নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

দূরে কোথাও আছি বসে...

অপেক্ষায় আছি সেই পলিনেশিয়ান তরুণীর যার বাম কানে সাঁজানো লাল জবা...

জীবনানন্দদাশের ছায়া

the be_st...

জীবনানন্দদাশের ছায়া › বিস্তারিত পোস্টঃ

ছোটগল্পঃ ল্যাপ অব দ্য গডস

১৪ ই ডিসেম্বর, ২০১৩ সন্ধ্যা ৬:৪৯

দৃশ্যপট ১



জ্বর মুখে বা শারীরিক অসুস্থ্যতায় সিগারেট তোতো লাগে, মুখ বিস্বাদে ভরে যায়। এজন্য মাঝে মাঝে আমি শরীরটা সুস্থ্য আছে কী নেই তা পরীক্ষা করার জন্য ধুমপান করে থাকি। এই ধুমপানকে নেশা হিসেবে দেখার কোন সুযোগ নেই কারণ আমার উদ্দেশ্য রোগ নিরুপন, ধুমপান নয়। বিজ্ঞানের ছাত্র হিসেবেতো বটেই সিগেরেটের প্যাকেটে "ধুমপান স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর" বা "ধুমপান ক্যান্সারের কারণ" এসকল সচেতনাতামূলক তথ্যের সাথে আমি পরিচিত। তবু মাঝে মাঝে জ্বর হলো কীনা তা পরীক্ষা করে দেখতে আমি ধুমপান করে থাকি; আর যখন করি তখন আয়েশ করেই তা করা হয়!



দেশের অবস্থা ভালো নয়। প্রতিদিন গাড়ি পুড়ছে, রাস্তায় আগুন জ্বলছে আর সেই আগুন মানুষের পোষাক ভেদ করে শরীর পোড়াচ্ছে। আগুন যখন পোড়ায় তখন কী পোড়াচ্ছে, কাকে পোড়াচ্ছে, ছেলে না মেয়ে, ছোট বাচ্চা না বয়স্ক বৃদ্ধ অথবা মানুষ না কুকুর-বেড়াল কিংবা রিকশা নাকি টয়োটা কার তা দেখার সুযোগ নেই। সামনে যা পায় তাই পোড়ায় বৈকি। এই আগুনে পোড়া বা ঝলসে যাওয়া আমাকে বেশ ভাবাচ্ছে।



আসলে আমার ভাবার খুব একটা কারণ ছিলনা। দেশের সার্বিক পরিস্থিতি বিচার করে আমাদের বিশ্ববিদ্যালয় এক মাসের ছুটি ঘোষণা করেছে। আমি চাইলেই বাসায় বসে শীতের কামড় থেকে বাঁচার জন্য আগুন পোহাতে পারি আমদের গ্যাসের চুলায়। কিন্তু দু'টো টিউশনি করতে আমাকে বাইরে যেতে হয়। যেহেতু যেতে হয় সেহেতু আমাকে ফিরেও আসতে হয়। আর এই যাওয়া আর ফিরে আসার মাঝে অনেকটা সময় রাস্তায় উলঙের মত ঘোরাঘুরি করতে হয়। এখানে "উলঙ" অবস্থাটি যতটুকু আক্ষরিক অর্থে তার চেয়ে বেশি প্রায়োগিক অর্থে। কারণ পেট্রোল বোমা যখন কেউ ছুড়ে মারে তখন নিশ্চয়ই পোষাক থাকা বা না থাকা কোন বিষয় নয়।



দৃশ্যপট ২



শাহরুখ আর আমির দুই ভাই। ওরা থাকে বাড্ডায় এক বস্তিতে। ওদের বাবার হিন্দি সিনেমা দেখার খুব শখ ছিল এবং তিনি তার ছেলেদের নাম রেখেছেন বলিউড সিনেমার নায়কদের নামে। ওদের আরেকটা ভাই থাকলে ভালো হত, তার নাম রাখা যেত সালমান। কিন্তু সালমানের জন্মের আগেই ওদের বাবা মারা যাওয়ায় বলিউডি সম্রাজ্য পূর্ণতা পায়নি।



