নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

এপিটাফ \n\nএক নিঃশব্দ প্রচ্ছদে ঢাকা আছে আমার জীবনের উপন্যাস...খুঁজে নিও আমার অবর্তমানে...কোনো এক বর্তমানের মায়াবী রূপকথায়।আমার অদক্ষ কলমে...যদি পারো ভালোবেসো তাকে...ভালোবেসো সেই অদক্ষ প্রচেষ্টা কে,যে অকারণে লিখেছিল মানবশ্রাবণের ধারা....অঝোর

জুল ভার্ন

এপিটাফ এক নিঃশব্দ প্রচ্ছদে ঢাকা আছে আমার জীবনের উপন্যাস... খুঁজে নিও আমার অবর্তমানে... কোনো এক বর্তমানের মায়াবী রূপকথায়। আমার অদক্ষ কলমে... যদি পারো ভালোবেসো তাকে... ভালোবেসো সেই অদক্ষ প্রচেষ্টা কে, যে অকারণে লিখেছিল মানব শ্রাবণের ধারা.... অঝোর শ্রাবণে।।

জুল ভার্ন › বিস্তারিত পোস্টঃ

যন্ত্রণার ভয়াবহতার আরেক নাম আউশভিৎস .........

১৩ ই মার্চ, ২০২১ সকাল ১০:০৫

যন্ত্রণার ভয়াবহতার আরেক নাম আউশভিৎস

Deutsche Welle (DW) জার্মান পাব্লিক ইন্টারন্যাশনাল ব্রডকাস্টার থেকে ২০১০ সনে ‘Auschwitz Facts’ নামে একটা ডকুমেন্টারি প্রচারিত হয়েছিল, সেই ডকুমেন্টারির কাহিনী পৃথিবীর অন্যান্য দেশের মতো আমাদের দেশের অনেক দৈনিক পত্রিকাও প্রচার করেছিল। সেই ঘটনা আজ আবার বন্ধুদের সাথে শেয়ার করছি। যন্ত্রণার ভয়াবহতার আরেক নাম আউশভিৎস।
বাঁচার আশায় ভয়ার্ত চিৎকারের নাম আউশভিৎস। গ্যাস চেম্বারের নারকীয়তার নাম আউশভিৎস। একটি অসমাপ্ত প্রেমের গল্পের নামও আউশভিৎস। ১৯৪২ এর বসন্তকাল, প্রায় দুহাজার ইহুদী যুবতীকে নিয়ে স্লোভাকিয়া থেকে পোল্যান্ডের দিকে ছুটে চলেছে দুটি ট্রেনl ট্রেনের যাত্রীরা জানালার কাঁচে মুখ লাগিয়ে শেষবারের মতো দেখে নিচ্ছে সোনালী গমের ক্ষেত, ম্যাপেলের সোনালী পাতা ঝরা রাস্তা। তাদের সবটুকু যন্ত্রনা, ভয়, আটকে রাখা কান্না বাষ্পের মতো লেগে রয়েছে সেই ছুটতে থাকা ট্রেনের ঘষা জানালার কাঁচে। ওদের গন্তব্য আউশভিৎস। আজো এই নামটা শিরদাঁড়া দিয়ে ঠান্ডা স্রোত নামায়, কপালে জমতে থাকা ভয়ের বিন্দু জন্ম দেয় নিঃসীম আতঙ্কের।

মানব সভ্যতাকে দু হাত ভরে দিয়েছিলেন সর্বশক্তিমান ফ্যুহরার, দিয়েছিলেন হলোকাস্ট, কনসেনট্রেশন ক্যাম্প, এথেনীক ক্লিনজিং… দিয়েছিলেন আউশভিৎস। ট্রেনে গাদাগাদি করে নিয়ে আসা মেয়েদের ভিড়ে একজন হেলেনা…হেলেনা সিট্রোনোভা। হেলেনা এবং অন্য মেয়েরা খুব ভালোভাবেই জানতেন তাদের পরিণতি, জানতেন তাদের বাকি বেঁচে থাকা জীবনটুকুর উদ্দেশ্য। তাঁরা প্রস্তুত হচ্ছিলেন অসহায়তার সাথে শেষবার জীবনকে ছুঁয়ে দেখার জন্য। আহ্ জীবন…তোমাকে আগে কেন জড়িয়ে ধরিনি এভাবে? কেন ডুবিয়ে দিইনি তোমায় নরম ঠোঁটের গভীরতায়? কেন? কেন? হঠাৎ একদিন সকালে নাৎসী সেনারা এসে জানতে চাইলেন “কেউ কি আছে যে জন্মদিনের গান গাইতে পারে? কেউ কি আছে? “এগিয়ে এলেন হেলেনা, হয়তো ভেবেছিলেন মারা যাওয়ার আগে শেষবারের মতো জীবনের গান গাইতে পারাও এক ধরণের সৌভাগ্য। নাৎসী সেনা বাহিনীর তরুণ অফিসার ফ্র্যাঞ্জ উন্স, জন্মদিনের কেক কাটার আগে হয়তো সেভাবে চেয়ে দেখেননি হেলেনাকে- ক্যাম্প বোঝাই নারী শরীরের মাঝে আলাদা তো কিছু নয়। হেলেনা জন্মদিনের গান গাইলেন, ঢেলে দিলেন তার জীবনের প্রতি সবটুকু ভালোবাসা, উজাড় করে দিলেন তার না পাওয়া প্রেমের যন্ত্রনা। ফ্র্যাঞ্জ অপলক চেয়ে রইলেন হেলেনার দিকে, যদিও তিনি জানতেন একজন ইহুদী নারীকে ভোগ করা ছাড়া অন্য কিছুর অনুমতি নেই। ফ্র্যাঞ্জ জানতেন, অনুমতি ছাড়া কাজের পুরস্কার…গ্যাস চেম্বার।

