নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
এপিটাফ এক নিঃশব্দ প্রচ্ছদে ঢাকা আছে আমার জীবনের উপন্যাস... খুঁজে নিও আমার অবর্তমানে... কোনো এক বর্তমানের মায়াবী রূপকথায়। আমার অদক্ষ কলমে... যদি পারো ভালোবেসো তাকে... ভালোবেসো সেই অদক্ষ প্রচেষ্টা কে, যে অকারণে লিখেছিল মানব শ্রাবণের ধারা.... অঝোর শ্রাবণে।।
~ রসু খা ~
(লকডাউনের ৩ নম্বর গল্প)
লক ডাউনের সন্ধ্যায় বউ খঞ্জরী বেগমের পাশে বসে 'স্বামী কেন আসামী' ঢাকাই সিনেমা দেখার সময় মোহাম্মদ কেয়ামুদ্দিন সেলফোনে ফেসবুক দেখছে। ফেসবুক জুড়ে সব পোস্টই এখন করোনা এবং মোহাম্মদ নাসিমের মৃত্যু সংক্রান্ত। একটা মৃত্যুর পোস্টে শতশত হাহা ইমোজি দেওয়া খঞ্জরী বেগমকে দেখিয়ে খুব দুঃখ প্রকাশ করলো। খঞ্জরী বেগম ঝুঁকে পড়ে দেখা শেষ করতেই টুং করে ম্যাসেঞ্জারে একটা ম্যাসেজ ঢুকল-- "কল করো"।
মোহাম্মদ কেয়ামুদ্দিনের অবস্থা তখন রাস্তা পার হতে গিয়ে অসাবধানে চলন্ত ট্রাকের তলায় চাপা পড়ার আতঙ্ক! হার্টবিট দ্রিমদ্রিম করে যেন বেসুরো ড্রাম বাজচ্ছে। তাড়াতাড়ি ম্যসেজটা লুকিয়ে ফেলল। খঞ্জরী বেগম বলল, "কে ম্যাসেজ করল?"
কেয়ামুদ্দিন, "এখন লকডাউনে অনেকের খেয়ে দেয়ে কোনও কাজকর্ম নেই সারাদিন কেবল এটা সেটা খাজুইরা আলাপ আর কি!"
ভিতরে ভিতরে কেয়ামুদ্দিন এসি'র ঠান্ডায়ও ভিজে গেছে টেনশনে। মনে মনে ভাবছে শ্লা করোনা আসার আর সময় পেল না। সবে প্রেমটা জমছে তখনই কথা নেই বার্তা নেই কোথা থেকে দুম করে করোনা এসে হাজির। দেশ জুড়ে কোয়ারেন্টিন তার উপর লক ডাউন! বাইরে বের হওয়া যাবেনা, ঘরে বন্দি থাকো- যত্তসব!
খঞ্জরী বেগম এমনিতেই সন্দেহ করে আর এখন লক ডাউন বলে স্বামীকে বাইরেই যেতে দিচ্ছে না। কেয়ামুদ্দিন ভয় পাচ্ছে এখন যদি হঠাৎ ম্যাসেঞ্জারে ওদিক থেকে কল করে বসে তাহলেই শেষ! খঞ্জরী বেগম নির্ঘাত শিল-পাটায় থেঁতলে দেবে যা বাঘ মার্কা মেয়ে!..... নেট টা অফ করে দিল।
খঞ্জরী বেগম আবার টিভিতে মনোযোগ দিতেই কেয়ামুদ্দিন মনে মনে খাজা বাবকে স্মরণ করল....। কিন্তু ভীষণ কনফিউজড খাজা বাবা তো বিপদ থেকে বাঁচায় শুনেছে কিন্তু ঘরের ভেতর বউয়ের পাশে এই রকম পরকীয়া কেসে হাতেনাতে ধরা পড়লে খাজা বাবা তাকে কতটা সাপোর্ট দেবে যথেষ্ট সন্দেহ! এই সময়ে খাজা বাবার স্মরণাপন্ন হওয়া মানে করোনাক্রান্ত হয়ে হোমিওপ্যাথি ওষুধ খাওয়ার মতন রিক্স হয়ে যাচ্ছে। শ্লো অ্যাকশন সিওর। না না কুইক অ্যাকশন হবে এমন কিছু ভাবতে হবে। খাজা বাবা টাবায় ভরসা করা যাবেনা। কিছুক্ষণ পরে খঞ্জরী বেগমকে আদুরে গলায় বলে, "খাঞ্জুমনি, সিগারেট একদম শেষ, দোকানে গিয়ে সিগারেট নিয়ে আসি... তোমার জন্য চকলেট আইসক্রিমও নিয়ে আসবো"।
খঞ্জরী বেগম বলল, "একদম না, দরজার বাইরে পা দিয়ে দেখ তোমার একদিন কি আমার এক দিন।"
কেয়ামুদ্দিন মনে মনে ভাবছে- উফ! কী জ্বালায় পড়লামরে বাবা, ফোনে প্রেমের হাতছানি ঘরে বাঘ রাশির বউয়ের হুমকি, কোন দিকে যে যাই!
