নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

এপিটাফ \n\nএক নিঃশব্দ প্রচ্ছদে ঢাকা আছে আমার জীবনের উপন্যাস...খুঁজে নিও আমার অবর্তমানে...কোনো এক বর্তমানের মায়াবী রূপকথায়।আমার অদক্ষ কলমে...যদি পারো ভালোবেসো তাকে...ভালোবেসো সেই অদক্ষ প্রচেষ্টা কে,যে অকারণে লিখেছিল মানবশ্রাবণের ধারা....অঝোর

জুল ভার্ন

এপিটাফ এক নিঃশব্দ প্রচ্ছদে ঢাকা আছে আমার জীবনের উপন্যাস... খুঁজে নিও আমার অবর্তমানে... কোনো এক বর্তমানের মায়াবী রূপকথায়। আমার অদক্ষ কলমে... যদি পারো ভালোবেসো তাকে... ভালোবেসো সেই অদক্ষ প্রচেষ্টা কে, যে অকারণে লিখেছিল মানব শ্রাবণের ধারা.... অঝোর শ্রাবণে।।

জুল ভার্ন › বিস্তারিত পোস্টঃ

"জল-বনের কাব্য"....

১৬ ই মার্চ, ২০২১ সকাল ৯:৪৯

"জল-বনের কাব্য"....

অনেক দিন পর কোনো বইয়ের পাতায় এমন সরল, মায়াময় গদ্য পড়লাম- বলতে পারিনা।পড়া শেষ করে এখনও ঘোর কাটছে না। বইয়ের নাম 'জল-বনের কাব্য', লেখিকাঃ সরলা বসু। বইটির প্রকাশ ১৯৫৭ সন।
লেখিকা সরলা বসু বিয়ের পর যখন তাঁর ফরেস্ট অফিসার স্বামীর কর্মস্থল সুন্দরবন বিট অফিসের বাসস্থানে আসেন, তখন তাঁর বয়স এগারো। প্রথম বিশ্বযুদ্ধের সময় সাহেবদের আন্ডারে তাঁর স্বামীর বদলির চাকরি; বছর পাঁচেক তিনি কাটিয়েছেন ঐ অঞ্চলের নানা জায়গায়। সেই সব দিনের স্মৃতিকথার সংকলনই হল "জল-বনের কাব্য"।

কাব্যই বটে। বিভূতিভূষণকে উৎসর্গ করা বইটি বিভূতিভূষণের প্রভাব এ লেখায় স্পষ্ট; লেখিকাও সেকথা অস্বীকার করেননি। সুন্দরবনের নদীনালা, গাছপালা, জন্তুজানোয়ার আর মানুষ - সবাই যেন এ কাব্যের এক একটি অনবদ্য পংক্তি। এগারো থেকে ষোলো এই পাঁচ বছরে কিশোরী বঁধুর দৃষ্টিতে দেখা এ অঞ্চলের মানুষের জীবনচর্যা, তার অযাচিতভাবে পাওয়া স্নেহ-আদর-ভালবাসা, তার ছোট্ট সংসার - সবকিছু যেন সুন্দরবনের শ্যামল শোভায় সুন্দর হয়ে উঠেছে। লেখিকার বর্ণনাগুণ অসাধারণ! সাত-নদীর মোহানা, লতামন্ডপ, কপোতাক্ষী, পাখিদের গ্রাম, আলেতম-জলেতম - এক একটি অধ্যায় যেন এক একটি নিটোল মুক্তো - স্বচ্ছ অশ্রুবিন্দু।
এমন দরদী গদ্যের সাথে বাড়তি পাওনা এর মেয়েলী রচনাশৈলী। আছে একটি ছোট মেয়ের সংসার করার গল্প, দুচোখ ভরে প্রকৃতিকে দেখার গল্প। সংসারের খুঁটিনাটির সাথে বহিঃপ্রকৃতি যে এইভাবে মিশে যেতে পারে, এ লেখা না পড়লে জানা হত না কোনোদিন। এই অসাধারণ স্বাদের লেখা বোধহয় কোনো মেয়ের হাত ছাড়া বেরোনো অসম্ভবই ছিল।