হেলেনা জানতেন তার পরিণতি। ফ্র্যাঞ্জ জানতেন নিয়ম ভাঙার শাস্তি। তবুও তারা পারলেন না নিজেদের আটকাতে… যন্ত্রনার স্যাঁতস্যাঁতে দেওয়ালে প্রেম তার ছাপ ফেলে গেলো, আউশভিৎজের কাঁটাতার জড়িয়ে ফুটে উঠলো নিষিদ্ধ গোলাপ। হেলেনা লিখেছিলেন, “As time went by, there came a moment when I truly loved him. He risked his life (for me) more than once.”হেলেনা আর ফ্র্যাঞ্জ কখনো হাতে হাত রাখতে পারেন নি, ভোগ করার নিয়ম ছিলো তাই আদর করা হয়ে ওঠেনি, ভবিষ্যতের স্বপ্ন দেখতে পারেননি… কিন্তু, তারা ছুঁয়েছিলেন পরস্পরের মন। তারা প্রেম দেখেছিলেন পরস্পরের চোখে। তারা প্রাণ ভরে নিশ্বাস নিয়েছিলেন এক বাতাসে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের দামামা বাজলে একে অপরের থেকে ছিটকে যান হেলেনা আর ফ্র্যাঞ্জ। যুদ্ধ থামার পরে পাগলের মতো হেলেনাকে খুঁজে বেড়িয়েছিলেন ফ্র্যাঞ্জ ইউরোপের এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তে। ভেঙে ফেলা আউশভিৎজের পরিতক্ত্য ব্যারাকে। যুদ্ধ থামার তিরিশ বছর পরে ১৯৭২ সনে অস্ট্রিয়ায় প্রাক্তন নাৎসী অফিসার হিসেবে গ্রেপ্তার হন ফ্র্যাঞ্জ। তোলা হয় যুদ্ধ অপরাধীদের বিচার করার বিশেষ আদালতে। খবরের কাগজে ছবি দেখে চিনতে পারেন হেলেনা সিট্রোনোভা, ছুটে আসেন সেই আদালতে। মূলত হেলেনা ও তার বোনের সাক্ষ্যে প্রমাণিত হয় সীমিত ক্ষমতার মধ্যেও তরুণ নাৎসী অফিসার চেষ্টা করেছিলেন ইহুদীদের প্রাণ রক্ষার, কখনো সফল হয়েছেন আবার কখনো বা ব্যর্থ। যুদ্ধ অপরাধের শাস্তি থেকে মুক্তি পান প্রাক্তন নাৎসী অফিসার ফ্র্যাঞ্জ উন্স। পরে তার জবানবন্দিতে ফ্র্যাঞ্জ লেখেন, “Desire changed my brutal behavior……I fell in love with Helena Citronova and that changed me. I changed into another person because of her influence.” ঘৃণা আর বিদ্বেষ যত বাড়বে প্রেম ততবার নতুন করে তার ভাষা খুঁজে নেবে, নেবেই। তাঁদের অসমাপ্ত প্রেমের গল্প বুকে নিয়ে হেলেনা সিট্রোনোভা বিদায় নেন ২০০৫ সালে, ঠিক তার চার বছর পরে ফ্র্যাঞ্জ।

যুদ্ধের কালো ইতিহাসে তাঁদের কাহিনি অমর হয়ে থেকে গেছে। আউশভিৎজের রুক্ষ মাটিতে অন্তত একটি গোলাপ তো ফুটেছিল। ভবিষ্যৎ পৃথিবীর কাছে হিংসা, হানাহানির মধ্যেও এই ছোট্ট আশাটুকু থাকুক।
আমরা করব জয়, নিশ্চয়।

মন্তব্য ১৫ টি রেটিং +৫/-০

মন্তব্য (১৫) মন্তব্য লিখুন

১| ১৩ ই মার্চ, ২০২১ সকাল ১০:৪৫

স্বামী বিশুদ্ধানন্দ বলেছেন: কি কোইন্সিডেন্স ! আজকে 'পিয়ানিস্ট' মুভিটা দেখছি !