কেয়ামুদ্দিন উসখুস করছে- ডাইনিং রুমে গিয়ে ঢকঢক করে দুই গ্লাস পানি খেয়ে এল। টিভিতে বিজ্ঞাপন শুরু হতেই খঞ্জরী বেগম উঠে রান্না ঘরের দিকে গেল। কেয়ামুদ্দিন ভাবল এই সুযোগ- 'এখন ফোন করা সম্ভব না' জানিয়ে দিই। যেই নেট অন করেছে অমনি টুং টুং করে ম্যাসেঞ্জারে ম্যাসেজ ঢুকছে... "জান্টুস, খুব দরকার আছে কল করো, না হলে আমিই করব।"
ম্যাসেজটা দেখেই কেয়ামুদ্দিনের হাত পা ঠান্ডা হয়ে যাবার যোগাড়, মাথার চুল খাড়া হয়ে যাচ্ছে। মিস টাট্টি খানকে 'ব্যচেলর' বলাটাই ভুল হয়েছে.... না বলেতো উপায়ও ছিলো না, বাড়িতে বউ আছে জানলে মিস টাট্টি খানের সাথে প্রেমটাইতো হত না! উফ কী সমস্যায় পড়লামরে বাবা। কী করে ম্যানেজ করব বুঝতে পারছি না....
এমন সময় খঞ্জরী বেগম এসে বলল, "এই, আজ কি গরুর গোশত রান্না করবো?"
কেয়ামুদ্দিন বলল, 'আচ্ছা এইসব আমাকে জিজ্ঞেস করার কি দরকার, যা ভালো মনে করো তাই রান্না করো'।
খঞ্জরী বেগম রান্নাঘরে চলে গেলে কেয়ামুদ্দিন ম্যাসেজ করতে যাবে অমনি খঞ্জরী বেগম এসে পাশে বসলো।
কেয়ামুদ্দিন মনে মনে বলল, 'ক্যামুদ্দিন, আজ তোর নির্ঘাত শনি রাশিতে রাহু ভর করছে'।
ভয়ে ভয়ে কেয়ামুদ্দিন আবারও ফোনের সুইচ অফ করে দিল। কিছুক্ষণ পরেই পাশে থাকা খঞ্জরী বেগমের ফোন বেজে উঠল। খঞ্জরী বেগম ফোন ধরে বলল, "ওয়ালাইকুম আচ্ছালাম। কেমন আছেন ভাই? জ্বি আমরা ভালো আছি। জ্বি বাসায়ইতো আছে... না তো, ভাই, আমি দেখছি" - বলেই লাইন কেটে দিয়ে স্বামীকে বলল, "তোমার ফোন সুইচ অফ?"
কেয়ামুদ্দিন, 'কই না তো'!
তোমার অফিস থেকে জিএম সাহেব ফোন করেছিলো জরুরী দরকারে, তোমাকে ফোন করে পাচ্ছে না-ফোন বন্ধ।
.... 'আরে বাবা! সত্যিই ফোনতো অফ হয়ে গেছে'!
খঞ্জরী বেগম বলল, "ফোন এমনি এমনি অফ হয়ে গেল?"
