নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আমি মুসলমান, আমি শ্রেষ্ঠ

জীবন কখনোই সংগ্রাম বিহীন হতে পারে না

বিদ্রোহী বীর

প্রতিটি জিনিসের শেষ আছে, একমাত্র আল্লাহ পাক উনার ও উনার হাবীব ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাদের মুহব্বত ও সন্তুষ্টি চিরস্থায়ী।

বিদ্রোহী বীর › বিস্তারিত পোস্টঃ

ভাগ্য রজনী ও দোয়া কবুলের রাত “পবিত্র শবে বরাত”

২১ শে জুন, ২০১৩ রাত ৮:৩৬

কুরআন শরীফ উনার আয়াত শরীফ দ্বারাই পবিত্র শবে বরাত’ প্রমাণিত

শবে বরাত বা ভাগ্য রজনীকে স্বয়ং আল্লাহ পাক তিনি স্বীয় কুরআন শরীফ উনার সূরা ‘আদ দোখান’ উনার ৩-৪ নম্বর আয়াত শরীফে ليلة المبارك (বরকত পূর্ণ রাত) হিসেবে উল্লেখ করে মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ মুবারক করেন-

انا انزلناه فى ليلة مباركة انا كنا منذرين. فيها يفرق كل امر حكيم

অর্থ: “নিশ্চয়ই আমি উহা (কুরআন শরীফ) এক রবকতপূর্ণ রাত্রিতে নাযিল করেছি। অর্থাৎ নাযিল করার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। নিশ্চয়ই আমি সতর্ককারী, ওই রাত্রিতে সমস্ত হিকমতপুর্ণ কাজসমূহের বণ্টন করা হয় তথা বণ্টনের ফায়সালা করা হয়।” (সূরা আদ দোখান-৩-৪)

‘লাইলাতুম মুবারাকাহ’ দ্বারা অনুসরনীয় মুফাসসিরীনে কিরাম উনারা শবে বরাতকেই বুঝিয়েছেন।



ليلة مباركة দ্বারা বিশ্ববিখ্যাত ছাহাবী হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমা এবং হযরত ইকরামা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনারা বলেন-

هى ليلة النصف من شعبان وسمى ليلة الرحمة والليلة المباركة وليلة الصك

অর্থ: “লাইলাতুম মুবারাকা দ্বারা লাইলাতুন নিছফি মিন শা’বান তথা অর্ধ শাবানের রাত (শবে বরাত)কে বুঝানো হয়েছে। এবং উহার নামে নামকরণ করা হয়েছে যেমন ليلة الرحمة (লাইলাতুর রহমত) তথা রহমতের রাত, ليلة المباركة (লাইলাতুল মুবারাকাতু) তথা বরকতের রাত। ليلة الصك (লাইলাতুছ ছেক) ভাগ্য লিপিবদ্ধকরণের রাত তথা ভাগ্য রজনী।”

আর ليلة مبارك (বরকতপূর্ণ রাত) দ্বারা শবে বরাত তথা ভাগ্য রজনীকে বুঝানো হয়েছে তার যথার্থ প্রমাণ বহন করে তার পরবর্তী আয়াত শরীফের يفرق (বণ্টন করা হয়।) শব্দ দ্বারা।

কেননা তাফসীর জগতের সকল তাফসীরে সমস্ত মুফাসসীরীনে কিরাম উনারা يفرق শব্দের তাফসীর করেন يكتب (লেখা হয়) يفصل (ফায়ছালা করা হয়) يتجوز (বণ্টন বা নির্ধারণ করা হয়) يبرم (বাজেট করা হয়) فيصله‘ (নির্দেশনা দেয়া হয় বা ফায়ছালা করা হয়) ইত্যাদি শব্দের মাধ্যমে।

কাজেই يفرق শব্দের অর্থ ও তার ব্যাখ্যার দ্বারা আরো স্পষ্টভাবে ফুটে উঠল যে, ليلة المباركة দ্বারা ليلة النصف من شعبان অর্ধ শা’বানের রাত, বা শবে বরাত তথা ভাগ্য রজনীকে বুঝানো হয়েছে। যেই রাতে সমস্ত মাখলুকাতের ভাগ্যগুলো সামনের এক বৎসরের জন্য লিপিবদ্ধ করা হয়, আর সেই ভাগ্য লিপি অনুসারে রমাদ্বান মাসে ليلة القدر বা শবে ক্বদরে তা চালু করা হয়। এ জন্য

