![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
একটা দেড় পৃষ্ঠার গল্প লিখবো ভাবলাম। শুরু করেছিলামও। গোলযোগ বেঁধে গেলো কি গল্প লেখা যায় সে বিষয় নিয়ে। কেউ কেউ প্রেমের গল্প লিখতে বললো, কেউ আবার বুঝিয়ে দিলো দিনকাল এখন বেজায় কঠিন, প্রেমের ভাষা নয় লিখতে হলে যোদ্ধার ভাষায় লেখো, জীবনসংগ্রামের কথা লেখো। অনেকেই বলতে চাইলো প্রকৃতি নিয়ে অনেকদিন ভালো কোন লেখা নেই, সেই ভাটার মতো চাঁদ, উঁচু সবুজ গাছের পাতায় ঠিকরে পড়া আলো, দূরে কিছু একটা নড়ার শব্দ - সেই জঙ্গলের কথা এখন আর কেউ বলে না। কিন্তু কেউ কেউ আবার বললো এসব গল্প ফল্প বাদ দিয়ে প্রবন্ধ লেখুন। পত্রিকায় ছাপা হোক, রিসেন্ট ইস্যু নিয়ে লেখুন, রাষ্ট্রের কলকব্জার নড়বড়ে অবস্থা জানান। মানুষকে সঠিক পথ দেখান। গল্প ছাড়ুন, কাজের কিছু লেখুন।
আমি জানি যেকোন বিষয়ে নানা মত থাকবেই। সবার পরামর্শ নেয়াও জরুরী বৈকি। তবে আমি স্থির করেছি গল্পই লেখবো, সেই দেড় পৃষ্ঠাই। এখন শুধু একটা ঘটনা প্রয়োজন। এমন একটা ঘটনা যেখানে উচ্চ মধ্য নিম্ন সব বিত্তের মানুষের সমাহার থাকে। কিন্তু দেড় পৃষ্ঠায় এতোগুলো দল নিলে তিনটে করে প্রতিনিধি রাখতে হবে। দেড় পৃষ্ঠায় কি হবে? সম্ভাবনা কম! তাহলে কি করা যায়! আচ্ছা, একটা কাজ তো করতেই পারি, এমন একটা চরিত্র বানিয়ে নেই যে কিনা একসময় মধ্যবিত্ত ছিলো, তারপর উচ্চবিত্তে স্থানান্তরিত হয়ে এখন একেবারে খাদে নেমে এসেছে, মানে নিম্ন বিত্তে। একজন পুরুষ চাকুরীজীবী, নিজের মেধাকে কাজে লাগিয়ে ব্যবসায়ীতে পরিণত হয়। একটা সময় পর্যন্ত উত্তরোত্তর উন্নতি করতে থাকে। তারপর ঝড়ের মতোই সব লণ্ডভণ্ড হয়ে যায়। এখন একেবারে সর্বস্ব খুইয়ে পথে পথে ঘুরে বেড়ায়।
নাহ! ট্র্যাজিক ভাবে শেষ করে দিলে পাঠক যদি আবার বিরক্ত হয়। তাছাড়া এমনতো হতে পারে সবই দুর্ভাগ্য ছিলো! তার চেষ্টার কমতি ছিলো না। কিন্তু এতে করে আবার নিয়তিবাদীরা বলবে, "সবই ভবিতব্য"। এভাবে লেখি যদি তবে অনেক সমালোচনা হবে, যারা নিয়তিবাদ বিশ্বাস করে না তারা বলবে, "নিশ্চয় চেষ্টার কিছু ত্রুটি ছিলো, আজেবাজে কিছু অভ্যাসে তো জড়িয়েছে নিশ্চয়ই। তা নইলে অমন লকলকে ব্যবসা নিভে যায় কি করে?" কিন্তু গল্পের চরিত্রের চরিত্রহনন না করে কি গল্পটা আবার লেখা যায় না! যেমন গল্পের নায়ক প্রথমে নিম্ন বিত্তের মাঝে বড় হয়ে, ধীরে ধীরে শ্রেণি বদল করে, আর মাঝবয়সে এসে অনেক ধনসম্পত্তির অধিকারী হয়ে পড়ে। এটাও কি গতানুগতিক চিন্তা হয়ে গেলো না। এভাবে একটা গল্প লেখে কি পাঠকের মন জুড়ানো যাবে? আর আমারই বা ভালো লাগবে? হতেই পারে না।
তবে কি চরিত্রগুলোকে দুর্বল করে দিয়ে ঘটনাকেই ফোকাস করবো। এইতো সেদিন কার যেন লেখা পড়েছিলাম - একজন সবজি বিক্রেতা হাতে ঠেলা ভ্যানে করে সবজি বিক্রি করে মহল্লায়। একদিন সে ভ্যানে করে শুধু লাউ আনে, কচি কচি লাউ, সময়ের সাথে ওদের ঝেল্লা যেন বেড়েই চলে। ওই নধর কচি লাউ সবাই বারবার পরখ করে যায়। নখ ডাবিয়ে দেখেও বৈকি! আর সবজিওয়ালা বলে, 'লাউ নিয়া যান বাসায়। রাইন্ধা খায়া বুঝবেন যে লাউই খাইছেন'। তো তার লাউগুলো বিক্রি হয়ে যায়। তার কথার মাঝের ফাঁকফোকর কেউ খেয়াল করে না।
