নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

এপিটাফ \n\nএক নিঃশব্দ প্রচ্ছদে ঢাকা আছে আমার জীবনের উপন্যাস...খুঁজে নিও আমার অবর্তমানে...কোনো এক বর্তমানের মায়াবী রূপকথায়।আমার অদক্ষ কলমে...যদি পারো ভালোবেসো তাকে...ভালোবেসো সেই অদক্ষ প্রচেষ্টা কে,যে অকারণে লিখেছিল মানবশ্রাবণের ধারা....অঝোর

জুল ভার্ন

এপিটাফ এক নিঃশব্দ প্রচ্ছদে ঢাকা আছে আমার জীবনের উপন্যাস... খুঁজে নিও আমার অবর্তমানে... কোনো এক বর্তমানের মায়াবী রূপকথায়। আমার অদক্ষ কলমে... যদি পারো ভালোবেসো তাকে... ভালোবেসো সেই অদক্ষ প্রচেষ্টা কে, যে অকারণে লিখেছিল মানব শ্রাবণের ধারা.... অঝোর শ্রাবণে।।

জুল ভার্ন › বিস্তারিত পোস্টঃ

আঞ্চলিক ভাষার নামে ভাষাকে বিকৃত করা হচ্ছে .....

২৩ শে ফেব্রুয়ারি, ২০২১ বিকাল ৪:১৫

আঞ্চলিক ভাষার নামে ভাষাকে বিকৃত করা হচ্ছে .....

"হায়রে মানোশ, মানোশ ছিচটেমরে আপডেট কইর‍্যা সবকিছু অচল কইর‍্যা দেতেয়াসে"- এটি একটি টিভি নাটকের সংলাপ।

একদা টিভি নাটকে সংলাপের ক্ষেত্রে ‘প্রমিত’ বাংলা ভাষার শক্তিশালী অবস্থান থাকলেও এখন চলিত ও আঞ্চলিক ভাষার ব্যবহারই বেশি। টিভি নাটকে এক অঞ্চলের শিল্পীদের মুখে অন্য অঞ্চলের ভাষা বলানোয় ভাষাটিকে করা হচ্ছে বিকৃত। ব্যবসায়িক স্বার্থে লোক হাসানোর জন্য ভাষাকে বিকৃত করে, আঞ্চলিক ভাষাগুলোকে বিকৃত করে উপস্থাপন করা হচ্ছে। এতে হাসির নাটক না হয়ে সেগুলো হয়ে উঠছে হাস্যকর। অথচ রংপুর অঞ্চলের ভাষা ব্যবহার করে তৈরি হয়েছিল নূরলদীনের সারাজীবন-এর মতো শক্তিশালী মঞ্চনাটক।
দেশে টেলিভিশন চালু হওয়ার পর থেকে প্রমিত বাংলা ভাষার ব্যবহার শুরু হয়। গত শতকের নব্বইয়ের দশকেও টিভি নাটকগুলোয় প্রমিত ভাষাই ছিল প্রধান ভাষা। এ ভাষাভঙ্গি হয়ে উঠেছিল সুধী সমাজে যোগাযোগের সাধারণ মাধ্যম। কিন্তু গত দেড় দুই দশকে আঞ্চলিক ভাষার বাড়াবাড়ি কেন? কেনই বা স্থূল চরিত্রগুলোকেই বেশির ভাগ ক্ষেত্রে আঞ্চলিক চরিত্রে দেখা যায়?
আড্ডা বা অনানুষ্ঠানিক আলোচনা কথ্য ভাষায় চলতে পারে। কিন্তু আনুষ্ঠানিক টক শো, আলোচনা, বক্তৃতা, মিডিয়াতে প্রচারযোগ্য সবকিছু হতে হবে প্রমিত বাংলা ভাষায়। অন্যদিকে আঞ্চলিক ভাষা যদি নাটকে ব্যবহার করতেই হয়, সেটাও শুদ্ধ করে বলতে হবে। কেননা বরিশাল, চট্টগ্রাম, সিলেট বা নোয়াখালীর ভাষাও সেখানকার মাতৃভাষা।

আঞ্চলিক ও কথ্য ভাষাকে অস্বীকার করার কোনো উপায় নেই। কিন্তু আঞ্চলিক ভাষার নামে বাংলা ভাষার বিকৃতির মহোৎসব চলছে চারদিকে। ঘরের ড্রয়িং রুম থেকে শুরু হয় এ বিকৃতি। পথে নেমে কান পাতলে শোনা যায় আরও কত-শত রকমের বিকৃত বাংলা উচ্চারণ। একটি দেশের প্রজন্মের বড় একটি অংশ শুদ্ধ বাংলা উচ্চারণে কথা বলতে পারেন না। এদের অনেকের কাছেই ইংরেজি ও বাংলার মিশ্রণে তৈরি নতুন ধরনের ভাষা প্রিয় হয়ে উঠছে।

দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের আঞ্চলিক ভাষার সঙ্গে শুদ্ধ ভাষাকে মিলিয়ে নতুন এক ধরনের ভাষা তৈরি করে কথা বলছেন একটি শ্রেণী। এর বাইরে নয় আমাদের ইলেক্ট্রনিক মিডিয়াও। মাতৃভাষার প্রতি অবহেলার এ প্রবণতা আমাদের ইলেক্ট্রনিক মিডিয়াতেই সবচেয়ে বেশি। অথচ এ মাধ্যমগুলোতেই ফেব্রুয়ারি এলে বাংলা ভাষা নিয়ে তৈরি হয় নানা অনুষ্ঠান।
ফেব্রুয়ারী মাসে কর্মকর্তা আর নীতিনির্ধারকদের অন্তরে নয়, টিভি স্ক্রিনের এক কোণে স্থান পায় শহীদ মিনারের ছবি। এমনকি সেই মাসেও আধো বাংলা আর আধো ইংরেজির মিশ্রণে অন্যরকম স্টাইলে কথা বলার ভঙ্গিতে পাওয়া যায় তরুণ কোনো জকিকে। বিভিন্ন নাটকের সংলাপে সারা বছরই আমরা শুনতে পাই অশুদ্ধ বাংলার ছড়াছড়ি।
এ অশুদ্ধ ‘অনুশীলন’ আমাদের সমাজে এতটাই বাজে প্রভাব ফেলেছে যে, তরুণ-তরুণীরা সে শব্দগুলোর চর্চা চালিয়ে যাচ্ছেন। নাটকে সে ভাষার চর্চা করতে গিয়ে শুদ্ধ ভাষাটিই হারিয়ে ফেলেন।

দীর্ঘ সংগ্রাম আর রক্ত ঝরিয়ে বাংলা ভাষায় কথা বলার অধিকার পেয়েছি আমরা। তাই নাটকে নিজের ভাষা বিকৃত করে উপস্থাপন করা আমাদের ভাষার অনেক বড় ক্ষতি হচ্ছে বলেই আমি মনে করি। আমরা নাটকে শুদ্ধ বাংলায় সংলাপের ব্যবহার শুনতে শুনতে বড় হয়েছি। যদি আঞ্চলিক কোনো নাটক হয় সেটা ভিন্ন কথা। বিনা কারণে টিভি নাটকে বাংলা ভাষার উচ্চারণে অশুদ্ধতা, অসংলগ্নতা একেবারেই সমর্থন করি না আমি। আমাদের দ্রুত ভাষা বিকৃতির এ সংস্কৃতি থেকে বের হয়ে আসা উচিত। তা না হলে এটি আমাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়াবে।

নাটকে ভাষার বিকৃতি এখন ভাঁড়ামির পর্যায়ে চলে গিয়েছে। আমাদের বাংলা ভাষার একটা প্রমিত রূপ রয়েছে, যা সবারই রপ্ত করা দরকার। নাটকে যদি আঞ্চলিক ভাষার আধিক্য বেশি হয়, সে ক্ষেত্রে সবচেয়ে বেশি নেতিবাচক প্রভাব নতুন প্রজন্মের ওপর পড়বে। তাই এখনই আমাদের জাতির ও নতুন প্রজন্মের স্বার্থে এদিকে নজর দেয়া উচিত।
তরুণ প্রজন্মের ছেলেমেয়েরা ভাষা আন্দোলনের ইতিহাস সম্পর্কে তেমন জ্ঞান রাখে না। এমনকি অনেকেই এ বিষয়ে জ্ঞান রাখার প্রয়োজন বোধও করে না। তাই অনেক ক্ষেত্রেই ভাষার বিকৃতিটাকে তেমন কিছু মনে হয় না অনেকের কাছে। আমাদের মনে রাখা উচিত সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডে আমরা যে কোনো মাধ্যমে যা-ই করি না কেন, সেখানে শুদ্ধরূপে প্রমিত বাংলার ব্যবহার থাকা উচিত।
যদি কেউ ঢাকার আদি ভাষায় কোনো কিছু রচনা করতে চান, তাহলে তা নিয়ে কিঞ্চিৎ গবেষণা করে লেখা উচিত।
সাম্প্রতিক সময়ে বিভিন্ন গণমাধ্যমে বিশেষ করে এফএম রেডিও আঞ্চলিক ভাষার নাম করে ভাষার একটা অদ্ভুত উচ্চারণে ভিন্ন রূপ তৈরির চেষ্টা করা হচ্ছে।
একটা অদ্ভুত প্রজন্ম তৈরি হয়েছে, যারা র-কে ড় উচ্চারণ করে। বাংলা ভাষা ইংরেজির মতো করে বলে। শিক্ষিত এই নতুন প্রজন্ম ধরেই নিচ্ছে যে এটা বোধ হয় স্টাইল।

