নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

উৎসের খোঁজে।

Jaliskhan

মানুষ হইবার চাই

Jaliskhan › বিস্তারিত পোস্টঃ

কেমন করে

০৩ রা সেপ্টেম্বর, ২০১৬ রাত ৯:০১

চোখ ঢুলুঢুলু করে টুলে বসে ঝিমুচ্ছিলো মহব্বত। হর্নের যাচিত শব্দে তন্দ্রা হতে উঠে গেট খুলে দেয় সে। তিনতালায় এক দম্পতি থাকে, স্বামী স্ত্রী আর দুবাচ্চা। লোকটা খুব বড়জোর চল্লিশের আশেপাশে বয়েস নিয়ে লুকোচুরি খেলছে। ফর্সা গায়ের রঙ, বেশ লম্বা, ছোট করে ছাটা চুল। সারাদিন বাসায় থাকে, সন্ধ্যার পর বেরিয়ে ফেরে সেই রাতে। 'বদমেজাজি অতনু' বলে পাঁচ সাত বছর আগেও এক নামে চিনতো লোকে।

অতনু'র স্ত্রী সালমা সরকারি চাকুরে। ভোরে উঠে ছেলেমেয়েগুলোকে তৈরি করে দিয়ে ছুটতে হয় অফিসের গাড়ি ধরতে। অতনু আজ অনেক দিন থেকেই ভোরের আলো গায়ে মাখায় না, তা না হলে সালমাকে অফিসে নামিয়ে মেয়েকে স্কুলে দেয়াটা এমন কিছু নয়। জেদ ধরে রেখে চাকুরি ছেড়ে দিয়ে বাসাতেই শুয়ে থাকে সারাদিন।

একটা পায়ে সমস্যা ছিলো বলে অতনু হাঁটতে পারে না ঠিকমতো। অফিসে ছুটোছুটির কাজটা সে এড়িয়ে যেতে পেরেছিলো বাবা বড় সরকারি চাকুরে ছিলেন বলে। বাবা সরকারি থেকে বেসরকারি হলেন, অতনু'র ছুটোছুটি বেড়ে গেলো। আর সেই বদৌলতে এখন সে স্থির সময়ে অবস্থান করে।

মহব্বত নানান কিসিমের মানুষ দেখেছে গত পঁচিশ বছরে। তিনতালায় থাকা অতনুকে সে এখনও পেপারের মতো খুলে খুলে পড়তে পারে নি। লোকটা এমনিতে ভালো, নরম মনের। যখন তখন হাত পাতা যায়।

গেলো মাসেও জ্বর হয়েছিলো বলে অতনু হাজার দুয়েক টাকা দিয়েছিলো। মহব্বতের পাঁচশই খরচ হয় নি, বাকি টাকা বুক পকেটে ফুলিয়ে সে এখনও পান চিবোয়। সালমা এসব আশকারা মোটেই পছন্দ করে না। অতনুকে কত সাবধান করেছে, এসব লোকজনদের যেন মাথায় না তোলে।

অতনু আবার পুরণো অভ্যেসে ফিরে গেছে, দেদারসে মদ খাচ্ছে। বছর খানেক আগেও এ নিয়ে কত ঝগড়া করেছে, শালিস হয়েছে। অতনু তার মতোই আছে। কারো সাথে কিছু বলে না, কোথাও গেলেও চুপ করে কোনে বসে থাকে। কেন ওমন করে সালমা জানে না। কিন্তু কেন যেন সে অতনুকে ছেড়েও যায় না।

সালমা চাইলে চলে যেতে  পারে, নতুন করে নিজের মতো থাকতে পারে, সাজাতে পারে সব, কিন্তু ক্লান্তি লাগে এসব ভেবে। এখন আর ইচ্ছাশক্তিও কাজ করে না। বেঁচে থাকার অনুপ্রেরণা কেমন যেন ভোঁতা, নিজের সাথে নিজের অহেতুক বোঝাপড়ায় ক্লান্ত সালমা।

তাও সেদিন রোববার ছিলো, জেগে দেখে সাড়ে সাতটা বেজে গেছে। সোয়া আটটায় অফিসের গাড়ি আসবে, হাতে একদম সময় নেই। কোনমতে ঠেলে ঠুলে অতনুকে উঠিয়ে দিয়ে মেয়েকে স্কুলে পৌঁছে দিতে বলে সালমা ঘর ছাড়ে।

অনেকদিন বাদে অতনু সকালে উঠেছে আজ, তীব্র বিরক্তি, মাথা ধরা আর খঁচে যাওয়া মেজাজ নিয়ে রুম থেকে বেরিয়ে দেখে মেয়ে স্কুলে যাবে বলে বসে আছে। হাত মুখ ধুয়ে মেয়েকে নিয়ে বের হয়। সকালবেলায় মহব্বতকে না দেখতে পেয়ে অতনু'র মেজাজ বিগড়ায়। গেট খুলে গাড়ি বের করে সেভাবেই রওনা দেয় স্কুলের উদ্দেশ্যে।

