![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
আমেরিকার দক্ষিণে মাত্র নব্বই কিলোমিটার ভৌগোলিক দূরত্বে একটি দ্বীপ রাষ্ট্র। ক্যারিবিয়ান সাগরের মাদকময় ক্যালিপসোর সুর, গাল্ফ অফ মেক্সিকোর সুপ্রাচীন ঐতিহ্য আর আটলান্টিকের বিশালতায় এক বিরল দৃষ্টান্ত হয়ে সবার মাঝে বিস্ময় নিয়ে বেঁচে আছে দেশটি।
আনুমানিক সাত হাজার বছর পূর্বে তাইনো, গুয়ানজাতাবেই আর ছিবোনে নামধারী গোত্রভিত্তিক মানুষদের বসবাস শুরু হয় এই অঞ্চলে, আজো প্রায় তিরিশ শতাংশ লোক এই যাদের আমরা আদিবাসী বলি, বসবাস করে এই অপূর্ব দেশটিতে।
দিন বদলায়, প্রকৃতি বদলায়, বদলায় ইতিহাস। এই সহজ সরল প্রাকৃতিক মানুষগুলোর সুখ সহ্য হলো না স্প্যানিশদের। আফ্রিকা লুটপাটে তাদের সাথী তখন ব্রিটিশ, পর্তুগীজ, ওলন্দাজ এবং নাম না জানা লুটেরা বাহিনী। স্প্যানিশরা লাভের বখরা ছেড়ে দিয়ে পাড়ি জমালো ক্যারিবিয়ান অঞ্চলে। দখন করে নিলো এই সুন্দর উর্বর দেশটি।
দাস হিসেবে নিয়ে এলো জ্যামাইকা, গিনি অথবা আফ্রিকার মানুষদের, কারণ লুটপাটের পর সেইসব সামগ্রী ঝেড়ে মুছে রাখতে হলে ইতর, অশিক্ষিত, ছোটলোক তো লাগবে। স্প্যানিয়ার্ডরা সেই যে পনেরোশ শতকে এলো আর গেলো উনিশ শতকের শুরুর দিকে। যাবার আগে সাদা চামড়া বানিয়ে দিয়ে গেলো তিনশত বছরের অধিক দীর্ঘ পথপরিক্রমায়, যাদের সংখ্যা আজ সে দেশের ৬২ শতাংশ।
তবে স্প্যানিশরা এমনিতেই যায় নি। বৈশ্বিক রাজনীতি, আমেরিকাসহ অন্য লুটেরাদের বর্ধিত শক্তির কাছে ম্রিয়মাণ হয়ে, অর্থনৈতিক বিরুপতায় ১৯০২ সালে ২০ মে আমেরিকার কাছে বর্গা দিয়ে স্প্যানিশরা চলে গেলে প্রজাতন্ত্র হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে দেশটি।
পৃথিবীর যে কটি দেশ একটা সমন্বিত অর্থনৈতিক পরিকল্পনা নিয়ে এগুচ্ছে তাদের মধ্যে এ দেশটি সর্বশেষ। অর্থাৎ অঞ্চলভেদে, উৎপাদিত পণ্যের মাণ অনুযায়ী লাভ-ক্ষতি আর কর নির্ধারণ করা হয়। দেশটিতে চিনি, তামাক আর কফি হচ্ছে জীবিকা নির্বাহের আদিমতম অর্থনৈতিক অবস্থা। তাছাড়া বর্তমানে দক্ষ জনশক্তিতেও এগিয়ে যাচ্ছে দেশটি।
মানব উন্নয়ন সূচক অনুযায়ী জীবনযাপন, শিক্ষা এবং বাৎসরিক আয়ে ল্যাটিন আমেরিকায় অষ্টম স্থান দখল করে আছে দেশটি।
HDI বা হিউম্যান ডেভেলপমেন্ট ইন্ডেক্স অনুযায়ী,
মোট চার ধাপে একটি দেশের উন্নতি বিচার্য। জটিল এই সমীকরণে তখনই একটি দেশ সফলতার দিকে এগোয় যেখানে জীবনদৈর্ঘ বেশি, শিক্ষা ব্যবস্থা দারুণ, বাৎসরিক আয় বেশ আর সঠিক পরিবার পরিকল্পনা ও মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রিত।
