নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
এপিটাফ এক নিঃশব্দ প্রচ্ছদে ঢাকা আছে আমার জীবনের উপন্যাস... খুঁজে নিও আমার অবর্তমানে... কোনো এক বর্তমানের মায়াবী রূপকথায়। আমার অদক্ষ কলমে... যদি পারো ভালোবেসো তাকে... ভালোবেসো সেই অদক্ষ প্রচেষ্টা কে, যে অকারণে লিখেছিল মানব শ্রাবণের ধারা.... অঝোর শ্রাবণে।।
কেউ কাউকে রক্ষা করবেনা, নিজেকেই নিজেকে রক্ষা করতে হবে....
“ধর্ষণ অপ্রতিরোধ্য” এমন মনোভাব মানুষের মনে গেঁথে দেওয়ার চেষ্টা চলছে বহুদিন ধরেই। এই ব্যাপারে রাষ্ট্র, পুরুষতান্ত্রিকতা অনেকটাই সফল। ধর্ষিতার পাশে রাষ্ট্র নেই, সমাজ নেই, বাড়ির মানুষ নেই এমনকি ধর্ষণপূর্ব প্রেমিকপ্রবরটিও নেই। এই নেইগুলো নিয়ে অনেক সাহিত্য, সিনেমা সৃষ্টি হয়েছে। আমাদের সমাজে হয়ত খুব বেশী মেয়ে নেই যে কম বা বেশি কোন যৌন হয়রানির সম্মুখীন হয়নি।
এই পর্যন্ত পড়ে মনে হতে পারে তাহলে কী করা উচিত। সবাই বুঝতে পারছেন, কী করা উচিত কিন্তু সেটা কেউ করছি না। পুরুষতান্ত্রিক মনোভাবের পরিবর্তন আনা এক্ষেত্রে খুবই গুরুত্বপূর্ণ। পুরুষতান্ত্রিক সমাজের কারণে অনেক পুরুষেরাই মনে করে থাকেন তাদের অবস্থান নারীদের উপরে। সে কারণে যৌনাকাঙ্ক্ষা হলে নারীদের ইচ্ছা বা অনিচ্ছার গুরুত্ব অনেকেই দেন না। পুরুষতন্ত্রের ধারণা এবং প্রয়োগের কারণে নিজেদের সেরা ভাবার মানসিকতা থেকে পুরুষদের বের করতে হবে। পুরুতান্ত্রিকতা নারীর ব্রেনে প্যাটার্ন সেট করে দিতে সফল হয়েছে, নারী বিপদে পড়লে তার মস্তিষ্ক আক্রমণকারীকে মারার অনুমতি দেয় না। তারা দুহাত বুকে জড়িয়ে বসে পড়ে মাটিতে যাতে কেউ তাদের বুকে বা যৌনাঙ্গে হাত না দিতে পারে। শরীরের অন্য অঙ্গে ছুরি মেরে দিলেও যেন আপত্তি নেই কিন্তু বুক আর যৌনাঙ্গে হাত পড়লে সেটা বেশি খারাপ, এটাই তাদের মাথায় সেট করা আছে বহু যুগ ধরে। আঘাত বা প্রত্যাঘাত এ শারীরিক শক্তির লাগে, কিন্তু তা আসে মানসিক প্যাটার্ন থেকে।
আরো ভুলভাল কথা নারীর মাথায় ঢুকিয়ে দেওয়া হয়। নারী শরীরকে বলা হয় পুরুষের শরীরের চেয়ে দুর্বল। একেবারেই মিথ্যার বেসাতি। নারী শরীরের পেল্ভিস অনেক চওড়া (বাচ্ছা ধারণের জন্য) যার ফলে অনুপাতে পুরুষের চেয়ে অনেক বেশী ওজন নিতে পারে , সহনশীল এবং কর্মসহিষ্ণু। আমাদের দেশেই দেখা যাবে পাহাড়ি অঞ্চলে মহিলাদের বিশাল বোঝা নিয়ে চলাফেরা করতে, যা পুরুষেরা করে না। ভারতেতো বটেই নেপালেও দেখেছি মহিলারা যা পরিশ্রম করতে অভ্যস্থ পুরুষরা তুলনায় কিছুই পারে না। তবে আমাদের পূর্বাঞ্চল বোধহয় সবচাইতে ব্যতিক্রমী।
নারী দেহের এমন কোনো জায়গা নেই যেখানে অল্প আঘাতেই নারীকে পরাস্ত করা যায়। উল্টোদিকে পুরুষের অণ্ডকোষে সামান্য আঘাত করলেই ব্যস। জোরে, মার্শাল আর্ট শিক্ষিত নারী যদি ঠিকমতো মারতে পারে পুরুষের দফারফা। তাই বলছিলাম “নারী শরীর দুর্বল” এটা সত্য বেশী নয়।
