![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
কি রে চুপচাপ কেন?
নূরা পাগলা চুপচাপ থাকে কিছু সময়। আমার দিকে তাকিয়ে বলে, এমনিতেই! আপনি কবে আসলেন?
আমার দিকে জিজ্ঞাসার তীর ছুঁড়ে দিয়ে একটা বাঁশের কঞ্চি দিয়ে পুকুরের পানিতে নাড়ায়। হাল্কা একটা ঢেউয়ের রেখা উছলে উঠে বৃত্তাকার হয়ে ছয় সাতটা ছোট সংস্করণের ঢেউ তৈরি করে আবার মিশে যায়।
গতকাল রাতে এসেছি, বুঝলি! আর ভালো লাগে না! ওখানে গরম, এখানেও গরম! একেবারে জিলাপি হয়ে গেলাম রে! খালি রস ঝরে! বৃষ্টি হয়েছিলো না কি?
নূরা পাগলা কথা বলে না, চুপচাপ অর্থহীনভাবে পানিতে ঢেউ তুলে যায়। একে তো গরম, তায় আবার নূরা পাগলার অমনোযোগ বিরক্তি ধরিয়ে দিলো।
বাড়িতে আসি মাঝে মাঝে। বন্ধুদের মধ্যে কেউ এখন আর তেমন একটা আসে না জীবিকা ছেড়ে। তাই এখানে এই পুকুর পাড়ে একটা কুকুর, একটা কতবেল গাছ, তিনটে বাড়ি, নূরা পাগলা আর আমি বসে থাকি।
কি রে বললি না, বৃষ্টি হয়েছে কি না!
বাঁশের কঞ্চিটা ছুড়ে ফেলে নূরা পাগলা এবার আমার দিকে তাকায়। ফ্যালফ্যাল করে না একেবারে চোখ বড় বড় করে আমাকে দেখে আবার কিছু সময়, তারপর বলে ভাই আপনার ওজন কতো?
খানিকটা মেজাজ খারাপ হতে চাইলেও, আপাতত বুক পকেটে বোতাম আটকে রেখে দিয়ে বলি, ছেষট্টি কেজি।
দাঁতের মাড়ি বের করে কুৎসিত একটা হাঁসি দেয়, নূরা পাগলা। কালচে মাড়ি আর সাদা ফকফকে দাঁত দেখলে মনে হয় একটা মুগর দিয়ে এই কালো সাদাকে ছেঁচে দেই। কিন্তু পরিপাটি বোনা দাঁতের সারির দিকে তাকালে নিজে দাঁতগুলোকে মনে হয় ঢাকার রাস্তাগুলোর মতোন, সকাল বেলা ঝাড়ু দেয়ার আগের অবস্থা।
এই শরীরে আপনার ওজন তো অনেক? বাটখারা দিয়া মাপছিলেন তো?
আমার অভ্যেস হয়ে গেছে নূরা পাগলার এইসব গা জ্বালানো কথা শুনতে শুনতে। তাই দু'কান দিয়ে শুনে মুখ দিয়ে বের করতে করতে বলি, তোর ওজন কতো?
আমার জিজ্ঞাসায় প্রচ্ছন্ন বিদ্রুপ টের পেলেও, তার হাসিটা আকর্ণবিস্তৃত হয়ে গরমের আদ্রতা অসহনীয় করে তোলে। একবার ভাবি বাসায় চলে যাই, কি মনে করে একটা সিগারেট ধরিয়ে নূরা পাগলার পাশে বসি। হাতে একটা কংকর নিয়ে পুকুরে ছুড়ে মারতেই, অগুনতি ঢেউ লাফিয়ে লাফিয়ে ক্লান্ত হয়ে মিশে যায় ওপাড়ে।
আহাহা! করলেন কি? নূরা পাগলা চিৎকার দিয়ে উঠে।
আমি কিছুটা হলেও ভয় পাই যে ওর পাগলামি আবার বেড়ে গেলে হয়তো আমাকেই পুকুরে ঠেলে দেবে।
মাছগুলা ঘুমাইতেছিলো আর আপনে মিঞা করলেন কি?
