![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
এমন স্থানে এমন একটি ঘর আসলে যে কারো মনেই খটকা লাগতে পারে।স্যাতস্যাতে অন্ধকার একটি ঘর।পর্যাপ্ত আলো বাতাস প্রবেশের কোনো ব্যবস্থা নেই। ঘরের মাঝবরাবর প্রবাহিত ড্রেন। কালো কুচকুচে পানি। নাম না জানা অসংখ্য কীট কিলবিল করছে। বোঝাই যাচ্ছে রোগ- জীবাণুর অনুকূল পরিবেশ।
ঘর কিন্তু নেই কোনো বিছানা বা বালিশ কিংবা পাটি বা চাদর। তাহলে এই ঘরটা আসলে কেন তৈরি! একজন মানুষ কিন্তু ঠিকই শুয়ে আছে। একপ্রস্থ কাপড় তার গায়ে জড়ানো। তার কোনো বোধশক্তি আছে বলে মনে হয়না। সে ঘরেই দরজা খুলে প্রবেশ করে একজন। এখন আলোতে ভিতরের পরিবেশ কিছুটা উজ্জ্বল হয়। অশীতিপর বৃদ্ধা এক নারী। আগন্তুক নির্দয়ভাবে তার গায়ে ধাক্কা দেয়। বৃদ্ধা ক্ষীণ কন্ঠে সাঁড়া দেয়। চোখ মেলে তাকায়।
‘কিরে বুড়ি তোরে না কইছি ড্রেনের পাড়ে শুয়ে থাকতে! তুই কোনায় গেলি কেন!’
বৃদ্ধার মনে হয় না ওখান থেকে স্থান পরিবর্তনের মতো শক্তি আছে। আগন্তুক বৃদ্ধার দুই হাত টেনে ড্রেনের পাশে আছড়ে ফেলে। বৃদ্ধা ককিয়ে উঠে যন্ত্রণায়। কিন্তু মুখে কোনো কথা নেই।
‘ঘন্টাখানেক পর কালাম আসতাছে। তোরে দিয়া আসবে চৌরাস্তায়। আর বুড়ি ভালো কইরা শোন- তুই নাকি মরার মতন পইড়া থাকস! কারো কাছে হাত পাতস না। আরে মানুষ কি না চাইলে কিছু দেয়! আজকে তোরে পাঁচশ টাকা কামাই বেশি আনতেই হইবো। নাইলে কিন্তু ড্রেনের মধ্যে চুবায়া রাখুম।’
কথাগুলো বৃদ্ধার কানে প্রবেশ করেছে কিনা বোঝা গেলনা। নিথর হয়ে পড়ে আছে। এমন সময় ঘরের মধ্যে খাবার নিয়ে প্রবেশ করে আরেকজন।
‘আরে বুড়ির শরীরে একটা ঘা মার। তারপর ড্রেনে চুবায়া রাখিস। ভালো গতর দেখলে কি আর কেউ দান-খয়রাত করে!’
‘নে বুড়ি খায়া রেডি হ!’
খাবার বলতে দুটি শুকনো রুটি। মাটিতে ছুড়ে ফেলে দেয়। যেমন করে মানুষ কুকুরের দিকে ছুড়ে ফেলে।
বৃদ্ধা রুটির দিকে তাকায়। হাত বাড়িয়ে একটা মুখে তুলে নেয়। ভাবলেশহীন ভাবে খেতে থাকে। বোঝাই যাচ্ছে অনেক ক্ষুধার্ত। খাওয়ার শক্তিটুকুও যেন তার নেই। তার চোখ আকাশের পানে। ঘরের চালা ভেদ করে সে যেন আকাশ দেখতে পাচ্ছে। আকাশ তো নিশ্চয়ই তার লক্ষ্য নয়। অসহায় মানুষ উপরে একজনকেই খুঁজে ফিরে। তার কাছ থেকে কি কোনো বার্তা এসেছে! কেউ কি তাকে জানালো- বুড়ি তুই এসব নিয়ে মন খারাপ করিসনা। এটা দুনিয়া। নিষ্ঠুরতম একটা স্থান। তোর প্রতি আমি সদয় বলেই তোর সব অনুভ’তি আমি লোপ করেছি।
tanim zubair
All rights reserved
©somewhere in net ltd.