নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

এপিটাফ \n\nএক নিঃশব্দ প্রচ্ছদে ঢাকা আছে আমার জীবনের উপন্যাস...খুঁজে নিও আমার অবর্তমানে...কোনো এক বর্তমানের মায়াবী রূপকথায়।আমার অদক্ষ কলমে...যদি পারো ভালোবেসো তাকে...ভালোবেসো সেই অদক্ষ প্রচেষ্টা কে,যে অকারণে লিখেছিল মানবশ্রাবণের ধারা....অঝোর

জুল ভার্ন

এপিটাফ এক নিঃশব্দ প্রচ্ছদে ঢাকা আছে আমার জীবনের উপন্যাস... খুঁজে নিও আমার অবর্তমানে... কোনো এক বর্তমানের মায়াবী রূপকথায়। আমার অদক্ষ কলমে... যদি পারো ভালোবেসো তাকে... ভালোবেসো সেই অদক্ষ প্রচেষ্টা কে, যে অকারণে লিখেছিল মানব শ্রাবণের ধারা.... অঝোর শ্রাবণে।।

জুল ভার্ন › বিস্তারিত পোস্টঃ

বিস্মৃতির স্মৃতি....

০৯ ই ফেব্রুয়ারি, ২০২১ সকাল ১১:১৭

বিস্মৃতির স্মৃতি....

আমার বুকের ভেতর একটা বুকপকেট আছে। সেই পকেটে মায়ের মতো বুবু বাসকরে। এই গল্পটা দুই লাইনেই শেষ করে দেওয়া যেত। তবু কিছু কথা বলতে ইচ্ছে করছে- কারোর জন্য নয়, নিজের জন্য। সব মানুষের মতোই জামার ভিতর আস্ত মানুষ থাকে। কিন্তু আমার জামার ভেতর যে মানুষটা তার গল্প ভিন্ন রকম...
আমার জন্মের সময় মাকে হারিয়েছি তাই মায়ের দিকের অনেক নারী আত্মীয় স্বজনরা আমার উপর, আমার জন্মে অসন্তুষ্ট ছিলেন। কিন্তু আমার 'বড়ো মামা মামী' এবং আমাদের পরিবারে আমার আদর স্নেহের কমতি ছিল না। প্রত্যেকটা প্রাণীর মধ্যেই সৃষ্টিকর্তা ষষ্ঠইদ্রীয় অনুভূতি দেন, যা থেকে অনেক কিছু বোঝা যায়। আমিও তা বুঝতে পারতাম। আমি বুঝতে পারতাম কে আমাকে পছন্দ কিম্বা অপছন্দ করে।

চাকুরির সূত্রে বাবা পশ্চিম পাকিস্তান -পূর্ব পাকিস্তান করতেন। আমার দেখভালের জন্য ফুফুরা জোরজবরি করে বাবাকে দিয়ে আমাদের দুই ভাইবোনের জন্য দুই পূত্র সন্তান সহ একজন মা আনালেন। কিন্তু তিনি আমাদের মা নাহয়ে প্রথাগত সৎ মা হলেন। যা আমার জন্য সমস্যা না হলেও(যেহেতু এক বছর বয়সে ভালো মন্দ, সমস্যা প্রকাশ করার বয়স নয়) বুবুর জন্যতো বটেই গোটা পরিবারের জন্য সমস্যা হয়ে দাঁড়ায়। খুব বেশী দুরত্ব বেড়ে যায় আমাদের মামা বাড়ির সাথে...
বুবু আমার চেয়ে প্রায় বছর আটের বড়ো। সেই আট বছরের বড়ো বুবুই ছিলো আমার অন্যতম আশ্রয়। তিনিই ছিলেন আমার মা, বোন, বন্ধু এবং প্রিয় শিক্ষক। মেয়েরা সাধারণত বাবা ঘেঁষা হলেও, বুবুকে দেখেছি ছোট থেকেই ভাই ঘেঁষা হতে। বাবা-মার জন্যও প্রচন্ডরকম স্পর্শকাতর ছিলো। বুবুকে আমি তুমি বলতাম। আমাদের পরিবারে তুমি সম্বোধনটা খুব বেশী প্রচলিত(যা মনের অজান্তেই সোশ্যাল মিডিয়ায় বন্ধুদের সাথে করে ফেলি)। বাবার অনুপস্থিতিতে আমাদের দুই ভাই-বোনের দুইটা পৃথিবী ছিলো। বুবুর পৃথিবীর নাম 'হিমু,' আর আমার পৃথিবীর নাম 'বুবু'!

