নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

এই দেশ আমার আপনার । আসুন আমরা দেশকে ভালবাসি।

জ্বলন্ত আলো

জ্বলন্ত আলো › বিস্তারিত পোস্টঃ

তুরস্কে সেনাবাহিনীর রাষ্ট্র দখলের ব্যর্থ চেষ্টা: এক প্রত্যক্ষদর্শী বাঙ্গালীর বর্ণনা

১৬ ই জুলাই, ২০১৬ বিকাল ৩:৫৯



মিশরের মতোই তুরস্কে নির্বাচিত সরকারকে হটিয়ে সেনাবাহিনী রাষ্ট্র দখলের চেষ্টা করল। কিন্তু সরকার, রাজনৈতিকদল ও জনগনের প্রচেষ্টায় ব্যর্থ হল সে অভ্যুত্থান। আর সেই অভ্যুত্থানরত রাতের কথা ফেসবুকে বর্ণনা করেছেন এক প্রবাসী বাঙ্গালী। প্রত্যক্ষদর্শী হওয়ার তার বর্ণনাটি তুলে ধরা হলো।

তুরস্কে ব্যর্থ ক্যু: শ্বাশরুদ্ধকর একটি কালো রাত!

রাত তখন ১০.৩০ মিনিট। ক্যান্টিনে রাতের খাবার খেতে যাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছি। হঠাৎই আনকারার আকাশে যুদ্ধ বিমানের প্রচুর শব্দ। ভাবলাম, কী হল? যুদ্ধ-টুদ্ধ লাগলো নাকি? ক্যান্টিদের দিকে বের হলাম। পথিমধ্যে অন্যান্য লোকজনও দেখী বিষয়টা খেয়াল করছে। জিজ্ঞাসা করলাম, কী হইছে? কেউই উত্তর দিতে পারলো না।

ক্যান্টিনে টিভির ব্রেকিং নিউজ দেখলাম যে, ইস্তাম্বুলের এশিয়া-ইউরোপ সংযোগ ব্রিজ বন্ধ করে সেনাবাহিনী গাড়ী নিয়ে দাড়িয়ে আছে। তখনো ভাবছিলাম, সম্ববত সন্ত্রাসী হামলা হইছে..! তাই সতর্কতা।

কিন্তু না..! কিছুক্ষণের মধ্যেই পরিস্থতি পাল্টে যেতে লাগলো। ইস্তাম্বুলের আতাতুর্ক এয়ারপোর্ট বন্ধ করে সেনা ট্যাঙ্ক এয়ারপোর্টের দখল নিল। কিছুক্ষণ পর প্রধনমন্ত্রী বিনালী ইলদিরিম মিডিয়াকে জানালেন, সেনা বাহিনীর একটি অংশ ক্যু করেছে। কিন্তু আমরা তাদেরকে ছাড় দিবনা।

কিন্তু প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যে কোন ভরসা পেলাম না। সবকিছু সেনাবাহিনীর দখলে করে নিচ্ছে। একে পার্টির অফিস, প্রেসিডেন্ট অফিস, সরকারী নানা অফিস এমনকি রাষ্ট্রীয় টিভি। রাত ১২ টার কিছু পরে রাষ্ট্রীয় টিভি থেকে ঘোষণা এল যে, "সেনা শাসন জারী করা হয়েছে। কেউ যেন রাস্তায় বের না হয়। এখন থেকে সেনাবাহিনী দেশ চালাবে"।
পুরো হতবম্ব। কী হবে..! আমাদের ডরমেটারীর সবাই ক্যান্টিনে টিভির সামনে।পাশের রাস্তা দিয়ে সেনা ট্যাঙ্ক মুহুর্তে মুহুর্তে টহল দিচ্ছে। সবার মনে ভয় আর আফসোস! দেশটা শেষ!

এদিকে প্রেসিডেন্ট মিডিয়াতে বক্তব্য দিতে পারছেন না। উনি ব্যক্তিগত সফরে অন্য শহরে ছিলেন। রাত আনুমানিক ১২.৩০ এর দিকে একটি মিডিয়াতে স্বাইপিতে প্রেসিডেন্ট ৩/৪ মিনিটের একটি বক্তব্য দিতে সক্ষম হন। এতে তিনি সকলকে রাস্তায় নেমে আসার আহবান জানান এবং ইস্তাম্বুলের এয়ারপোর্টে আসতে বলেন। উনি স্পষ্ট বলেন যে, আমি নির্বাচিত প্রেসিডেন্ট, কোন বিপদগামী কাউকে সফল হতে দিবনা। আপনারা এয়ারপোর্টে আসেন, আমি আসতেছি। আপনাদের সাথে রাস্তায় নামব।

