নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

উৎসের খোঁজে।

Jaliskhan

মানুষ হইবার চাই

Jaliskhan › বিস্তারিত পোস্টঃ

নন্দিতা

০৯ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৬ সকাল ১১:৪৩

এক.

এসব এমন কিছু কঠিন ব্যাপার ছিলো না নন্দিতার জন্য। ঘর সামলানো, বাচ্চা কাচ্চা মানুষ করা, রান্নাবান্না, সপ্তাহে বাইরে ঘুরে বেড়ানো আর বৃষ্টির দিনের আদুরেপনা।

কঠিন ছিলো না স্বামীর অফিসের অনুষ্ঠানে গয়নাগাটি পরে সবার সাথে তাল মেলানোও। নন্দিতা সুভাষিণী, চলনসই সুন্দরী, সামাজিকভাবে দায়বদ্ধ এক চলন্ত জীবন।

নন্দিতা সুর তুলতে জানে, স্নেহপরায়ণ, অতিথিবৎসল, অন্যকে ভালোবেসে নিজেকে উজাড় করে দেয়া এক মানবী।

নন্দিতার এই পরিপাটি আচরণ, গুণপনা, মার্জিত রুচি, শিক্ষা এসবই কত অমূল্য। আজকের দিনে বলতে গেলে এরকম গুণের সমাহার দুষ্প্রাপ্য।

রাস্তার ভিখিরি থেকে সমাজের উঁচু উঁচু মানুষেরাও নন্দিতার এই গুণের কথা বলে বেড়ায়। বাসায়, রাস্তায়, গাড়িতে, সামাজিক আড্ডায় নন্দিতার এসব কর্মোদ্যম উদাহরণ হিসেবে লিখিত হতে থাকে সময়ের পরিক্রমায়।

লোকজন আজকাল উদাহরণ টানে নন্দিতার। মেয়েকে শাসাতে মামনিরাও নন্দিতার কথা বলে। মাঝে মাঝে নাগরিক জীবনগুলো যেন নন্দিতাময় হয়ে উঠে।

নন্দিতা একসময় সমাজের প্রতীক হয়ে উঠে। এমন আদর্শবতী নারীর শাশ্বত রুপ সবার অনুকরণীয় হয়ে উঠে। নাগরিকেরা এই প্রতীকের কাছে প্রত্যাশার ঝুড়ি খুলে বসে। সবার নন্দিতা চাই, কিন্তু নন্দিতা তো একজন। যদিও কারো চাওয়া ঠেকিয়ে রাখা দেশের কর্তব্য নয়, তথাপি এক নন্দিতাকে ভাগ বাটোয়ারা করা সুকঠিন হয়ে পড়ে।

এসবই ঘটে অল্প সময়ে, মানুষের শারীরিক ও মানসিক বিবর্তনের ধারায়, শ্রেণী বৈষম্যের অবারিত প্রবঞ্চনায়, গল্পে, কবিতায়, উপন্যাসে এমনকি রাষ্ট্রীয়ভাবে।

দুই.

একদিন অফিস থেকে বেরিয়ে মদ খেতে আমি বারে ঢুকেছি। শালামারে নয়তো রেড বাটন হবে মনে পড়ছে না। ঘুমাতে চাইলে জিন খুব ভালো জিনিস। দু'পেগ জিন নিলাম, কড়া করে মুরগীর মাংস ভেজে দিতে বললাম আর সালাদ ভালো করে বানিয়ে দিতে বলে আমি অপেক্ষায় রইলাম।

বাসায় গিয়ে কে আবার রান্না করে খাবে, আর আমার বাসায় তো নন্দিতা নেই, যে আদর করে রান্না করে খাওয়াবে। এইসব নন্দিতাদের জন্য শালার জীবনটাই কেমন যেন শূন্য মনে হয়।

মদ খেতে গেলে এই একটা ব্যাপার ঘটে, আচমকাই কারো উপর রাগ এসে পড়ে। আজ যেমন নন্দিতার উপর রাগ হলো, ভয়ানক রাগ। আরো দু'পেগ নিলাম। তারপর আর কিছু মনে নেই, শুধু চেঁচিয়ে চেঁচিয়ে বলেছিলাম..... কি যেন বলেছিলাম, ভুলে গেছি এখন।

