শেষ বিকেলে ছুটির দিনে

০৯ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৬ সকাল ১১:৪১

বাসায় ফেরার রাস্তা এলোমেলা হয়ে যায় যখন ছুটির দিনগুলোতে আর একই রাস্তায় ফেরা হয় না। পৃথিবীর সমস্ত শৃঙ্খল ভেঙ্গে পড়ে এদিন। রোদের তাপ যত মিইয়ে আসে উজ্জ্বলতা যেন পরিপূর্ণতা লাভ করে। অনভ্যস্ত চোখে সে উজ্জ্বলতা আমি হাত দিয়ে আড়াল করি না। সেই মিইয়ে যাওয়া রোদ গায়ে মাখিয়ে উজ্জ্বল হতে উজ্জ্বলতর হই আমি।

এরকম কোন দিনের পরিচিতিরা স্বভাবে বাকি দিনগুলোর পরিচিতদের চাইতে ভিন্নতর হয়। এরা সন্ধ্যা ঘনালে আদুরে ভঙ্গিতে বেরিয়ে পড়ে স্বাধীনতা খুঁজতে। তার আগেই, এদের সাথে দেখা করার আগেই, আমি পেরিয়ে যেতে চাই যতদূর সম্ভব আলোর উজ্জ্বলতাকে গায়ে মাখিয়ে ওদের এড়াতে। তাই আমি সূর্যর দিকে তাকিয়ে হাঁটি।

কচিত ভারী মেঘেরা রেগেমেগে গেলে, সূর্যর আলো যখন মন খারাপ করে আর আমি দেখতে পাই একটা আঁধারের সামনে থেকে কে যেন আসে। আমি জানি সে তুমিই। কিন্তু ভুল ভাঙ্গে, অন্য কেউ অন্য সময়ের কেউ যেন ক্লান্ত শরীর নিয়ে পাশ কাটিয়ে যায়। আমি আবার হাঁটি।

আলোর প্রখরতা ফিরে এসে আমাকে আলোকিত করে প্রখরতর করে তোলে আর এক দৃপ্ত পদক্ষেপে আমি ফিরতি পথিকের চোখে ঈর্ষা দেখি। আমার ভালো লাগে। প্রেমিক প্রেমিকার ঝটপট চুমো আঁকা আঁকিও আমার দৃষ্টি এড়ায় না, যেমন এড়ায় না একটা কাকের উদাস চোখে তাকিয়ে বৈদ্যুতিক তারে বসে থাকা।

আমি অবিরাম হাঁটি। এক রাস্তা থেকে আরেক রাস্তায়। নিজের বানানো গোলক ধাঁধায় ঘুরি। আমি দেখি নীল চূড়ি আর আকাশী শাড়িতে একজন নারীর উষ্ণ সৌন্দর্য। মনে হয় এ কি তবে আজ আমার জন্যে এসব আয়োজন। জানি মিথ্যে স্তূতি, তবুও ভাবি, ভাবতে ভালো লাগে।

সে পথে খুনসুটি দেখি, দেখি কোন বাসার বারান্দায় উঁকি দেয়া এক টুকরো উদাসীনতা। এক বৃদ্ধার বারান্দা থেকে শুকনো কাপড় ঘরে নেয়াও দেখি। আরো দেখি ময়লা ফেলতে আসা শ্রমজীবী দাসের এক টুকরো লোভনীয় হাসি, সে হাসি মুক্তির হাসি, সে হাসি স্বাধীনতার হাসি। ক্ষণিকের সে হাসি ঠোঁটের কোনায় মিলিয়ে যায় ফিরতি সিঁড়িতে দাঁড়িয়ে।

শেষ আলোর উজ্জ্বলতার সাথে দমকা হাওয়া আর বৃষ্টি নামে, ফোঁটাগুলো ঝলমলিয়ে উঠে। আমি হাঁটি আর গায়ে মাখাই সেই সূর্যর আলোর উষ্ণতা ভিজিয়ে দেয়া বৃষ্টির ফোঁটা।

একটা ছুটির দিনে নিজের কাছেও হারিয়ে যাওয়া যায়, প্রতিদিনের পথ থেকে ভিন্ন পথেও জীবনকে দেখা যায়। একটা ছুটির দিনে পড়ন্ত বেলার সূর্যর আলোর উজ্জলতা গায়ে মাখিয়ে অনেকদূর হেঁটে যাওয়া যায়।

২ টি +০/-০