মেয়েরা বাচ্চা কোলে নিয়ে কাজ করতে পারে, বিশাল কাঠের বোঝা বইতে পারে কিন্তু একটা পাথর বা কাঠের টুকরো তুলে আঘাত করা তো দূর, অপরকে মারার ভাবনাটাই নিতে পারে না, তার কারণ হল ওই মানসিক ভাবে নিজেকে অপরাধি ভেবে রাখা। মেয়েরা লড়তে পারে না, তারা মেনে নিয়েছে কষ্টে থাকাটাই স্বাভাবিক। কষ্টকে তাদের শরীর মন গ্রহণ করতে দ্বিধা করেনা।
একদা আমি আরো কয়েক বন্ধুদের নিয়ে মার্শাল আর্টের তালিম নিয়েছিলাম। কোর্স শেষ করে আমি আমার শক্তি সম্পর্কে আত্মবিশ্বাসী হয়েছিলাম। আমি আত্মবিশ্বাসী হয়েছিলাম আত্মরক্ষা করে, প্রতিপক্ষকে আঘাত করায়, আমি আত্মবিশ্বাসী হয়েছিলাম আঘাত সহ্য করে ঘুরে দাঁড়িয়ে প্রত্যাঘাত করায়।
এখন মার্শাল আর্ট এবং কমব্যাটের পার্থক্য কমে আসছে। মার্শাল আর্ট মেয়েরা শিখতে চায় না, ভাবে পুরুষালী ভাব আসতে পারে, চামড়া শক্ত হয়ে যাবে। ছোটোবেলা থেকেই মেয়েদের শেখানো হয় তার সৌন্দর্যই আসল। পুরুষের আকর্ষণ করানো চাই। নিজের শরীর যেন পুরুষভোগ্য করে তুলতে পারে। সে কারণে বাহ্যিক সৌন্দর্য সচেতন নারীরা নিজেদের বস্তু বানিয়ে ফেলছে। সৌন্দর্যের তুলনায় ব্যক্তিত্ব, বুদ্ধি, মেধা,নিজস্বতা অনেক বেশী গুরুত্বপূর্ণ। নারীদেহ কোন বস্তু নয়। যখন নারীদেহকে বস্তু মনে করা হয় তখন সেখানে বিভিন্ন ধরণের সহিংসতার ঘটনা ঘটবেই।
এখন মার্শাল আর্টে শুধু প্রতিপক্ষকে মারা নয়, মার খাওয়াও শেখানো হয় , সহ্যশক্তি বাড়াতে হয়। শরীরের নানান জায়গায় মার খাবার পরও আবার কত তাড়াতাড়ি উঠে দাঁড়িয়ে পড়া যায় সেটা জানতে হয়।কারণ মারামারিতে মার দু পক্ষই দেয়। দু পক্ষই খায়।
ভেবে দেখুন, যে সমাজে মেয়েরা সর্বদা যৌন হয়রানির শিকার হয়, যে সমাজে সারাক্ষণ এরকম ধর্ষণকামী মনোভঙ্গীকে সহ্য করা হয়, সে সমাজে সুযোগ থাকলে, প্রভাব খাটাতে পারলে অহরহ ধর্ষণও ঘটবে, যে সমাজ আপনাকে ধর্ষণ করে পুড়িয়ে মেরে ফেলতেই পারে সেই সমাজে, কবিতা ,গান, অভিনয়, পড়াশুনা শেখানোর চেয়ে মার্শাল আর্ট শেখানো অনেক বেশী প্রয়োজনীয় নয় কী ?
ধরুন আপনার ব্যাগে পেপার স্প্রে বা গুণ্ডাদের হাত থেকে বাঁচবার জন্য যা সব পাওয়া যায় তা আছে। চার, পাচজন সামনে এলে ব্যাগ থেকে বের করার সাহস বা আত্মবিশাস আছে তো? নেই। পারবেন না ওগুলি ব্যবহার করতে। একমাত্র আপনি যদি মার্শাল আর্ট প্র্যাক্টিস করেন তবে অবশ্যই আপনার সাহস , আত্মবিশ্বাস তৈরি হবে। যে কোনো মার্শাল আর্ট বিশেষজ্ঞের কাছে জেনে নিবেন।
দুঃখের বিষয় আমাদের মেয়েরা বাড়িতে ভায়োলেন্সের শিকার। তারা সেখানেই প্রতিবাদ করেনি। সহ্য করে পড়ে আছে। যদি এই "পড়ে পড়ে মার খাওয়া" মানসিক গঠন থেকে কিছুটা বেরিয়ে আসতে পারেন বা সাহায্য চান একমাত্র মার্শাল আর্ট পারে আপনাকে কিছুটা স্বস্তি দিতে।
আবার মনে করিয়ে দিতে চাই, আপনার পাশে রাষ্ট্র নেই, সমাজ নেই। কবে রাষ্ট্রব্যবস্থা পালটাবে, পুরুষতান্ত্রিকতার বিলোপ হবে তার অপেক্ষায় থাকলে পুড়ে মরা ছাড়া আর কোনো "সদগতি" দেখছি না।
ধর্ষণ পৃথিবীর একমাত্র অপরাধ যেখানে ধর্ষক জেনে বুঝেই ধর্ষণ করে এবং অপরাধের শিকারই উল্টো অপরাধীতে পরিণত হয়।
©somewhere in net ltd.