দুই ভাইকে ওদের মা বড় করার চেষ্টা করেছেন। এখানে বড় করা মানে সাধারণ অর্থে লেখাপড়া করে বড় হওয়া নয়। এখানে বড় হওয়া মানে গায়ে গতরে বড় হওয়া। কিছুদিন স্কুলে যাওয়ার চেষ্টা করেছে দুই ভাই, কিন্তু সংসারের টানাটানি ওদের স্কুলে যেতে দেয়নি। তবে ওরা স্কুলের কাছাকাছি থাকার চেষ্টা করেছে- শাহরুখ একটা স্কুলের ভ্যান চালায় আর আমির ঐ স্কুলের সামনে চানাচুর বিক্রি করে।



কিন্তু এখনকার রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে স্কুল বন্ধ থাকায় ওদের আয় উপার্জনে বড় ধরণের সমস্যা সৃষ্টি হয়েছে। সেই সমস্যা সমাধানের কোন উপায় বলিউডি দুই নামকাওয়াস্তা নায়ক খুঁজে পাচ্ছেনা।



কিন্তু সমস্যা যেখানে থাকে, সমাধানের উপয়াও সেখানেই থাকে। ওদের বস্তির বশীর মোল্লা আজ দুই ভাইকে ডেকে পাঠিয়েছে তার ডেড়ায়। বশীর মোল্লা সিল্কের শার্ট পরে, কখনো কখনো পান্জাবী পায়জামা আবার মাঝে মাঝে পোলো টিশার্ট ফেড জিন্স। তাকে বস্তিতে ঠিক মানায় না। তবু কত বেমানান জিনিসইতো আমাদের চারপাশে ঘটে।



- শাহরুখ, তোরা ভাই তো তোর রেকর্ড ভাইঙা ফেলবোরে। ধুম থ্রী আইতেছে মার্কেটে।



মোল্লার কথা শুনে শাহরুখ একটু বিমর্ষ হয়। সে জানে বাস্তব জীবনে সে একজন ভ্যানগাড়ি চালক। আর তার ভাই সামান্য চানাচুরওয়ালা। তবু নামের মিল একদম ফেলে দেবার মত নয়। বলিউডি সিনেমার প্রতিযোগিতা যেমন দুই খানের মাঝে আছে তেমনি কী যেন একটা প্রতিযোগিতা দুই ভাইয়ের মাঝেও কাজ করে।



- হ! জানি। সিনেমার গপ করার লাইগা ডাকছেন?



- না, একটা কাম আছে। করবি? ভালো টেকা দিমু। দিনে ধর দুই ভাই চাইরশো টেকা পাবি।



আমির শাহরুখ একজন আরেকজনের দিকে তাকায়। দিনে চারশো টাকা!!



- কী কাম?



আমিরের প্রশ্নে মোল্লা যে জবাব দেয় সেটা খুব সহজ। ওদের কিছু গাড়ি ভাঙচুর করতে হবে। রাস্তায় পিকেটিং করতে হবে। মিছিলে গলাবাজি করতে হবে। এমন সব ছোট ছোট সামান্য কাজ। এমন কাজে রাজি হওয়া যায়, যদিও পুলিশের তাঁড়া খাওয়ার ভয় আছে তবুও পুলিশের তাঁড়া খাওয়া ওদের কাছে নতুন কিছু নয়।



আমির আর শাহরুখ একজন আরেকজনের দিকে তাকায়, কথা হয় চোখে চোখে খুব কম সময়ে। আমিরই মুখপাত্রের ভূমিকায় জবাব দেয়-



- হ, করুম।



-ভালো। তাইলে আইজ রাইত আটটায় গলির সামনে যে বড় রাস্তাডা আছে ঐটার সামনে যে স্কুলটা পরে তার সামনে থাকবি।



দৃশ্যপট ৩



টিউশনি শেষ হয়েছে আজকের মত। আমার ছাত্রের মা আজ না খাইয়ে ছাড়লেন না। বাড্ডা থেকে বাসায় যেতে এখন অনেক সময় লাগবে। আর এদিকে খাওয়াটাও একটু বেশি হয়ে গেছে। শরীরটা কি একটু খারাপ লাগছে। জ্বর এলো নাকি!! না, আজ একটা সিগেরেট খাওয়া জরূরী হয়ে পরেছে দেখা যায়। আমি একটা বেনসন কিনতে ঢুকে পরি গলির মোড়ের দোকানে। রাত আটটা বাজে, কিন্তু চারদিক কেমন মন মরা, কেমন ধুসর! যেহেতু আমি নিয়মিত স্মোকার নই, সেহেতু ৯ টাকার বেনসন আমার গায়ে লাগেনা। আমি সিগেরেটে আগুন ধরিয়ে রিক্সা খুঁজতে থাকি...



