![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
বাসে বা ট্রেনে করে যেতে যেতে মহাসড়কের পাশে হঠাৎ করে উঁকি দেয় কোন রাস্তা। একটু খেয়াল করলে মনে হয় যেন ডাকছে তার বুকে পদচিহ্ন এঁকে দেবার জন্যে। মহাসড়ক থেকে মোড় নিয়ে কিছুদূর গিয়ে খানিকটা উঁচুতে সটান চলে গেছে না দেখার দেশে। নেমে পড়ে দেখে আসার মন চায় কত নাম না জানা পথিকের।
একদিন কি মনে হলো এক পথিক নেমে পড়লো অদেখাকে দেখার বাসনায়।
দুপাশে ফসলি জমি ছাড়িয়ে রাস্তাটা উঁচু থেকে উঁচু হতে লাগলো যেন নিজে নিজেই। পথিক ততক্ষণ শ্রান্ত হলো না, যতক্ষণ না একটা খাবারের দোকান চোখে পড়লো। সাঁকো পেরিয়ে ঘাটের পাশ ঘেঁষে বাজার। বাজার বলতে একটা বড় বট গাছ আর তার চারপাশে সারি সারি দোকান। লাগোয়া নদী আর কাঁঠের সাঁকো। সাঁকো পেরুলেই গ্রাম, যার নাম দেশ।
গ্রামের নাম দেশ। কাছাকাছি একটা নদী আছে, ছোটো কিন্তু সবসময় ভরা থাকে। শ'চারেক মানুষ, থাকে এই গ্রামে। জীবিকানির্বাহে এরা স্বয়ংসম্পূর্ণ।
একশ ছাপ্পানটা বাড়িতে এই মানুষগুলো গাদাগাদি করে থাকে। সপ্তাহে দুই দিন সবাই আসে হাটে, সবাই বলতে একদম সবাই। এই যে সেদিন যে বাচ্চাটা জন্ম নিলো সেও আসে কারো না কারো কোলে চড়ে।
পথিক চারিপাশে তাকিয়ে দেখে নেয় অচিন গ্রাম 'দেশ' এর কাণ্ডকারখানা। একটা তাঁতের লুঙ্গী পরা মানুষ এসে এক গেলাশ জল দিয়ে যায়। কেমন যেন নীলাভ সে জল। এক ঢোকে গিলে ফেলে পথিক সে জল। কেমন মিষ্টি স্বাদ আর কি সুন্দর গন্ধ তাতে।
দৃষ্টি সঙ্কুচিত হয়ে আসে পথিকের, সব কেমন যেন একাকার হয়ে যায় তার কাছে। ঝাপসা চোখে মনে হয় যেন ঝড় উঠেছে। পথিক এক পা এক পা করে এগোয়। একটা বাচ্চা ছেলেকে ছুটে যেতে দেখে পথিক, পেছন পেছন মাকেও দেখা যায় ছুটছে। আবার সব অন্ধকার।
পথিকের যখন চোখ খুলল তখন সে আধশোয়া হয়ে আছে বিছানায়। মেঝেতে তোষক পাতা, একটাই বালিশ আর নকশা করা একটা বিছানার চাঁদর। একটা জগ ঢাকা দেয়া আছে সুপারির ডালের গোড়া কেটে, সাথে এলুমুনিয়ামের গেলাশ।
ঢকঢক করে গলায় গড়িয়ে যায় সে অদ্ভূত জলের স্রোত। তারপরে কি যেন একটা ভারি কিছু চেপে বসে তার দু'চোখে। চোখ বন্ধ করে মনে করে কি ঘটেছিলো, কেনইবা এখানে শুয়ে আছে।
দরজা খোলার আওয়াজ পায় পথিক, আসে নূপুরের ঝঙ্কার দিয়ে কেউ। দক্ষিণের দরজা, সূর্যর আলোয় চোখ ধাঁধিয়ে যায় পথিকের, বার কয়েক চেষ্টা করেও চেহারা দেখতে পায় না। কিছু খাবার থালায় করে রেখে দিয়ে চলে যায় আবারো নুপুরের ঝঙ্কার তুলে।
পথিক পেট ভরে খেয়ে নেয়, এমন কখনও খেয়েছে কি না ভেবে দেখে, কিন্তু বেশিদূর সে ভাবতে পারে না, মস্তিষ্কের ধারণক্ষমতা কম নয়ত অভিজ্ঞতা পিছু পা এখানে। হাত ধোবে কোথায়, ভাবতে ভাবতেই পথিকের আঙ্গুলে লেগে থাকা খাবারের টুকরোগুলো মিলিয়ে যেতে থাকে।
দরজা খুলে বেরিয়ে ধাতস্থ হতে সময় লাগে পথিকের। আলোটা সয়ে নিয়ে সামনে তাকাতেই দেখে মৃদু ঢেউয়ের তালে তালে একটা নদী তাকে দেখে সোজা চলে গেছে মুখ লুকিয়ে।
পথিক ধীরে সুস্থে নদীর ধারে গিয়ে বসে। বড় ঘাসগুলো যেন মুড়ে গিয়ে বসার জায়গা করে দেয়। কতক্ষণ বসে থাকে জানে না পথিক। একটা কণ্ঠস্বর চমকে দিয়ে জিজ্ঞেস করে, "কেমন লাগছে"?
