| নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
মহাকালের মঞ্চ (জীসান আহমেদ অরিন)
দৃষ্টি ভঙ্গি বদলান জীবন বদলে যাবে♠
ভয় হয় কখন জানি ধ্বংস হয়ে যাই
তাহিয়া তাবাস্সু
অলৌকিক ঘটনার প্রাবল্য দেখেও আমাদের বিস্মিত হওয়ার ক্ষমতা অনেক কম, যদি তা না হতো তাহলে আমরা বুঝতে পারতাম, একটি শিশুর জন্ম থেকে একজন বৃদ্ধ মানুষের মৃত্যু পর্যন্ত সব কিছুই নিপুণ কারিগরিতার প্রকাশ এবং সাধারণ মানুষের কাছে ব্যাখ্যার অতীত। প্রাচীনকাল থেকেই মানুষের অনুসন্ধিৎসু মন অলৌকিকতার ব্যাখ্যা খুঁজে বেড়িয়েছে। কখনো বিজ্ঞান, কখনো দর্শন বা কখনো স্রেফ ব্যক্তিগত উৎসের মাধ্যমে। একেকজনের উৎসাহের ধরন একেক রকম। শিশুর উৎসাহ আর শিশুর মায়ের উৎসাহ যেমন আলাদা, তেমনি বিভিন্ন বুদ্ধিমত্তার মানুষের প্রশ্ন, প্রাপ্ত উত্তর, বোঝার ক্ষমতা এবং অন্যকে বোঝানোর ক্ষমতা একেক রকম। জ্ঞানের কয়েক রকম স্তরের কারণেও এ রকম হতে পারে।
জ্ঞানের স্তর সবার এক রকম নয়। এই স্তরভেদের বেশির ভাগ মানুষের আশপাশের জিনিস এবং ঘটনাগুলো পর্যবেক্ষণ করার ক্ষমতা অনেক বেশি, তার চেয়ে কমসংখ্যক মানুষের আবার এই গুণের সাথে বিশেষ আরো কিছু গুণ থাকে, যেমন কেউ পদার্থবিজ্ঞানে বা কেউ রসায়নে খুব ভালো, কিছু মানুষ আবার অতিরিক্ত ক্ষমতাপ্রাপ্ত হন, যেমন কেউ লিখতে পারেন, কেউ ছবি আঁকতে পারেন, কেউ ভালো বিজ্ঞানী। এই জ্ঞানেরই সর্বোচ্চ পর্যায়ে একজন মানুষ এই পার্থিব জগতের বাইরেরও কিছু আলাদা তথ্যপ্রাপ্ত হন। যেমন হয়েছিলেন নবী-রাসূলগণ।
এরা শুধু একজন বিজ্ঞানী বা দার্শনিক হয়েই আসেননি, বরং এঁদের প্রজ্ঞার কাছে নত হয়েছিল পুরো মানবসভ্যতা। এঁরা মানুষের জন্য, মানবতার জন্য আশীর্বাদ হয়ে এসে যা কিছু মানুষের জন্য অকল্যাণকর, যা কিছু মানুষের মর্যাদার জন্য অপমানকর তা থেকে মানুষকে সরে দাঁড়াতে উপদেশ দিয়েছেন। আর যা কিছু মানুষের জন্য শোভন, মানুষের নিকটদূর ও বহুদূরের ভবিষ্যতের জন্য মঙ্গলজনক তা করতেই মানুষকে পরামর্শ দিয়েছেন। এঁরা এসেছিলেন মানুষকে নিঃস্বার্থভাবে ভালোবাসতে। এসেছিলেন মানুষকে ভালো আর মন্দ শেখাতে, এসেছিলেন মানুষকে ন্যায় আর অন্যায়ের পার্থক্য বোঝাতে। আর ন্যায়পরায়ণ জীবন যাপন করতে মানুষকে উদ্বুদ্ধ করতে। জ্ঞানের সর্বোচ্চ পর্যায়ের এই যে মানুষেরা পৃথিবীর মানুষকে এবং মানবসভ্যতাকে দান করেছেন নতুন মাত্রা। তারা কিন্তু সবাই একটি সাধারণ কথা বলেছেন আর তা হলো- আল্লাহ। ঈশ্বর, ভগবান বা মহান সৃষ্টিকর্তার কাছে মাথা নত করতে বলেছেন। মহান স্রষ্টার প্রতিনিধি এ মানুষেরা মানুষকে প্রকৃত মর্যাদার কথা বুঝিয়েছেন, বলেছেন, সৃষ্টিকর্তার কাছে আত্মসমর্পণ করাতেই মানুষের প্রকৃত সম্মান আর মানুষের প্রকৃত শান্তি।