বাসার মোড় ঘুরতেই সালমার ফোন পেয়ে মেজাজ যখন সর্বোচ্চে, তখন মেয়ের, "বাবা, তুমি কি বিরক্ত! আমি একা একাও যেতে পারি স্কুলে"! শোনার পর অতনু'র মনে হলো হ্যাংওভার কেটে গেছে।

জসিমউদ্দিন পেরিয়ে গাড়ি যখন বামে মোড় নিয়ে পশ্চিমে এগুচ্ছে ছোটখাটো একটা জটলায় আর এগুতে না পেরে ঠান্ডা হওয়া মেজাজ যেন আবার চড়তে থাকে অতনু'র।

ঘটনা কিছুই না, এক লোক অজ্ঞান হয়ে পড়ে আছে আর সময়খোর বাঙ্গালি তাকে ঘিরে মতামতের ফোয়ারা ছুটাচ্ছে। অতনু ভীড়খোর এক লোককে জিজ্ঞেস করে কি হয়েছিলো?

- "অজ্ঞান করে গেছে ভাই। সি এন জি ড্রাইভার। কারা যেন বেহুঁশ করে সিএনজি নিয়ে পালাইছে। এক হাজার টাকার ভাংতি দিতে ড্রাইভার নামছে, পেছন থেকে অজ্ঞান করে ভাগছে"।

অতনু'র মেজাজ আরো গরম হয়, স্কুলের দেরি হয়ে যাচ্ছে। একবার গাড়ির দিকে তাকায়। কেমন যেন হতাশা ভর করে আচমকা জানান না দিয়ে। ভীড় ঠেলে জ্ঞান হারানো লোকটার কাছে যায় সে।

- সবাই কি মজা নিচ্ছেন না কি? একটু পানিও কি ছিটানো যেতো না? এই ধরেন তো কেউ আমার গাড়িতে উঠান। চিৎকার করে উঠে অতনু।

অতনু বিরক্ত হচ্ছে, এইসব লোক কতক্ষণ ধরে না জানি দেখছে, অথচ কেউ একটু সাহায্য করবে না। ভীড়ের মধ্যে থেকে একজনকে নিয়ে অতনু অচেতন লোকটাকে গাড়ির পেছনে নিয়ে বসায়। সিট বেল্ট বেঁধে সোজা ক্রিসেন্ট হাসপাতালে নিয়ে ভর্তি করিয়ে দিয়ে নিচে নেমে একটা সিগারেট ধরায়।

তিতকুটে হয়ে আছে মুখের ভেতরটা। সিগারেটের ধোঁয়ায় আরো বিরক্ত লাগে। রোদের তেজ আছে বেশ। গাড়িতে বসা মেয়ের দিকে চোখ যায় অতনু'র। সিগারেটটা পিষে ফেলে, গাড়িতে গিয়ে বসে।

- বাবা, লোকটার কি হয়েছে?

- অজ্ঞান হয়ে পড়ে আছে। ঠিক হয়ে যাবে। স্কুলে নামিয়ে দেই চলো।

- বাবা, আজ আর স্কুলে যেতে মন চাচ্ছে না।

গাড়িটা একটু জোরে ব্রেক করে অতনু। একে তো উটকু ঝামেলা, তার উপর আবার মেয়ের স্কুলের দেরি। মেয়ের দিকে তাকায় সে, কতদিন দেখেনি এমন ভাবে। সালমার মতোই হয়েছে।

শেষ কবে বাবা মেয়েতে কথোপকথন হয়েছে অতনু স্মৃতি হাতড়াতে থাকে। একটা অনুতপ্ত দীর্ঘশ্বাস ফেলে গাড়ি নিয়ে সোজা এগোয় বাসায়।

মহব্বত সচরাচর অবাক হয় না, আজ যেমন হতে হলো। অতনুকে দিনে দুপুরে গাড়ি নিয়ে ঢুকতে দেখবে এমনটা সে ভাবনাতেও আনে নি। তাই যখন অতনু একের পর এক হর্ন দিচ্ছে, মহব্বত ঘোর লাগা মানুষের মতো তাকিয়ে ছিলো।

ঘরে ফিরে বাবা মেয়ে নাস্তা খেতে বসে। কি একটা গভীর মমতায় অতনু নিশ্চুপ হয়ে মেয়ের খাওয়া দেখে।

সেদিন অতনু হাসিমুখে ঘর স্বাভাবিক করে রাখে। রাতে সবাই মিলে খেয়ে এসে একসময় ঘুমিয়ে পড়ে। কে জানে হয়তো নতুন সম্ভাবনা উঁকি দেয় বলে। পরেরদিন দুপুরে হাসপাতাল থেকে ফোন আসে।

দুপুরে বেরুতে মহব্বতকে সাথে নিয়ে চলে অতনু। হাসপাতালের আট হাজার টাকা বিল চুকিয়ে আরেকটা সিএনজি ডেকে মহব্বতের  সাথে তুলে দেয় অতনু লোকটাকে। এক হাজার টাকার একটা নোট গুঁজে দেয় মহব্বতের পকেটে।

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.