গাড়ি চালিয়ে অফিস যাওয়ার সময় এক অফিস ম্যানেজারের চোখে ওই গাঢ় সবুজ লাউ ঠিকরে উঠে। গাড়ি থামিয়ে দরদাম করে লাউ কিনে আবার বাসায় রেখে আসে। রাতে কুঁচো চিংড়ি অথবা বড় মাছের মাথা দিয়ে মুড়িঘণ্ট! আহা! স্ত্রীকে বারবার তাগাদা দেয় ফোনে।
ওদিকে বাজার সরকার বাজার সেরে যাবার সময় কচি লাউ দেখে ছোটবেলাকার গ্রামের কথা মনে করে। হাত বুলিয়ে দেখে নিয়ে চারটে লাউ সে নিয়ে যায়। আজ সাহেবকে বলবে গিয়ে, খুব আচ্ছা করে এই লাউ রেঁধে খাওয়াবে, সত্যিকার লাউয়ের সাধ সাহেবকে দিতে সে কাঁছা বেঁধে নেমে যায়।
আর সরকারি অফিসের পিয়ন সাইকেল থামিয়ে অনেকক্ষণ লাউগুলো দেখে। সবজিওয়ালার সাথে খাতির জমায়। তারপর লজ্জায় রাঙ্গা হয়ে বিশ টাকা দিয়ে একটা লাউ কিনে সেও ঘরে রেখে আসে। মায়ের হাতে রাঁধা লাউ তরকারির কথা মনে করে তার চোখ ছলছল করে ওঠে।'
কিন্তু গল্পের এ জায়গাটায় এসে লেখক দেখায় পরেরদিন সাহেব আর বাজার সরকার, অন্যদিকে সরকারি অফিসের পিয়ন, লাউওয়ালাকে লাউয়ের জ্ঞান দিচ্ছে। কাল রাতে তাদের কারুরই লাউয়ের তরকারি খেয়ে মনে হয় নি, যে এটা লাউ ছিলো! তাই সবজিওয়ালাকে আজ হাড়ে হাড়ে টের পাইয়ে দেবে কত ধানে কত 'লাউ'। কিন্তু অফিসের ম্যানেজার আর তার স্ত্রীর লাউয়ের তরকারির গল্প ভিন্ন খাতে মোড় নেয়। কারণ সেদিনই অনেকদিন পরে তাদের ভালোবাসা রাতভর জেগে থাকে। সুতরাং অফিসে যেতে দেরী হয়ে যায়। আর তাই সে জানতে পারে না, সেই সবজিওয়ালাকে তাড়িয়ে দিয়েছে সাহেব আর বাজার সরকার, অন্যদিকে সরকারি অফিসের পিয়ন।
এমন করেও কিন্তু লেখক দেখাতে চেয়েছেন, কিভাবে, তিন বিত্তের তিন মানুষ একই জিনিস নিয়ে ভিন্ন ভিন্ন গল্প তৈরি করেছে। কারণ গল্পের শেষ অংশে থাকে মধ্যবিত্ত অফিস ম্যানেজারটির জীবনে অনেকদিন পর যে আনন্দ এনে দিয়েছিলো সবজিওয়ালা, সে আর নেই কিংবা আসে না। লাউও কেনা হয় না আর রাতভর ভালোবাসাও জেগে থাকে না। ওদিকে সাহেব আর বাজার সরকারের একদিন মনে হয় সামান্য কটা লাউয়ের জন্য ঘটনাটা বাড়াবাড়িই হয়েছে। আর সরকারি অফিসের পিয়ন মাঝে মাঝে সবজিওয়ালা যেখানটায় দাঁড়াত, সেখানে এসে এখন ফোঁপায়।
এটাও একটা ট্র্যাজিক এন্ডিং হলো, কিন্তু আগের চাইতে অনেক ভালো। এমন একটা লেখা যায়। না না, একি বলছি! যা লেখা হয়ে গেছে তা আবার লিখে কি হবে! তাহলে আবার নতুন করেই ভাবতে হবে! কিন্তু গল্পটা আমি দেড় পৃষ্ঠাই লেখবো ভাবছি। আর তাতে থাকবে সমাজের সব শ্রেণির প্রতিনিধি - সাদা কালো, উঁচু নিচু, ধনী গরিব সবাই।
২৬ শে ডিসেম্বর, ২০১৬ দুপুর ১:০৯
Jaliskhan বলেছেন: কৃতজ্ঞতা জানবেন।
আপনাদের পরামর্শ পাথেয় হয়ে থাকবে।
©somewhere in net ltd.
১|
২৩ শে ডিসেম্বর, ২০১৬ রাত ৯:৪৪
পুলহ বলেছেন: লেখাটা নিশ্চিতভাবেই টিপিক্যাল ঘরানার বাইরের একটা লেখা। আর আপনার লেখার হাতও সাবলীল, গোছানো এবং ঝরঝরে।
সব মিলে স্মুথ রিডিং হলো একটা ।
ভালো লেগেছে। শুভকামনা জানবেন লেখক !