![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
আমার একটা কথা ছিল! সুপ্তি'র কথা কানে যাবার ফুরসত হয় না, আজাদের। সে এখন ব্যস্ত রানিং শু'র ফিতে লাগাতে। কোথাও হয়ত ঘুরতে যাবে বন্ধুদের সাথে। কোথায় যাবে সুপ্তি আগে জানতে চাইত। এখনও জানতে চায়, কিন্তু জিজ্ঞেস করে না। একবার ভেবেছিল মেনে নেবে না, কিন্তু একলা হয়ে "সামাজিক" শিকারের পরিণত হবার কথা ভেবে নিরুৎসাহিত হয়। তবে আজাদ মানুষ হিসেবে বেশ। কূটকচালে নেই, চাইলে কোন কিছু 'না' করে না, আর অন্ততপক্ষে কোন কিছুতে বাঁধা দেয় না। বাঁধা আর কিসেই বা দেবে। সুপ্তি খুব বেশি হলে, বাপের বাড়িতে গিয়ে দু'চারদিন থাকে। নয়ত কখনও কখনও ওর কলেজ পড়ুয়া বান্ধবীর সাথে একটু কোথাও বসে ফুচকা খায়। আজাদকে নিয়ে ফুচকা খাওয়ার শখ তার ছিল বৈকি, কিন্তু ভবিতব্য, ওই জিনিস আজাদ মুখেও নেয় না। সুতরাং সুপ্তির স্বাধীনতার সুযোগ করে দিয়ে আজাদ তার মতো করে এক স্বপ্নের জগতে বাস করে। চোখের জল নাকের জলের দিন শেষ, এখন শুধু দুর্বিষহ শূন্যতা নিয়ে দিনাতিপাত করে সুপ্তি।
আজাদ বরাবরই একরোখা গোছের, কিন্তু এমন নয় যে সে যুক্তি বোঝে না। সে খুব ভালোই যুক্তি জানে, আর সে খাতিরে সে গোয়ারের মতো যুক্তি নিয়েই লড়তে থাকে। কিন্তু নিজেই সে অযৌক্তিক কাজ করে হরহামেশা। যেমন সে আজ করতে চলেছে। ছোটবেলা থেকেই আজাদ নিজের মতো করে বড় হয়েছে। সেসময় থেকেই আশেপাশে তাকানোর স্বভাব তার যুক্তি জ্ঞান কে শাণিত করেছে। 'মন্দের ভালো' - এ শব্দদ্বয়কে সঙ্গী করে আজাদ খুব নিরিবিলি ভাবেই তারিয়ে তারিয়ে এ জীবন উপভোগ করেছে। হয়ত সুপ্তির সাথে সামাজিক দায়বদ্ধতায় আবদ্ধ না হলে, সে এখনও একই রকম তারিয়ে তারিয়ে জীবন উপভোগ করত। এদিকে সুপ্তিও চাইলে হয়ত একটা স্বাধীন জীবন করে নিত। কিন্তু বিধিবাম, সুপ্তি'র সংসারী হবার ইচ্ছে আর আজাদের নরম তোষকে, তিন বেলা পেট ভরে খেয়ে কোলাহলময় সন্যাসী হবার ব্রত, অমোঘ নিয়তির ঝাপটায় এদিক ওদিক ছড়িয়ে ছিটিয়ে পড়েছে। বিয়ের চার বছর পরেও সেই টুকরোগুলো খুঁজে পাওয়া যায় নি! আজাদ আর বৃথাশ্রম করে নি, না খুঁজে পাওয়া অংশের প্রতিবিম্ব মস্তিষ্কের কোন নিওরনে বন্ধী করে দিব্যি কাটিয়ে দিচ্ছে।
সকাল বেলা সুপ্তি যখন চান সেরে চুল শুকোচ্ছে, সাতটা বাজে মনে হয়। আজাদের জলতেষ্টায় ঘুম ভেঙ্গে গেল। আধ চোখ বুঁজে, আজাদ সুপ্তিকে পানি দিতে বলে উঠে বসে। জানালা দিয়ে সকালের কাঁচা রোদ শ্যামলাবরণ সুপ্তির গায়ে আলোছায়া দিয়ে যায় যেন আর আজাদ মুগ্ধ বিস্ময়ে ভাবে, এ জীবনে যুক্তিরও অধিক কিছু থাকে তা নইলে পাহাড়, নদী, ঝর্ণাধারা, সাগর কিংবা হাওড় বাওড়ের দেশে আর কিইবা ভালো লাগার ছিল। ছিপ নিয়ে একদিন নদীতে কাটানো আনন্দ হয়ত খুঁজে পাওয়া যাবে না অন্য কোন নাগরিক কোলাহলে, নিঝুম দ্বীপে দেখা হবে না