নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আমার পরিচয় আমি মানুষ

জু েয়ল

জু েয়ল › বিস্তারিত পোস্টঃ

সোয়াচ অব নো গ্রাউন্ড

২৬ শে জুন, ২০২৩ বিকাল ৫:৩৩


বিশ্বের বৃহত্তম সাবমেরিন ফ্যান অবস্থিত বঙ্গোপসাগরে যা বেঙ্গল ফ্যান বা গঙ্গা ফ্যান নামে পরিচিত। এখন স্বভাবতই মনে প্রশ্ন আসতে পারে যে সাবমেরিন ফ্যান আসলে কি? সাবমেরিন ফ্যান হলো সমুদ্রতলদেশে একটি ভূমিরুপ যা নদীবাহিত পলি দ্বারা ক্রমসঞ্চিত হয়ে তলদেশে শিরা উপশিরা মিলে জালের মতো বেষ্টনী তৈরি করে। বঙ্গোপসাগরে তেমনি গঙ্গা-ব্রহ্মপুত্র ও তাদের বিভিন্ন শাখা নদীর বাহিত পলি দ্বারা বেঙ্গল ফ্যানের সৃষ্টি করেছে। বেঙ্গল ফ্যানের দৈর্ঘ্য প্রায় ৩০০০ কিমি এবং প্রস্থ ১৪৩০ কিমি। এটি সর্বোচ্চ ১৬.৫ কিমি পুরো বা স্থুলো। এর নিকটেই বঙ্গোপসাগরের উত্তরাংশে বাংলাদেশ সমুদ্র সীমারেখায় অবস্থিত সোয়াচ অব নো গ্রাউন্ড (Swatch of No Ground) নামক গভীর সমুদ্র খাদ। একে আন্ডার ওয়াটার ক্যানিয়নও বলা হয়। এই খাদটি এতই গভীর যে এখানে সূর্যালোক ঠিক মতো প্রবেশ না করতে পারায় সমুদ্রের জল গাড় বর্ণের দেখায়।

সোয়াচ অব নো গ্রাউন্ড কি?
সোয়াচ অব নো গ্রাউন্ড পৃথিবীর ১১তম গভীর সমুদ্রখাদ। সমুদ্রবিজ্ঞানীদের মতে সোয়াচ অব নো গ্রাউন্ড একটি সামুদ্রিক অভয়ারণ্য বা Marine Protected Area. বঙ্গোপসাগরের অন্যতম মত্স্য ভাণ্ডার হিসেবে পরিচিত সোয়াচ অব নো গ্রাউন্ডে নানা জাতের সামুদ্রিক মাছের পাশাপাশি বিশাল তিমি, ডলফিন, হাঙ্গর, কচ্ছপ আর বিরল প্রজাতির কিছু জলজপ্রাণীর দেখা পাওয়া যায়। এই বিস্তীর্ণ এলাকাটি বিরল জীববৈচিত্র্য যেমন তিমি, পপাস ডলফিন, ইরাবতী ডলফিন, ইন্দো প্যাসিফিক ডলফিন, ইমপ্লাইস ডলফিন ইত্যাদির নিরাপদ প্রজনন কেন্দ্র। বিজ্ঞানীদের মতে সোয়াচ অব নো গ্রাউন্ড পৃথিবীর একমাত্র স্থান যেখানে ডলফিন, পরপাস ও তিমি—এই তিন প্রজাতির সামুদ্রিক স্তন্যপায়ী প্রাণী একসঙ্গে দেখা যায়। এই সামুদ্রিক অঞ্চলে সী-গালসহ দশ প্রজাতির পাখি, ত্রিশ প্রজাতির মাছ, ব্রিড তিমি এবং মিল্কি তিমিসহ অসংখ্য জীববৈচিত্র্যের সন্ধান পাওয়া যায়।

সোয়াচ অব নো গ্রাউন্ড দেশের সম্ভবনাময় ব্লু ইকোনমির জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি অঞ্চল। এখানকার পানির গুণগতমান শ্রীলংকা, ভারত, মিয়ানমার ও মালদ্বীপের চেয়েও উন্নত। বিশেষ করে সুন্দরবনের ইকোসিস্টেম এবং জীববৈচিত্র্যের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ এই অঞ্চল। সোয়াচ অব নো গ্রাউন্ড সুন্দরবন অঞ্চলের জন্য ইকোলজিক্যাল ফিল্টার হিসেবে কাজ করছে।

নামকরণের ইতিহাস

কথিত রয়েছে ১৮৬৩ সালে গ্যাডফ্লাই নামে ২১২ টন ওজন বিশিষ্ট গানবোট ভারত থেকে ইংল্যান্ডে বিপুল পরিমাণ ধনরত্ন নিয়ে যাওয়ার সময় ঝড়ের কবলে পড়ে ডুবে যায়। ডুবে যাওয়া সেই ব্রিটিশ যুদ্ধজাহাজের খোঁজে এসেছিল দেশটির আরো কয়েকটি জাহাজ। তাদের সঙ্গে ছিল এক জরিপকারী দল। শেষ পর্যন্ত ডুবে যাওয়া জাহাজের হদিস না পেয়ে এই অঞ্চলটির নাম দেওয়া হয় সোয়াচ অব নো গ্রাউন্ড অর্থাৎ যার কোনো তল বা সীমা নেই। স্থানীয় জেলেরা অঞ্চলটিকে বলে ‘নাই বাম’। কারণ জেলেরা ফুট বা মিটারে সমুদ্রের গভীরতা পরিমাপ না করে বাম হিসেবে যেমন দশ বাম, বিশ বাম এভাবে পরিমাপ করে থাকে। এই অঞ্চলটি এতোটাই গভীর যার কোনো বাম পাওয়া যায় না, সেজন্য জেলেরা ‘নাই বাম’ বলে থাকে।