-'তাই তো দেখছি।'
খঞ্জরী বেগম বলল, "কোনও দিন অফ হয় না আজ অফ হয়ে গেল? আমি তো দেখলাম তুমিই কয়েক বার ফোন অন-অফ করলে। ... ম্যাসেঞ্জারে মেসেজটা আসার পর থেকেই তো দেখছি তোমার ছটফটানি নাটক। ভাবছ কিছুই বুঝি না? চেনো তো আমাকে? যদি উল্টেপাল্টা কিছু দেখেছি ঝেঁটিয়ে ঝাল ঝেড়ে দেব, মনে রাইখখো- আমার নাম খঞ্জরী বেগম!"
কেয়ামুদ্দিন বলল, 'কী আবোলতাবোল বলছো! তোমরা মেয়েরা শুধু সন্দেহ করো, তোমাদের এই সন্দেহ বাতিকগ্রস্ততা খুবই খারাপ।'
খঞ্জরী বেগম বলল, "আমি আবোল তাবোল বলছি?মেয়েরা সন্দেহ প্রবণ? তুমি ডুবে ডুবে জল খাচ্ছো আর ভাবছো আমি কিছু বুঝি না?"
কেয়ামুদ্দিন, 'খবরদার যা তা বলবা না বলছি। আর যা-ই বলো আমার চরিত্র নিয়া কিছু বলবা না। একে সিগারেট নাই, মাথা কাজ করছে না তারপর আবার উল্টাপাল্টা বকছো। মাথা খারাপ কোরো না।'
খঞ্জরী বেগম, "কী আমি যা তা বলছি? মাথা খারাপ করছি? তুমি মিস টাট্টি খানের সঙ্গে ফষ্টিনষ্টি করছ সেটা আমার জানতে বাকি নেই বুঝলে?"
কেয়ামুদ্দিন মনে মনে বলল- আল্লাগো আমার পিছনে গোয়েন্দা লাগালো কবে থেকে? নিজেকে একটু সামলে গলায় খুব আবেগ নিয়ে বলে, 'খঞ্জুমনি, সোনা বোউ-ও তো আমার কলিগ। কাজের স্বার্থে মাঝেমধ্যে ম্যাসেজ চালাচালি তো করতেই হয়'।
খঞ্জরী বেগম "আহা কলিগ, তাই ম্যাসেজ চালাচালি করতেই হয়! কিসের এতো ফুসুরফুসুর যা আমার সামনে বলতে পারোনা-আমি ঘুমালে রাত দুইটার সময় বারান্দায় দাঁড়িয়ে ফিসফিস করে বলতে হয়?"
-'খঞ্জু সোনাপাখি, শোনো, আসলে হইছে কি, টাট্টি খাতুনের তিনটা মেয়ে। আগেই ওর স্বামীর Covid-19 Positive হয়েছে, এখন মেজো মেয়েটারও Covid-19 Positive হয়েছে তাই অফিস কলিগ হিসাবে আমার কাছে সাহায্য চাইছে.... '
খঞ্জরী বেগম হুংকার দিয়ে- "কেয়ামুদ্দিন, আর একটা মিথ্যা কথা বলবি তো তোর মুখ ভোতা করে ফেলবো('তুমি' থেকে ডাইরেক্ট 'তুই'!)। কান খুলে শোন- তোর স্বভাব চরিত্র যে সুবিধার না সেটা আমি বিয়ের পরই টের পেয়েছি। মেয়ে দেখলেই বুন্নি, আপ্পি বলে ঝাপিয়ে পড়া স্বভাব! ফেসবুকে ফিমেল আইডি দেখলেই মেসেঞ্জারে খোঁচাও-নিজেকে ব্যাচেলর বলো। আমার ছোট বোন হান্দালা বেগমকে একটা ফেক একাউন্ট খুলে তোর চরিত্র পরীক্ষা করতে বলেছিলাম। ওই মিস টাট্টি বেগম হইলো হান্দালার ফেক আইডি বুঝজোস? তোর সব আমলনামা এখন আমার হাতে.... এরপর যদি কোনও দিন দেখি কোনো মেয়েদের সাথে ছোঁকছোকানি করছোস, তাইলে শিল-পাটায় তোর হাড্ডিমাংশ সব পিষে ফেলবো বলে দিলাম। অসভ্য লুচ্চা কোথাকার!"