দৃশ্যপট ৪



মোল্লা একটা পেপসির বোতলের মত কিছু ধরিয়ে দেয় শাহরুখের হাতে। আরেকটা একই জিনিস আমিরের হাতে। দুই ভাই একটু বিব্রত। কারণ ওরা ঠিক বুঝতে পারছেনা এই জিনিস দিয়ে কী করতে হবে।



- শোন, এই বোতলের মাথায় আগুন ধরাইয়া যে গাড়ি যাইতে দেখবি সেই গাড়িতে ছুইড়া মারবি। মাইরা দৌড় দিয়া পালাইয়া যাবি। অন্যটা এমনেই অন্য কোন জায়গায় মারবি। রাইতে বস্তিতে দেখা হইবো- টেকা নিয়া যাইস।



মোল্লা অপেক্ষা করেনা। হনহন করে কোন কথা বলতে না দিয়েই চলে যায়। একটু পর তার সিল্কের শার্ট আর দেখা যায়না। এদিকে আমির আর শাহরুখ কিছুটা বোকার মত দাঁড়িয়ে আছে। তারা রোবটের মত দাঁড়িয়ে আছে। অবচেতন মনে তারা কোন একটা গাড়ি আসার অপেক্ষায় দাঁড়িয়ে। কিন্তু আজকে রাস্তাটা বড় শুনশান। কোন গাড়ি নেই এদিকে!



প্রায় আধা ঘন্টা হয়ে গেল। কিন্তু কোন গাড়ির দেখা মিলছেনা। এমন সময় একটা রিকশা এগিয়ে আসতে দেখে ওরা। দু'জন তাকায় দু'জনের দিকে। চোখে চোখে কথা হয়- খুব অল্প সময়ে। রিকশাটা এগিয়ে আসছে আর ৩০ সেকেন্ডের মধ্যে ওদের পাশ কাটিয়ে যাবে। আমির পকেটে হাত ঢোকায় দেশলাইয়ের জন্য। কিন্তু না নেই। ওরা পেট্রোল বোমার বিষয়টা জানতোনা। ওদের কারো কাছেই দেশলাই নেই।



শেষ দৃশ্যপট



নাহ, সিগেরেট মোটেই তেতো লাগছেনা আজ। মনে হয় শরীরে কোন জ্বর নেই। সিগেরেট শেষ হয়ে এসেছে। আমি শেষবারের মত সিগেরেটে একটা টান দেই আর তারপর ওটার গোড়াটা প্যারাবোলিক পথে ছুড়ে মারি দূরে। রাস্তা একদম ফাঁকা, কিন্তু সিগেরেটের গোড়াটা যেখানে পরলো ওখানে দু'জন মানুষের ছায়া দেখলাম মনে হলো... ...!!

মন্তব্য ৩৯ টি রেটিং +৪/-০

মন্তব্য (৩৯) মন্তব্য লিখুন

১| ১৪ ই ডিসেম্বর, ২০১৩ রাত ৮:৩৭

মহামহোপাধ্যায় বলেছেন: :( :( :( :( :( মন খারাপ হয়ে গেলো।


গল্প ভাল লেগেছে।

১৪ ই ডিসেম্বর, ২০১৩ রাত ৯:২৩

জীবনানন্দদাশের ছায়া বলেছেন: ধন্যবাদ মহামহোপাধ্যায় !


:|

২| ১৪ ই ডিসেম্বর, ২০১৩ রাত ১০:৩০

মামুন রশিদ বলেছেন: সিগারেটের আগুনটা পেট্রোল বোমার দিকেই গেলো!