প্রশ্ন কিংবা উত্তর কারো জন্যেই কেউ অপেক্ষা করে না। পথিক আঁজলা ভরে নদীর জল ছিটোয় মুখে। ধীরে ধীরে নদীর পানি কমতে থাকে। শেষের ক্ষীণ স্রোতের রেখা মিলিয়ে যেতে চেয়ে দেখে একটু দূরে গ্রামের সব মানুষেরা এসে ভীড় করেছে।
সে বসা থেকে উঠে এগোয় ভীড়ের দিকে। কেউ তার দিকে দৃকপাত করে না। টুকরো টাকরা কথা শোনা যায়।
বিকেল গড়ালেই কুয়াশার একটি ধূসর স্তর ছেয়ে যায় দেশে। সবাই আহাজারি করে উঠে, একমত হয় যে করেই হোক নদীকে খুশি করতে হবে। সন্ধ্যার পর সবাই এসে বসে নদীর তীরে। নৈবেদ্যের ডালায় যার যার সামর্থ্য নিয়ে আসে নদীকে খুশি করবে বলে।
পথিক হাসে, তার অট্টহাস উপহাস করে যেন দেশের লোকেদের। পথিক বলে, "হে দেশবাসি, তোমরা কি জানো না, কি করে এই নদী তৈরি হয়েছে, তোমরা কি অবগত আছো কি করে এই জলের সৃষ্টি? এসবই সাধারণ ব্যাপার, এ নিয়ে হা হুতাশ করার কি আছে?"
বস্তত পথিকের কথা কেউ বুঝতে পারে না অথবা নদীর এই সৃষ্টি আর জলের ধারা নিয়ে করা বক্তব্য কেউ আমলে নেয় না। কিন্তু তারা যেটা করে, সবাই পথিককে নিয়ে রওনা হয় নদীর পাড় ঘেঁষে, লণ্ঠন জ্বালিয়ে।
অন্ধকারে খুব বেশি দূর কিছু দেখা যায় না। নানা পথ মাড়িয়ে, গাছ গাছালি এড়িয়ে একটা বিশাল প্রান্তরে এসে হাজির হয় সবাই। একটা পাহাড়ের মতো কি যেন দেয়াল হয়ে দাঁড়য়ে থাকে গন্তব্য আর ইচ্ছাশক্তির মাঝে।
একসময় তারা পথ খুঁজে পায় উপরে উঠার। ছোটরা নিচে রয়ে যায়, বড়রা সাবধানে উঠতে থাকে আরো উপরে। একসময় যখন রাতের তারার আলো মিইয়ে আসে, একটা চাতালে এসে সবাই হাফ ছাড়ে।
বেলা গড়ালে দুপুরের দিকে সবাই একযোগে পাহাড়ের উপরের ঢালে এসে দাঁড়ায়। বিস্তৃত সবুজ চারিদিকে, নয়নাভিরাম সুন্দরের চোখ ধাঁধিয়ে দেয়া দৃশ্য দেখে সবাই শ্রান্তি ভুলে যায়। সারি সারি পাহাড়ের ফাঁকে একটু একটু করে তিরতির করে ফোটা ফোটা জল গড়িয়ে পড়তে থাকে।
আরেকটু এগুলে দেখে বিশাল দৈত্যাকায় কিছু প্রাণী ছোট ছোট বাচ্চাদের সাথে জলকেলি করছে। জল যেন গড়িয়ে না পড়ে, তাই তারা পাথর দিয়ে আটকে রেখেছে ঝর্নাধারা।
অকস্মাৎ দেশবাসী মাতম শুরু করে, আর দৈত্যদের দৃষ্টি আকর্ষিত হলে, তারা বিশাল থামের মতো হাত পা চালিয়ে আসে দেশবাসীর কাছে। একজন কেউ উঠে দাঁড়ায় দেশবাসীর মধ্য থেকে, কিছু শব্দের বিনিময় হয় যেন বিশাল হাতুড়ি দিয়ে ইটকে যেমন টুকরো টুকরো করা হয় তেমনভাবে।
সেই লোকটি আঙ্গুল উঁচিয়ে দেখায় পথিককেকে, তারপর আবার মাটিতে সবুজ ঘাসের উপর ঝুঁকে পড়ে বিড়বিড় করতে থাকে।
দৈত্যদের শব্দ যেন বজ্র নিনাদ, কান ফাটা চিৎকার দিয়ে উঠে কেউ, আর ছোট একটা দৈত্য পথিককে খুব কাছ থেকে দেখে আর তার শরীরের গন্ধ, দৃষ্টির তীব্রতা আর সেসব হতে জাত অজানা ভয়ের আশঙ্কায় পথিক গোঙ্গাতে থাকে।
একসময় জ্ঞানহীন পথিক দূর হতে শুনতে পায়, কেউ ডাকছে তাকে, নূপুরের শব্দে ধীরে ধীরে জ্ঞান ফিরে পেতে থাকে পথিক আর শুনে কেউ বলছে, "এখন কেমন লাগছে"?
ধড়ফড়িয়ে পথিক উঠে বসে, সারা শরীর ভিজে গেছে জলে। কেউ একজন হাত বাড়িয়ে দিয়ে টেনে তোলে। বাসের হর্ন আর যাত্রীদের চেঁচামেচিতে কিছুটা অপ্রস্তুত বোধ হলেও, নিজের সিটে বসে পথিক আবার ফিরে তাকায় সেই রাস্তায়।
২| ৩০ শে আগস্ট, ২০১৬ সন্ধ্যা ৬:১৭
Jaliskhan বলেছেন: কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করছি। কোথাও কোন ভুল ত্রুটি হলে বলবেন।
©somewhere in net ltd.
১|
৩০ শে আগস্ট, ২০১৬ সন্ধ্যা ৬:০৫
দ্যা ফয়েজ ভাই বলেছেন: সত্যিই অসাধারণ ভাবে ফুটিয়ে তুলেছেন।ভালো লাগলো।