হয়ত কোন ডাগর হরিনী'র। শ্বাসমূলে বসে আর হয়ত শ্বাস নেয়া হবে না কোন বক পাখির, কামটের কামড়ে পায়ের আঙ্গুল হারানো দুলাল মাঝি নৌকা বাইতে বাইতে আর বলবে না সেই সাহসী যুদ্ধের কথা। এসবই হবে স্মৃতি। শব্দে শব্দে গেঁথে এখানে ওখানে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকবে আমাদের সম্পর্ক। ঢকঢক করে গিলে গেলাসটা সুপ্তির হাতে ফেরত দেয়, আজাদ। আরামে চোখ বোঁজে। সুপ্তি শেষবারের মতোন নিজেকে আয়নায় দেখে নেয়। সারাদিনে কি আর সময় হবে এ সময়টুকুর। একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে সুপ্তি কিচেনে ঢোকে।
পৌনে আটটায় নচ্ছার মোবাইল বেজে উঠলে আজাদের মধুনিদ্রার সমাপ্তি ঘটে। তড়াক করে লাফানোর কথা থাকলেও দু'হাত কপালে নিয়ে হাতের চেটো উলটো করে আরো মিনিট দুয়েক শুয়ে থাকে। তারপর খুব দ্রুত উঠে পড়ে সে। মশারি খুলে, কাঁথা সহ ভাজ করে রাখে আলমারিতে। মিনিট পাঁচেকের মাঝে গোসল সেরে নিয়ে জামা কাপড় পরে আজাদ। খাকি কালারের প্যান্ট আজাদের বেশ প্রিয়, আর একটা পাতলা সুতির শার্ট গায়ে চাপিয়ে জুতোতে পা গলায় সে। সুপ্তি একবার উঁকি দিয়ে দেখে যায় আজাদকে। রাতের থেকে যাওয়া মাংসের ঝোল, হাতে সেঁকা রুটি আর অমলেট করে সুপ্তি আজাদকে দিয়ে, যায় চা বানাতে। সুপ্তি'র চা বানানোর বিশেষ সুনাম আছে আগে থেকেই। আজাদও চা খেতে ভালোবাসে। আজাদ গোগ্রাসে গিলে, তাকে যেতে হবে অনেক দূরে। আজ আরেকটা যুক্তির লড়াইয়ে হারতে যাবে জেনেও, আজাদ পিছুপা হয় না। মানুষের চিরাচরিত প্রশ্ন করার অভিপ্রায় আর উত্তর খোঁজার মানসিকতা, তাদের যুগে যুগে প্রতিবাদী করেছে। আর যৌক্তিক কারনেই আজাদ আজ নৈরাজ্যবাদী হতে চলেছে। কর্তৃত্বকে চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিতে চায় সে, ভুলে ভরা ঘুণে ধরা সমাজকে ঝাঁকিয়ে দিতে চায় আজাদ আর আজাদের মতো, কাছাকাছি অথবা দূরতম মানসিকতার আরো কিছু মানুষেরা। আজ আর বাছাই করার সময় নেই, আজ অপেক্ষার প্রহর গত। যে করেই হোক, বাঁচাতে হবে এ ধরণীকে। চা নিয়ে এসে সুপ্তি খাটের কিনারায় বসে। আজাদ ফিরতে দেরি হবে বলে চুমুক দেয় চায়ের কাপে। জুতোর ফিতে বেঁধে নেয় আজাদ চা খাবার ফাঁকে। সুপ্তি কিছুক্ষণ চা খাওয়া দেখে আনমনে। আজাদের দিকে তাকিয়ে সুপ্তি গাঢ় কন্ঠে বলে, "আমার একটা কথা ছিল"।
আজাদ চায়ের কাপে শেষ চুমুক দিয়ে উঠে দাঁড়ায়। কখনও যা করে না আজ তাই করে আজাদ। সুপ্তির কপালে চুমো খায়, আজাদ। অনভ্যস্ততা বাঁধা হয়ে দাঁড়ায় না আজ কারুর মাঝে। খুব স্পষ্ট করে আজাদ বলে "যদি সুন্দরবন বাঁচে, তবে, তোমায় নিয়ে সে এক মায়াবী ডাগর হরিন দেখিয়ে আনব। আর রোদ পোহানো ছোট একটা বাচ্চা কুমিরের গায়ে বসা বকের সাথেও পরিচয় করিয়ে দেব। দেখো সত্যি বলছি, তোমার অনেক ভালো লাগবে"।
©somewhere in net ltd.