নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
এপিটাফ এক নিঃশব্দ প্রচ্ছদে ঢাকা আছে আমার জীবনের উপন্যাস... খুঁজে নিও আমার অবর্তমানে... কোনো এক বর্তমানের মায়াবী রূপকথায়। আমার অদক্ষ কলমে... যদি পারো ভালোবেসো তাকে... ভালোবেসো সেই অদক্ষ প্রচেষ্টা কে, যে অকারণে লিখেছিল মানব শ্রাবণের ধারা.... অঝোর শ্রাবণে।।
স্মৃতিভ্রম....
একদা আমাদের বৃহত্তর যৌথ পরিবারে আমরা ৬ জন ভাইবোন ছিলাম- স্কুল ক্লাসের ব্যবধান ছিলো এক দুই তিন চার ক্লাস সিনিয়র। আমি সর্ব কনিষ্ঠ।
সেই সময় আমাদের একজন ধর্মীয় শিক্ষক ছাড়া আরও দুইজন হিন্দুধর্মাবলম্বী গৃহ শিক্ষক ছিলেন, যাদের কাছে আমাকেও পড়তে হতো। উমেশচন্দ্র পণ্ডিত স্যার পুরনো ঢাকার নবকুমার ইন্সটিটিউটের শিক্ষক। ছাত্র জীবনে তিনি আমার ছোট চাচার সহপাঠী। হোম ডিস্ট্রিক্ট এবং গ্রামের বাড়িও একই এলাকার সুবাদে সবাই আমাদের পারস্পরিক পরিবারের সদস্য হিসেবে একাত্মবোধ করতেন। একই কারণে উমেশ স্যার আমাদের কাছে স্যারের থেকে অনেক বেশী 'উমেশ কাকু' ছিলেন।
উমেশ স্যারের দুই ছেলে, বড়ো জগদীশ দাদা জগন্নাথ কলেজে এইচএসসি’র ছাত্র আর ছোট ছেলে দীনেশ আমার বয়সী, নবকুমার ইন্সটিটিউটে অষ্টম শ্রেণির ছাত্র। ওরা ডিএমসি স্টাফ কোয়ার্টারে থাকতো। স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় ২৮ মার্চ উমেশ স্যার ও দীনেশকে পাক সেনারা ধরে নিয়ে যায় ওদের কলোনির সামনে থেকে। স্যার ও দীনেশকে অনেক শারীরিক নির্যাতন করে দুই দিন পর দীনেশকে ছেড়ে দিলেও উমেশ স্যারকে ক্যাম্পে রেখে বাথরুম, ড্রেন পরিস্কার, রান্নার কাঠ কাটা ইত্যাদি সব কষ্টের কাজ করাতো। স্যার মারাত্মক অসুস্থ হয়ে পরলে অক্টোবর মাঝামাঝি তাকে ছেড়ে দেয়।
জগদীশ দাদা, দীনেশ ওদের মা(ডিএমসি হাসপাতালের নার্স, আমরা মিনু কাকী ডাকতাম) অনেক কষ্ট করে আমাদের বাড়িতে চলে আসে এবং এপ্রিল মাসের প্রথম সপ্তাহে আমাদের পরিবারের সাথে ওরাও গ্রামে চলে যায়। পাক সেনাদের শারীরিক নির্যাতন আর ভয়ে দীনেশের মানষিক সমস্যা দেখা দেয়।
মাইলের পর মেইল হেটে, বাসে, লঞ্চে নৌকায় পথ পাড়ি দিয়ে এপ্রিল মাসের শেষ সপ্তাহে আমিও বাড়ি পৌঁছাতে পারি। যদিও দীনেশ অনেকটাই মানষিক ভারসাম্যহীন তবুও আমাকে চিনতে পারে এবং ওকে পেয়ে দুজনেই খুব খুশী হই। ইতোমধ্যে এলাকার ছাত্র, যুবকদের সংগঠিত করে আমাদের বৃহত্তর পরিবারের অনেকেরই ব্যাক্তিগত লাইসেন্স করা বন্দুক, পয়েন্ট টুটু বোর রাইফেল,রিভলবার, পিস্তল নিয়ে এবং একই সাথে এলাকারআরও যাদের লাইসেন্স করা স্মল আর্মস ছিলো সেগুলো নিয়ে আমার বড়ো ভাই, মামা, চাচাদের নেতৃত্বে মুক্তি যুদ্ধের ট্রেনিং চলছিলো পুরোদমে...
জগদীশ দাদা মুক্তি যুদ্ধে যোগ দেন, সেই ইতিহাস বলছি না.....
