নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

উৎসের খোঁজে।

Jaliskhan

মানুষ হইবার চাই

Jaliskhan › বিস্তারিত পোস্টঃ

নূরা পাগলার \'বিজয়\' ভাবনা

২১ শে ডিসেম্বর, ২০১৬ সকাল ১১:০৩

- ধর্ম আর আর্মি র মাঝে কি কোন মিল আছে?

- দুই অক্ষরের শব্দ। ম আর তার উপর রেফ, এটাও বলা যায়।

- আচ্ছা বুঝছি! শিক্ষিত মানুষ তো তাই শিক্ষিত ভাবেই বুজছেন। তা আইলেন কবে?

- গতকাল রাতে।

অনেকদিন পর নূরা পাগলার সাথে দেখা হলো। বিকেলবেলা যথারীতি আড্ডা। জিজ্ঞাসা করলাম, বিজয় দিবসে কেমন কাটলো, বললো -

- খুব ভাল কাটলো ভাই। এক জায়গায় বিরিয়ানি পাকাইছিলো, খাইছি পেট ভইরা।

- স্টেডিয়াম যাস নাই, পোলাপান যে নাটক করে, অনেক রকমের অনুষ্ঠান হয়, সেগুলা দেখতি গিয়া।

- আপনি যা কন না ভাই! ছুড পোলাপানের মতো!

- কেনো?

- ওহন কি আর এমন আছে! ভাড়া কইরা লোকজন আনে, কোনমতে সারে। তারপর বিজয় শেষ।

- পেপারে পত্রিকায় তাহলে কি দেখি রে!

- আমার মাথা দেখেন।

কুমিল্লায় অনেক ঠান্ডা পড়েছে। ওর মাথায় লাল সবুজের টুপি, উলে বোনা। আমি বললাম, "টুপিটা বেশ হয়েছে কিন্তু"।

- আরে ভাই, মাথা গরম কইরেন না তো আর!

- ঘটনা কি খুলে বল তো?

- আমার কথা বাদ দেন। আপনার কেমন কাটল, সেটা বলেন।

- কাটল আর কি! রাত বারোটায় ট্রেনের বগি কাত হয়ে গেলো, প্ল্যাটফর্মে বসে বসে সময় কাটালাম, তারপর রাত সোয়া তিনটায় বাসায় পৌঁছলাম। তারপর ঘুম, উঠে দেখি বিজয় শেষ হয়ে গেছে।

- তাতো যাইবই! রাইত বারোটায় গান বাজাইলে আর ফুল ছিটাইলেই কি বিজয় হয়! বিজয় কি খালি রাইত বারোটায় আসে, বাকি সময়ে কি নাই?

- আরে রাগ করার কারণ বলবি না। আশ্চর্য তো!

নূরা পাগলার বেদনাহত চেহারা দেখে বুঝি, মনে কোথাও লেগেছে। দু'জনের জন্য চায়ের কথা বলে আবার বলি, "আচ্ছা, চা খেতে খেতে বল"।

- রাত্রে গেছি ফুল দিতাম শহীদ মিনারে। আমারে ঢুকতেই দিলো না। কইলো "ইম্পিসাব" গেলেগা পরে আইতে।

- এই কথা! আমি আরো ভাবলাম কি না কি! তা ষোল ডিসেম্বর তুই শহীদ মিনারে গেলি কেন, সেটা তো একুশে ফেব্রুয়ারির জন্য।

- আমি গেলে দোষ! দুনিয়ার তামান মানুষ গেছে হেরা কি পীর ফকির!

- আরে সমাজের উঁচু শ্রেণির লোকেরা আগে সুযোগ পাবে, তারপর সাধারণ জনগন। এটাই তো নিয়ম!

- হ, নিয়ম খালি আপনাগো লাইগা। তাইলে আর মুক্তিযুদ্ধ করছিলো ক্যান?

- কি বলবো বল, সাঈদীর ছেলেকে এবারের বিজয় দিবসে দেখলাম স্যালুট নিতে, বিজয় দিবসের পুরষ্কার বিতরণ করতে!

- কি কন! এইডা কি সম্ভব!

- হইছে তো! এলাকার চেয়ারম্যান মনে হয়!

- তাইলে তো ঠিকই আছে। এইবার বুঝছি ভাই।

নূরা পাগলা হো হো করে হেসে ওঠে। আমি ওর আপাদমস্তক চোখ বুলাতে বুলাতে দেখি ওর মুখে ক্রোধান্বিত হাসি।

চায়ের কাপে চুমুক দিয়ে একটা সিগারেট ধরিয়ে কষে টান দিয়ে আমাকে বলে, "আচ্ছা ভাই, ধরেন আমি যদি কাউন্সিলর হই, বা ধরেন গিয়া মেয়র হই, তাইলে আমিও তো বারোটায় ফুল দিতে পারুম। ঠিক নি ভাই!"

- তা পারবি!

- তাইলে আর সাঈদীর পোলার দোষ দেন ক্যান! বিচার হওনের পরেও হের ওয়াজের সিডি বিক্রি বন্ধ হয় নাই। মাইনষে আসলে ভাই দেহে চেয়ার, পদ, ক্ষমতা। সাঈদীর পোলা চেয়ারম্যান, পুরষ্কার তো চেয়ারে দিছে, মানুষ বদলাইলে কি আর মন বদলাইবো!

কি বলবো বুঝতে পারছিলাম না। নূরা পাগলার সাথে তর্ক করা বৃথা। কিন্তু তবুও কেমন যেন একটা অস্বস্তি হচ্ছিলো। বিদায় নিয়ে নূরা পাগলাকে ছেড়ে এলাম।

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.