গল্পটা বাস্তবিক, আমাদের চেনা জানা । ইদানিং হামেশাই ঘটছে । কিন্তু শেষের ট্যুইস্ট গল্পটাকে অনন্য সাধারণ করে তুলেছে । বোমার দিকেও আমরা কিছু ছুড়ে মারতে পারি!

১৪ ই ডিসেম্বর, ২০১৩ রাত ১১:৩৭

জীবনানন্দদাশের ছায়া বলেছেন: ধন্যবাদ মামুন!


এমনওতো হতে পারে যে ঐ আগুনটা দুই বোমাবাজের পায়ের কাছে পরলো আর বোমাবাজরা যে আগুনের খোঁজে ছিল তা পেয়ে ঐ রিকশাতেই ছুড়ে মারলো। কেমন হয় তাহলে?

৩| ১৪ ই ডিসেম্বর, ২০১৩ রাত ১১:১১

স্বপ্নবাজ অভি বলেছেন: অদ্ভুত আমাদের মানসিকতা , অদ্ভুত আমাদের দেশপ্রেম!

১৪ ই ডিসেম্বর, ২০১৩ রাত ১১:৩৮

জীবনানন্দদাশের ছায়া বলেছেন: অদ্ভুত আমরা!!

ধন্যবাদ অভি :)

৪| ১৪ ই ডিসেম্বর, ২০১৩ রাত ১১:২০

সুমন কর বলেছেন: সময় উপযোগী, বাস্তব গল্প। ভাল লাগল।

১৪ ই ডিসেম্বর, ২০১৩ রাত ১১:৩৮

জীবনানন্দদাশের ছায়া বলেছেন: ধন্যবাদ সুমন :)

শুভ নিদ্রা, শুভ স্বপ্ন!

৫| ১৫ ই ডিসেম্বর, ২০১৩ দুপুর ১:১৪

কাল্পনিক_ভালোবাসা বলেছেন: মামুন ভাই এর সাথে সহমত, শেষটা দারুন হয়েছে। এই ভাবেই হয়ত অলক্ষ্যে প্রতিরোধ হয়ে যাবে।

১৫ ই ডিসেম্বর, ২০১৩ রাত ৯:৩৪

জীবনানন্দদাশের ছায়া বলেছেন: ধন্যবাদ কাল্পনিক_ভালোবাসা! আমাদের সব চাওয়া পূরণ হয়না, সব প্রতিরোধ সফল হয়না। আমাদের হাত পা, ক্ষেত্র বিশেষে আমাদের বিবেক-চেতনা-মনুষত্ব বাঁধা পরে কোথাও...

৬| ১৫ ই ডিসেম্বর, ২০১৩ দুপুর ১:২৫

মামুন রশিদ বলেছেন: সেটাই! গল্পটা এমন একটা জায়গায় শেষ হয়েছে যেখানে অনেক কিছুই হতে পারে । সিগারেটের আগুন দিয়ে তারা ঐ রিক্সায় পেট্রোল বোমা মারতে পারে, আবার সিগারেটের আগুনে বোমা ফেটে নিজেরাও মরতে পারে কিংবা হয়ত কিছুই ঘটবে না । পাঠকের অনেক কিছু ভেবে নেয়ার অবকাশ আছে গল্পের এন্ডিংয়ে ।

আর এজন্য গল্পটা আমার কাছে অনবদ্য লেগেছে ।

১৫ ই ডিসেম্বর, ২০১৩ রাত ৯:৪০

জীবনানন্দদাশের ছায়া বলেছেন: ধন্যবাদ মামুন!

আপনার দৃষ্টিকোন মানে যে দৃষ্টিভাঙিতে আপনি দেখেছেন তাতে বলতেই হচ্ছে আপনি ভিষণ অপটিমিস্টিক ধাঁচের মানুষ। আমি কিন্তু লেখার সময় ২য় সম্ভাবনাটাকে মাথায় রেখে লিখেছি। বিশ্বাস করুন, সত্যি আমার মাথায় আপনার দেয়া অল্টারনেটিভ এন্ডিংটা ছিলনা। কিন্তু আপনি বলার পর মনে হলো- বাহ! চমৎকার!