আদিমকাল থেকেই একাধারে বা বলতে গেলে সমন্তরালভাবেই দুই ধরনের মানুষ পৃথিবীতে রয়েছে, একদল মহান সৃষ্টিকর্তাকে বিশ্বাস করে তাঁর কাছে নত করেছেন, আর দ্বিতীয় দল- যারা সৃষ্টিকর্তার সাথে প্রকাশ্যে বা অপ্রকাশ্যে বিদ্রোহ করেছে। যারা তাঁর কাছে নত করেছেন, তাঁরা যে ধর্মেরই হোন না কেন নৈতিকতাকে এবং নৈতিকতাবোধকে নিজেদের জন্য অপরিহার্য করে নিয়েছেন, আর দ্বিতীয় শ্রেণীর মানুষ নিজেদের পার্থিব চাওয়াকেই নিজেদের প্রভুু বানিয়ে নিয়েছেন।
এ দুই দলের বিরোধ আদিমকাল থেকে আজ পর্যন্ত চলছে। আজকের দিনে আমরা যদি সমগ্র পৃথিবীর দিকে তাকাই, তাহলে দেখব, এ দুই শ্রেণীর লোকেরাই বিদ্যমান। কেউ নৈতিক ভিত্তির ওপর নিজেদের প্রতিষ্ঠিত করেছে, আবার কেউ বা নীতিনৈতিকতাকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে নিজেদের প্রবৃত্তির দাসত্ব করে চলেছে। মানুষ সমাজবদ্ধ প্রাণী, সে একা বাস করতে পারে না। তাই যারা নৈতিকতা চর্চা করেন, তারা যেমন চান তাদের আশপাশের মানুষেরাও সুন্দর ও নৈতিকতার ভেতরে থাকুক। তেমনি যারা নিজেদের প্রবৃত্তির দাসত্ব করেন, তারাও আশপাশের মানুষকে নিজেদের মতো করে তৈরি করতে চান। এখান থেকেই শুরু হয় পুরো সমাজের ঘুণে ধরা। একজন চোর যে চুরি করে সে কি এই চৌর্যবৃত্তিতে একাই নিযুক্ত থাকে? না, তারও কিছু সহায়ক লাগে। আর কিছু না হোক, ঘরে তার স্ত্রীকে অন্তত লাগে যে তার চুরি করা সম্পদ লুকিয়ে রাখতে সাহায্য করবে। ব্যভিচারী একা ব্যভিচার করতে পারে না, তারও সঙ্গী লাগে।
আমাদের সমাজে এ রকম কিছু মানুষ আজকাল দেখা যাচ্ছে, যারা এ রকম কোনো নীতিনৈতিকতার ধার নিজেরাও ধারেন না এবং একই সাথে অন্যদেরও উৎসাহিত করেন ধার না ধারার। ফেসবুক থেকে শুরু করে পত্রপত্রিকা সর্বত্রই তাদের বিচরণ। প্রগতির নামে আর ব্যক্তিস্বাধীনতা চর্চার নামে তারা শুধু অনৈতিক কাজই করে যাচ্ছেন না, আমাদের হাজার বছরের ঐতিহ্যের, পারিবারিক ও সামাজিক ব্যবস্থাপনা ধ্বংসের ব্যবস্থা করছেন। তারা কেউ বা নারীস্বাধীনতা বলতে শুধুই অবাধ যৌনাচার আর গর্ভপাতের স্বাধীনতাকেই বোঝান, কেউ বা আবার সমকামিতার মতো ব্যাপারকেও প্রকাশ্যে আনতে পিছপা হন না। তাদের আচরণে পরিবার ব্যবস্থার প্রতি কোনো সম্মানবোধ নেই, সমাজের প্রতি দায়বদ্ধতা নেই, আছে প্রগতিশীলতা আর ব্যক্তিস্বাধীনতা চর্চার নামে মদ, গাঁজা আর ব্যভিচারের জোয়ারে গা ভাসিয়ে দেয়া। তারা তাদের এই জীবনকেই মনে করছেন আধুনিকতা আর বুদ্ধিবৃত্তি চর্চার উৎকর্ষ মাধ্যম।