বুবু ছিলেন "অসাধারণ মেধাবী"- বলতেন বাবা। স্কুল কলেজ বিশ্ববিদ্যালয়ে অংশ নেওয়া প্রতিযোগিতা মূলক সবগুলো ইভেন্টে প্রথম কিম্বা দ্বিতীয় স্থান ধরে রাখতেন। তার সাথে থাকতে থাকতে আমিও যৎসামান্য মেধা পেয়েছিলাম। তাই দুই ভাইবোনের পাওয়া পুরষ্কারে আমাদের বাড়ির বড়ো একটা শোকেস ভর্তি হয়ে গিয়েছিল।
বুবুর স্কুল ছিল অগ্রণী, কলেজ ইডেন এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়- সবকটাই প্রায় পাশাপাশি। কলেজের বিশেষ কোনো অনুষ্ঠানে, একুশে ফেব্রুয়ারি বুবু মায়ের শাড়ী পরে যেতেন। আমার মনে আছে, বুবু প্রথম যেদিন বিশ্ববিদ্যালয়ে ক্লাসে যান সেদিনও মায়ের শাড়ী পরে গিয়েছিলেন। আবার মাস্টার্স পাস করে সিটি কলেজে জয়েন করেছিল প্রভাষক পদে- সেদিনও মায়ের শাড়ী পরে গিয়েছিলেন। বুবু বিশ্বাস করতেন, মায়ের শাড়ী পরলেই তার মধ্যে একটা ঐশ্বরিক শক্তি ভর করে।
আসলে কেউ মা-কে সশরীরে টেনে নিয়ে যায়না, এইভাবে নিয়ে যায় অনেকেই। যেন মা-রা মিশে থাকে পুরোনো শাড়ির ভাঁজে আর প্রবল টেনশনের সময় সন্তানকে নিশ্চিন্ত স্বরে বলে, "চিন্তা করিসনা, আমি সাথেই আছি।"
বাবা চাকরির সুবাদে বাড়িতে না থাকলেও তাঁর অনেক কাপড়, ইউনিফর্ম আলমারি ভর্তি ছিলো। বুবু প্রায়শই আলমারি খুলে বাবা-মা'র ভাজ করা কাপড় বের করে লম্বা শ্বাস টেনে ঘ্রাণ নিয়ে বলতো- "ইশ কী সুন্দর ঘ্রাণ! এই কাপড়ে মা আর আব্বুর ঘ্রাণ পাওয়া যায়"!
আমাকেও কাপড় থেকে মা-আব্বুর ঘ্রাণ নিতে বলতো.....আমি ঘ্রাণ নিয়ে শুধুই ন্যাপথালিনের ঘ্রাণ পেতাম। ন্যাপথলিনের উগ্র গন্ধ আমার ভালো লাগতো না।

আলমারির একটা তাকে যত্ন করে তোলা ছিলো আব্বুর পাঞ্জাবীগুলো। যখন আমি বেশ ছোট, তখন আমি মাঝে মাঝেই বাবার পাঞ্জাবি গায়ে গলাতাম। ছোট্ট শরীর গোটাটা ঢেকে যেত একটা পাঞ্জাবিতেই। আব্বুর বিশাল সাইজের জুতাগুলো(৪৩) পায়ে ঢুকিয়ে হাটাহাটি করা আমার অন্যতম একটা খেলা ছিলো.... ছোটবেলার সে খেলার মানে আজও খুঁজে পাইনি। হয়তো আব্বুর পাঞ্জাবিতে, জুতায় আব্বুকে কাছে না পাওয়া স্নেহ খুঁজতাম, কে জানে!

আমার গোটা ছাত্র জীবন বলতে গেলে হোস্টেলেই কেটেছে। আমার যখন দশ বারো ক্লাস, তখন থেকেই একটু ঢিলে হত ঠিকই, কিন্তু বাবার টি শার্ট গুলো মোটামুটি হয়েই যেত গায়ে। আব্বুদের দুনিয়া অনেক বড়। সে দুনিয়ায় টি-শার্ট এর অভাব নেই। মাঝে মাঝে আব্বুর গেঞ্জি, টি শার্ট গায়ে গলাতাম। পুরোনো কাপড়ের গন্ধ শুকে আব্বুকে অনুভব করতাম...আমি পেতাম আব্বুর বিষন্ন মনের গন্ধ। আব্বুর কাপড় গায়ে দিলেই তিনি যেন বলতেন, "হিমু, বাপ আমার, ঠিকমতো পড়াশোনা করবে। তোমাকে অনেক বড়ো হতে হবে...অনেক বড়ো।"

Life is unpredictable....
আব্বুকে হারিয়েছি...কতো বছর হয়েছে হিসাব করিনা। শুধু এই দিনটার কথা মনে থাকে....আব্বুর পাঞ্জাবি, টি শার্ট এর কথা মনে পড়ে, বুবুর কথা মনে পড়ে - মায়ের কোনো স্মৃতি আমি আঁকতে পারিনা...আব্বুর একটা শার্ট আছে আমার কাছে, সেই শার্টে এখন আর ন্যাপথলিনের উগ্র গন্ধ পাইনা, আব্বুর শরীরের ঘ্রাণ পাই...
আমি বলেই ছিলাম, গল্পটা দুই লাইনেরই। 'জামার ভিতর আস্ত মানুষ থাকে, সত্যিই থাকে- যা সবাই দেখতে পারেন। কিন্তু আমার বুকের ভেতর একটা বুকপকেট আছে সেখানে বাস করে আমার মা, আমার বাবা, সেখানে বাস করে একজন মায়ের মতো বুবু-সেই বুক পকেটটা আমি ছাড়া কেউ দেখতে পায়না।
বুবু, মা, আব্বুকে স্মরণ করি পাঁচ ওয়াক্ত নামাজে।
রাব্বীর হাম হুমা কামা রাব্বা ইয়ানি ছাগিরা।

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.