শুধু স্মৃতিকথা নয়; এ যেন এক নিঃশব্দ আত্মোপলব্ধির গদ্যরূপ। সুন্দরবনের বহুনদীর বহতা জলের মতই আমাদের এই যে জীবন, এর যে মুহূর্তগুলি নিয়ে আমাদের আয়ু, সেগুলি ধীরে ধীরে সরে যায় আমাদের অজান্তে। যা কিছু প্রিয়, যা কিছুকে জেনেছি আমাদের 'নিকট' বলে, সবকিছুকে একদিন বিদায় দিতে হয় বিষাদক্লিষ্ট মনে। আমাদের আজ যে আগামীদিনে বিসর্জন যাবে অতীতের অতলে, সেই সত্যের মূর্তরূপ জেগে থাকে এ লেখার গভীরে। কত মানুষ জীবনে আসে আমাদের, হয়ে ওঠে বড় কাছের জন, অথচ একবার দূরে গেলে তাদের সংগে আর দেখা হয় না কোনোদিন। সেইসব মানুষেরাই তো ভরে রাখে স্মৃতির আঙিনা, বার্ধক্যে এসে যৌবনের নস্টালজিয়া।
বালিকা বঁধুর নিজ বর্ণনায় একটা মজার ঘটনাঃ এগারো বছর বয়সে যশোর জেলা থেকে নৌকায় প্রথমবারের মতো যখন স্বামীর কর্মস্থলে যাচ্ছিলেন তখন বাপের বাড়ি থেকে জামাইর জন্য শাশুড়ী একহাড়ী রসগোল্লা দিয়েছিলেন। নৌকায় যেতে যেতে নদীতে অনেক মাছ দেখতে পেয়ে রসগোল্লার রস চিপে ফেলে দিয়ে ছানাটুকু মাছদের ছুড়ে দিচ্ছিলেন। মাছ দের রসগোল্লা খাওয়া দেখে মুগ্ধ হয়ে সব রসগোল্লা মাছ দের খাইয়ে স্বামীর জন্য খালি হাড়ী নিয়ে হাজির হন সাত দিনের মাথায়!

সুন্দরবনকে উপজীব্য করে তৈরি আধুনিক সাহিত্যকর্মের মধ্যে সরলা বসুর "জল বনের কাব্য" অনন্য এবং স্বতন্ত্র। বন কর্মকর্তা স্বামীর সঙ্গে থেকেছেন বাদাবনের সুপতি, চাঁদপাই, কপোতাক্ষী, বুড়ি গোয়ালিনী, নলগোড়া ফরেস্ট রেঞ্জে(উল্লেখিত স্থানগুলো আমি ব্যাক্তিগত ভাবে একসময় ঘুরে বেরিয়েছি বলেই বইয়ের প্রতিটি ঘটনাকে পড়ার সময় নিজেকেই সেইসব স্থানে উপস্থিত মনে হয়েছে)। উপন্যাসকে অবশ্য লেখিকা নিজেই সাহিত্যকর্ম বলতে রাজি নন। এ তার মনের রঙের তুলিতে আঁকা কৈশোরের ছবি, স্মৃতির রেখায় সে ছবিরই দাঁগ- জল বনের কাব্য। সপ্তাহখানেক ধরে সাত নদীর মোহনা হয়ে নদীপথে প্রথম পৌঁছেছিলেন বাগেরহাটের মোড়েলগঞ্জে। কয়েক দিনের যাত্রাপথে দেখা মাতন লাগা নদী, ন-বেকীর হাঁট, গাঘেঁষা বন, নোনা জলে জন্মানো সদ্য চেনা গাছের বাতাস, বন ও নদীনির্ভর মায়া বিবির মতো নানা গ্রামের হাটের নতুন খাবারের স্বাদ, বদলে যাওয়া টানে পরিবর্তিত ধারার আঞ্চলিক ভাষা সবই মনে রেখেছিলেন ছবির মতো। যার প্রমাণ, ছোট ছোট ঘটনাগুলোর বিশদ বিবরণ দিয়েছেন অন্তরের অন্তস্থল থেকে।

এই বই আমি বারবার পড়ব, আরণ্যকের মতই। জীবনে পড়া খুব ভাললাগা বইগুলির একটি হয়ে রইল-"জল-বনের কাব্য"।
আর বলার কিছু নেই।।

মন্তব্য ২৯ টি রেটিং +৬/-০

মন্তব্য (২৯) মন্তব্য লিখুন

১| ১৬ ই মার্চ, ২০২১ সকাল ১০:৩৫

নুরুলইসলা০৬০৪ বলেছেন: কোন বই সম্পর্কে আলোচনা এত সুন্দর হতে পারে না পড়লে বুঝতে পারতাম না।যদি জোগাড় করতে পারি পড়ার ইচ্ছা আছে।

১৬ ই মার্চ, ২০২১ সকাল ১০:৫৭

জুল ভার্ন বলেছেন: অনেক ধন্যবাদ এমন সুন্দর একটা মন্তব্যের জন্য। এই বইয়ের সাথে আমার মায়ের স্মৃতি জড়িয়ে আছে ......