ডলফিন কখন দেখা যায়
সি-গাল (Segal) পাখির অবস্থানের উপর নির্ভর করে অনেক সময় ডলফিন বা তিমির অবস্থান বোঝা যায়। যদি সি-গাল পাখিকে সমুদ্রের পানির কাছাকাছি চক্কর দিতে দেখেন তাহলে তার আশাপাশে ডলফিনের অবস্থান রয়েছে বলে ধারনা করতে পারেন। আর সেক্ষেত্রে সেখানটায় ডলফিনের দেখা মিলবার সম্ভাবনাও প্রচুর।

সোয়াচ অব নো গ্রাউন্ড যাওয়ার উপায়
সোয়াচ অফ নো গ্রাউন্ড মংলা/ সুন্দরবন এর দুবলার চর/সোনারচর থেকে প্রায় ৩০-৪০ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত। ঢাকা থেকে সরাসরি মংলা চলে যেতে পারেন। মংলা থেকে প্রতিদিনই মাছ ধরার ট্রলার যায় সোয়াচ অব নো গ্রাউন্ডে। জেলেদের সঙ্গে কথা বলে উঠে পড়বেন যেকোনো একটি ট্রলারে। রাতে মাছ ধরার জন্য ট্রলারগুলো সোয়াচ অব নো গ্রাউন্ডের একটি নির্দিষ্ট স্থানে অবস্থান করে।

এছাড়া মংলা বন্দরে গিয়ে খোঁজ নিয়ে দেখবেন, যদি জাহাজে করে যাওয়ার সৌভাগ্য এবং সুযোগ মিলে কিনা। অবশ্যই আবহাওয়া জেনে বুঝে তবেই মাঝ সমুদ্রে ভ্রমণ করা উচিত।

এছাড়া কুয়াকাটা থেকে সোয়াচ অব নো গ্রাউন্ড প্রায় ৯০ কি মি দূরে। কুয়াকাটা থেকে সরাসরি যাওয়া যায় কিনা সে ব্যাপারটা নির্ভর করে ট্রলার পাওয়ার উপর।

মন্তব্য ৯ টি রেটিং +৫/-০

মন্তব্য (৯) মন্তব্য লিখুন

১| ২৬ শে জুন, ২০২৩ বিকাল ৫:৪৮

এইযেদুনিয়া বলেছেন: +++

২৬ শে জুন, ২০২৩ রাত ১১:০৬

জু েয়ল বলেছেন: ধন্যবাদ ধৈর্য্য নিয়ে পোষ্টটি পড়ার জন্য, ভালো থাকবেন সব সময়।

২| ২৬ শে জুন, ২০২৩ সন্ধ্যা ৬:২৯

ঋণাত্মক শূণ্য বলেছেন: মোংলা পোর্টে ঘন্টা চুক্তি একটা কাজ করতাম ২০০৬/৭ এর দিকে। সে সময় একবার ওখানে যাওয়ার সুযোগ হয়েছিলো। সত্যি বলতে, পানিতে নামেই ভয় লাগছিলো। কিন্তু সেটা এক অসাধারণ অভিজ্ঞতা ছিলো।

সুন্দর পোষ্ট ও পুরাতন স্মৃতি স্বরণ করায় দেওয়ার জন্য ধন্যবাদ।

ওহ, শেষ দিকে যে ট্রলারে করে যাওয়ার কথা লিখেছেন, এমন ডেঞ্জারাস কথা আর লিখেন না ভাই। সবাই ট্রলারে করে যাইতে পারবে না।

২৬ শে জুন, ২০২৩ রাত ১১:০৩

জু েয়ল বলেছেন: ধন্যবাদ আপনার মূল্যবান মন্তব্যের জন্য। আসলে আমাদের চারপাশে প্রকৃতীতে লুকিয়ে আছে অনেক রহস্য যা আমরা জানি না। তেমনই এক রহস্য ঘেরা জায়গা এই সোয়াচ অব নো গ্রাউন্ড।

৩| ২৬ শে জুন, ২০২৩ রাত ১১:০৪

শেরজা তপন বলেছেন: তথ্যবহুল পোষ্ট- কিছু ছবি যোগ করা যেত। অন্তত শিরোনামের সাথে একটা ছবি দিলে ভাল হোত।
আমার এক পরিচিত বিবিসি'র সহযোগীতায় দীর্ঘ সময় ধরে সেখানে জীব বৈচিত্রের অনুসন্ধান করেছিল।

২৬ শে জুন, ২০২৩ রাত ১১:৫৬

জু েয়ল বলেছেন: ধন্যবাদ আপনার মূল্যবান পরামর্শের জন্য, ভালো থাকবেন।

৪| ২৬ শে জুন, ২০২৩ রাত ১১:২১

রাজীব নুর বলেছেন: সুন্দর পোস্ট।

২৬ শে জুন, ২০২৩ রাত ১১:৫৭

জু েয়ল বলেছেন: ধন্যবাদ ভাই। আমি আপনার পোষ্ট গুলি নিয়মিত পড়ে থাকি, তবে মন্তব্য করা হয় না।

৫| ০২ রা জুলাই, ২০২৩ সন্ধ্যা ৭:২১

মরুভূমির জলদস্যু বলেছেন:
- যাওয়ার ইচ্ছে আছে।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.