জগদীশ দাদা আর দীনেশ দুই ভাইয়ের চেহারায় খুব মিল। সেই ছেলে বেলাতেই বয়স ভেদে দুজনের উচ্চতা ছাড়া তাদের হঠাৎ আলাদা করা বেশ কঠিনই। স্বাধীনতার পর উমেশ স্যারের পরিবার আর ঢাকা শহরে বসবাসের জন্য ফিরে আসেনি। তবে উমেশ স্যার ও দীনেশকে "যুদ্ধাহত মুক্তি যোদ্ধা" হিসাবে চিকিৎসার জন্য সরকার যুগোস্লাভিয়া পাঠিয়েছিলো এবং দুজনেই সুস্থ্য হয়ে ফিরে আসলেও স্যার বছর খানিক পরে মারা যান। মিনু কাকী মারা গেছেন ২০০০ সনে। তবে ওরা যেকোনো কাজে ঢাকা আসলে আমার বাবা, চাচাদের বাড়িতে এসে অত্যন্ত আপনজনের মতো থাকে। জগদীশ দাদা আর কলেজে ফিরে যাননি, দীনেশ বরিশাল বিএম কলেজ থেকে বিএ পাস করেছে। ওদের আর্থিক সচ্ছলতা আছে। স্বাধীনতার আগেও অনেক জমিজমা ছিলো। দুই ভাইয়ের সততা আর পরিশ্রমে সমন্বিত বহুমুখী মৎস্য ও পশু পালন করে সফল খামারি হিসেবে দুই বার জাতীয় পুরস্কার পেয়েছে। জগদীশ দাদা নিঃসন্তান। এলাকায় সমাজ সেবক হিসেবে পরিচিত। লেটা ম্যারেজ দীনেশ দুই মেধাবী সন্তানের জনক। দুই বছর আগে ওর মেয়ে ঢাকায় আমার বাসায় থেকে বুয়েট, মেডিক্যাল ভর্তি পরীক্ষায় অংশ নিয়ে বরিশাল মেডিক্যাল কলেজে পড়ছে। ছেলেটা এইসএসসি রেজাল্টের অপেক্ষায়।
সময়ের ব্যবধানে অনেক দুরত্ব বেড়েছে- যারযার ব্যাস্ততায় কে কার খোঁজ রাখে! একটা বিশেষ উদ্দেশ্যে ১৫ বছর পর সম্প্রতি ছোট ছেলেকে নিয়ে গ্রামের বাড়িতে গিয়েছিলাম। যথারীতি প্রতিবেশী গ্রামের অনেকেই দেখা করতে আসেন। জগদীশ দাদা আর দীনেশও এসেছিলেন।
অনেক উচ্ছাসে আমাকে জড়িয়ে ধরে আমার কুশলাদি জানতে চায়- আমি সব প্রশ্নের জবাব দেই। আমার গুম হওয়া বিষয় ক্ষোভ, অনুযোগ আর সহানুভূতির আন্তরিক প্রকাশ সবার মধ্যেই। আমিও ওর বিভিন্ন বিষয় খোঁজ নেই, নানান প্রশ্ন করি....আমাদের জন্য এক জগ গরুর দুধ নিয়ে এসেছে, পুকুর থেকে বড়ো কৈ, মাগুর মাছ ধরে নিয়ে এসেছে... কিন্তু আমি লক্ষ্য করি, আমার সাথে আলাপ চারিতায় দীনেশ যেনো ক্রমশ চুপসে যাচ্ছে... হঠাৎ উঠে দাঁড়িয়ে বলে, "তুই রেস্ট কর, টাইম পাইলে আমাগো বাড়ি যাইস"। আমি বলি, বিকেলে তুই আসিস, তোর সাথেই যাবো"....ও আমার মুখের দিকে একরাশ বিস্ময় নিয়ে তাকিয়ে থেকে চলে যায়.....। আমি অপেক্ষমান অন্যদের সাথে কথা বলি....
একটু পর, দীনেশ ওর মেডিক্যাল কলেজ পড়ুয়া মেয়ে আর ছেলে নিয়ে আবার এসেছে টিফিন কেরিয়ারে খাবার নিয়ে। ওর মেয়ে আর ছেলে আমার পা ছুঁয়ে প্রণাম করে.... আমি আশীর্বাদ করি... দীনেশ আমাকে আবারও জড়িয়ে ধরে জিজ্ঞেস করে, "কেমন আছিস? শরীর কেমন? সাজিদ আসছে নাকি? বৌদিদিকে নিয়া আসলি না ক্যান? শুভ, ওর বৌ বাচ্চা নিয়া আসলি না ক্যান?... তুই অনেক শুকাইয়া গেছিস! তোরে কি চুৎমারানির পুতেরা মার্ছে?....."!