কিন্তু, এখানে একটা সমস্যা আছে। সিগেরেটের আগুন গিয়ে পরার সাথে সাথে পেট্রোল বোমা ফাটবে না। কী, মন খারাপ হয়ে যাচ্ছে :| কিন্তু এটাই যৌক্তিক, কারণ পেট্রোল বোমা ছুড়ে মারতে হবে। তবে আপনার ৩য় সম্ভাবনাই সম্ভবত সবচেয়ে বেশি আকাক্ষিত সম্ভাবনা :)

৭| ১৫ ই ডিসেম্বর, ২০১৩ বিকাল ৩:১৩

তন্ময় ফেরদৌস বলেছেন: পড়তে চাই না এমন গল্প, দেখতে চাই না এমন দৃশ্য

১৫ ই ডিসেম্বর, ২০১৩ রাত ৯:৪১

জীবনানন্দদাশের ছায়া বলেছেন: ধন্যবাদ তন্ময়! আমরা কেউ দেখতে চাইনা, কিন্তু...।

৮| ১৫ ই ডিসেম্বর, ২০১৩ বিকাল ৩:৫৯

একজন আরমান বলেছেন:
আপনার গল্প লেখার স্টাইলটা চমৎকার। সাধারণ চেনা প্লট। কিন্তু অসাধারণ লেখনি। শেষ পর্যন্ত পাঠককে আটকে রাখতে মুগ্ধ।

শুভকামনা লেখকের জন্য আর দেশের জন্য।
বিজয়ের অগ্রিম শুভেচ্ছা।

অফ টপিক একটা প্রশ্ন করি। আপনার নিক নেম দেখে বার বার আশা করে আশাহত হই। প্রতিবার ই ভাবি কোন কবিতা পাবো, কিন্তু পাই গল্প।

৯| ১৫ ই ডিসেম্বর, ২০১৩ বিকাল ৪:০০

একজন আরমান বলেছেন:
প্রশ্ন করার আগেই প্রকাশ করে দিয়েছিলাম।

প্রশ্নটা হল - আপনি কি কবিতা লিখবেন না? নিকের সার্থকতার জন্য হলেও তো লেখা উচিৎ ! কি বলেন?

১৫ ই ডিসেম্বর, ২০১৩ রাত ৯:৫৪

জীবনানন্দদাশের ছায়া বলেছেন: বিজয় দিবসের অগ্রীম শুভেচ্ছা আরমান :)

নামে কী বা আসে যায় :| কবিতা লেখার চেষ্টা করি, কিন্তু হয়ে ওঠেনা। আসলে আমি যতটুকু লেখক তার চেয়ে সম্ভবত বেশি সমালোচক :(

কিছুদিন আগে কবিতার মত করে নিচের লেখাগুলো লিখেছিলাম। পরে নিজেরই পছন্দ হয়নিঃ

===================

"ফ্রাইডে

আমার .৩ মেগাপিক্সেল মোবাইল বা ডিএসএলআর ক্যামেরার সামনে ভীষণ রকম জুবুথুবু তোমার ইদানিং সাবলীল ছবিগুলো আমাকে অভিভুত করে। আমি খুব খুটিয়ে খুটিয়ে চুরি করে দেখি প্রত্যেকটা আলোকচিত্র আর কল্পনায় দাবার ছকে রাজা-হাতি-সৈন্য-ঘোড়া-র স্থান পরিবর্তন করে নিজেকে যখনই তোমার পাশে বসাই বুঝতে পারি- নাহ! এই বেশ ভালো হলো, আমি বড্ড বেমানান এই ছবির কোথাও। এমনকি ফ্রেমের বাইরেও!!

ইংরেজিতে একটা শব্দ আছে "কম্প্যাটিবিলিটি"। শব্দটার বাংলা মানে যাই হোক সহজে বুঝতে আমরা কল্পনা করতে পারি টাই সার্ট পড়া জনৈক ভদ্রলোক যার চোখে সানগ্লাস, প্যান্টের বদলে লুংগি পরে গুলশান সার্কেল ১ এর মোড়ে দাঁড়িয়ে আছেন। এই যে বেমানান পোশাকে যে হাস্যরসের উদ্রেক হবে তোমার পাশে আমাকে তেমনি মনে হয়!