আমি খর চোখে নূরা পাগলার দিকে তাকিয়ে প্রশ্ন করি, "মাছগুলো ঘুমাচ্ছিলো মানে কি"? ফাজলামো হচ্ছে!
নূরা পাগলা আমার প্রশ্নের জবাবের ধারে কাছেও যায় না। ছুড়ে ফেলা কঞ্চিটা আবার জোগাড় করে আনে আর বলতে থাকে, "সেই দুই ঘন্টা ধইরা মাছগুলারে ঘুম পাড়াইতাসি, আপনে আইসা ঝামেলা কইরা দিলেন। এখন আবার ঘুম পাড়াইতে অনেক সময় লাগবো"।
নূরা পাগলার বিরক্তিকর কথা শুনে আমার গরমে চেহারা লাল হয়ে যায় আর আচ্ছা করে ঝাড়ি দেবার লোভ সংবরণ করে বলি, "তাহলে কঞ্চি দিয়ে নাড়াচাড়ার ব্যাপারটা কি ছিল, সুড়ুসুড়ি দেয়া"?
নূরা পাগলা গম্ভীর মুখে বলে, "পোলাপানরে যেমন দোল দেওন লাগে, তেমনি মাছেগরেও একটু ঢেউ না দিলে ঘুম আসে না। আপনি এবার যান, ম্যালা তং করছেন"।
আমার ভ্যাবাচ্যাকা খাওয়া চেহারা দেখে নূরা পাগলার দয়া হয়, সে এবার আমাকে বুঝিয়ে বলে, "ভাই, তনু গেলো, ঢেউ উঠলো। তারপর মনুরে দিয়া আমাগোরে ঘুম পাড়াইলো। জংলী জানোয়াররা শহরে হামলা করলো, সুন্দরবন এর হিসাব আইলো, এইবার রিশার লাইগা দরদ উথলাইয়া উঠবো আপনাগো আবার ঘুম পাড়াইবো। তয় এইবার ঘুমাইলে কিন্তু বিদ্যুতবিহীন ঘুমাইতে অইব"।
আমি তাচ্ছিল্যের হাসি দেই নূরা পাগলার কথা শুনে।
নূরা পাগলা আরো ক্ষেপে যায়। বলতে থাকে - "ফাঁকে কিন্তু সিকিউরিটি গেজেট বেইচা দুই বিলিয়ন ডলার হাতাইয়া নিলো কারা যেন, আবার এখন আমাদের মাছেগো মতো ঘুম পাড়াইয়া সুন্দরবন একক মালিকানায় পাশের দেশে যাইব, আমরা ভিসা লাগাইয়া সুন্দরবন দেখতে যামু"!
আরো আছে, এখন আর বাংলা বাংলা বইলা মুখে ফেনা তুলতে পারবেন না। পশ্চিমের লোকেরা ওগো ভাষার পেটেন্ট করাইয়া নিবো, 'বাংলা' আর আপনাদের নাই, আপনারে আর আমারে দেখেন আবার না উর্দুতে কথা কইতে হয়, যদিও সেইটা মন্দ কিছু না, আগে তো কইতামই "।
ওর কথা আর শেষ করতে দিলাম না, শুধু ঝাড়ি দিয়ে বললাম - আবার এইসব কথা বললে তোর মাছের সাথে সাথে তোকেও ঘুম পাড়িয়ে রাখব বেটা।
নাহ! গরমে ওর পাগলামি বাড়ছে! নাইলে আমার টাকায় চলে আমার পরিশ্রমের কামাই খেয়ে, আমাকেই জ্ঞান দেয়।
তবে ইদানিং এমন তো হচ্ছেই অহরহ।
©somewhere in net ltd.