১৩ ই মার্চ, ২০২১ সকাল ১০:৫৮

জুল ভার্ন বলেছেন: টেলিপ্যাথি :)

২| ১৩ ই মার্চ, ২০২১ দুপুর ১২:৫২

হাসান কালবৈশাখী বলেছেন:
৯০ দশকের প্রথম দিকে বিটিভিতে বা দুরদর্শনে দেখেছিলাম। (তখন দূরদর্শন দেখা যেত লম্বা এন্টেনায়)
সাদা কালো একটি মুভির শেষ অংশটি দেখেছিলাম।
ঠিক একই কাহিনী। মনে খুব দাগ কেটেছিল সেই বয়েসে। পুরোটা দেখার খুব ইচ্ছে ছিল, মুভির নাম টাও জানি না, তাই আর দেখা হয় নি।

১৩ ই মার্চ, ২০২১ দুপুর ১২:৫৬

জুল ভার্ন বলেছেন: আপনি ঠিক বলেছেন। দুরদর্শনে আমিও দেখেছিলাম। আউশভিৎস নিয়ে ইউরোপ আমেরিকায় বেশ কয়েকটা মুভি হয়েছে- আপনি চাইলে ইউটিউব কিম্বা নেটফ্লিক্সে দেখতে পারবেন।

৩| ১৩ ই মার্চ, ২০২১ দুপুর ১:৫৪

রাজীব নুর বলেছেন: ১। দশ লাখের বেশি মানুষকে হত্যা করা হয়, যাঁদের বেশিরভাগই ইহুদি ছিলেন।
২। সোভিয়েত সেনাবাহিনী সেই কুখ্যাত ক্যাম্প আউশভিৎস মুক্ত করেছিল।

১৩ ই মার্চ, ২০২১ দুপুর ২:৩৭

জুল ভার্ন বলেছেন: সত্য।

৪| ১৩ ই মার্চ, ২০২১ দুপুর ২:৪৭

নতুন বলেছেন: মিলিওন মানুষ হত্যা করেছিলো কিভাবে মানুষ পারে এমন ভাবে হত্যা করতে? :(

১৩ ই মার্চ, ২০২১ বিকাল ৩:৩৩

জুল ভার্ন বলেছেন: ক্ষমতার জন্য যুদ্ধ হলে সব ধরনের খারাবী করতে দ্বিধা করেনা। এই ধারাবাহিকতা অতীত থেকে বর্তমান পর্যন্ত চলছে- যার প্রমাণ সিরিয়া, আফগানিস্তান।এই ধারাবাহিকতা ভবিষ্যতেও চলবে।

৫| ১৩ ই মার্চ, ২০২১ বিকাল ৪:৫৮

শায়মা বলেছেন: অনেক ভালো লাগা ভাইয়া।

১৫ ই মার্চ, ২০২১ সকাল ১০:১৯

জুল ভার্ন বলেছেন: ধন্যবাদ আপু।

৬| ১৪ ই মার্চ, ২০২১ সকাল ৭:৪৪

স্বামী বিশুদ্ধানন্দ বলেছেন: একাত্তরে পাকিরা বাঙালিদের যে নিষ্ঠুরভাবে নির্যাতন, হত্যা ও ধর্ষণ করেছিল তা আমরা সম্ভবত ভুলে গিয়েছি। পাকিরা তাদের পরবর্তী প্রজন্মকে ইতিহাস সম্পূর্ণভাবে বিকৃত করে বর্ণনা করে তাদের এই পৈশাচিক কর্মকান্ডকে ঢাকার চেষ্টা করে। কিন্তু আমাদের অনেকে কেন ওই যন্ত্রনা ও ভয়াবহতাকে অস্বীকার করি ?

১৫ ই মার্চ, ২০২১ সকাল ১০:২১

জুল ভার্ন বলেছেন: পাকিস্তানী বর্বরদের নিষ্ঠুররা তাদের উত্তোরাধিকারগণও সমান ভাবে বহন করছে এবং প্রয়োগ করছে স্বাধীন দেশে।

৭| ১৪ ই মার্চ, ২০২১ সকাল ১১:৪৩

রাজীব নুর বলেছেন: লেখক বলেছেন: সত্য।

আমি সব সময় সত্য বলি। কিন্তু কিছু মানুষ মনে করেন আমি স্ববিরোধী কথা বলি।

১৫ ই মার্চ, ২০২১ সকাল ১০:২১

জুল ভার্ন বলেছেন: এটাই স্বাভাবিক।

৮| ১৪ ই মার্চ, ২০২১ সন্ধ্যা ৭:০৭

Laboni বলেছেন: একটু সময় বেরকরে কিছু ভালো মুভি দেখুন।।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.