বিল চুকিয়ে ঘরে ফিরছি। ফার্মগেট ফুটওভার ব্রিজে উঠে ওপাড় যাবো, দেখি রেলিং এর দু'পাশে হাসিমুখে, অহঙ্কারে কে যেন তাকিয়ে আছে আমারই দিকে। পাশ কাটিয়ে যাবো কি না ভাবছি, এমন সময় খেয়াল করে দেখি, নন্দিতা দাঁড়িয়ে আছে। মদের বোতল থেকে এক চুমুক খাবো বলে হাত উঁচু করে দেখি হাতে বোতল নেই! যাহ! রাস্তায় মদ খাওয়ার নিয়ম নেই তো! মেজাজটা খঁচে গেলো!

অনেক হিসেব নিকেশ আছে চুকিয়ে নেয়া যাবে আজ। আর যেহেতু নন্দিতা আজ সামনে এসেই পড়েছে, আজ আর ছাড়ব না। তবে হ্যা, নন্দিতাকেও কিছু বলার সুযোগ আমি দিবই। মদ খাই আর যাই করি, আমি স্বাধীনতায় বিশ্বাসী, এমন স্বাধীনতা যে স্বাধীনতায় স্বাদ আছে, গন্ধ আছে, বর্ণ আছে, আর আছে আত্মতৃপ্তি!

মর্যাদা দিয়ে আমার কি হবে, ওসব থাক নন্দিতাদের জন্যে। হি হি করে হেসে উঠি আমি। নন্দিতার ভ্রুকুটি একটুও ভাবায় না আমাকে। আচ্ছা মতো ওকে বকি। বকি এজন্যে যে, প্রেম হয় নি জীবনে কারণ কেউ নন্দিতার মতো নয়, মেয়ে দেখে দেখে হয়রান, বিয়ে হয় নি আর কারণ ওরা নন্দিতার মতো ধৈর্যশীল নয়। পার্কে, দোকানে, বাজারে, অফিসে খালি নন্দিতা।

আমি নন্দিতাকে কুৎসিত কথা বলি, বিদ্রুপ করি, ঠাট্টাও করি। আর তার তীব্রতা এতো ব্যাপক থাকে যে, সবার প্রাণপ্রিয় নন্দিতা কাঁদতে থাকে, মোচড়াতে থাকে, আর আমি এক অসহায় নন্দিতাকেও দেখি। আজ আমার কাছে অসহায় এক নন্দিতা দাঁড়িয়ে থাকে।

আমার মনে একটু শান্তি লাগে, আমি রেলিং এ পা ঝুলিয়ে বসি। নন্দিতা যেন পাশে এসে দাঁড়ায়। রাস্তায় একটা অর্ধ উলঙ্গিনীকে দেখি আর পাশে দাঁড়ানো এক লোকের তাকে টেনে নেয়ার প্রাণপন ব্যর্থ চেষ্টা দেখতে দেখতে নন্দিতার অস্তিত্ব ভুলে যাই।

"আমি মরে যেতে চাই"। নন্দিতার কথায় আবার আমি ঘোরে ফিরি, আমি চমকিত হই না। মদ খেলে মানুষ আর চমকায় না। আমার নিজেরই মনে হয়, গলা টিপে মেরে ফেলি নন্দিতাকে অথবা ধাক্কা দিয়ে ফেলে দেই কোন গাড়ির নিচে।

"আমার এসব কিছুই ভালো লাগে না, আমার নামের দরকার নেই, আমার সম্মানের দরকার নেই। আমি শুধু একটু বাঁচতে চাই, একটু স্বাভাবিক থাকতে চাই। মন খুলে একদিন গান শুনতে চাই, ছাদে বসে বিকেলের চুরিয়ে যাওয়া আলো দেখতে চাই, একদিন বই পড়তে পড়তে উদাস চোখে জীবনকে দেখতে চাই"।

কোনমতে রেলিং ধরে অবশ্যম্ভাবী পতন ঠেকিয়ে আমি নন্দিতার দিকে তাকাই। অর্ধ উলঙ্গিনী কখন রাস্তা থেকে উপরে উঠে এসেছে টের পাই নি। আমার কানে কানে বলে, "পোস্টার দেইখ্যা কি করবি, আমি আছি, কডা টাকা বাড়াইয়া দিছ"।

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.