এরদোয়ানের এই ঘোষণার ১০-১৫ মিনিটের মধ্যেই দেখলাম জনগন রাস্তায় নামা শুরু করল। ক্যান্টিন থেকেই নিজ চোখে দেখলাম কিভাবে সেনা ট্যাঙ্কের সামনে লোকজন শুয়ে পরলো। ট্যাঙ্কের গতিরোধ করার চেষ্টা করল। পুরো তুরস্কের কয়েক মিলিয়ন লোক রাস্তায়। সেনা বাহিনীর সাথে অনেকটা যুদ্ধ হচ্ছে। সেনাবাহিনী কয়েকটি জায়গায় উপর থেকে বোমা বর্ষণ করছে

সকল রাজনৈতিক দল ঐক্যবদ্ধভাবে সরকারের পক্ষ নিল এবং ক্যুয়ের বিরুদ্ধে তাদের অবস্থান জানালো। তারপরও পরিস্থিতি পুরোই নিয়ন্ত্রনের বাহিরে। তবে ইতিমধ্যে এরদোয়ানকে রিসিভ করতে কয়েক মিলিয়িন লোক ইস্তাম্বুল এয়ারপোর্টে অবস্থান নিয়ে সেনা ট্যাঙ্ক দখল করে নিল। জনজোয়ারে সেনাবাহিনী এয়ারপোর্ট থেকে পিছু হটল।

রাত ৪ টার দিকে প্রেসিডেন্ট যখন এয়ারপোর্টে পৌছলেন তখনো ইস্তাম্বুলের বিভিন্ন জায়গায় গুলির শব্দ পাওয়া যাচ্ছিল। এরদোয়ান প্রেস কনফারেন্সে বক্তব্য দিলেন এবং জানালেন তারা ব্যর্থ হয়েছে। এখনো যারা ব্যারাকের বাহিরে আছে তাদেরকে ব্যারাকে ফিরে যেতে আহবান জানান।আর এ ঘটনা ফেতুল্লাহ গুলেনের নেতৃত্বে সংগঠিত হয়েছে বলে জানান।
আমরা লাইভ দেখতেছিলাম। এরদোয়ানের মাথার উপর আই মিন এয়ারপোর্টের উপর বিদ্রোহী যুদ্ধবিমান তথনো ব্যপক মহড়া দিচ্ছে। যাক, এরমধ্যে পুলিশ, সেনাপ্রধানের নেতৃত্বে একটি গ্রুপ, নৌবাহিনী, স্পেশাল ফোর্স সরকারের পক্ষে তাদের অবস্থান ব্যক্ত করলো।যদিও সেনাপ্রধান বিদ্রোহীদের হাতে জিম্মি ছিল।

সকাল হতে লাগল। ভোর ৫টা- ৬ টার দিকে ইস্তাম্বুলের তাকসিম স্কয়ার, বসফরাস ব্রিজ, আরকারার প্রেসিডেন্ট প্যালেসসহ বিভিন্ন স্থান থেকে প্রায় ১৫০০ বিদ্রোহী সেনা সদস্যকে গ্রেফতার করা হয়েছে। পরিস্থতি এখন পুরোপুরি সরকারের নিয়ন্ত্রনে।তবে জনগন এখনো রাস্তায়। তবে সেনবাহিনীর সাথে মোকাবেলা করতে গিয়ে শহীদ হয়েছে ১৭ পুলিশসহ ৬০ জনের মত সাধারণ জনতা। অবশ্য এই সংখ্যা আরো বাড়তে পারে। আহত শতশত মানুষ।

এ ক্যুতে সফল হলে তুরস্কে আরেক সিসির জন্ম নিত, হয়ে যেত মিশর। কিন্তু গতকালের ক্যু সফলভাবে মোকাবেলা করতে পারায় তুরস্কের ইসলাম ও গণতন্ত্র মজবুত হল। অবিশ্বাস্যভাবে সকল জনতার মুখে তাকভীর, আল্লাহু আকবরের মুহুর্মুহু স্লোগানে মুখোরিত ছিল পুরো তুরস্ক। রাত ১ টা থেকে টানা তুরস্কের মসজিদগুলো থেকে আযান প্রচারিত হচ্ছিল। মসজিদ থেকে লোকজনকে রাস্তায় নামার জন্য আহবান ও সাহস দেওয়া হচ্ছিল। মানে একটা বিপ্লব।

প্রেসিডেন্ট এরদোয়ানের সাহসী নেতৃত্ব, সকল রাজনৈতিক দলের ঐক্যবদ্ধ ভূমিকা এবং জনতার আত্মত্যাগের এই বিরল দৃষ্টান্ত সমসাময়িক রাজনৈতিক ইতিহাসের মাইলফলক হয়ে থাকবে।

view this linkসূত্র-প্রত্যক্ষদর্শী বাঙ্গালীর ফেসবুক

মন্তব্য ১৫ টি রেটিং +৩/-০

মন্তব্য (১৫) মন্তব্য লিখুন

১| ১৬ ই জুলাই, ২০১৬ বিকাল ৪:৩০

বিদ্রোহী ভৃগু বলেছেন: জনগণের ঐক্যবদ্ধ শক্তির রুপ দেখল বিশ্ব!