ইউএনডিপি (United Nations Development Program) নিয়মিত করেই প্রকাশ করে এ তালিকা। এবারও দেশটি ৬৭ তম অবস্থানে থেকে জানিয়ে দিয়েছে বিশ্বকে, যে ইতিহাস বদলাতে ইচ্ছাশক্তির প্রয়োজন হয়, মেধার প্রয়োজন হয় আর প্রয়োজন হয় ভালোবাসার। মাঝে মাঝে সেজন্য কঠোর হতে হয়। উন্নতির পথে বাঁধা সরাতে হয় আর সেকাজ করতে গেলে শিরদাঁড়া সম্পন্ন একজন মানুষই যথেষ্ট।
HDI এর তথ্য অনুযায়ী ইউ এস এ ৮ম, স্পেন ২৬তম আর বাংলাদেশ ১৪২তম অবস্থানে আছে এ বছর।
জিডিপির বিচারে ৫৮ তম
জনসংখ্যার দিক থেকে ৭৮ তম
আয়তনের দিক থেকে ১০৪ তম অবস্থানে থাকা দেশটির মাথাপিছু বাৎসরিক আয় প্রায় একুশ হাজার ইউ এস ডলার।
***আপনি নকল করে বারাক ওবামা মায় ট্রাম্প হতে পারবেন, চাইলে ইউনুস আর সুকি'র মতো নোবেলও বাগিয়ে নিতে পারবেন কিন্তু শত চেষ্টা করলেও ওবামার মুখের উপর বলতে পারবেন না 'ইহুদি দালাল', কিংবা ট্রাম্পকে বলতে পারবেন না 'হোৎকা শূয়োর', অথবা ইউনুসকে বা সুকিকে বলতে পারবেন না কেনো কি করে তারা নোবেল বাগিয়ে নিয়ে গেলো।
কিন্তু আপনি চাইলেও ফিদেল ক্যাস্ট্রো হতে পারবেন না, নকল করলেও না। তিনি আমেরিকার প্রেসিডেন্ট নন, তিনি নোবেল লরিয়েট নন। কিন্তু পৃথিবীর মানুষ একসময় বলবে ওবামা অততম প্রেসিডেন্ট ছিলেন, উমুক এততম নোবেল পেয়েছিলেন আর ফিদেল ক্যাস্ট্রো; ইউরোপ আমেরিকার তথা তাবত বিশ্বের মানুষ শতাব্দী পরেও বাচ্চাদের রুপকথা শুনাবে এমন এক মানুষের কথা বলে যেখানে থাকবে কিসিঞ্জার নামক এক দৈত্যকে, আমেরিকার মতো সাম্রাজ্যবাদীদের যিনি পকেটে নিয়ে ঘুরতেন, চুরুটের ধোঁয়ায় উড়িয়ে দিতেন আর স্বপ্ন দেখাতেন মানুষ তার নিজের দায়িত্ব নিজেরাই নিতে পারে আর সেটা তিনি করেও দেখিয়েছেন।
দেখতে চাইলে একবার ঘুরে আসুন কিউবা, দেখুন রুপকথারা রাস্তায় শিশুরা ঘুরে বেড়ায় লাল স্কার্ফ পরে, দেখে আসুন নিখরচা শিক্ষা ব্যবস্থা বলতে আসলে কি বুঝায়, বুঝে আসুন প্রতি এক লাখ মানুষের জন্য ১৩০ জন ডাক্তার নিয়ে ল্যাটিন আমেরিকার চিকিৎসা ব্যবস্থার শীর্ষে কিভাবে উঠে এসেছে দেশটি, শিখে আসুন- যে ইউরোপ আমেরিকার প্রশংসায় পঞ্চমুখ আপনি, আসলে তারা কতটা নিচু, কতটা দুর্বল, কতটা ভঙ্গুর, কতটা লোভী, কতটা অমানুষ।
আর তাই মোহাম্মদ আলি নন, মাইকেল জ্যাকসন নন, কোন দেশের প্রেসিডেন্ট নন, সক্রেটিস কিংবা মার্কস নন - আমাদের হিরো ফিদেল। আমাদের পথ দেখায় ফিদেল ক্যাস্ট্রো।
আর সেই দেশটির নাম কিউবা, রিপাবলিক অব কিউবা।
©somewhere in net ltd.