অন্য দিকে পৃথিবীতে যারা আলো এনেছিলেন, সভ্যতাকে করেছিলেন বিকশিত, এই পৃথিবী তার শেষ দিনটি পর্যন্ত তাদের কাছে কৃতজ্ঞ থাকবে, সেইসব স্রষ্টায় সমর্পিত ও জ্ঞানী ব্যক্তিদের জ্ঞান ও আদর্শকে তোয়াক্কা না করে আত্ম-অহঙ্কারে নিমজ্জিত থেকে তারা নিজেরা তো ধ্বংসের দিকে যাচ্ছেনই, আমাদের সমাজ ও পৃথিবীকেও কলুষিত করছেন।
বিজ্ঞানের ভাষায় আমরা জানি যে প্রত্যেক ক্রিয়ারই একটি সমান ও বিপরীত প্রতিক্রিয়া থাকে। নৈতিকতাবিবর্জিত যেসব মানুষ আমাদের সমাজে বাস করে সমাজকে কলুষিত করছে, তারা নিজেরা স্বীকার করুক আর না-ই করুক; তারা প্রকৃতিবিরুদ্ধ কাজ করছে। মহান সৃষ্টিকর্তা মানুষকে অত্যন্ত মর্যাদা দিয়ে তাঁর প্রতিনিধি করে পাঠিয়েছেন, সেখানে এই মানুষেরা নিজেদের এবং অন্যান্য মানুষদের পশুর স্তরে নামিয়ে ফেলে প্রকৃতি ও গোটা সৃষ্টিজগতের ওপর অসাধু ক্রিয়া করছে। যার একটি প্রতিক্রিয়া অবশ্যই আছে, তা তারা বিশ্বাস করুক আর না-ই করুক।
আল্লাহ স্পষ্টত বলেছেন, তিনি সীমা লঙ্ঘন পছন্দ করেন না। তাওরাত, বাইবেল ও কুরআনের ভাষায় যে পরকাল রয়েছে, তাতে তো প্রতিদান অবশ্যই রয়েছে। আর এই দুনিয়াতেই সীমাহীন ব্যভিচার ও সমকামিতার প্রতিক্রিয়া পাওয়া যায়। এর ফলেই আজকে পাশ্চাত্য দেশগুলোতে পরিবারব্যবস্থা ভেঙে পড়েছে। প্রতিদিন জন্ম নিচ্ছে অসংখ্য পিতৃপরিচয়হীন শিশু, নারীরা হয়ে পড়ছেন পণ্যের মতো।
এরকম অশ্লীলতার কারণে মহান আল্লাহ লুত আ:-এর জাতিকে ধ্বংস করে দিয়েছিলেন, যার প্রমাণ আছে কুরআনে এবং সেই ঘটনা এখন বিজ্ঞানও স্বীকার করছে। কিছু তথাকথিত শিক্ষিত মানুষ যখন সমাজের মানুষকে ধ্বংসের কাছে নিয়ে যাওয়ার জন্য চেষ্টা করে এবং নিজেদেরকে জ্ঞানী বলে দাবি করে, তখন যেন তারা মনে রাখে- প্রকৃত জ্ঞানী আসলে কারা। মানুষের জন্য বরকত ও আশীর্বাদ কারা নিয়ে এসেছিলেন এবং কাদের নিজেদের জীবনের ত্যাগের ফসল আমাদের আজকের এই মানবসভ্যতা।
আমরা যে মানুষ মানুষের শরীরের অলৌকিক কাঠামোই এখন পর্যন্ত আবিষ্কার করতে পারিনি। পারিনি মহাশূন্যকে পুরোপুরি চিনতে, তারা যখন মিথ্যে অহঙ্কারে ডুবে গিয়ে নিজেদের জাহির করে; তখন সত্যি ভয় হয়। না জানি কখন আমরাও ধ্বংস হয়ে যাই!
©somewhere in net ltd.