২| ১৬ ই মার্চ, ২০২১ দুপুর ১২:৩৪

জুন বলেছেন: এই বইটি কি রকমারিতে পাওয়া যাবে? বিষয়টি আমার খুব প্রিয়। সুন্দর সাবলীল বর্ননায় বইটি পড়ার আগ্রহ বোধ করছি।
অনেক আগে মনোজ বসুর একটি গল্প পড়েছিলাম বাদা বন নিয়ে।
+

১৬ ই মার্চ, ২০২১ দুপুর ১:২৫

জুল ভার্ন বলেছেন: আমি জানিনা, রকমারিতে পাওয়া যাবে কি না!
আপনি জেনে অবাক হবেন, এই বইটা আমার জন্মের প্রায় দুই বছর আগে প্রকাশিত এবং বইটা আমার আব্বা মাকে দিয়েছিলেন-যা বইয়ের ভিতর মায়ের স্বাক্ষর সহ লেখা আছে!

১৮ ই মার্চ, ২০২১ সকাল ৯:৪৭

জুল ভার্ন বলেছেন: Click This Link

৩| ১৬ ই মার্চ, ২০২১ দুপুর ১:০০

রাজীব নুর বলেছেন: বইয়ের প্রচ্ছদ এর ছবি টা দেখান না।

১৬ ই মার্চ, ২০২১ দুপুর ১:৩৫

জুল ভার্ন বলেছেন: মন্তব্যের ঘরে প্রচ্ছদের ছবিটা দিতে পারলামনা, তাই পোস্ট এডিট করে মূল পোস্টের সাথেই ছবিটা যুক্ত করে দিলাম।

৪| ১৬ ই মার্চ, ২০২১ দুপুর ১:৩০

শায়মা বলেছেন: এই বই কি নিউমার্কেটে পাওয়া যায় ভাইয়া?

আমারও পড়তে ইচ্ছা হচ্ছে।

নইলে সবাইকে কপি করে করে পাঠিয়ে দাও ভাইয়া। :)

১৬ ই মার্চ, ২০২১ দুপুর ১:৩৮

জুল ভার্ন বলেছেন: নিউ মার্কেট কিম্বা রকমারিতে পাওয়া যাবে কি না আমি জানিনা, তবে পাওয়া যেতে পারে। আমার কাছে থাকা বইটা এতটাই পুরনো যার জন্য বইয়ের পৃষ্ঠাগুলো বিবর্ণ এবং মুড়মুড়ে হয়ে গিয়েছে যে, পড়তেই অনেক কষ্ট হয়েছে!

৫| ১৬ ই মার্চ, ২০২১ দুপুর ১:৪১

শায়মা বলেছেন: এই সব বলে লাভ নেই ভাইয়া। কোথাও পাওয়া না গেলে আমাদেরকে কপি করে দিতেই হবে.... :P

১৬ ই মার্চ, ২০২১ দুপুর ২:৪৫

জুল ভার্ন বলেছেন: ইন শা আল্লাহ।

১৮ ই মার্চ, ২০২১ সকাল ৯:৪৬

জুল ভার্ন বলেছেন: Click This Link

৬| ১৬ ই মার্চ, ২০২১ সন্ধ্যা ৭:৩৬

সেলিম আনোয়ার বলেছেন: সুন্দর।+

১৮ ই মার্চ, ২০২১ সকাল ৯:৪০

জুল ভার্ন বলেছেন: ধন্যবাদ।

৭| ১৬ ই মার্চ, ২০২১ রাত ১১:৫৭

রাজীব নুর বলেছেন: ধন্যবাদ।
বইটা সংগ্রহ করবো।

১৮ ই মার্চ, ২০২১ সকাল ৯:৪১

জুল ভার্ন বলেছেন: আশা করি পড়ে নিরাশ হবেন না।

৮| ১৭ ই মার্চ, ২০২১ রাত ১:০২

নীল আকাশ বলেছেন: এই লেখা আগেই পড়েছি আমাদের গ্রুপে।
আমি অনেক খুজেছি, ইন্টারনেটে কোথাও নেই।
স্ক্যান করে আপনার বই সফট কপি বানিয়ে ফেলবেন নাকি? সবাই পড়তে পারতো?