....আমি ওর কোনো প্রশ্নের জবাব দিতে পারছিনা! ..... যা বোঝার, আমি তা বুঝে গেছি! সর্বনাশ যা হবার তা হয়ে গেছে!! একটু আগে যাকে আমি দীনেশ ভেবে তুই তোকারি করেছিলাম সে দীনেশ ছিলো না, তিনি আমার 'দাদা জগদীশ'! আমার তুই তোকারি সম্বোধনে বিব্রত হয়ে চলে গিয়েছেন....
১৮ ই এপ্রিল, ২০২১ দুপুর ২:০১
জুল ভার্ন বলেছেন: ধন্যবাদ।
২| ১৮ ই এপ্রিল, ২০২১ সকাল ৭:৩৭
আহমেদ জী এস বলেছেন: জুল ভার্ন,
"স্মৃতিভ্রম...." নয়, এ এক মধুর স্মৃতি।
বাংলার অসাম্প্রদায়িকতার ছবি। স্বাধীনতা পূর্বকালে অমনই ছিলো মুসলমান - হিন্দুদের সম্পর্ক। ধর্ম কোনও বিষয় ছিলোনা।
১৮ ই এপ্রিল, ২০২১ দুপুর ২:০৬
জুল ভার্ন বলেছেন: গত একযুগে সেই সম্প্রীতির বন্ধনে সুপরিকল্পিত ভাবে চিড় ধরিয়েছে একটা অশুভ শক্তি।
৩| ১৮ ই এপ্রিল, ২০২১ সকাল ১০:০৮
রোকসানা লেইস বলেছেন: সমৃতি থেকে সময়টা সামজিক মিলমিশ অবস্থান সুন্দর উঠে এসেছে।
ঘরে ঘরে কত কষ্ট কান্না ছিল ১৯৭১ জুড়ে তারপরও মানুষের আশা আর অনন্দ ছিল স্বাধীনতার ।
১৮ ই এপ্রিল, ২০২১ দুপুর ২:০৬
জুল ভার্ন বলেছেন: ঠিক বলেছেন। ধন্যবাদ।
৪| ১৮ ই এপ্রিল, ২০২১ সকাল ১১:২৫
নীল আকাশ বলেছেন: হায় হায় চিনতে পারেন'নি?
এত মিল চেহারায় এবং অবয়বে?
১৮ ই এপ্রিল, ২০২১ দুপুর ২:০৭
জুল ভার্ন বলেছেন: আমারই সমস্যা।
৫| ১৮ ই এপ্রিল, ২০২১ সকাল ১১:৫২
নেওয়াজ আলি বলেছেন: সুন্দর লিখেছেন। পড়ে ভালো লাগলো
১৮ ই এপ্রিল, ২০২১ দুপুর ২:০৮
জুল ভার্ন বলেছেন: ধন্যবাদ ভাই।
৬| ১৮ ই এপ্রিল, ২০২১ দুপুর ২:৫১
রাজীব নুর বলেছেন: জীবনের গল্প।
জীবনের গল্প গুলোই আসল গল্প।
১৯ শে এপ্রিল, ২০২১ ভোর ৬:৩৫
জুল ভার্ন বলেছেন: সত্য।
৭| ১৯ শে এপ্রিল, ২০২১ সকাল ৮:৪৪
জুন বলেছেন: স্মৃতিময় সময়ের কাহিনি। ভালো লাগা রইলো অনেক।
+
২০ শে এপ্রিল, ২০২১ সকাল ৯:৩৫
জুল ভার্ন বলেছেন: ধন্যবাদ।
৮| ১৯ শে এপ্রিল, ২০২১ সকাল ৮:৫৪
ভুয়া মফিজ বলেছেন: যমজ না হয়েও এতো মিল! এমনটা সচরাচর দেখা যায় না। আপনার উধাও হওয়ার ঘটনা নিয়ে বেনামে একটা গল্প লিখে ফেলেন। জাতি জানতে আগ্রহী!
২০ শে এপ্রিল, ২০২১ সকাল ৯:৩৬
জুল ভার্ন বলেছেন: সব সময় নজরদারীতে থেকে হাত খুলে, মনখুলে লেখা যায়না!
৯| ২১ শে এপ্রিল, ২০২১ ভোর ৬:৪০
মেহবুবা বলেছেন: জীবনের গল্প!
আমার খুব গ্রামে যেতে ইচ্ছে করছে, গ্রামের মানুষেরা এত ভালবাসে মন ভরে যায় ! কতদিন যাই না।
২১ শে এপ্রিল, ২০২১ ভোর ৬:৪৪
জুল ভার্ন বলেছেন: আমি একসময় গ্রামেই ফিরে যেতে চাই।
©somewhere in net ltd.
১| ১৮ ই এপ্রিল, ২০২১ ভোর ৬:৩০
নুরুলইসলা০৬০৪ বলেছেন: জীবনের গল্প এমনি হয়।ভালো লাগলো