তোমার সহজাত হাসি ফিরে এসেছে বুঝতে পারি। এটাও কল্পনা করে নেয়া দোষের হবেনা সুখে আছো। সব মিলিয়ে এসব দেখে এক বিশাল শুন্যতার সৃষ্টি যে হয়না এমন নয়, তবু তোমাদের দু'জনকে বেশ মানিয়েছে- ছবিতে, হয়ত জীবনেও, এই আশ্বাসটুকু আমাকে শান্ত করে আর নিজের ইনকম্পিটিবিলিটি ভুলে আমি তোমাদের ছবির দিকে তাকিয়ে থাকি, দাবার ছকে হাতি-ঘোড়া বদলে দেখি আবার ফিরে আসি ফ্রেমের বাইরে।

এই লুপের ভেতর থেকে বের হয়ে আসা সহজ নয়। আর বের হয়ে আসার প্রয়োজনিয়তাও আছে বলে মনে হয়না।

ইতি..."

=====================

:|


আচ্ছা ড্রাফটে থাকা একটা কবিতা দিলাম, কেমন লাগলো জানাবেন-

====

ভাত ঘুমের দুপুর পেরিয়ে ভাপ ওঠা বিকেল আসে
দু' একটা নেড়ি কুকুর ব্যাস্ত হয় সদালাপে
আড্ডা জমে বেশ ডাস্টবিনের সামিয়ানার নিচে
জিভ বেড়িয়ে আসা গরমে কাকগুলোও বিশ্রাম খোঁজে
আবার বিপরীতে জমাট আড্ডা বসে ময়লার আশ্রমে।

সুইস বল, বার্গার, পেস্ট্রি অথবা একটুকরো ব্ল্যাক ফরেস্ট
হাতে নিয়ে বসে থাকে প্রেমিক যুগল
রমনার বকুল তলায় বা টিএসসির হাকিম চত্বরে
পাল্লা দিয়ে প্রেম করে যায় ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে প্রেমিকের দল
মাথা রাখে প্রেয়সী পুরুষের কাঁধে
মৃতপ্রায় আলোতে পৌরুষ খোঁজে নারীর পেলবতা।

টুং-টাং রিকশা চলে যায়
বৃদ্ধ চালক ঘামে একাকার
তবু চাকা ঘোরে
জীবন প্রবাহমান
জীবনের টানে।

এককাপ চা হাতে
বসে থাকি বারান্দায়
আমার কোন গন্তব্য নেই
শুধু অপেক্ষায় বেলা যায়
গরিয়ে সরে যায় গোধুলী, সিদুঁর লালীমা
রাত আসে।।

=========


ও..। এটা আমার একটা প্রিয় কবিতা (লেখক কে জানতে চেয়ে লজ্জা দেবেন না ;) শুধু জানাবেন কেমন লাগলো)।

সত্যালাপ

এর সাথেই সংশ্লিষ্ট- সত্যালাপ-২

নোটঃ

এই কাব্য প্রচেষ্টক (!!) এখন কাব্যিক অর্থে মৃত #:-S

১০| ১৫ ই ডিসেম্বর, ২০১৩ রাত ১১:০২

একজন আরমান বলেছেন:
আপনার ড্রাফট কবিতায় দুটি অবস্থাকে সমান্তরালে দেখাবার চেস্টা করেছেন। ভালো তো লেগেছে। প্রশ্ন হল ড্রাফট কেন? আপনার কাছে যেটা হাফপ্যান্ট সেটা অপরের কাছে ফুল প্যান্টও হতে পারে ! তাই বলছিলাম যদি ড্রাফট গুলি যদি আনড্রাফট করতেন ! ব্যাস্ততার মাঝে খাবার সময় কম পাই। তাই শুধু চা, নিকোটিন আর কবিতা খেতেই বেশি ভালো লাগে। কারণ এরা সময় কম নেয় কিন্তু স্বাদ বেশি দেয় !

হেমায়েতপুরি কি আপনার মাল্টি নাকি?

কবিতা দুটি সুশীলদের কাছে পড়তে খারাপ লাগলেও কথাগুলি কিন্তু সত্য !