আমার দাদা-বাবা-চাচারা বরিশাল ছেড়ে ঢাকায় স্থায়ী নিবাস গেড়েছিলেন ১৯৩৪ সনে তখনকার ঢাকার অভিজাত এলাকা ওয়ারীতে। আমাদের বৃহত্তর যৌথ পরিবারে বরিশাল-ঢাকা এই দুই জেলার আঞ্চলিক ভাষার মিশ্রণ আছে। আমার মাতৃকুল বৃহত্তর বরিশাল-ফরিদপুরের মিশেল। তারাও ১৯৪৭ পরবর্তীতে ঢাকার হাজারি বাগ-জিগাতলা এলাকায় থিতু হয়েছেন।
ওয়ারীতে আমাদের প্রতিবেশীদের মধ্যে অরিজিনাল ঢাকাইয়া ছাড়াও বেশীরভাগ ছিলেন বরিশাল, যশোর এবং কুমিল্লার লোক। হাজারি বাগ-জিগাতলা এলাকায় থিতু হওয়া বেশীরভাগ লোক ছিলেন নোয়াখালী, ময়মনসিংহ, রাজশাহী, ময়মনসিংহ এলাকার। প্রায় পৌনে একশত বছরের ঘটনা প্রবাহে এবং বৈবাহিক সূত্রে আমাদের বৃহত্তর পরিবার ঢাকা, চট্টগ্রাম, কুমিল্লা, খুলনা,ফরিদপুর, যশোর, কুষ্টিয়া, ময়মনসিংহ সহ দেশের অনেক জেলায় মিলেমিশে 'কসমোপলিটান পরিবার' হয়ে গিয়েছে বললে ভুল বলা হবেনা।
এই ঢাকা শহরে আমার জন্ম। আমার বর্তমান বয়স ৬১ প্লাস। তাই ঢাকাইয়া ভাষায় যারা কথা বলেন তাদের খুব কাছে থেকে দেখার সুযোগ হয়েছে। টিভি নাটকে বরিশালের আঞ্চলিক ভাষার নামে যা প্রচার করা হয় তা আদৌ বরিশালের আঞ্চলিক ভাষা নয়। ঢাকাইয়া ভাষার নামে যে ভাষায় সংলাপ বলানো হচ্ছে তা মোটেই ঢাকাইয়া ভাষা নয়।
ঢাকার আদিবাসীরা শুদ্ধ প্রমিত বাংলায় কথা বলে। তবে উর্দুর প্রচলন আছে। আদিবাসী ঢাকাইয়ারা কেউ 'আবে হালায় হুনছোস'/ আবে হালায় খিলাইছোস' কিম্বা কথায় কথায় 'তর মায়রে চুদি'- এসব নোংরা ভাষা ব্যবহার করে না।

প্রশ্নঃ তাহলে কোথা থেকে আসলো ওইসব নোংরা কথা?
উত্তরঃ ঢাকায় বহিরাগতরাই ঢাকার ভাষাকে বিকৃত করেছে।
প্রশ্নঃ কিভাবে?
উত্তরঃ জীবন জীবিকার সন্ধানে দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে শ্রমিক শ্রেণীর লোকজন ঢাকায় এসে আদি ঢাকাইয়াদের বাড়িতে, কারখানায় কাজ করতে গিয়ে নিজ নিজ আঞ্চলিক ভাষার সাথে আদি ঢাকাইয়াদের ভাষায় কথা বলার কসরত করতে গিয়ে একটা জগাখিচুড়ি ভাষা বানিয়ে ফেলে। পার্শ্ববর্তী দেশ থেকে পরিচ্ছন্নতা কর্মী হিসেবে স্ব পরিবার প্রচুর লোক আসে যারা একটা জগাখিচুড়ি বিকৃত ভাষায় কথা বলতো। অন্যদিকে ১৯৪৭ সন পূর্বাপর বিহারিরা এসে উর্দু ভাষায় এবং পশ্চিম বংগ থেকে আসা লোকেরা মিশ্র ভাষায় কথা বলার পাশাপাশি খিস্তিখেউড় করতে অভ্যস্ত ছিলো। সেইসব মাল্টি কালচারে অভ্যস্তদের সংমিশ্রণেই ঢাকাইয়াদের নামে অশ্লীল ভাষার প্রচলন।

মিডিয়ার দায়িত্ব ইতিহাস, ঐতিহ্য, সভ্যতা-সংস্কৃতি-আচরণ এগুলোকে সঠিকভাবে তুলে ধরা। সেটা না করে বরং আমাদের যা আছে, সেগুলোকে নষ্ট করা হচ্ছে। যারা এসব করছে তাদের জ্ঞান ও বোধের অভাব আছে। আমরা যেহেতু ভাষার জন্য জীবন দিয়েছি, ভাষা ব্যবহারের প্রতি আমাদের আরও বেশি সতর্ক হতে হবে।

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.