৩০ শে সেপ্টেম্বর, ২০২১ সকাল ১১:২৪
জুল ভার্ন বলেছেন: ধন্যবাদ।
২| ৩০ শে সেপ্টেম্বর, ২০২১ সন্ধ্যা ৭:১৩
সাড়ে চুয়াত্তর বলেছেন: এই যুগে এই ধরণের ঘটনা অহরহ ঘটছে। আপনি খুব মজা করে লিখেছেন। পড়ে খুব মজা পেলাম। কিন্তু মানুষের হুশ হচ্ছে না। বরং দিন দিন বেপরোয়া হচ্ছে। দৈনিক পত্রিকাগুলি দেখলেই বোঝা যায় কত পরিবার ধ্বংস হচ্ছে এইভাবে।
৩০ শে সেপ্টেম্বর, ২০২১ রাত ৯:২৬
জুল ভার্ন বলেছেন: কিন্তু পড়ায় কেউ নাই! অথবা পড়ে নিজের সাথে মিলে যাওয়ার জন্য এড়িয়ে যাচ্ছে!
৩| ৩০ শে সেপ্টেম্বর, ২০২১ সন্ধ্যা ৭:১৯
পদাতিক চৌধুরি বলেছেন: ভাইজান এটা পড়া পড়া লাগছে। ফেবুতে কি দিয়েছিলেন?
৩০ শে সেপ্টেম্বর, ২০২১ রাত ৯:২৫
জুল ভার্ন বলেছেন: হ্যা, গত বছর লকডাউনের সময় লিখে ফেসবুকে লিখেছিলাম।
৪| ৩০ শে সেপ্টেম্বর, ২০২১ রাত ১১:০০
স্বামী বিশুদ্ধানন্দ বলেছেন: অমল পালেকার, ফারুক শেখ আর দীপ্তি নাভাল এর একটা হাসির হিন্দি মুভি আমাদের সময় খুব জনপ্রিয় ছিল - নামটা মনে আসছে না। ওই মুভিতে নায়ক (বিবাহিত) সেক্রেটারিকে পটাতে গিয়ে বলে যে তার স্ত্রীর শারীরিক অবস্থা ভালো না, স্ত্রীর সেবা করতে করতে তার জীবন কেরোসিন - এই সব। আমার কিছু কলিগ তখন এই পদ্ধতির প্রয়োগ শুরু করে - ফোনে যে কোনো মেয়েকে পটানোর জন্য নিজ স্ত্রীকে রোগাক্রান্ত করে একেবারে শয্যাশায়ী বানিয়ে ফেলা ! তবে সেই সময় তাদের দৌড় ওই ফোন পর্যন্তই ছিল - ঢাকার রাস্তাঘাট এতো ব্যস্ত হয় নি যে সাক্ষাৎ পরকীয়াতে লিপ্ত হয়ে নজরে না পড়ার।
যুগ পাল্টেছে - এখন এই ধরণের ঘটনা অহরহ শুনি - বাস্তবেই।
০১ লা অক্টোবর, ২০২১ সকাল ১১:৩৫
জুল ভার্ন বলেছেন: ঠিক বলেছেন। ধন্যবাদ।
৫| ৩০ শে সেপ্টেম্বর, ২০২১ রাত ১১:১৪
রাজীব নুর বলেছেন: ইদানিং আপনার লেখা গুলো খুব ভালো হচ্ছে।
০১ লা অক্টোবর, ২০২১ সকাল ১১:৩৬
জুল ভার্ন বলেছেন: ধন্যবাদ।
©somewhere in net ltd.
১| ৩০ শে সেপ্টেম্বর, ২০২১ সকাল ১১:১৩
রানার ব্লগ বলেছেন: পরকিয়া কেস না বলে পরনারী আসক্তি লিখলে আরো বেশি রসালো হতো।
এটা সাজেশান না উপদেশও না যাস্ট বললাম আর কি ?
খঞ্জুরী বেগম নামটা বেশ লেগেছে।