১৬ ই ডিসেম্বর, ২০১৩ সন্ধ্যা ৬:৫২

জীবনানন্দদাশের ছায়া বলেছেন: কী যে বলেন, হেমায়েতপুরী অনেক পুরাতন ব্লগার, আমিতো সেদিনের পিচকে ব্লগার ;)


আসলে কবিতার ছন্দ (সরাসরি "যাবো" "খাবো" টাইপের না, বিল্ট-ইন যে ছন্দটা থাকে, সেই ছন্দ বা কবিতার যে কাঠামো আমি সেটাকে ঠিক ধরে উঠতে পারিনা আর তাই নিজের লেখা নিয়ে নিজেই কুন্ঠিত হই, মনে হয় কবিতা লিখেছি বলে পাঠকের সাথে ঠকবাজী করছি :|

চেষ্টা করবো ইনশাল্লাহ্‌! ধন্যবাদ আরমান। আর হ্যা, আপনার "খাদক" রূপকটি আমার খুব পছন্দ হয়েছে :)

১১| ১৬ ই ডিসেম্বর, ২০১৩ রাত ১:৪৮

নাজিম-উদ-দৌলা বলেছেন:
ওফ! আপনার লেখার স্টাইলটা অসাধারন ছিল! চমৎকার লেগেছে। আর ফিনিশিংটা হয়েছে একটা বস ফিনিশিং!

১৬ ই ডিসেম্বর, ২০১৩ সন্ধ্যা ৬:৫৪

জীবনানন্দদাশের ছায়া বলেছেন: ধন্যবাদ নাজিম :) আপনার মত প্রতিষ্ঠিত গল্পকারের প্রশংসা আমাকে লজ্জায় ফেলে দিয়েছে :#> ।

:)

১২| ১৬ ই ডিসেম্বর, ২০১৩ রাত ৮:০২

হাসান মাহবুব বলেছেন: নিজেদের মেরে ফেলার উপকরণ আমরা নিজেদের হাতেই তুলে দেই, অথচ আমরা কেউই আত্মবিধ্বংসী না।

১৬ ই ডিসেম্বর, ২০১৩ রাত ৯:৪৯

জীবনানন্দদাশের ছায়া বলেছেন: মব সেন্টিমেন্ট খুব বাঁজে জিনিস আর যারা এর পেছনে কলকাঠি নাড়ে তারা ধরা ছোঁয়ার বাইরে। সাধারণ মানুষ খুবই সাধারণ, আমরা কেউই আসলে আত্মবিধ্বংসী নই।


তোমাকে গল্পে পেয়ে ভালো লাগলো প্রিয় হামা!

১৩| ১৬ ই ডিসেম্বর, ২০১৩ রাত ৯:৪৪

আশরাফুল ইসলাম দূর্জয় বলেছেন:
একটা বিপন্ন সময় যাচ্ছে । অসুস্থ মানসিকতার লোকেরা জীবন নিয়ে খেলছে। এই সময়ে খুবই প্রাসঙ্গিক এক গল্পের ভিন্ন মাত্রার শেষ দারুন লাগলো।

১৬ ই ডিসেম্বর, ২০১৩ রাত ৯:৫১

জীবনানন্দদাশের ছায়া বলেছেন: ধন্যবাদ দূর্জয়! আমরা খুবই অস্বাভাবিক বাঁজে একটা সময়ের ভেতর দিয়ে যাচ্ছি।

ঈশ্বর আমাদের, আমার, আপনার, সবার মঙল করুন। আমীন!

১৪| ১৬ ই ডিসেম্বর, ২০১৩ রাত ১১:১৯

কান্ডারি অথর্ব বলেছেন:



স্বপ্ন দেখি একটি সুন্দর দিনের। আমি বিশ্বাস করি সুন্দর দিন অবশ্যই আসবে।

১৬ ই ডিসেম্বর, ২০১৩ রাত ১১:৫৫

জীবনানন্দদাশের ছায়া বলেছেন:

হ্যা, সেই আশাতেই স্বপ্ন দেখে সময় কাটে আমাদের!!

