছ। কুকুরের মতো চেটে চুটে নেয়, আর এই করতে করতে এখন দুই বাচ্চার মা, আরেকটা পেটের ভেতরে আছে। এই বাচ্চাটা হয়ে গেলেই, সুখী আত্মহত্যা করবে। আর পারে না, সে। গ্রামের বাড়িতে আর যাই হোক, দু’মুঠো খুঁজে পেতে খেতে পারত। এখানে, এই শহরের বুকে – হয়ত শরীরের বিনিময়ে নয়ত কাজ করেই খেতে পরতে হয়। হারিছ, আমেনা বুবুর স্বামী মানে তার বড় বোনের জামাই থেকে চুরি, ছিনতাই শিখেছে। তিনি ছিলেন হারিছের ওস্তাদ। শোরগোল না করে কিভাবে ফায়দা করা যায়, সেটা হারিছের, বোন জামাই’র কাছ থেকে শেখা। দুলাভাই মারা যাবার পর, হারিছ ক’দিন লোকাল বাসে হেল্পার ছিল। কিন্তু ছিনতাই করতে যে মেধার প্রয়োজন হয়, তা তারিয়ে তারিয়ে উপভোগ করে হারিছ। সুখী সেটা জানে, শুধু রাতে আদরের বেলায় কেমন যেন হিংস্রতা ভর করে হারিছের উপর। সেদিন বাচ্চাগুলোর কান্নার মাঝেও হারিছের আদর আর থামে না।

রাত ঘনিয়ে আসছে, শিকারের অপেক্ষায় ওত পেতে আছে হারিছ। ডান হাত দিয়ে পেছনে গোঁজা ছুরিটা আবার দেখে নেয় সে ঠিক আছে কি না। একটা মানুষের ধীর পায়ে এগিয়ে আসা দেখে হারিছ। আড়াল থেকে বেরিয়ে হারিছ মাথা নিচু করে হাঁটতে থাকে। কাছাকাছি হতেই বুঝতে পারে, মানুষটা একটা মহিলা। সাধারনত মহিলাদের ছুরি টুরি মারে না, হারিছ। আজও প্রয়োজন না হলে, সে রক্তারক্তি করতে চায় না। পাশ দিয়ে যাবার সময়, বাম হাতে মহিলার মাঝারি ধরনের পার্সে টান দেয় হারিছ, কিছু বুঝে উঠার আগে তাল সামলাতে না পেরে মহিলা পড়ে যায় রাস্তায়। হারিছ, পা দিয়ে লাথি মারে মহিলার মুখে। একটা গোঙ্গানি দিয়ে মহিলা অজ্ঞান হয়ে যায়। এবার আরেক হাতের লম্বামতন একটা খাম দেখে সে, নিয়ে নেয় যদি কোন কাজে লাগে। আজ রাতে বাসায় ফিরবে না সে, সুতরাং তলপেটের কিঞ্চিৎ উপরে লম্বা ছুরিটা ঢুকিয়ে দিয়ে হাল্কা করে একটা মোচড়া দেয়। সাধারনত নাড়িভুঁড়ি বেরিয়ে আসার কথা, কিন্তু থকথকে মাংসে ছুরি গেঁথে যায়। হ্যাঁচকা টানে ছুরিটা ছাড়িয়ে নিয়ে দৌড় দেয় হারিছ। এক মিনিটও লাগে না কাজটা সারতে। লোকজন ধ্বস্তাধস্তির আওয়াজ শুনে এগিয়ে আসতেই দেখে অর্ধেক শরীর রাস্তায় আর বাকি অর্ধেক নর্দমায় পড়ে আছে। চিৎকার চেঁচামেচির মাঝে, হারিছ বাচ্চু কমিশনারের অফিসের পিছন ঘরে এসে পৌঁছায়। কাপড় চোপড় ছেড়ে ছিনতাই করা মালামাল দেখে। আমেনা বুবু এখানে আসে, হারিছ জানে। একটা পঞ্চাশ হাজার টাকার চেক, খুচরো শ’পাঁচেকর মতো টাকা, একটা মোবাইল, ছোট একটা আয়না, ক’টা চুলের ক্লিপ আর দুটো সেইফটিপিন পায়। সেইফটিপেনগুলো খোলা পায়, হারিছ। একটা বাদামি খাম আঠা লাগানো অবস্থায় থাকে। আর বাকি লম্বা খাম থেকে কিছু আঁকাবাঁকা চিহ্ন আর হিজিবিজি করে কিসব লেখা থাকে। একটা প্লাস্টিকের মত দেখতে কিছু কাগজের মাঝে সাঁটানো থাকে। হারিছ একবার ভাবে এগুলা জরুরী কিছু দলিলপত্র কি না, আবার কি জেন ভেবে পুড়িয়ে ফেলে। সমস্ত ব্যাগগুলো এক জায়গায় আর টাকাপয়সা এবং চেকটা আরেকটা কাগজের ব্যাগে ঢুকিয়ে রাখে। শুধু হাতের খামটা, যেটা আঠাবদ্ধ সেটা কোমরে গুঁজে হারিছ নেশায় বুঁদ হয়।

সুখীর মেয়ে আজ ময়লার স্তূপ থেকে কতগুলো ফল এনেছে, টকটক স্বাদের। কদম ফুলের মতো কিন্তু রোঁয়া গুলো দৈর্ঘে অনেক ছোট। ভেতরে বিচির মতো আছে। সুখী দুটোর জায়গায় তিনটে খেয়ে নিয়েছিল, এখন হড়হড় করে বমি করছে। শেষেরবার বমির সময় রক্ত বেরুচ্ছে দেখে ভয় পায় সুখী। আমেনা বিবি দ্রুত ঘর থেকে বেরিয়ে হারিছের খোঁজে গলির মাথায় দাঁড়ায়। অনেক রাত, শুনশান রাস্তাঘাট, অন্যদিনের চেয়েও বেশি নিরব মনে হয় আমেনার কাছে। বাচ্চু কমিশনারের কাছে সাহায্য চাইবে কি না ভেবে, রিক্সার জন্যে ইতিউতি তাকায়। সেক্টরের শেষ যেখানে, কমিশনার অফিসের আগে কি যেন একটা জটলা দেখে আমেনা। অনেক মানুষ, পুলিশ আর সংবাদ ওয়ালাদের গাড়ির বহর দেখে, আমেনার বুক অজানা শঙ্কায় ব্যাকুল হয়ে উঠে। “ইয়া আল্লাহ! কি গজব নাজিল হইছে দুনিয়ায়! সাত মাসের বাচ্চাসহ মা’কে খুন করে কেউ”! অদ্ভূত এই ধরণের হাহাকার পাশ কাটিয়ে মিনিট বিশেক যাবার পর আমেনা রিক্সা দাঁড় করায় কমিশনার অফিসের পাশের গলিতে।

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.