নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

এপিটাফ \n\nএক নিঃশব্দ প্রচ্ছদে ঢাকা আছে আমার জীবনের উপন্যাস...খুঁজে নিও আমার অবর্তমানে...কোনো এক বর্তমানের মায়াবী রূপকথায়।আমার অদক্ষ কলমে...যদি পারো ভালোবেসো তাকে...ভালোবেসো সেই অদক্ষ প্রচেষ্টা কে,যে অকারণে লিখেছিল মানবশ্রাবণের ধারা....অঝোর

জুল ভার্ন

এপিটাফ এক নিঃশব্দ প্রচ্ছদে ঢাকা আছে আমার জীবনের উপন্যাস... খুঁজে নিও আমার অবর্তমানে... কোনো এক বর্তমানের মায়াবী রূপকথায়। আমার অদক্ষ কলমে... যদি পারো ভালোবেসো তাকে... ভালোবেসো সেই অদক্ষ প্রচেষ্টা কে, যে অকারণে লিখেছিল মানব শ্রাবণের ধারা.... অঝোর শ্রাবণে।।

জুল ভার্ন › বিস্তারিত পোস্টঃ

ফিল ওকস.....

০১ লা মার্চ, ২০২১ দুপুর ১:১০

ফিল ওকস.....

আমার দুই ছেলেই মোটামুটি ভালো গিটারিস্ট। ছোট জন ভালো গায়ও। কয়েক বছর আগে ছোট ছেলেকে গাইতে শুনি - 'শো মি দ্য প্রিজন.....' গানটা। আমার খুব ভালো লাগে, তাই সিংগার ও সং রাইটার সম্পর্কে জানতে চাই। ওর মুখেই শুনি 'ফিল ওকস' (Phil Ochs) নামের শিল্পীর অনেক অজানা কথা। তারপর থেকে ইউটিউবে তাঁর গান শুনি এবং ইন্টারনেটে শিল্পী সম্পর্কে অনেক কিছু জানতে পারি।

ষাটের দশকে আমেরিকায় একঝাক সং রাইটার উঠে এসেছিলেন। এদের মধ্যে সবচেয়ে বিখ্যাত নাম বব ডিলান, সেইসময়ের কাউন্টার কালচারের আইকন। একই সময় ডিলানের সমসাময়িক আরও অনেকজন সংরাইটার ছিলেন যারা ভালো কাজ করেছিলেন। কিন্তু, ডিলানের মতন খ্যাতির শীর্ষে আর কেউ উঠতে পারেননি। ডিলান প্রতিবাদী গান দিয়ে কেরিয়ার শুরু করলেও, এক সময় নিজেকে বদলে ফেলেন। কিন্তু, বব ডিলানের সমসাময়িক একজন সং রাইটার ছিলেন যিনি গোটা জীবন লিখে গেছেন প্রতিবাদী গান। যিনি কমার্শিয়াল সাকসেসের পেছনে না ছুটে যখনই সমাজের জন্য কিছু করার সুযোগ পেয়েছেন, আঁকড়ে ধরেছেন সেই সুযোগ। উনি নিজেকে বলতেন 'সিঙ্গিং জারনালিস্ট'। ২০১৩ সালে নিউইয়র্কে একটি কনসার্টে পঞ্চাশ হাজার দর্শক শ্রোতাদের সামনে প্রবীণ সং রাইটার Neil Young ঘোষণা করেন ''এই পৃথিবীর অন্যতম সেরা 'সং রাইটার, কবি' ফিল ওকস"।

ষাটের দশকে বিখ্যাত সংরাইটাররা জড়ো হয়েছিলেন গ্রিনিচ ভিলেজে। সবার মুখে 'গ্যাসলাইট' ক্যাফের নাম। সমাজের আঘাত সৃষ্টিশীল মানুষের মধ্যে থেকে বার করে এনেছিল অসাধারণ কবিতা, গান, নাটক, ছবি। এল্ভিস প্রেসলিকে গুরু ভাবতেন যিনি সেই ফিল ওকস স্বপ্ন দেখলেন সং রাইটার হবেন। খবরের কাগজের মধ্যে উনি খুঁজে বেড়াতেন গান লেখার রসদ। উনি বলতেন - 'অল দ্য নিউজ ফিট টু সিং'। সিভিল রাইটস মুভমেন্ট, লেবার বিদ্রোহ, যুদ্ধ পরিস্থিতিতে ফিল ওকস লিখেছেন একের পর এক গান। নিউপোর্ট ফোক ফেস্টিভালে পারফর্ম করলেন বব ডিলান ও ফিল ওকস ছাড়াও অনেকে। কিন্তু বিখ্যাত হলেন বব ডিলান। ওক ফিলস বললেন - ''আমি বেস্ট সং রাইটার হতে চেয়েছিলাম। কিন্তু, ডিলানের গান শোনার পর আমি সেকেন্ড বেস্ট হতে চাই''।


