![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
অতিসাধারণদের একজন...মনে লুকানো সাধারণ কিছু কথা বলতে এসেছি। বিশাল বিশাল ব্লগ লেখার ক্ষমতা বা যোগ্যতা কোনটাই আমার নেই। রাজনীতি, অর্থনীতি, ধর্ম ইত্যাদি কঠিন কঠিন বিষয় নিয়ে আলোচনায় দয়া করে আমাকে কেউ টানবেন না :)
ছোটবেলায় বাবা-মা আর ভাই-বোনদের সাথে আমি থাকতাম হিরোশিমার কাছের ছোট্ট একটা মফস্বল শহর সাক্কাতে। আমাদের বাড়িটা ছিলো সমুদ্রের একেবারে কাছে। সৈকতে বসে সূর্যাস্ত দেখতে আমার ভীষণ ভালো লাগতো। ভালো লাগতো বাগান থেকে ফুল তুলতে আর গ্রামময় ঘুরে বেড়াতে। কখনো আবার আমি উঠে যেতাম গাছের মগডালে, যেন সাগরের পানিতে রোদের ঝিকিমিকি মন ভরে দেখতে পারি।
হিতোশি, আমার সবচেয়ে কাছের বন্ধু, গাছের নিচে আমার জন্য অপেক্ষা করতো। সেখানে আমরা ঘণ্টার পর ঘণ্টা বসে গল্প করতাম, ভাবতাম বড় হয়ে আমরা কে কী করবো, কী হবো।
হিতোশিকে আমার খুব ভালো লাগতো। তাই হিতোশি যখন বললো বড় হয়ে ও লেখক হতে চায়, আমি বললাম, 'আমি তাহলে কবি হবো'।
৬ অাগস্ট। সেদিনের সকালটা ছিলো আর দশটা সকালের মতোই। স্পষ্ট মনে আছে, মা ঘরে ছিলো; আর আমি নাস্তা করে তৈরি হচ্ছিলাম কাজে যাওয়ার জন্য। হিরোশিমায় যোগাযোগ মন্ত্রণালয়ে কাজ করতাম আমি। বয়স মাত্র চোদ্দ, তবুও চাকরি করতাম। বেশিরভাগ ছেলেই তখন যুদ্ধে গিয়েছে, সবখানে লোকবলের অভাব। তাই আমার মতো ছোট ছোট ছেলেমেয়েদের লেখাপড়া বন্ধ করে বিভিন্ন জায়গায় কাজে ঢুকিয়ে দেয়া হয়েছিলো।
আমি চারতলার একটা জানালার পাশে দাঁড়িয়ে আছি, ঠিক সেই মুহূর্তে তীব্র এক আলোর ঝলকানিতে আমার চোখ ধাঁধিয়ে গেলো। মনে হলো যেন আমার চোখের সামনে সূর্যটা আকাশ থেকে খসে পড়েছে! সেকেন্ডেরও ভগ্নাংশ জুড়ে চারদিকে শুধু রংধনু খেলা করতে দেখলাম। সেটা আর কিছু ছিলো না, ছিলো এক পারমাণবিক বোমার বিস্ফোরণ।
নিশ্চয়ই আমার জ্ঞান ছিলো না। কারণ এরপর যখন চোখ মেললাম, দেখলাম আমি আর জানালার কাছে নেই। টের পেলাম আমার মাথায় আঘাত লেগেছে। কীভাবে জানি না, আমি উঠলাম, নিজেকে টেনে নিয়ে গেলাম বাইরে। একজন মহিলা আমাকে হাসপাতালে যেতে সাহায্য করলেন। আশপাশে তাকিয়ে আমার সেই চিরচেনা শহরকে দেখতে পেলাম না। শহর আর শহর নেই। কোন বিল্ডিং নেই, নেই একটা কুকুর বা বিড়ালও। আকাশে উড়ছে না কোন পাখি বা প্রজাপতি। সব শেষ হয়ে গেছে। শুধু আছে কিছু মানুষ, আহত, গায়ে ছাই আর কালিঝুলি মাখা। এদিক সেদিক ঘুরে বেড়াচ্ছে।