ধন্যবাদ কান্ডারি :)

১৫| ১৮ ই ডিসেম্বর, ২০১৩ রাত ১২:০৪

সায়েম মুন বলেছেন: গল্পের এন্ডিং ভাল হয়েছে। তবে এই এন্ডিং থেকে একটা বিষয় মাথায় বেশী কাজ করে, সিগারেটের আগুন দিয়ে আমির শাহরুখ বোতল বোমা (মতান্তরে পেট্রল বোমা) রিকসাওয়ালার উপর নিক্ষেপ করবে।
আগে হরতাল অবরোধে তেমন ভয় ছিল না। হরহামেশা রাস্তায় বের হতাম। ইদানীং পেট্রল বোমার বিষয়টা বিমর্ষ এবং উৎকন্ঠিত করে তোলে। বের হতে ভয় পাই!

২১ শে ডিসেম্বর, ২০১৩ বিকাল ৫:৫৮

জীবনানন্দদাশের ছায়া বলেছেন: ধন্যবাদ চাঁদ সায়েম। আমি যদিও এই এন্ডিং মাথায় রেখেই গল্পটা লিখেছি তবে আশাবাদী পাঠকরা কিন্তু অল্টারনেটিভ এন্ডিং খুঁজে নিয়েছে :)


এ শহর উৎকন্ঠার!

১৬| ২১ শে ডিসেম্বর, ২০১৩ রাত ১০:০৪

আমি সাজিদ বলেছেন: বাস্তব ভিত্তিক গল্প, বেশ ভালো লাগলো।


২১ শে ডিসেম্বর, ২০১৩ রাত ১১:৩৫

জীবনানন্দদাশের ছায়া বলেছেন: ধন্যবাদ সাজিদ!

:)

১৭| ০৩ রা জানুয়ারি, ২০১৪ সকাল ৯:৩৮

বোধহীন স্বপ্ন বলেছেন: শেষের টুইস্টটা চমৎকার। আপনি আসলেই একজন গুনী লেখক।

১৮| ১০ ই জানুয়ারি, ২০১৪ সন্ধ্যা ৭:২৫

একজন সৈকত বলেছেন:
চমৎকার একটি লেখা।
সহজ ভাবে বলা বাংলাদেশের কুৎসিততম বোমা-বাস্তবতা! অতি সাধারনের হাতে খুন হয় সাধারন নিরুপায় মানুষ। আড়ালের হায়েনাগুলোর কিছুই হয় না। বোমা হামলার, পোড়া মানুষের আর্তনাদের খবর টিভিতে দেখে হায়েনাগুলো হয়তো তাপানুকূল বাড়িতে বসে অপর হায়েনাকে অভিনন্দন জানায় আর অন্যদিকে কোন একটি পরিবার হয়তো পথে বসে গেল!
গল্পটির শেষটিও দারুণ।
অনেক ভালো থাকুন।

১৯| ১৭ ই জানুয়ারি, ২০১৪ বিকাল ৪:৩৯

শায়মা বলেছেন: হায় হায় তুমি ওদেরকে মেরে ফেললে!
:(

২০| ১৮ ই জানুয়ারি, ২০১৪ বিকাল ৩:৫৯

আমিনুল ইসলাম বলেছেন: :( :(

২১| ২৫ শে জানুয়ারি, ২০১৪ বিকাল ৪:৪০

প্রোফেসর শঙ্কু বলেছেন: গল্প ভাল হয়েছে, কিন্তু সে কথা থাক। কমেন্টের কবিতার মত আরও কবিতা লিখেছেন নিশ্চয়ই, আগে সেগুলো পোস্ট করে ফেলুন।

২২| ২৩ শে ডিসেম্বর, ২০১৫ রাত ১১:৫৯

আরজু পনি বলেছেন:

আপনার সাথে জরুরী কথা ছিল ।
arjuponyএটgmailডটcom
যদি অনুগ্রহ করে একটা কথা বলতেন...

২৩| ১২ ই জানুয়ারি, ২০১৬ ভোর ৫:৩৭

রুদ্র জাহেদ বলেছেন:
সময় উপযোগী গল্প।সে সময়ের সংকটের সাথে গল্পের ঘটনা ম্যাচ করে।সাবলীল বর্ণনা।খুব ভালো লাগলো

২৪| ২৪ শে মে, ২০১৬ দুপুর ১:৫৪

বিজন রয় বলেছেন: সুন্দর।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.