ليلة النصف من شعبان

অর্ধ শাবানের রাতকে ليلة التجويز (নির্ধারণের বা বৈধকরণের রাত) এবং ليلة القدر কে ليلة التنفيذ (নির্ধারিত ফয়ছালা কার্যকরী করার রাত বা বৈধকরণ বিষয়ের কার্যকরীকরণের রাত) বলা হয়। (তাফসীরে মাযহারী, তাফসীর খাযেন, তাফসীরে রুহুল মায়ানী ও রুহুল বায়ান)

বিশ্ববিখ্যাত ও সুপ্রসিদ্ধ তাফসীর, তাফসীরুল খাযিন এর ৪র্থ খণ্ডের ১১২ পৃষ্ঠায় আরো উল্লেখ আছে- “নিশ্চয়ই আমি এক বরকতময় রাত্রিতে উহা অর্থাৎ পবিত্র কুরআন শরীফ অবতীর্ণ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। তবে লাইলাতুম মুবারাকা দ্বারা অর্ধ শা’বান তথা ১৫ই শা’বানের রাতকে (শবে বরাত) উল্লেখ করা হয়েছে।

কেননা উম্মুল মু’মিনীন হযরত আয়িশা ছিদ্দীক্বা আলাইহাস সালাম উনার থেকে হাদীছ শরীফ বর্ণিত আছে। তিনি বলেন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ করেন, নিশ্চয়ই মহান আল্লাহ পাক তিনি অর্ধ শা’বানের রাতে (১৫ই শা’বান রাতে) পৃথিবীর নিকটতম আকাশে অবতরণ করেন, অতঃপর মহান আল্লাহ পাক তিনি ওই রাতে বনী ক্বলব গোত্রের বকরীর পশমের সংখ্যা পরিমাণ অধিক সংখ্যক বান্দাদেরকে ক্ষমা করেন। এই হাদীছ শরীফখানা হযরত ইমাম তিরমিযী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বর্ণনা করেন। (তিরমিযী শরীফ, মিশকাত শরীফ)

হাদীছ শরীফ-এ শবে বরাতের অশেষ ফযীলত বর্ণিত হয়েছে। যেমন এ প্রসঙ্গে হাদীছ শরীফে বর্ণিত রয়েছে-

ان الدعاء يستجاب فى خمس ليال اول ليلة من رجب وليلة النصف من شعبان وليلة القدر المباركة وليلة العيدين

অর্থ: নিশ্চয়ই পাঁচ রাত্রিতে দোয়া নিশ্চিতভাবে কবুল হয়ে থাকে। (১) রজব মাসের প্রথম রাতে, (২) শবে বরাতের রাতে, (৩) ক্বদরের রাতে, (৪) ঈদুল ফিতরের রাতে, (৫) ঈদুল আযহার রাতে।”

হাদীছ শরীফ-এ আরো ইরশাদ হয়েছে-

عن على رضى الله تعالى عنه قال قال رسول الله صلى الله عليه وسلم اذا كانت ليلة النصف من شعبان فقوموا ليلها وصوموا يومها فان الله تعالى ينزل فيها لغروب الشمس الى السماء الدنيا فيقول الامن مستغفر فاغفرله الا مسترزق فارزقه الا مبتلى فاعافيه الا كذا الا كذا حتى يطلع الفجر.

অর্থ: হযরত আলী আলাইহিস সালাম উনার থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন্ নাবিয়্যীন হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ করেন, যখন শা’বানের পনের তারিখ রাত্রি উপস্থিত হবে তখন তোমরা উক্ত রাত্রিতে নামায আদায় করবে এবং দিনে রোযা রাখবে। কেননা নিশ্চয়ই আল্লাহ পাক তিনি উক্ত রাত্রিতে সূর্যাস্তের সময় পৃথিবীর আকাশে আসেন অর্থাৎ রহমতে খাছ নাযিল করেন। অতঃপর ঘোষণা করেন, কোন ক্ষমা প্র্রার্থনাকারী আছ কি? আমি তাকে ক্ষমা করে দিব।” কোন রিযিক প্রার্থনাকারী আছ কি? আমি তাকে রিযিক দান করব।” কোন মুছিবতগ্রস্থ ব্যক্তি আছ কি? আমি তার মুছিবত দূর করে দিব।” এভাবে ফজর পর্যন্ত ঘোষণা করতে থাকেন।” সুবহানাল্লাহ! (ইবনে মাজাহ্, মিশকাত)