১৮ ই মার্চ, ২০২১ সকাল ৯:৪২

জুল ভার্ন বলেছেন: হ্যা, শবনম সাহিত্য গ্রুপে দিয়েছিলাম।

ধন্যবাদ।

৯| ১৭ ই মার্চ, ২০২১ দুপুর ১২:১৫

অক্পটে বলেছেন: কোন বই রিভিউ যে এমন সুন্দর হতে পারে তা আমার জানা ছিলনা। উদগ্রীব হয়ে আছি বইটি পড়ার জন্য। চারিদিকে (নেটে) খুঁজলাম কিন্তু কোন হদিস পেলাম না।

আমাদের ব্লগারদের ভাগকরে কিছু কিছু স্কেনকপি দিয়ে দেন আমরা সবাই মিলে এটার সফট কপি বানিয়ে ফেলি।

১৮ ই মার্চ, ২০২১ সকাল ৯:৪৪

জুল ভার্ন বলেছেন: বেশ কয়েক জন বন্ধুর আগ্রহ দেখে রকমারিতে যোগাযোগ করেছিলাম- বইটি রকমারিতে পাওয়া যায়।

এমন সুন্দর একটা মন্তব্য পড়ে নিজ লেখাকে স্বার্থক মনে হচ্ছে।

ধন্যবাদ।

১০| ১৭ ই মার্চ, ২০২১ দুপুর ১:০৫

অক্পটে বলেছেন: অনেক চেষ্টা করলাম, অসফল!
অনেক চেষ্টা করলাম, অসফল!

১৮ ই মার্চ, ২০২১ সকাল ৯:৪৪

জুল ভার্ন বলেছেন: বইটি রকমারিতে পাওয়া যায়।

১১| ১৭ ই মার্চ, ২০২১ দুপুর ১:১৪

অক্পটে বলেছেন: বইটা পাওয়া গেছে!!
https://archive.org/details/in.ernet.dli.2015.300464/page/n1/mode/2up


১৮ ই মার্চ, ২০২১ সকাল ৯:৪৬

জুল ভার্ন বলেছেন: আমি ভেবেছিলাম-এই দুস্প্রাপ্য বইটি শুধু আমার কাছেই আছে! :) ধন্যবাদ ।

১২| ২১ শে মার্চ, ২০২১ সন্ধ্যা ৭:১৯

আমি সাজিদ বলেছেন: পড়তে হবে

১৩| ২১ শে মার্চ, ২০২১ সন্ধ্যা ৭:৩৬

সোনাবীজ; অথবা ধুলোবালিছাই বলেছেন: সুন্দর বর্ণনা। পড়ার জন্য আগ্রহ জন্মে।

তবে, লেখিকার ১১ বছর বয়সে বিয়ে হওয়া থেকে তৎকালীন সমাজব্যবস্থার পরিচয় ফুটে উঠেছে। ঐ ১১ বছর বয়সের ১টা মেয়ে ৭দিন ধরে নৌকায় করে স্বামীর চাকরিস্থলে গিয়েছিলেন, এটা খুবই বিস্ময়কর ব্যাপার। চাকরিজীবী হওয়ায় তার স্বামীর বয়স ২৫/২৬-এর নীচে হবে না। বয়সের পার্থক্যটা বুঝতে পারছেন?

লেখিকা কত বছর বয়সে এই স্মৃতিচারণ লিখেছিলেন, তা জানার একটা আগ্রহ জন্মেছে। জানা থাকলে জানাবেন।

সুন্দর পোস্টের জন্য শুভেচ্ছা রইল জুল ভার্ন ভাই।

২২ শে মার্চ, ২০২১ সকাল ১১:১৯

জুল ভার্ন বলেছেন: আপনাকেও ধন্যবাদ ভাই।

১৪| ২৮ শে মার্চ, ২০২১ বিকাল ৪:০৩

মেহবুবা বলেছেন: নামটা দেখে প্রথমে ভেবেছি বুদ্ধদেব গুহের বই।
পড়তে ইচ্ছে হচ্ছিল তবে বুঝতে পারছি দুষ্প্রাপ্য এটি।
বিভূতিভূষণের দিনলিপি মত একটা বই ছিল আমার, খুঁজে পাইনা; মুকুন্দ কুমার করের একটা বই পাঠক সমাবেশ থেকে নিয়েছিলাম ১ম খন্ড, পরের আর কোন খন্ড পেলাম না অসাধারন এক বই ১৯৪৭ এর দেশ ভাগের পটভূমিতে লেখা।

২৯ শে মার্চ, ২০২১ দুপুর ১:০০

জুল ভার্ন বলেছেন: পোস্টের মন্তব্য নিয়ে কিছুই বলবোনা। শুধু বলবো-কত বছর পর আমার বোনটার সাথে ভার্সুয়াল দেখা হলো।

শুভ কামনা আমার লক্ষ্মী বোন।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.