পরদিন সকাল। ঘুম থেকে উঠেই মায়ের কথা ভীষণ মনে পড়লো। হাঁটতে হাঁটতে ফিরে এলাম আমার শহরে। তখনও সবখানে শুধু আগুন আর আগুন। সাবধানে এগিয়ে গেলাম আমার বাড়ির দিকে, বা যেখানে আমার বাড়িটা ছিলো। কাছাকাছি গিয়ে দেখতে পেলাম তিনজন মানুষ আমার দিকেই এগিয়ে আসছে। 'এটা কি সত্যিই তুমি??' প্রশ্ন করলো একজন। মানুষটি আমার মা। তার সাথে ছিলো আমার বড় বোন আর আমার ফুপু। আমার ভাইটাকে কোথাও দেখতে পেলাম না। বিস্ফোরণের আঘাতে সে চলে গেছে না ফেরার দেশে। সবকিছু মনে হচ্ছিলো এক বিশাল দুঃস্বপ্নের অংশ। বুঝতেই পারছিলাম না ঠিক কী হচ্ছে।
বিশ বছর বয়সে আমি হিরোশিমা ছেড়ে চলে আসি। বহু বছর আমি হিরোশিমার ঘটনা নিয়ে কিছু বলতেই পারতাম না। কিন্তু আমার পরিবার আমাকে বোঝালো, যেন আমি আমার কাহিনী সবাইকে বলি। একসময় আমি কবিতা লিখতে শুরু করলাম। ছোটবেলায় হিতোশিকে বলেছিলাম আমি কবি হবো। কখনো ভাবিনি তা বাস্তবে রূপ নেবে।
পারমাণবিক বোমার তেজস্ক্রিয়তায় তীব্র মাথাব্যাথা, ক্লান্তিসহ আমার নানা ধরনের স্বাস্থ্যগত সমস্যা দেখা দিতে থাকে। তবে টোকিওর ডাক্তাররা নিয়মিত আমার চিকিৎসা করতেন। একসময় আমি বিয়ে করলাম। আমার তিনটা ছেলে হলো। এখন আমার চারজন নাতি-নাতনিও আছে। আমি তাদের কাছে আমার জীবনের কাহিনী সবসময় বলি।
এতকিছুর পরও যারা আমাদের শহরে বোমা ফেলেছিলো, তাদের আমি ঘৃণা করি না। তাদের কারণেই আমি বুঝতে পেরেছিলাম, সব হারানোর পর মানুষ কতোটা অসাধারণ হয়ে ওঠে। কিন্তু আমি কখনো এটাও ভুলবো না যে, মানুষই মানুষের ওপর পারমাণবিক বোমা ফেলেছিলো।"
এই ছিলো ৮৪ বছর বয়সী বুন হাশিজুমে’র আত্মকথা। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় জাপানের হিরোশিমায় পারমাণবিক বোমা ‘লিটল বয়’ বিস্ফোরিত হয়। তখন বুনের বয়স ছিলো মাত্র ১৪ বছর। নিজের অসাধারণ সেই অভিজ্ঞতা এক সাক্ষাৎকারে এভাবেই তিনি তুলে ধরেছেন বিবিসি’র কাছে।
(লেখাটি গত ৬ আগস্ট হিরোশিমা দিবস উপলক্ষে বিবিসি’র একটি বিশেষ ইন্টারভিউ। চ্যানেল আই অনলাইনের জন্য ইন্টারভিউটি অনুবাদ করেছিলাম। সাইটের আসল লিংকটা সামু’তে দেওয়ার পর কাজ না করায় অনেকদিন পুরো লেখাটা এখানে দেবো দেবো করেও দেওয়া হচ্ছিলো না। তাই আজ দিয়েই দিলাম। হাশিজুমে’র কাহিনীটা আমার হৃদয় ছুঁয়ে গিয়েছিলো। এ কারণেই এখানে শেয়ার করা...)