ফিল ওকসের প্রথম দিকের অ্যালবামগুলি বেশ জনপ্রিয় হয়। শুধু একটি অ্যাকুস্টিক গিটার নিয়ে গাওয়া "Too many martyrs", “I ain’t marching anymore” গানগুলি সেইসময় ছিল খুবই প্রাসঙ্গিক। মানুষের মুখে মুখে ফিরতে থাকে এসব গান। উনি লিখেছেন খনি শ্রমিকদের জন্য গান । “I ain’t marching anymore” গানটি যুদ্ধবিরোধী আন্দোলনের অ্যানদেম হয়ে ওঠে । ফিল লিখলেন - "Love Me, I'm a Liberal"। জোন বায়েজ গাইলেন ফিল ওকসের লেখা বিখ্যাত গান "There but for Fortune"। ফিল গান গাইছিলেন কিন্তু কমার্শিয়াল সাকসেস পাচ্ছিলেন না সেভাবে। খ্যাতিও সেভাবে পাননি। তখন বব ডিলান সুপার স্টার। অনেকেই মনে করেন ডিলান ফিল ওকসকে নিজের প্রতিদ্বন্দ্বী ভাবতেন। ডিলান একবার ফিলকে তার লিমুজিন গাড়ি থেকে নেমে যেতে বলেন। ডিলান সেদিন ফিল ওকসকে বলে ছিলেন - " তুমি ফোক সংরাইটার নও, তুমি সাংবাদিক"!

কেনেডির মৃত্যু ফিল ওকসকে আঘাত দিয়েছিল। আঘাত দিয়েছিল মারটিন লুথার কিং এর মৃত্যুও। ভিয়েতনাম যুদ্ধের বিরুদ্ধে ফিল গাইলেন 'ওয়ার ইজ ওভার'। গানের মধ্যে দিয়ে ফিল সেই ফ্যান্টাসির জগতের সন্ধান দিতে চাইলেন যেখানে যুদ্ধ শেষ হয়ে গেছে। ফিল কোনভাবেই নাম করতে পারছিলেন না। এই কষ্ট ভেতরে ভেতরে তাঁকে যন্ত্রণা দিতো। দীর্ঘদিন ধরেই ফিল ডিপ্রেশনে আক্রান্ত ছিলেন। ফিল ওকসের কণ্ঠ ছিল অসামান্য। সেইসময়ের সং রাইটারদের মধ্যে এতো ভালো কণ্ঠ ছিল বিরল। অনেক প্রটেস্ট সং লিখলেও, ফিল লিখেছেন Changes, When I’m Gone এর মতন অন্যধারার গান। 'Changes' গানটি ফিল ওকসের এক অসামান্য সৃষ্টি। অসামান্য সুর আর ফিল ওকসের মায়াময় কণ্ঠের যাদুতে এই গান অন্যমাত্রা পেয়েছে।

ভিয়েতনামের যুদ্ধ শেষ হয়।
ফিল ওকস যে ফ্যান্টাসির আভাস দিয়েছিলেন তার গান 'ওয়ার ইজ ওভার' এ , সেটি বাস্তবে পরিণত হয়। কিন্তু , ততদিনে ফিল ভেতরে ভেতরে একেবারে শেষ হয়ে গেছেন। মদ্যপান লাগামছাড়া, যাকে তাকে যা খুশি বলে দিচ্ছেন, জীবন ছন্নছাড়া। চলে গেলেন নিজের বোনের বাড়ি। সেখানে পিয়ানো বাজিয়ে অনেকবার গাইলেন তার 'জেমস ডিন অফ ইন্ডিয়ানা' গানটি। নিজের একাধিক বন্ধুকে বলেছিলেন, তার বেঁচে থাকার অনীহার কথা। নীল ইয়াং ছিলেন সেই বন্ধুদের একজন। নিজের ভাইকে একদিন ফিল বলছিলেন - ''আমি নিজেকে শেষ করে দিতে চাই''। ভাই মজা করে উত্তর দিয়েছিলেন - ''তুমি তাহলে খাওয়া ছেড়ে দাও, এমনিই মরে যাবে''। ফিল হো হো করে হেসে ওঠেন। খেতে খুবই ভালবাসতেন ফিল। নিজের ভাইয়ের সঙ্গে এই কথোপকথনের পরের সপ্তাহে আত্মহত্যা করেন ফিল ওকস। তখন ফিলের বয়স মাত্র ৩৫ বছর। মৃত্যুর কিছুদিন আগে যেসব বন্ধুদের ফিল বলেছিলেন তার সম্ভাব্য মৃত্যুর কথা, তারা সকলেই আক্ষেপ করেন, যদি তারা যদি আটকাতে পারতেন এই অসামান্য প্রতিভার আত্মহত্যা! Tom Paxton লিখেছেন ফিল কে নিয়ে অপূর্ব একটি গান।
পরে যখন ফিল ওকসের গান 'When I’m gone’ শুনেছি। ফিল হয়তো বুঝতে পেরেছিলেন মৃত্যু তার পিছু নিয়েছে । তাই তিনি শেষ গান লিখেছিলেন -
‘And you won't find me singing'
on this song when I'm gone,
So I guess I'll have to do it while I'm here’. [