পরিশিষ্ট

১. শবে বরাত’ কথাটি আরবী এবং ফার্সী ভাষার সংমিশ্রনে গঠিত। যার অর্থ হচ্ছে ভাগ্য রজনী বা মুক্তি তথা নাজাতের রাত।

২. পবিত্র কুরআন শরীফ-এ শবে বরাতকে ‘লাইলাতুম মুবারাকাহ’ অর্থাৎ বরকতময় রজনী বলে উল্লেখ করা হয়েছে।

৩. হাদীছ শরীফ-এ শবে বরাতকে ‘লাইলাতুন নিছফি মিং শা’বান’ অর্থাৎ শা’বানের মধ্য রাত বা শা’বানের ১৫ তারিখ রাত বলা হয়েছে।

৪. বিশ্বখ্যাত তাফসীর শরীফ, হাদীছ শরীফ, হাদীছ শরীফ-এর ব্যাখ্যাগ্রন্থ ফিক্বাহ ও ফতওয়ার কিতাবে শবে বরাত-এর উল্লিখিত নাম ছাড়াও আরো বহু নাম উল্লেখ রয়েছে। যেমন লাইলাতুল ক্বিসমাহ, লাইলাতুত তাজবীয, লাইলাতুল ফায়ছালাহ, লাইলাতুল আফওি, লাইলাতুল কারামি, লাইলাতুত তওবাহ, লাইলাতুন নাদাম ইত্যাদি।

৫. পবিত্র কুরআন শরীফ-এর সূরা দুখানের ৩-৪ নং আয়াত শরীফ-এ বর্ণিত ليلة مباركة লাইলাতুম মুবারাকাহ দ্বারা পবিত্র শবে বরাতকেই বুঝানো হয়েছে। যা বিশ্বখ্যাত ও নির্ভরযোগ্য অসংখ্য তাফসীরের কিতাবে বর্ণিত রয়েছে।

৬. একাধিক ছহীহ হাদীছ শরীফ এ বর্ণিত ليلة النصف من شعبان লাইলাতুন নিছফি মিং শা’বান’ দ্বারা পবিত্র শবে বরাতকেই বুঝানো হয়েছে। অর্থাৎ শা’বান মাসের ১৫ তারিখ রাত অর্থাৎ ১৪ তারিখ দিবাগত রাতটিই মূলত শবে বরাত। যা ছিহাহ সিত্তাহসহ অসংখ্য নির্ভরযোগ্য ও বিশ্বখ্যাত হাদীছ শরীফ ও হাদীছ শরীফ-এর ব্যাখ্যাগ্রন্থসমূহে উল্লেখ আছে।

৭. যে বা যারাই শবে বরাতকে বিদয়াত বলে থাকে তারা সকলেই কাযযাব, গোমরাহ, বিদয়াতী, ধর্মব্যবসায়ী ও উলামায়ে’ছূর অন্তর্ভুক্ত। তাদের কথা গ্রহনযোগ্য ও অনুসরণীয় নয়।

মূল কথা হলো কুরআন শরীফ, হাদীছ শরীফ, ইজমা ও ক্বিয়াসের দৃষ্টিতে পবিত্র শবে বরাত পালন করা জায়িয তো অবশ্যই বরং সুন্নতে রসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম, সুন্নতে ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম ও সুন্নতে আউলিয়ায়ে কিরাম রহমতুল্লাহি আলাইহিম এর অন্তর্ভুক্ত। তাই শবে বরাতের বিরোধীতা করা কাট্টা কুফরীর অন্তর্ভুক্ত।

মহান আল্লাহ পাক তিনি আমাদের সকলকে অত্র ফতওয়া মুতাবেক আমল করে মহান আল্লাহ পাক এবং উনার হাবীব নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাদের খাছ রেযামন্দি হাছিল করার তাওফীক দান করুন। আমীন।

মন্তব্য ৩ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (৩) মন্তব্য লিখুন

১| ২১ শে জুন, ২০১৩ রাত ৮:৫৬

পরিবেশ বন্ধু বলেছেন: আমিন ছুম্মা আমিন
এ রাত আমাদের মুক্তি ও নাজাতের
হে আল্লাহ এবাদতের যোগ্য করে দাও
আমাদের পাষাণ মন , পুস্প বৃষ্টি হোক রহমতের

২২ শে জুন, ২০১৩ রাত ৯:৫২

বিদ্রোহী বীর বলেছেন: আমিন, ছুম্মা আমিন.......। ধন্যবাদ আপনাকে

২| ২২ শে জুন, ২০১৩ রাত ১০:০১

আহলান বলেছেন: আমিন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.