০৮ ই নভেম্বর, ২০১৫ রাত ১২:২০
ঝড়-বৃষ্টি বলেছেন: অনেক ধন্যবাদ। অবশেষে লেখাটা এখানে দিতে পারলাম তাতেই আমি খুশি
২| ০৮ ই নভেম্বর, ২০১৫ রাত ১২:১৩
রক্তিম দিগন্ত বলেছেন: সত্যি কথা বলতে আমি ভেবেছিলাম লেখাটা আপনারই লেখা ছোট গল্প।
ভাল লিখেছেন।
মহিলার কথা শুনে খারাপ লাগলো।
০৮ ই নভেম্বর, ২০১৫ রাত ১২:২৪
ঝড়-বৃষ্টি বলেছেন: পাঠক যেন প্রথমে একে আমার লেখা বা আমার কাহিনী ভাবে সেভাবেই লেখার চেষ্টা করেছি। লেখাটা ভালো লাগলেই আমি সার্থক। অসংখ্য ধন্যবাদ।
৩| ০৮ ই নভেম্বর, ২০১৫ রাত ১২:৫৯
ক্যান্সারযোদ্ধা বলেছেন: আমেরিকার প্রতি শুধু ধিক্কারই রইল। ধন্যবাদ।
০৮ ই নভেম্বর, ২০১৫ রাত ১:০১
ঝড়-বৃষ্টি বলেছেন: আপনাকেও ধন্যবাদ।
৪| ০৮ ই নভেম্বর, ২০১৫ রাত ১:৫৬
ফেরদৌসা রুহী বলেছেন: যখন পড়তে শুরু করেছিলাম ভেবেছিলাম এটা আপনার কথা।
আপনি অনেক সুন্দর লিখেন।
৮৪ বছর বয়সী বুন হাশিজুমে’র আত্মকথা মন ছুঁয়ে গেল।
০৮ ই নভেম্বর, ২০১৫ রাত ১:৫৮
ঝড়-বৃষ্টি বলেছেন: ভালো লেগেছে জেনে খুব ভালো লাগলো।
অসংখ্য ধন্যবাদ আপনাকে।
৫| ০৮ ই নভেম্বর, ২০১৫ ভোর ৬:১৪
ব্লগ সার্চম্যান বলেছেন: অনেক সুন্দর হয়েছে লেখা
০৮ ই নভেম্বর, ২০১৫ সকাল ১০:৪৮
ঝড়-বৃষ্টি বলেছেন: অনেক ধন্যবাদ
৬| ০৮ ই নভেম্বর, ২০১৫ সকাল ৮:৫৬
অগ্নি সারথি বলেছেন: বুন হাশিজুমে’র হৃদয় ছুয়ে যাওয়া আত্মকথা শেয়ার করার জন্য ধন্যবাদ।
০৮ ই নভেম্বর, ২০১৫ সকাল ১০:৪৯
ঝড়-বৃষ্টি বলেছেন: আত্মকথাটি পড়ার জন্য আপনাকেও ধন্যবাদ
৭| ০৮ ই নভেম্বর, ২০১৫ দুপুর ১২:৩১
অপর্ণা মম্ময় বলেছেন: হিরোশিমার ভয়াবহতার কথা কেউ কখনো ভুলবে না।
ভালো লাগলো আপনার পোস্ট
০৮ ই নভেম্বর, ২০১৫ দুপুর ১২:৩৩
ঝড়-বৃষ্টি বলেছেন: আসলেই তা ভোলার মতো না।
ধন্যবাদ পড়ার জন্য।
৮| ০৮ ই নভেম্বর, ২০১৫ দুপুর ১:৪৭
জিরো ডাইমেনশন বলেছেন: যখনি আমার জীবনে কোন মুহুর্ত কঠিন মনে হয় তখনি আমি হিরোশিমার সেই মুহুর্তটার কথা ভাবি।
০৮ ই নভেম্বর, ২০১৫ দুপুর ২:২০
ঝড়-বৃষ্টি বলেছেন: মানুষগুলোরর জন্য সত্যিই ভয়াবহ কঠিন ছিলো সময়টা। এখনও তার ধাক্কা পুরোপুরি কাটিয়ে উঠতে পারেনি তারা।
৯| ০৮ ই নভেম্বর, ২০১৫ বিকাল ৩:৪৫
রমিত বলেছেন: এককথায়, অসাধারণ!