মন্তব্য ১২ টি রেটিং +৪/-০

মন্তব্য (১২) মন্তব্য লিখুন

১| ০১ লা মার্চ, ২০২১ দুপুর ১:১৬

পদাতিক চৌধুরি বলেছেন: পোষ্টের প্রথম অংশে সম্পর্কে ভালো লাগলো। কিন্তু ফিল ওকসের বিষয়টি জেনে বিষন্ন হলাম...

০১ লা মার্চ, ২০২১ দুপুর ১:২৯

জুল ভার্ন বলেছেন: ধন্যবাদ ভাইয়া।

২| ০১ লা মার্চ, ২০২১ দুপুর ১:২৬

শায়মা বলেছেন: গায়করা ইমোশনাল হয়। জানা হলো এই গায়কের কথা।

০১ লা মার্চ, ২০২১ দুপুর ১:৩১

জুল ভার্ন বলেছেন: শুধু গায়করা নয়, শিল্পীদের একটা নিজস্ব জাত্যাভিমান থাকে(তবে এই তালিকা থেকে বাংলাদেশের শিল্পীরা বাদ, কারন-আমাদের দেশের শিল্পীদের দুএকজন বাদের সবগুলোই তেলবাজ)।

ধন্যবাদ।

৩| ০১ লা মার্চ, ২০২১ দুপুর ১:৪২

শায়মা বলেছেন: আমিও শখের শিল্পী তবে আমি ইমোশন কন্ট্রোল করতে পারি। অনেক বেশিই পারি। :)

০১ লা মার্চ, ২০২১ দুপুর ১:৪৭

জুল ভার্ন বলেছেন: অনেক বেশী ব্যক্তিত্বে অধিকারী নাহলে ইমোশোন নিয়ন্ত্রণ করা যায়না।

৪| ০১ লা মার্চ, ২০২১ দুপুর ১:৪৯

শায়মা বলেছেন: ইমোশনের কারণেই পৃথিবীতে অনেক দুঃখ নেমে আসে। আর নিজের জীবনেও। তাাই ইমোশন সব তোলা থাকুক গল্প কবিতা আর গানের জন্য। বাস্তব কঠোর এবং রুড় হয় ( বানাটা লিখতে পারছিনা হঠাৎ) সেই কঠোর বাস্তবে ইমোশন আসে বটে কিন্তু নিয়ন্ত্রন বিশেষ জরুরী।

০১ লা মার্চ, ২০২১ দুপুর ২:১২

জুল ভার্ন বলেছেন: ইমোশন খারাপ নয় বরং সৃজনশীলতা বাড়ায়। ইমোশোনহীন মানুষ শুকনো কাঠের মতো-শুধু জ্বলে। :(

৫| ০১ লা মার্চ, ২০২১ দুপুর ২:৩১

রাজীব নুর বলেছেন: একসময় কিছু দিন গিটার শিখেছিলাম।
ওকস কে আমি আজই প্রথম চিনলাম।

০১ লা মার্চ, ২০২১ দুপুর ২:৩৮

জুল ভার্ন বলেছেন: গীটারের সাথে আমার সখ্যতা সেই ছেলে বেলা থেকেই, যা উত্তরাধিকার সূত্রে পেয়েছিলাম আমার ছোট চাচা থেকে। আআরা দুই ভাই বোনই ছোট চাচার শিস্য। আমার শিস্য ছেলেরা।

সুযোগ পেলে এখনই ফিল ওকসের একটা গান শুনে নিন-দেখবেন ওকস ভক্ত হয়ে গিয়েছেন।

৬| ০২ রা মার্চ, ২০২১ সকাল ১০:১২

সোহানী বলেছেন: phil ochs নিয়ে আগেও পড়েছিলাম। আবারো পড়ে ভালোলাগলো। তার পলিটিকেল গানগুলো ভালোলাগে।

০২ রা মার্চ, ২০২১ সকাল ১০:২৩

জুল ভার্ন বলেছেন: বছর খানেক আগে আমিই ফেসবুকে লিখেছিলাম-যেখানে আপনার সুন্দর একটা মন্তব্য আছে।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.