ব্রাভো তুরস্কের আমজনতা। স্যালুট।

তোমাদের দেশপ্রেম তোমাদের সাহস রুপকথাকে হার মানিয়েছে।

১৬ ই জুলাই, ২০১৬ বিকাল ৪:৪১

জ্বলন্ত আলো বলেছেন: শুধু জনগনই নয় রাজনৈতিক সকল দল এক মঞ্চে । রক্ষা হল দেশ। এটা এযুগের দেশ প্রেমের মডেল হয়ে থাকল। ধন্যবাদ

২| ১৬ ই জুলাই, ২০১৬ বিকাল ৪:৪৫

ব্লগ সার্চম্যান বলেছেন: অসাধার ঘটনা বর্ননা দিয়েছেন ।

১৬ ই জুলাই, ২০১৬ বিকাল ৪:৪৭

জ্বলন্ত আলো বলেছেন: ধন্যবাদ

৩| ১৬ ই জুলাই, ২০১৬ বিকাল ৪:৫৮

আশরাফুল ইসলাম (মাসুম) বলেছেন: এই হলেেন সত্যিকারের জননায়ক আর এই হলো তার প্রতি জনগনের সত্যিকারের ভালবাসা!অসাধারণ ঘটনা!

৪| ১৬ ই জুলাই, ২০১৬ বিকাল ৪:৫৮

আশরাফুল ইসলাম (মাসুম) বলেছেন: এই হলেেন সত্যিকারের জননায়ক আর এই হলো তার প্রতি জনগনের সত্যিকারের ভালবাসা!অসাধারণ ঘটনা!

১৬ ই জুলাই, ২০১৬ বিকাল ৫:১৬

জ্বলন্ত আলো বলেছেন: ধন্যবাদ ভাই আপনাকে।

৫| ১৬ ই জুলাই, ২০১৬ সন্ধ্যা ৬:১৪

চাঁদগাজী বলেছেন:



ক্যু তুরস্কে বহু হয়েছে, আরো হবে; তুরস্কের বর্তমান প্রেসিডেন্ট তুরস্কের আসল পথ ছেড়ে এশিয়ায় প্রবেশ করছে, সামনে ভয়ংকর দিন আসছে।

১৬ ই জুলাই, ২০১৬ সন্ধ্যা ৬:৫৭

জ্বলন্ত আলো বলেছেন: তুরস্কের বর্তমান প্রেসিডেন্ট তুরস্কের আসল পথেই রয়েছেন। ভুল পথে থাকলে জনগন তার সাথে থাকত না। আর এরদোগান তুরস্কের সকল শাসক থেকে জনপ্রিয়। সামনে যদি ভয়ংকর দিন থেকেও থাকে তাহলে সেটা ইসলাম পন্থি হবার কারণে অন্য কোন কারণ নয়।

৬| ১৬ ই জুলাই, ২০১৬ সন্ধ্যা ৬:৪৪

বিদুৎ বলেছেন: এই হল দেশপ্রেম । সালাম তাদের ।

১৬ ই জুলাই, ২০১৬ সন্ধ্যা ৬:৫৮

জ্বলন্ত আলো বলেছেন: দেশপ্রেমের জ্বলন্ত নিদর্শন। ধন্যবাদ।

৭| ১৬ ই জুলাই, ২০১৬ সন্ধ্যা ৬:৫২

জুলহাস খান বলেছেন: সালাম দেশপ্রেমিদের।

১৬ ই জুলাই, ২০১৬ সন্ধ্যা ৬:৫৯

জ্বলন্ত আলো বলেছেন: ধন্যবাদ।

৮| ০৯ ই অক্টোবর, ২০১৬ রাত ৮:৩০

চাঁদগাজী বলেছেন:



বাংগালীরা কি দেখে, কি বলে, আগাগোড়া নেই

০৪ ঠা জানুয়ারি, ২০১৭ সকাল ১১:৫৩

জ্বলন্ত আলো বলেছেন: হুম. সেটা আপনাকে দেখলেই বোঝা যায়।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.