০৮ ই নভেম্বর, ২০১৫ রাত ৯:০৩
ঝড়-বৃষ্টি বলেছেন: অসংখ্য ধন্যবাদ আপনাকে
১০| ০৮ ই নভেম্বর, ২০১৫ বিকাল ৩:৫৬
বিদ্রোহী ভৃগু বলেছেন: মানবতার বিরুদ্ধ জঘণ্যতম অপরাধের সেই বিভিষিকা আজো বিশ্বকে লজ্জ্বিত করে। শুধু লজ্জ্বিত হয়না হায়েনা আক্রমনকারী ধ্ভংসের ভিলেন আমেরিকা!!!
ছআিপাশ বিবৃতি বা সরি নয়- আত্মা থেকে লজ্জ্বা!
যদি অনুভব করতে তবে স্রেফ স্বার্থের জন্য নিত্য হিরোশিমা বানানো প্রকল্প বন্ধ করত! বিশ্ব জুড়ে দখলদারী আর একপাক্ষিক সন্ত্রাস চালাত না।
স্মৃতিকথার লেখনিতে সাবলিল আন্তরিকতা ভাল লেগেছে।
০৮ ই নভেম্বর, ২০১৫ রাত ৯:০৫
ঝড়-বৃষ্টি বলেছেন: এদের কখনোই লজ্জা হবে না। হলে নিত্য নতুন উপায়ে ভয়াবহ সব নতুন যুদ্ধ বাধাতো না।
সাবলিলতার চেষ্টা করেছি মাত্র। সফল হয়ে থাকলে আমি সার্থক। ধন্যবাদ
১১| ০৮ ই নভেম্বর, ২০১৫ বিকাল ৫:২৫
শামছুল ইসলাম বলেছেন: আপনার প্রকাশ ভঙ্গির ভিন্নতাই আপনাকে আর দশজন থেকে আলাদা করেছে।
লেখনী চলুক আপন বেগে।
ভাল থাকুন। সবসময়।
০৮ ই নভেম্বর, ২০১৫ রাত ৯:১৬
ঝড়-বৃষ্টি বলেছেন: লেখনী তো প্রতিনিয়ত চলছেই, তবে তা কাজের খাতিরে। নিজের খুশির জন্য লেখার সুযোগ খুঁজি। যদি সে যোগ্যতা থাকে তবে অবশ্যই লিখবো।
অনেক ধন্যবাদ আপনাকে। ভালো থাকবেন।
১২| ০৮ ই নভেম্বর, ২০১৫ সন্ধ্যা ৭:২৮
শতদ্রু একটি নদী... বলেছেন: চমৎকার শেয়ার। ++
০৮ ই নভেম্বর, ২০১৫ রাত ৯:১৭
ঝড়-বৃষ্টি বলেছেন: অনেক অনেক ধন্যবাদ
১৩| ২৪ শে নভেম্বর, ২০১৫ বিকাল ৫:০৭
জাহাঙ্গীর.আলম বলেছেন: সব্যাজ মানবের বিভ্রম কিংবা অকৃতজ্ঞতার সময়কথন ৷ তবু আশ্রয় মানবেই ৷
মানবে আশ্রয়, নির্ভরতা আর বিশ্বাসের উত্তরাধিকার ৷ সাবলীল কর্ম ৷
২৫ শে নভেম্বর, ২০১৫ রাত ১২:৫৬
ঝড়-বৃষ্টি বলেছেন: ধন্যবাদ
©somewhere in net ltd.
১|
০৮ ই নভেম্বর, ২০১৫ রাত ১২:০৭
গেম চেঞ্জার বলেছেন: অসাধারণ সেই মহিলাটির কাহিনী জেনে খারাপ লাগলো। আপনার লেখনীও চমৎকার!!